খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৮ কার্তিক, ১৪৩২

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪১ অপরাহ্ণ
উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত নয়, বলা ভালো, গরম চুল্লির ঢাকনা সবে নড়তে শুরু করেছে। কারণ একটাই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি এবার শুধু অর্থনীতির সমীকরণ নয়, রাজনীতির সমীকরণও মেলাতে নেমেছেন। কিন্তু তার কাগজের খাতা যেন উলটেপালটে গেছে উপদেষ্টাদের নিয়েই।

গত ক’দিনে পরপর তিনটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। প্রতিটি বৈঠকই ছিল রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই তিন দল এক সুরে বলেছে, উপদেষ্টাদের অনেকে নিরপেক্ষ নন, তারা দলীয় ভূমিকা পালন করছে।

একই কথা তিন দলের মুখে শুনে মনে হতে পারে, যেন পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কে? তা নিয়ে এখনই জল্পনা তুঙ্গে।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দুই নাম, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। দু’জনই তরুণ, এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের বর্তমান নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁরা অন্তবর্তী নিরপেক্ষ সরকারের থেকে এনসিপির হয়ে কাজ করছেন।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার প্রধানের কার্যালয় থেকে এই দুই উপদেষ্টাকে নাকি পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আলমের পরিবারের একজন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। আর আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচন পূর্ব দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের যেতে হবে’। বিএনপির দাবি, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নেই,অন্তর্বর্তী সরকারকেই সেই ভূমিকা নিতে হবে। তাই অন্তত নিরপেক্ষতার আবরণটুকু বজায় থাকুক।
কিন্তু ‘নিরপেক্ষতা’ কথাটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত মুদ্রা। যেদিকেই উলটে ধরো, কারও না কারও মুখ সেখানে ফুটে ওঠে।
বিএনপি একা নয়। জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপিও অভিযোগ তুলেছে – সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ তো অতীতে নির্বাচনে প্রার্থীও ছিলেন। আবার জাতীয় পার্টির একাংশ ও গণ অধিকার পরিষদও বলেছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
এমনটা যদি অবস্থা হয় তাহলে অধ্যাপক ইউনুস কি আসন্ন নির্বাচনে এমন এক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আছেন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু দেশের ভেতরে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, ইউনুস সাহেব হয়তো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না উপদেষ্টাই।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিজেরাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
বাংলাদেশে ‘নির্দলীয়’ শব্দটির এক বিশেষ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই ছিল নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন। ২০১১ সালে সেই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এক জায়গায় – এখন নির্বাচন দেখবে কে?
অধ্যাপক ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারত। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মানদণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সেই সমীকরণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে?
ঢাকার রাজনৈতিক চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন নাগরিক সমাজও প্রশ্ন তুলছে – ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের উপদেষ্টারা আসলে কতটা নিরপেক্ষ? কেউ ব্যাংকের পরিচালক,কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি,কেউ আবার সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কারও না কারও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারে বসে সেই যোগাযোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়েই বড় আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস’ নামের জিনিসটা বহুদিন আগেই অনুপস্থিত। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করে না, প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না, এমনকি গণমাধ্যমকেও করে না। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে,তাহলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
অধ্যাপক ইউনুস এখন যে পরিস্থিতিতে আছেন, তাতে তাকে একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— তিন ভূমিকাতেই অভিনয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতি তিনি বোঝেন, রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু মনস্তত্ত্ব? সেটাই সবচেয়ে জটিল। কারণ,তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাকে উপদেষ্টা করা হলো, কোন দলের অনুরোধে করা হলো, কে কী ভূমিকা রাখছেন – সব কিছু নিয়েই চলছে ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যা।
তাঁর সামনে এখন দুটি পথ – হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে একদম পরিষ্কার বার্তা দেওয়া, নয়তো রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড়ের গতি এমন যে,তাতে অভিজ্ঞ নাবিকও দিক হারিয়ে ফেলেন।
এখন নাগরিক সমাজের কৌতূহল একটাই – এই উপদেষ্টাদের নিয়েই কি অধ্যাপক ইউনুস নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা কি আর মুছবে?
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক রণক্ষেত্র। সেই মাঠে যদি রেফারির পক্ষপাত নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে,তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর নিশ্চয়ই তা জানে। এখন দেখা যাক, অধ্যাপক ইউনুস এই ঝড়ের মধ্যে কীভাবে নিজের নৌকো চালান – অর্থনীতির সূত্রে,নাকি রাজনীতির কৌশলে।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩০ অপরাহ্ণ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কি-না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলার সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করে। ফলে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৫তম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কিস্তি ও আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ এর দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি মিশন দুই সপ্তাহ করে বাংলাদেশে এসে রিভিউ করে থাকে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবরে এই মিশন আসছে বাংলাদেশে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবগুলো পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।’ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণের আগামী কিস্তির অর্থ ডিসেম্বরের বদলে মার্চ-এপ্রিলে ছাড় করবে আইএমএফ।

‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ অপরাহ্ণ
‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

বলিউড কিংবা হলিউডের অনেক তারকাই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। মার্কিন পপ তারকা কার্ডি বি থেকে বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি, আনুশকা শর্মা—অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা স্বীকারও করেছেন। যদিও ঢাকার তারকাদের মধ্যেও অনেকের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তা নিয়ে তাদের খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি এক পডকাস্ট শোতে হাজির হয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সেখানে জয়া আহসান বলেন, ‘মানুষ বলে, আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা। এটা কিন্তু আমি শুনেছি।আমার নাকি হেড টু টো (মাথা থেকে পা পর্যন্ত) প্লাস্টিক সার্জারি করা।’ এরপর তিনি বলেন, ‘বোটক্স, এটা-সেটা (ব্যবহার করি)—এগুলো বলে মানুষ। মানুষ মনে করে, এগুলো (মন্তব্য) আমি দেখি না। আমি দেখি মাঝেমধ্যে। আমাদের কমেন্ট বক্স দেখলে আমাদের দেশের পুরুষদের স্টেট অব মাইন্ডটা (মানসিক অবস্থা) বোঝা যায়।’ তবে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন, নাকি করেননি—তা স্পষ্ট করেননি এই অভিনেত্রী। এ সময় ট্রল প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’ ছবিতে তাঁর বলা ‘মারোওও’ সংলাপটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রল হয়।
এই প্রসঙ্গে জয়া বলেন, এটা খুব দরকার ছিল, ভালো হয়েছে তো, পচানি খাইছি না। সব সময় সবকিছুতে সফল হব? ভুল করেছি, সেটাই ঠিক আছে। আমার জীবনে কোনো কিছু ভুল না। ওই ভুলগুলো নিয়েই আজকের জয়া আমি। ২০২৫ সাল জয়া আহসানের জন্য বেশ সফল একটি বছর। বাংলাদেশ ও ভারতে তার অভিনীত ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ডিয়ার মা’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার নতুন ছবি ‘ফেরেশতে’। পাশাপাশি ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ‘জয়া আর শারমিন’ ও ‘নকশীকাঁথার জমিন’।