খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা মূলত উনিশ শতকের শেষভাগে গড়ে ওঠে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে। কিন্তু জায়োনিজমের সঙ্গে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy Theory) যুক্ত করে অনেক আলোচনা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মনে করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব রাজনীতিতে গোপনে প্রভাব বিস্তার করছে, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রকৃতি, প্রভাব ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হবে। জায়োনিজম শব্দটি এসেছে “জায়োন” (Zion) থেকে, যা ইহুদিদের জন্য বিশেষ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী। এটি মূলত ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে উনিশ শতকে উদ্ভূত হয়। এটি ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। ১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে এই আন্দোলন শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। অনেক মুসলিম দেশ, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিরা, এটি দখলদারি ও ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে দেখে আসছে। জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর শেকড় বহু পুরনো। ইউরোপীয় সমাজে মধ্যযুগ থেকেই ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তারা ব্যাংকিং ও বাণিজ্যে সফল হওয়ায় অনেকেই মনে করত যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি একটি ভুয়া নথি, যা ১৯০৩ সালে রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়। এতে দাবি করা হয় যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব শাসনের পরিকল্পনা করছে। যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়, তবে অনেকেই এটিকে সত্য মনে করে। কিছু ষড়যন্ত্রবাদীরা বলে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব মিডিয়া, বিনোদন শিল্প ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, হলিউড ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ওপর ইহুদিদের আধিপত্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব সরকার গঠন করতে চায় এবং গোপনে বিভিন্ন সরকার ও সংস্থার মাধ্যমে কাজ করছে। অনেকে মনে করে যে জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনের জমি দখল করার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিভাজন – জায়োনিস্ট আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করেছে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত। সামাজিক উত্তেজনা – সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে এই তত্ত্বগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত থাকলেও এগুলোর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মিডিয়া ও ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ – সত্য যে কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনীতিতে প্রভাবশালী, তবে এটা বলতে গেলে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র চলছে তা যুক্তিযুক্ত নয়।
বিশ্ব সরকার গঠন – এ ধরনের দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। ফিলিস্তিন প্রশ্ন – ইসরায়েলের কার্যক্রমের সমালোচনা করা যায়, তবে তা জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।  জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Zionist Conspiracy Theory) বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের এক বিতর্কিত বিষয়। জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে শুরু হলেও, এটি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, জায়োনিস্টরা বিশ্ব শাসনের গোপন পরিকল্পনা করছে এবং বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে, অনেকে এসব দাবিকে ভিত্তিহীন ও অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রচলিত ধরণ, বাস্তবতা এবং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।

জায়োনিজম মূলত ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। বাইবেলের বিবরণ অনুসারে, ইসরায়েল হলো ইহুদিদের প্রতিশ্রুত ভূমি। উনিশ শতকের ইউরোপে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক ইহুদি নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন এবং ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা জায়োনিজমের প্রধান ফলাফল। ২. জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: কী এবং কেন? জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মূলত ধারণা করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করছে। প্রটোকলস অব দ্য এল্ডার্স অব জায়োন (Protocols of the Elders of Zion)। এটি ১৯০৩ সালে প্রকাশিত একটি ভুয়া দলিল, যেখানে বলা হয়েছিল ইহুদিরা বিশ্ব শাসনের ষড়যন্ত্র করছে।
যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবু অনেক ষড়যন্ত্রবাদীরা এটি সত্য বলে বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্রবাদীদের মতে, জায়োনিস্টরা গণমাধ্যম, হলিউড, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, কিছু বিখ্যাত মিডিয়া কোম্পানির মালিক ইহুদি হওয়ার কারণে অনেকেই মনে করেন তারা বিশ্বব্যাপী প্রচারমাধ্যমের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা একটি গোপন বিশ্ব সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। দাবি করা হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন: UN, WHO, IMF) জায়োনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত। অনেকে মনে করেন যে জায়োনিস্টরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং তাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছে। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার অস্থিরতা এবং ফিলিস্তিনের দখলকে জায়োনিস্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হয়।

মধ্যযুগ থেকেই ইউরোপীয় সমাজে ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তাদের ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক সফলতা অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। ইসরায়েলের সামরিক নীতি ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিপীড়ন জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগসাইটে এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়, যা অনেক মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যদিও জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, তবে এদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও, এটি প্রমাণিত নয় যে তারা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বব্যাংক, IMF ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে, যা ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে দুর্বল করে। ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা যেতে পারে, তবে এটি জায়োনিস্টদের বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের প্রমাণ নয়। অনেক ইহুদি নিজেই ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, যা একটি বৃহৎ জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্বের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।এটি ইসরায়েল ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর মনোযোগ দিলে প্রকৃত সমাধান খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ বিজ্ঞান, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ইতিহাস, রাজনীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। যদিও জায়োনিজম একটি বাস্তব রাজনৈতিক আন্দোলন, তবে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অতিরঞ্জিত এবং ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রকৃত বিশ্লেষণের জন্য বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর নয়। এই বিষয়ে গবেষণা, তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে মতামত গঠন করা উচিত। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একদিকে ইতিহাস ও রাজনীতির বাস্তবতার মিশ্রণ, অন্যদিকে অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত। যদিও ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা স্বাভাবিক, তবে এটিকে এককভাবে একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনার দাবি রাখে। গবেষণা ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।