খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়

প্রকল্পের সঙ্গে জলে গেছে ২৭ কোটি, ফের বরাদ্দ ৫০ কোটি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
প্রকল্পের সঙ্গে জলে গেছে ২৭ কোটি, ফের বরাদ্দ ৫০ কোটি

রাজধানীর গুলশানের উত্তর বারিধারার আট বিঘা জমিতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের নামে চলছে বিপুল অর্থের অপচয়। প্রথমে প্রবাসীদের জন্য কিডনি হাসপাতাল ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা চলে। পরে হাউজিং প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগে কেটেছে দুই দশকের বেশি সময়। সেখান থেকে সরে মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড আবারও ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডরমিটরি এবং একটি কমার্শিয়াল ভবন নির্মাণের মহাপরিকল্পনা নেয়। আড়াই দশকে এসব কর্মকাণ্ডে সাড়ে ২৭ কোটি টাকা খরচ হলেও কোনো প্রকল্পই আলোর মুখ দেখেনি।
প্রকল্পের জন্য গুলশানের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই তড়িঘড়ি করে পিপিআরের আইন ভেঙে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র ২০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত জুলাই থেকে আগামী ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত এর মেয়াদ। এই হাসপাতাল পরিচালনায় বোর্ডের আইন ভঙ্গ করেই বোর্ড সভা এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই গঠন করা হচ্ছে কোম্পানি। এতেই কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, অপরিকল্পিতভাবে প্রবাসীদের বিনিয়োগে হাসপাতাল নির্মাণে তাদের কোনো উপকারে আসবে না। এ ছাড়া সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোম্পানি গঠনে জটিলতা তৈরি হবে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে গুলশান-ভাটারার (উত্তর বারিধারা) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রবাসীদের কল্যাণে কিডনি হাসপাতাল এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য ১৫১ দশমিক ৫৪ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়। পরবর্তী সময়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এখানে প্রবাসীদের জন্য ৫০০ ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে চাইলে আরও ১৫ দশমিক ৭৪ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়। বর্তমানে এই জমির মূল্য ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
হাউজিং প্রকল্পে ছয়টি ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে কল্যাণ বোর্ড ২০০৪ সালে দুই হাউজিং কোম্পানিকে কার্যাদেশ প্রদান করে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠান দুটি বেজমেন্টসহ একটি ভবনের লেভেল-২ পর্যন্ত,  অন্য একটি ভবনের লেভেল-৪ পর্যন্ত ফ্রেম স্ট্রাকচারের নির্মাণকাজ এবং পুরো জমিতে পাঁচটি ভবনের পাইলিং করার পর নির্মাণ মূল্য বৃদ্ধির জন্য আবেদন করে। এই জটিলতায় ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় করে কাজ অসমাপ্ত করে ২০২০ সালে প্রকল্প বন্ধ করে সরকার।
এর মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রবাসীদের পরিবারের এক অনুষ্ঠানে বারিধারার জায়গাটিতে নতুন করে হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দেন। নতুন এই প্রকল্পে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ৫১ শতাংশ শেয়ার থাকবে এবং ৪৯ শতাংশ শেয়ার হবে প্রবাসীদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে কল্যাণ বোর্ড উপদেষ্টার ঘোষণা বাস্তবায়নে তড়িঘড়ি করে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আট বিঘা জমিতে নিজস্ব অর্থায়নে ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) নির্মাণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
গত ২৬ আগস্ট ৩৩৪তম বোর্ড সভায় মন্ত্রণালয়ের এসব কোনো মতামত গ্রহণ না করেই প্রকল্পটি অনুমোদন এবং ৩১ আগস্ট প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আর্থিক অনুমোদনও দেন। তবে প্রকল্প প্রণয়নে কোনো ধরনের সমীক্ষা এবং নতুন করে মাস্টারপ্ল্যানও করা হয়নি। কারিগরি ও বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়াই প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করেছেন কল্যাণ বোর্ডের অর্থ, বাজেট ও কল্যাণ পরিচালক ড. এটিএম মাহবুব-উল করিম, ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান, প্রশাসন ও সেবা সহকারী পরিচালক নাজমুল হক এবং বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আবু শাহাদাত মো. শরীফ।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসীকল্যাণ হাসপাতাল পরিচালনার জন্য এর মধ্যেই বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই প্রবাসীকল্যাণ সার্ভিস পিএলসি নামে একটি কোম্পানির ছাড়পত্র গ্রহণ করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, যা বোর্ড আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান সমকালকে বলেন, বারিধারার জায়গাটি অবস্থানগত কারণে অনেক মূল্যবান। সেখানে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ৩০০ শয্যার হাসপাতাল না করে মাত্র ২০ শয্যার হাসপাতাল করাটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত না।
