খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

কিশোরীর প্রেম : জীবনের পরিবর্তনশীল এক অধ্যায়

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ
কিশোরীর প্রেম : জীবনের পরিবর্তনশীল এক অধ্যায়

কিশোরীর প্রেম একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, যা মানব জীবনের এক অনন্য অধ্যায়কে চিহ্নিত করে। এটি কিশোরী মেয়েদের মানসিক, সামাজিক, এবং শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রেম, একটি অনুভূতি হিসেবে, এই বয়সে কিশোরীদের জীবনে বিশেষভাবে আবির্ভূত হয় এবং তাদের জীবনবোধ, মানসিক পরিপক্বতা, এবং ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করে। এই প্রবন্ধে কিশোরীর প্রেমের নানা দিক বিশ্লেষণ করা হবে—মানসিক বিকাশ, সামাজিক প্রভাব, এবং এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি নিয়ে।

কিশোর বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন একজন মেয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে দ্রুত পরিণত হতে থাকে। এই বয়সে প্রেম মূলত আবেগপ্রবণ, রোমাঞ্চকর এবং কৌতূহলনির্ভর হয়। এটি প্রথমবারের মতো একজন কিশোরীর জীবনে নতুন এক ধরনের আকর্ষণ, স্নেহ এবং সম্পর্ক গড়ার ইচ্ছা তৈরি করে। প্রেমের প্রতি এই আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই তার বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।কিশোরী বয়সের প্রেমের বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য বয়সের প্রেম থেকে আলাদা। এখানে আবেগ প্রাধান্য পায়, যুক্তি নয়। কিশোরীরা সাধারণত তাদের অনুভূতির গভীরতায় ডুবে যায় এবং তাদের প্রেমের সম্পর্কগুলোকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করে।

মানসিক ও শারীরিক বিকাশের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক : কিশোরীদের মনের গঠন এ সময় দ্রুত পরিবর্তিত হয়। তাদের মানসিক বিকাশের অংশ হিসেবে, আত্মবিশ্বাস, স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রেমের অনুভূতির মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। প্রেমের মাধ্যমে তারা নতুন আবেগ এবং মানসিক জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়। শারীরিক বিকাশও প্রেমের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই বয়সে কিশোরীদের শরীরে হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে, যা তাদের আবেগপ্রবণ করে তোলে। এই আবেগ, কখনও কখনও, তাদেরকে নতুন সম্পর্ক গড়তে বা একটি বিশেষ ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হতে প্রভাবিত করে।

কিশোরীর প্রেমের ইতিবাচক দিক : কিশোরীর প্রেমের কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যা তাকে মানসিক ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে সাহায্য করে। প্রেম একটি কিশোরীর মনে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার অনুভূতি জাগায়। একটি প্রেমময় সম্পর্ক কিশোরীর মানসিক শক্তি যোগাতে পারে। এটি তাকে একাকিত্ব থেকে মুক্তি দেয়। প্রেমের মাধ্যমে কিশোরীরা সম্পর্ক গড়ার কৌশল, সহযোগিতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে। এই বয়সে প্রেম কিশোরীদের আবেগ সম্পর্কে সচেতন হতে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়।

কিশোরীর প্রেমের নেতিবাচক দিক : তবে, প্রেমের আবেগ অতিমাত্রায় গভীর হলে তা কখনও কখনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেমের আবেগে ডুবে গিয়ে অনেক কিশোরী পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। সম্পর্কের জটিলতা ও প্রত্যাখ্যান অনেক কিশোরীর মধ্যে হতাশা বা মানসিক আঘাত তৈরি করতে পারে। প্রেমের কারণে অনেক কিশোরী পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে, যা সামাজিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। আবেগের বশবর্তী হয়ে কিশোরীরা অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব : কিশোরীদের প্রেম নিয়ে সমাজে নানা মতবিরোধ রয়েছে। অনেক সমাজে এটি নিষিদ্ধ বা ট্যাবু হিসেবে বিবেচিত হয়। এর ফলে, কিশোরীরা তাদের প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে। আবার কিছু সমাজে প্রেমকে প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যেখানে কিশোরীরা তাদের অনুভূতিগুলো সহজেই প্রকাশ করতে পারে।

পরিবারের ভূমিকা : পরিবারের ভূমিকা কিশোরীর প্রেমকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা যদি কিশোরীর প্রেমের ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করেন, তবে এটি কিশোরীর জন্য উপকারী হতে পারে। কিশোরীর অনুভূতিগুলোকে সম্মান জানিয়ে পরিবারের সদস্যরা তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারে। পরিবারের উচিত কিশোরীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা, তবে তা কখনও যেন তার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ না করে।

কিশোরীর প্রেমের নৈতিক শিক্ষা : প্রেমের আসল অর্থ বোঝানো। দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো সম্পর্কে সচেতন করা। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল শেখানো।

কিশোরীর প্রেম একটি স্বাভাবিক ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, এটি সঠিকভাবে পরিচালিত না হলে তা কিশোরীর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সমন্বিত ভূমিকা কিশোরীর প্রেমের আবেগকে সঠিক পথে চালিত করতে সহায়তা করতে পারে। একমাত্র তখনই কিশোরীরা প্রেমের মাধ্যমে জীবনের গভীর অর্থ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাবে।

কিশোর বয়স জীবনের এক অপরিহার্য ও উত্তেজনাপূর্ণ সময়। এ সময় মেয়েরা ধীরে ধীরে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। প্রেম, যা কিশোরীর জীবনে নতুন রঙ ও অনুভূতি নিয়ে আসে, তার মানসিক জগৎকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। প্রেমের আবেগ শুধু তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের অংশ নয়, এটি জীবনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতার শুরু।

