খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

মানবতা : সঙ্কটময় সময়ে সম্প্রীতিই একমাত্র পথ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ
মানবতা : সঙ্কটময় সময়ে সম্প্রীতিই একমাত্র পথ

মানবতা একটি সর্বজনীন অনুভূতি, যা মানুষকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি, এবং সহমর্মিতা দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমান সময়ে মানবতার প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রযুক্তি, আধুনিকতা, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে মানুষ তার মানবিক গুণাবলি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই, সমাজ ও বিশ্বের কল্যাণে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

মানবতা এবং এর তাৎপর্য : মানবতা হলো একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি। এটি কোনো ধর্ম, বর্ণ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সর্বজনীন। যখন একজন ব্যক্তি অন্যের কল্যাণে কাজ করে, তখন তিনি মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে যান। এটি কেবল সাহায্য নয়, বরং একটি মনের অবস্থা যেখানে মানুষ অন্যদের প্রতি দয়া, উদারতা এবং সেবার মনোভাব দেখায়। মানবতার সেবা শুধু অন্যের উপকারের জন্য নয়, নিজের আত্মার শান্তি এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে : সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা-মানবতার সেবার মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমানো যায়। সম্প্রীতি বজায় রাখা-একে অপরের সাহায্যে সমাজে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় থাকে। মর্যাদা রক্ষা-প্রত্যেক মানুষের জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং তাদের মর্যাদাকে সম্মান জানানো মানবতার অংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান-শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো মানবতাবাদী দায়িত্ব।

মানবতার সেবার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ : মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের কারণে মানুষ একে অপরের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সমাজে সচেতনতার অভাব অনেক সমস্যার মূল কারণ। ধর্ম, জাতি, এবং ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন মানবতার সেবার পথে একটি বড় বাধা।

কীভাবে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায় : মানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অশিক্ষিত জনগণের মাঝে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া মানবতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরিবেশের সুরক্ষা মানবতারই একটি অংশ। বৃক্ষরোপণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার, এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে মানবতা রক্ষা করা। থেকে বঞ্চিত মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। রক্তদান, অঙ্গদান এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া।অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য যেকোনো বিপর্যয়ের সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। যেমন : বন্যা, ভূমিকম্প, কিংবা মহামারীর সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে রোটারী, লায়ন, রেড ক্রিসেন্ট, ইনার হুইলসহ এ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে কাজগুলো করা।

মানবতার সেবা এবং ধর্ম : প্রত্যেক ধর্ম মানবতার সেবার উপর গুরুত্বারোপ করে। ইসলাম বলে, মানবতার সেবা করা মহান কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো। হিন্দু ধর্মে মানবসেবা পরম ধর্ম হিসেবে বিবেচিত। খ্রিস্টধর্ম বলে, তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসো। বৌদ্ধধর্মে সহমর্মিতা এবং দয়াকে সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়া হয়।

উদাহরণস্বরূপ মহান ব্যক্তিত্ব ; ইতিহাসে বহু ব্যক্তিত্ব মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মাদার তেরেসা-তিনি তার পুরো জীবন দরিদ্র ও অসহায়দের সেবায় কাটিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা, তিনি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন। বেগম রোকেয়া, নারীদের শিক্ষা এবং অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আব্রাহাম লিংকন, দাসত্ব প্রথার অবসান ঘটিয়ে মানবতার সেবা করেছ।

