খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত, সারাদিন যা যা ঘটলো

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ণ
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত, সারাদিন যা যা ঘটলো

আর কিছুক্ষণ পরেই ছুটি হতো জুনিয়রদের। কিন্তু সবকিছু শেষ হয়ে গেল- এমনটাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও বিএনসিসির এক সদস্য। সোমবার (২১ জুলাই) দুপরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান প্রতিষ্ঠানটির জুনিয়র সেকশনের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। এতে মুহূর্তেই বিকট বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই শিক্ষার্থী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ক্যাম্পাসের মোট ১১টা ভবনের মধ্যে ৪-৫টি ভবনে জুনিয়র সেকশনের ক্লাস। হয়। দুপুরে ছুটির কিছুক্ষণ আগে প্রশিক্ষণ বিমানটি একটি জুনিয়র সেবশনের ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে। এ সময় ওই শিক্ষার্থী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন চোখের সামনে দেখেছি ভাই। আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। আর কিছুক্ষণ পরেই সবার ছুটি হতো।
এদিকে দুর্ঘটনার পরে আতঙ্কে ছুটতে থাকেন শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মচারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুইতলা ভবনের নিচ তলায় আঘাত লেগে মুহূর্তেই বিমানের ট্যাংক বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুইতলায়। মাইলস্টোন কলেজের এই ভবনে তখন নিয়মিত পাঠদান চলছিল। বিমান বিধ্বস্তের পর দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন সবাই। চিৎকার আর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। দুর্ঘটনার পরপরই একে একে বের করে আনা হয় হতাহতদের। ঘটনাস্থলে আসে আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, গুরুতর আহতদের উদ্ধার কাজে যোগ দেয় হেলিকপ্টার। কয়েক দফায় হেলিকপ্টারে করে আহতদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিমানটি বিধস্ত হওয়ার সময় যে বিকট শব্দ হয় তা কোনো বোমার থেকে কম নয়। প্রথমদিকে ঘটনাস্থলে আগুনের তীব্রতায় কেউ কাছে পৌঁছাতে পারেনি।
নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০
এ পর্যন্ত বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামসহ ২০ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। আর আহত ও দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭১ জন।
ডিএনএ পরীক্ষায় হস্তান্তর হবে মরদেহ
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক‍্যাম্পাসে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ডিএনএ স্যাপম্পলিংয়ের মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, হতাহতের ঘটনায় যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে তাদের মরদেহ দ্রুততম সময়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর যাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যাবে না, তাদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
দুর্ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে বিমান বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব এবং ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে বলেও বার্তায় জানায় আইএসপিআর।
রাষ্ট্রীয় শোক
বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ জুলাই) একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
এছাড়া দুর্ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শোকবার্তায় তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনায় বিমানসেনা ও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীসহ অন্যান্যদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। জাতির জন্য এটি একটি গভীর বেদনার ক্ষণ।
শোক জানালেন রাজনৈতিক দলের নেতারা
বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশের পাশাপাশি স্বজন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও তারকারা শোক প্রকাশ করেছেন।
জাতিসংঘের সমবেদনা
প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে জাতিসংঘ। বিকেলে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বার্তায় এ সমবেদনার বার্তা জানানো হয়।
শোক জানিয়ে সহায়তার প্রস্তাব মোদির
বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে, সম্ভাব্য সব সমর্থন ও সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।  সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে মোদি বলেছেন, ‘ঢাকায় এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায়—যাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ শিক্ষার্থী–আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ভারত বাংলাদেশের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা ও সমর্থন দিতে প্রস্তুত।’