প্রবাসীকল্যাণ হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থ ও বাজেট এবং কল্যাণ পরিচালক ড. এটিএম মাহবুব-উল করিম বলেন, উপদেষ্টা প্রবাসীদের জন্য একটি হাসপাতাল দ্রুত নির্মাণের নির্দেশনা ছিল। সেখানে বোর্ডের সঙ্গে প্রবাসীরাও শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ করবেন। এই নির্দেশনা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্যই প্রথম পর্যায়ে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের সবাই মিলে প্রকল্পটি সাজানো হয়েছে। আগের মাস্টারপ্ল্যানের ৩০০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি এবং মাস্টারপ্ল্যান কিছুটা অনুসরণ করা হবে, তবে সম্পূর্ণটা না।
ডিপিপি প্রস্তুতে ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান, প্রশাসন ও সেবা সহকারী পরিচালক নাজমুল হক এবং বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আবু শাহাদাত মো. শরীফ জানান, এ ধরনের প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমরা ডিপিপির কাঠামো দেখে এ প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুত করেছি। ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক ব্যারিস্টার গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, আপাতত ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প শুরু হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটি দুই হাজার কোটিতে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, এ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। ২০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে কিনা, জানি না। এটি বোর্ডের চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন।
প্রকল্প সম্পর্কে জানতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে একাধিকবার কল ও মেসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি বুধবার দপ্তরে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ণ
নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নটমঞ্চের ২০তম প্রযোজনা নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) রাতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে মেইড ইন কালচারাল ফেস্টিভ্যাল সাংস্কৃতিক উৎসবে নটমঞ্চের বিদ্যামন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করা হয় ।
মহীউদ্দিন ছড়া’র রচনায় আক্রাম খানের নির্দেশনায় ও পিএম বিল্লালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকে যারা অভিনয় করেছেন এবং নেপথ্যে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন গোবিন্দ মন্ডল, সাধন চন্দ্র দত্ত, মোরশেদ আলম, আহমেদ তানজিল, মরিয়ম আক্তার রাহা, আছিয়া আক্তার মিথিলা, মুক্তা আক্তার, নূরে আলম, সাইফুল ইসলাম, নূরজাহান বেগম, মৌমিতা, রিয়াদ, রিপন প্রমুখ।
নটমঞ্চের সভাপতি উজ্জ্বল হোসাইন জানান, এটি একটি শিক্ষামূলক নাটক। “বিদ্যামন্ত্র” নাটকের সূচনায় মঞ্চে উপস্থিত হন এক রহস্যময় বৃদ্ধ চরিত্র গল্পবুড়ো। তাঁর কণ্ঠে নাটকের জগত প্রাণপায়। তিনি দর্শকদের বলেন, এই যে পৃথিবী এখানে প্রেম আর অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে। কেউ জ্ঞানের আলো খোঁজে, কেউ সেই জ্ঞানকেই মন্ত্র বানিয়ে মানুষকে বশ করে রাখে। গল্পবুড়োর কথায় পর্দা খুলে যায় এক রূপকথার রাজ্যের দরজা। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, হৃদয়ে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে বসবাস করে। প্রতিরাতে স্বপ্নে সে দেখে এক অচেনা রাজকুমারীর মুখ—তার চোখে অনন্ত স্নেহ, তবু গভীর বিষাদের ছায়া। রাজপুত্র জানে না এ প্রেম কল্পনা, না কি নিয়তির নির্দেশ। সেই অজানা মুখের টানে সে দেশ-দেশান্তর পাড়ি দেয়, পর্বত, নদী, মরুভূমি পেরিয়ে একদিন এসে পৌঁছায় এক অদ্ভুত রাজ্যে। সে রাজ্য রাক্ষসে দখলে। সে একসময় ছিল রাজ্যের পণ্ডিত, কিন্তু জ্ঞানের অপব্যবহার করে সে সৃষ্টি করেছে “বিদ্যামন্ত্র” এক অভিশপ্ত শক্তি যার দ্বারা নারীদের মন, দেহ ও চিন্তা সে বশ করে রেখেছে। তার প্রাসাদে বন্দী শত শত নারীর মধ্যে দু’জন প্রধান চরিত্র কেশবতি ও হীরামন। কেশবতি রাজ্যের প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী, যার চোখে এখনো মুক্তির দীপ্তি জ্বলে; হীরামন এক জ্ঞানী নারী, যে বিদ্যামন্ত্রের রহস্য জানে কিন্তু তা ভাঙতে অক্ষম। রাজপুত্র এসে এই অমানবিক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। তার হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। কেশবতির চোখে সে চিনে ফেলে সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে যাকে খুঁজে সে এতদিন ঘুরেছে। কিন্তু কেশবতি এখন বিদ্যামন্ত্রে  বন্দী। তাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো “বিদ্যামন্ত্র” ভাঙা, যা কেবল সত্য প্রেম, সাহস, এবং জ্ঞানের আলোকেই সম্ভব।
গল্পবুড়োর বর্ণনায় নাটক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। রাজপুত্র হীরামনের সহযোগিতায় রাক্ষসের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেখানে ঘটে আলো ও অন্ধকারের এক ভয়ংকর সংঘর্ষ। শেষে প্রেমের বিশুদ্ধতা ও কেশবতির আত্মত্যাগে ভেঙে যায় বিদ্যামন্ত্র। নারীরা ফিরে পায় মুক্তি, অমরাবতী রাজ্যে ফিরে আসে গান, আলো, আর মানবতার গৌরব।
নাটক “বিদ্যামন্ত্র” প্রেম, জ্ঞান ও মানবমুক্তির এক প্রতীকী কাহিনি। এখানে রাজপুত্রের অভিযান কেবল এক নারীর মুক্তি নয় এটি নারী স্বাধীনতা, জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং মানবিকতার জয়গাথা।
নাটকটি চাঁদপুরের বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপভোগ করেন।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।