মানবতার সেবা এবং আধুনিক প্রজন্ম : বর্তমান প্রজন্মের কাছে মানবতার সেবা করার অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তারা দ্রুত সমাজের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে পারে। তরুণদের উচিত তাদের প্রতিভা এবং শক্তি মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করা। এসো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি এই আহ্বান কেবল একটি বাক্য নয়; এটি একটি দায়িত্ব, একটি নৈতিক আদর্শ। মানবতার সেবা আমাদের সমাজকে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত করতে সাহায্য করে। আমরা যদি একে অপরের পাশে দাঁড়াই, তবে একটি মানবিক পৃথিবী গড়া সম্ভব। তাই আসুন, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি এবং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করি।মানবতার সেবা কেবল দয়া প্রদর্শন নয়। এটি সমাজের ভিত্তি গড়ে তোলার একটি প্রক্রিয়া। এটি ব্যক্তি থেকে শুরু করে পুরো জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। একজন মানুষ যখন মানবতার কল্যাণে কাজ করেন, তখন তার প্রভাব সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে অনেকের জীবনে পড়ে। মানবতার সেবা কেবল আর্থিক সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সময়, জ্ঞান, এবং সহানুভূতি প্রদানের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনে মানবতার সেবা : মানবতার সেবা বড় কিছু করতে হবে এমন নয়; এটি দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও করা সম্ভব। অন্যকে সাহায্য করা : রাস্তায় অসহায় কারো পাশে দাঁড়ানো বা অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছাতে সাহায্য করা। সময় দান : বৃদ্ধাশ্রম বা এতিমখানায় সময় কাটানো। সচেতনতা বৃদ্ধি : জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরি করা। পরিচ্ছন্নতা : সমাজের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা।

মানবতার সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার : প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট মানবতার সেবায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। উদাহরণস্বরূপ : অনলাইন দান প্ল্যাটফর্ম : বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম : দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের অবস্থা তুলে ধরে সমাজের সচেতনতা বাড়ানো। মানবিক উদ্যোগের প্রচার : অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা। ডিজিটাল শিক্ষা : অনলাইন শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত করা।

মানবতার সেবা এবং নারীর ভূমিকা : নারীরা সমাজের অর্ধেক। তারা মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ : শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকরা সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বাস্থ্যসেবায় নারী ডাক্তার, নার্স, এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের জীবন বাঁচাতে দিন-রাত কাজ করেন। পরিবারে মানবিক মূল্যবোধ, একজন মা সন্তানের মধ্যে মানবিক গুণাবলী গড়ে তোলার প্রধান ভূমিকা পালন করেন।

সংকটময় সময়ে মানবতার সেবা : সংকটকালীন সময়ে মানবতার সেবা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯ এর সময় ডাক্তার, নার্স, এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভূমিকম্প, কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাদ্য, আশ্রয়, এবং চিকিৎসা প্রদান করা। যুদ্ধ ও শরণার্থী সঙ্কট, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

সমাজের উন্নয়নে মানবতার সেবার অবদান : মানবতার সেবার মাধ্যমে সমাজে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব। দারিদ্র্য দূরীকরণ-দারিদ্র্যের চক্র থেকে মানুষকে বের করে এনে তাদের স্বাবলম্বী করা। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান-দরিদ্রদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। সমাজের অগ্রগতি-মানবতার সেবা সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সমঝোতা বৃদ্ধি করে।

মানবতার সেবার নৈতিক দিক : মানবতার সেবা কোনো প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশায় করা হয় না। এটি আত্মিক এবং নৈতিক দায়িত্ব।অন্যের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে যে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব নয়। সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের উচিত নিজের ভূমিকা পালন করা।: মানবতার সেবা আমাদের নৈতিক চরিত্রকে উন্নত করে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেয়।

শিক্ষার্থীদের মানবতার সেবায় অংশগ্রহণ : শিক্ষার্থীরা সমাজের ভবিষ্যৎ। তারা মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজসেবা প্রকল্প বা ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করা। স্কুল, কলেজে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা। স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করা।

দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ : বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা মানবতার সেবায় অসাধারণ অবদান রেখেছেন। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট : দুর্যোগকালীন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। রোটারী ও রোটার‌্যাক্ট-বিভিন্ন সময়ে দেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও মহামারিসহ সঙ্কটকালীন সময়ে রোটারী ও রোটার‌্যাক্ট মানবতার সেবায় কাজ করছে। গ্রামীণ ব্যাংক : ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আশা সংস্থা : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বোপরি-এসো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি—এই আহ্বানকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর। যোগাযোগ : 01710802899, rtrujjal@gmail.com

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।