খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র কিংবা কন্সপেরেসি থিওরি কল্পনা নয় বাস্তব

জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা মূলত উনিশ শতকের শেষভাগে গড়ে ওঠে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিণতি লাভ করে। কিন্তু জায়োনিজমের সঙ্গে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy Theory) যুক্ত করে অনেক আলোচনা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী মনে করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব রাজনীতিতে গোপনে প্রভাব বিস্তার করছে, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং বিভিন্ন দেশ ও সমাজে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রকৃতি, প্রভাব ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করা হবে। জায়োনিজম শব্দটি এসেছে “জায়োন” (Zion) থেকে, যা ইহুদিদের জন্য বিশেষ ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী। এটি মূলত ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে উনিশ শতকে উদ্ভূত হয়। এটি ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। ১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

তবে এই আন্দোলন শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। অনেক মুসলিম দেশ, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিরা, এটি দখলদারি ও ঔপনিবেশিক প্রকল্প হিসেবে দেখে আসছে। জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলোর শেকড় বহু পুরনো। ইউরোপীয় সমাজে মধ্যযুগ থেকেই ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তারা ব্যাংকিং ও বাণিজ্যে সফল হওয়ায় অনেকেই মনে করত যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি একটি ভুয়া নথি, যা ১৯০৩ সালে রাশিয়ায় প্রকাশিত হয়। এতে দাবি করা হয় যে ইহুদিরা গোপনে বিশ্ব শাসনের পরিকল্পনা করছে। যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়, তবে অনেকেই এটিকে সত্য মনে করে। কিছু ষড়যন্ত্রবাদীরা বলে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব মিডিয়া, বিনোদন শিল্প ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, হলিউড ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ওপর ইহুদিদের আধিপত্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা বিশ্ব সরকার গঠন করতে চায় এবং গোপনে বিভিন্ন সরকার ও সংস্থার মাধ্যমে কাজ করছে। অনেকে মনে করে যে জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনের জমি দখল করার পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরির ক্ষেত্রে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বড় ভূমিকা রয়েছে।

রাজনৈতিক বিভাজন – জায়োনিস্ট আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করেছে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত। সামাজিক উত্তেজনা – সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমের মাধ্যমে এই তত্ত্বগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত থাকলেও এগুলোর সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মিডিয়া ও ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ – সত্য যে কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনীতিতে প্রভাবশালী, তবে এটা বলতে গেলে বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র চলছে তা যুক্তিযুক্ত নয়।
বিশ্ব সরকার গঠন – এ ধরনের দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই। ফিলিস্তিন প্রশ্ন – ইসরায়েলের কার্যক্রমের সমালোচনা করা যায়, তবে তা জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।  জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Zionist Conspiracy Theory) বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও ইতিহাসের এক বিতর্কিত বিষয়। জায়োনিজম একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে শুরু হলেও, এটি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, জায়োনিস্টরা বিশ্ব শাসনের গোপন পরিকল্পনা করছে এবং বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে, অনেকে এসব দাবিকে ভিত্তিহীন ও অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। এই প্রবন্ধে জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উৎপত্তি, প্রচলিত ধরণ, বাস্তবতা এবং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।

জায়োনিজম মূলত ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, যার মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠা করা। বাইবেলের বিবরণ অনুসারে, ইসরায়েল হলো ইহুদিদের প্রতিশ্রুত ভূমি। উনিশ শতকের ইউরোপে ইহুদিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার ফলে অনেক ইহুদি নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

১৮৯৭ সালে থিওডোর হার্জল প্রথম “জায়োনিস্ট কংগ্রেস” গঠন করেন এবং ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) এবং ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা জায়োনিজমের প্রধান ফলাফল। ২. জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: কী এবং কেন? জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মূলত ধারণা করে যে জায়োনিস্টরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করছে। প্রটোকলস অব দ্য এল্ডার্স অব জায়োন (Protocols of the Elders of Zion)। এটি ১৯০৩ সালে প্রকাশিত একটি ভুয়া দলিল, যেখানে বলা হয়েছিল ইহুদিরা বিশ্ব শাসনের ষড়যন্ত্র করছে।
যদিও এটি পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হয়, তবু অনেক ষড়যন্ত্রবাদীরা এটি সত্য বলে বিশ্বাস করে। ষড়যন্ত্রবাদীদের মতে, জায়োনিস্টরা গণমাধ্যম, হলিউড, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন, কিছু বিখ্যাত মিডিয়া কোম্পানির মালিক ইহুদি হওয়ার কারণে অনেকেই মনে করেন তারা বিশ্বব্যাপী প্রচারমাধ্যমের ওপর আধিপত্য বিস্তার করেছে। একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে জায়োনিস্টরা একটি গোপন বিশ্ব সরকার গঠনের পরিকল্পনা করছে। দাবি করা হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা (যেমন: UN, WHO, IMF) জায়োনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত। অনেকে মনে করেন যে জায়োনিস্টরা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং তাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছে। ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার অস্থিরতা এবং ফিলিস্তিনের দখলকে জায়োনিস্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখা হয়।

মধ্যযুগ থেকেই ইউরোপীয় সমাজে ইহুদিদের বিরুদ্ধে নানা গুজব রটানো হতো। তাদের ব্যাংকিং ও ব্যবসায়িক সফলতা অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল। ইসরায়েলের সামরিক নীতি ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি নিপীড়ন জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগসাইটে এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়, যা অনেক মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। যদিও জায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে, তবে এদের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কিছু ইহুদি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হলেও, এটি প্রমাণিত নয় যে তারা সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বব্যাংক, IMF ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনভাবে কাজ করে, যা ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে দুর্বল করে। ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা যেতে পারে, তবে এটি জায়োনিস্টদের বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের প্রমাণ নয়। অনেক ইহুদি নিজেই ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে কাজ করে, যা একটি বৃহৎ জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনাকে দুর্বল করে। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ষড়যন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই তত্ত্বের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ইহুদিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।এটি ইসরায়েল ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তব সমস্যার পরিবর্তে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর মনোযোগ দিলে প্রকৃত সমাধান খোঁজা কঠিন হয়ে পড়ে। মানুষ বিজ্ঞান, ইতিহাস ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে বিভ্রান্তিকর তথ্যের ওপর নির্ভর করতে শুরু করে।

জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ইতিহাস, রাজনীতি ও ধর্মীয় অনুভূতির মিশ্রণে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। যদিও জায়োনিজম একটি বাস্তব রাজনৈতিক আন্দোলন, তবে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অতিরঞ্জিত এবং ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রকৃত বিশ্লেষণের জন্য বাস্তব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ওপর নয়। এই বিষয়ে গবেষণা, তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে মতামত গঠন করা উচিত। জায়োনিস্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব একদিকে ইতিহাস ও রাজনীতির বাস্তবতার মিশ্রণ, অন্যদিকে অনেকাংশেই অতিরঞ্জিত। যদিও ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করা স্বাভাবিক, তবে এটিকে এককভাবে একটি বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখা কতটা যৌক্তিক, তা বিবেচনার দাবি রাখে। গবেষণা ও তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।