খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

মানবতা : সঙ্কটময় সময়ে সম্প্রীতিই একমাত্র পথ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ
মানবতা : সঙ্কটময় সময়ে সম্প্রীতিই একমাত্র পথ

মানবতা একটি সর্বজনীন অনুভূতি, যা মানুষকে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি, এবং সহমর্মিতা দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমান সময়ে মানবতার প্রয়োজনীয়তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রযুক্তি, আধুনিকতা, এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে মানুষ তার মানবিক গুণাবলি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই, সমাজ ও বিশ্বের কল্যাণে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

মানবতা এবং এর তাৎপর্য : মানবতা হলো একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর শক্তি। এটি কোনো ধর্ম, বর্ণ বা জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সর্বজনীন। যখন একজন ব্যক্তি অন্যের কল্যাণে কাজ করে, তখন তিনি মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে যান। এটি কেবল সাহায্য নয়, বরং একটি মনের অবস্থা যেখানে মানুষ অন্যদের প্রতি দয়া, উদারতা এবং সেবার মনোভাব দেখায়। মানবতার সেবা শুধু অন্যের উপকারের জন্য নয়, নিজের আত্মার শান্তি এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য। এর মধ্যে রয়েছে : সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠা-মানবতার সেবার মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান কমানো যায়। সম্প্রীতি বজায় রাখা-একে অপরের সাহায্যে সমাজে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় থাকে। মর্যাদা রক্ষা-প্রত্যেক মানুষের জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা এবং তাদের মর্যাদাকে সম্মান জানানো মানবতার অংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদান-শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো মানবতাবাদী দায়িত্ব।

মানবতার সেবার ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ : মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের কারণে মানুষ একে অপরের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। সমাজে সচেতনতার অভাব অনেক সমস্যার মূল কারণ। ধর্ম, জাতি, এবং ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন মানবতার সেবার পথে একটি বড় বাধা।

কীভাবে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা যায় : মানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির সচেতন প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করা। অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অশিক্ষিত জনগণের মাঝে শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া মানবতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরিবেশের সুরক্ষা মানবতারই একটি অংশ। বৃক্ষরোপণ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণের ব্যবহার, এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে মানবতা রক্ষা করা। থেকে বঞ্চিত মানুষদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। রক্তদান, অঙ্গদান এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া।অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা স্বাবলম্বী হতে পারবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য যেকোনো বিপর্যয়ের সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো। যেমন : বন্যা, ভূমিকম্প, কিংবা মহামারীর সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে রোটারী, লায়ন, রেড ক্রিসেন্ট, ইনার হুইলসহ এ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে কাজগুলো করা।

মানবতার সেবা এবং ধর্ম : প্রত্যেক ধর্ম মানবতার সেবার উপর গুরুত্বারোপ করে। ইসলাম বলে, মানবতার সেবা করা মহান কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা একে অপরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো। হিন্দু ধর্মে মানবসেবা পরম ধর্ম হিসেবে বিবেচিত। খ্রিস্টধর্ম বলে, তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসো। বৌদ্ধধর্মে সহমর্মিতা এবং দয়াকে সর্বোচ্চ মূল্য দেওয়া হয়।

উদাহরণস্বরূপ মহান ব্যক্তিত্ব ; ইতিহাসে বহু ব্যক্তিত্ব মানবতার সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। মাদার তেরেসা-তিনি তার পুরো জীবন দরিদ্র ও অসহায়দের সেবায় কাটিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা, তিনি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করেছেন। বেগম রোকেয়া, নারীদের শিক্ষা এবং অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আব্রাহাম লিংকন, দাসত্ব প্রথার অবসান ঘটিয়ে মানবতার সেবা করেছ।