প্রেমের আবেগের গভীরতা : কিশোরীদের প্রেম সাধারণত কল্পনাপ্রবণ ও আবেগনির্ভর হয়। তারা তাদের আদর্শ ব্যক্তিকে রোমান্টিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শুরু করে। কিশোরীদের প্রেমের সম্পর্ক অনেক সময় মনের গভীর চাহিদা, স্নেহ, এবং নিরাপত্তার খোঁজ থেকে আসে। প্রেমের এই অনুভূতি তাদের মনের গভীরে আশা ও আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়।

এই বয়সে প্রেমের সঙ্গে কিশোরীদের স্বপ্ন এবং বাস্তবতার দ্বন্দ্বও কাজ করে। তারা প্রেমকে শুধু সম্পর্ক হিসেবে নয়, বরং জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন দিক তাদের এই স্বপ্নকে ভেঙে দিতে পারে, যা তাদের আবেগের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

প্রেম ও শিক্ষার সমন্বয়  : প্রেম তাদের শিক্ষাজীবনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কিছু কিশোরী প্রেমের আবেগে মগ্ন হয়ে পড়াশোনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। আবার কিছু কিশোরী প্রেমের অনুপ্রেরণায় নিজেদের জীবনে বড় কিছু অর্জনের জন্য চেষ্টা করে।

ইতিবাচক দিক : প্রেম কিশোরীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা আনতে পারে। অনেকে তাদের ভালোবাসার মানুষের অনুপ্রেরণায় জীবনে বড় কিছু করার জন্য উৎসাহ পায়।

নেতিবাচক দিক : প্রেমের আবেগে কিশোরীরা অনেক সময় পড়াশোনার গুরুত্ব উপেক্ষা করে। এটি তাদের একাডেমিক ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিশোরীর প্রেমে বন্ধু ও সমাজের ভূমিকা : বন্ধুরা কিশোরীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে। এই বয়সে কিশোরীরা বন্ধুদের সঙ্গে তাদের প্রেমের অনুভূতি শেয়ার করে। বন্ধুরা অনেক সময় কিশোরীদের প্রেমের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কিশোরীর প্রেমকে অনেকভাবেই প্রভাবিত করে। কিছু সমাজে কিশোর বয়সে প্রেমকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। ফলে কিশোরীরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সংকোচবোধ করে। আবার, কিছু সংস্কৃতিতে প্রেমকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয়, যেখানে কিশোরীরা নিজেদের ইচ্ছা ও অনুভূতিগুলো নিয়ে খোলামেলা হতে পারে।

প্রেমের আবেগ নিয়ন্ত্রণে পারিবারিক ভূমিকা : পরিবার কিশোরীর প্রেমের বিষয়টি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। পরিবার যদি কিশোরীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয় এবং তার মনের কথা শোনার চেষ্টা করে, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।

বাবা-মা যদি কিশোরীর প্রেমের বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন, তবে কিশোরী তার অনুভূতি নিয়ে স্বস্তি পাবে। এটি তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগায়।পরিবারের উচিত কিশোরীদের জীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। তবে এটি যেন তাদের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ না করে।

প্রেমের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ : কিশোরীর প্রেম শুধু আবেগের বিষয় নয়; এটি তার ব্যক্তিত্ব গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রেম কিশোরীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, আত্মবিশ্বাস, এবং সহনশীলতা গড়ে তোলে। প্রেমের মাধ্যমে কিশোরীরা নিজেদের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাগুলো উপলব্ধি করতে পারে। প্রেমের সম্পর্ক কিশোরীদের মধ্যে যোগাযোগ দক্ষতা এবং আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।

সম্পর্কের বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে দিয়ে কিশোরীরা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করে।

প্রেম ও প্রযুক্তির প্রভাব: বর্তমান যুগে প্রযুক্তি কিশোরীর প্রেমের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সোশ্যাল মিডিয়া, মেসেজিং অ্যাপ, এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠা এখন একটি সাধারণ বিষয়। তবে, এটি যেমন সুবিধা দেয়, তেমনি বিপদও বয়ে আনতে পারে।

প্রযুক্তি প্রেমের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনে। এটি সম্পর্ককে সহজ এবং আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

প্রযুক্তি-নির্ভর সম্পর্ক কখনও কখনও কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গোপনীয়তার অভাব, অতিরিক্ত সময় ব্যয়, এবং প্রতারণার ঝুঁকি কিশোরীদের বিপদে ফেলতে পারে।

নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা : কিশোর বয়সে প্রেমের বিষয়টি নিয়ে সঠিক নৈতিক শিক্ষা এবং সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রেমের প্রকৃতি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রেমের ভূমিকা বোঝানো। সম্পর্কের সীমা এবং গোপনীয়তার গুরুত্ব বোঝানো

কিশোরীর প্রেম জীবনের একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রভাব ফেলে এবং তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। প্রেমের এই অধ্যায় সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সমর্থন পেলে কিশোরীরা জীবনে আরও সফল এবং পরিপক্ব হয়ে উঠতে পারে। বাবা-মা, শিক্ষক এবং সমাজের সহানুভূতি ও সমর্থন কিশোরীদের প্রেমের অনুভূতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। এর মাধ্যমে কিশোরীরা তাদের জীবনের ইতিবাচক লক্ষ্যগুলো অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে।

লেখক: উজ্জ্বল হোসাইন, সংগঠক ও প্রাবন্ধিক। মোবাইল : 016751283, rtrujjal@gmail.com

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।