মানবতার সেবা এবং আধুনিক প্রজন্ম : বর্তমান প্রজন্মের কাছে মানবতার সেবা করার অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রযুক্তি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে তারা দ্রুত সমাজের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করতে পারে। তরুণদের উচিত তাদের প্রতিভা এবং শক্তি মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করা। এসো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি এই আহ্বান কেবল একটি বাক্য নয়; এটি একটি দায়িত্ব, একটি নৈতিক আদর্শ। মানবতার সেবা আমাদের সমাজকে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত করতে সাহায্য করে। আমরা যদি একে অপরের পাশে দাঁড়াই, তবে একটি মানবিক পৃথিবী গড়া সম্ভব। তাই আসুন, ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি এবং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে কাজ করি।মানবতার সেবা কেবল দয়া প্রদর্শন নয়। এটি সমাজের ভিত্তি গড়ে তোলার একটি প্রক্রিয়া। এটি ব্যক্তি থেকে শুরু করে পুরো জাতির উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। একজন মানুষ যখন মানবতার কল্যাণে কাজ করেন, তখন তার প্রভাব সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে অনেকের জীবনে পড়ে। মানবতার সেবা কেবল আর্থিক সাহায্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সময়, জ্ঞান, এবং সহানুভূতি প্রদানের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনে মানবতার সেবা : মানবতার সেবা বড় কিছু করতে হবে এমন নয়; এটি দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজের মাধ্যমেও করা সম্ভব। অন্যকে সাহায্য করা : রাস্তায় অসহায় কারো পাশে দাঁড়ানো বা অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে পৌঁছাতে সাহায্য করা। সময় দান : বৃদ্ধাশ্রম বা এতিমখানায় সময় কাটানো। সচেতনতা বৃদ্ধি : জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরি করা। পরিচ্ছন্নতা : সমাজের পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা।

মানবতার সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার : প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট মানবতার সেবায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। উদাহরণস্বরূপ : অনলাইন দান প্ল্যাটফর্ম : বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় অনলাইনের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম : দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের অবস্থা তুলে ধরে সমাজের সচেতনতা বাড়ানো। মানবিক উদ্যোগের প্রচার : অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা। ডিজিটাল শিক্ষা : অনলাইন শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষার সুযোগ বিস্তৃত করা।

মানবতার সেবা এবং নারীর ভূমিকা : নারীরা সমাজের অর্ধেক। তারা মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ : শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী শিক্ষকরা সমাজে শিক্ষার আলো ছড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। স্বাস্থ্যসেবায় নারী ডাক্তার, নার্স, এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের জীবন বাঁচাতে দিন-রাত কাজ করেন। পরিবারে মানবিক মূল্যবোধ, একজন মা সন্তানের মধ্যে মানবিক গুণাবলী গড়ে তোলার প্রধান ভূমিকা পালন করেন।

সংকটময় সময়ে মানবতার সেবা : সংকটকালীন সময়ে মানবতার সেবা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯ এর সময় ডাক্তার, নার্স, এবং স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভূমিকম্প, কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাদ্য, আশ্রয়, এবং চিকিৎসা প্রদান করা। যুদ্ধ ও শরণার্থী সঙ্কট, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

সমাজের উন্নয়নে মানবতার সেবার অবদান : মানবতার সেবার মাধ্যমে সমাজে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সম্ভব। দারিদ্র্য দূরীকরণ-দারিদ্র্যের চক্র থেকে মানুষকে বের করে এনে তাদের স্বাবলম্বী করা। শিক্ষা ও কর্মসংস্থান-দরিদ্রদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। সমাজের অগ্রগতি-মানবতার সেবা সমাজের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সমঝোতা বৃদ্ধি করে।

মানবতার সেবার নৈতিক দিক : মানবতার সেবা কোনো প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশায় করা হয় না। এটি আত্মিক এবং নৈতিক দায়িত্ব।অন্যের কল্যাণে কাজ করার মাধ্যমে যে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়, তা অন্য কিছুতে পাওয়া সম্ভব নয়। সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের উচিত নিজের ভূমিকা পালন করা।: মানবতার সেবা আমাদের নৈতিক চরিত্রকে উন্নত করে এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার শিক্ষা দেয়।

শিক্ষার্থীদের মানবতার সেবায় অংশগ্রহণ : শিক্ষার্থীরা সমাজের ভবিষ্যৎ। তারা মানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজসেবা প্রকল্প বা ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করা। স্কুল, কলেজে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা। স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করা।

দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ : বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা মানবতার সেবায় অসাধারণ অবদান রেখেছেন। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট : দুর্যোগকালীন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। রোটারী ও রোটার‌্যাক্ট-বিভিন্ন সময়ে দেশে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও মহামারিসহ সঙ্কটকালীন সময়ে রোটারী ও রোটার‌্যাক্ট মানবতার সেবায় কাজ করছে। গ্রামীণ ব্যাংক : ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আশা সংস্থা : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বোপরি-এসো মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করি—এই আহ্বানকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সংগঠক, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর। যোগাযোগ : 01710802899, rtrujjal@gmail.com

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।