স্কুল আঙিনায় পড়ে আছে স্কুলব্যাগ, হয়তো তাদের অনেকেই আর ফিরবে না
উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলের আঙিনায় পড়ে ছিল কয়েকটি ব্যাগ আর কিছুক্ষণ পরেই হয়তো তারা বাড়ি ফিরত। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই আর কখনোই বাড়ি ফিরবে না। আর কেউ হয়তো দগ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়। এই ঘটনায় আহত এক শিক্ষক বলেন, ‘এটা ঠিক স্কুল ছুটির সময় ছিল। শিক্ষার্থীরা গেটে অপেক্ষা করছিল। কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই দৃষ্টিসীমা কমে আসে। আমি শুধু আগুন দেখতে পাচ্ছিলাম, তারপর ধোঁয়া…। এই ঘটনায় মারা গেছে ১৯ জন। যাদের অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী। এই ঘটনা সারা দেশের মানুষকে পীড়া দিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সেসব যন্ত্রণা ফুটে উঠছে।
তারা আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করছেন। সোমবার দুপুর ১টার পর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে বিমান এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশির ভাগই হতাহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। শেষ খবর পাওয়া অনুযায়ী—এ ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১৬৪ জন আহত হয়েছে।

জাপানের সাথে বিশাল বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ণ
জাপানের সাথে বিশাল বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

জাপানের সাথে একটি বিশাল বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এই ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ‍বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।ট্রাম্প বলেন, কয়েক মাস ধরে টানা আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র জাপান এবং ফিলিপাইনের সাথে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা তার শুল্ক যুদ্ধের একটি বড় অগ্রগতি হবে। মঙ্গলবার ঘোষিত চুক্তির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র জাপানি পণ্য রপ্তানির উপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে এবং জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘আমরা জাপানের সাথে একটি বিশাল চুক্তি সম্পন্ন করেছি, সম্ভবত এটিই এখন পর্যন্ত করা সবচেয়ে বড় চুক্তি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমার নির্দেশে জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা লাভের ৯০ শতাংশ পাবে।’ ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, জাপান যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি, চাল এবং কিছু কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্যও দরজা খুলে দেবে। এই চুক্তি লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করবে বলেও জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পরে মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সাথে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, আলাস্কায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের জন্য একটি যৌথ উদ্যোগ গঠনেও উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। এদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, যার ক্ষমতাসীন জোট সপ্তাহান্তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর কারণে ভেঙে পড়েছে, বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন যে এ বিষয়ে মন্তব্য করার আগে তাকে আরও ভালোভাবে বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে। এদিকে, ট্রাম্প আলাদাভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ফিলিপাইন থেকে আমদানির উপর যুক্তরাষ্ট্র ১৯ শতাংশ কর আরোপ করবে এবং ম্যানিলা মার্কিন পণ্যের উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করবে।
১ আগস্টের সময়সীমার আগে এই ঘোষণাগুলো দেয়া হলো। যেখানে ট্রাম্প চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারার জন্য যে কোনো দেশের উপর শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দিয়েছিলেন।

মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ২:১৫ অপরাহ্ণ
মাইলস্টোন ট্রাজেডি : মানুষরূপী পশুদের কারণে কষ্ট বেড়েছে দগ্ধদের

রাজধানীর উত্তরা-১১ নম্বর সেক্টরের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর আহত শিক্ষার্থী ও কর্মীদের দুর্ঘটনার পর ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে দেখা দেয় যানজট, পানির সংকট, যোগাযোগ ও সহযোগিতার মারাত্মক ঘাটতি। একইসঙ্গে দুর্ঘটনায় আহত কারোর আইডি কার্ডে ছিল না জরুরি যোগাযোগের নম্বর কিংবা রক্তের গ্রুপ। ফলে শুরুতেই সংকটে পড়ে যান উদ্ধারকারীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন অবস্থার কথা জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, দুপুর সোয়া ১টার পর বিমান বিধ্বস্তের শব্দে চারপাশ কেঁপে ওঠে। মুহূর্তেই ছুটে আসেন শিক্ষার্থী, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া। শোনা যায় কান্না আর চিৎকারের শব্দ। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার জায়গার বেশির ভাগ অংশে ছিল মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি সেকশন। সে সময় চলছিল প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণির ক্লাস। ঘটনার পরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিভাবকরাও ছুটে আসেন সন্তানদের খোঁজে।
প্রত্যক্ষদর্শী কলেজছাত্রী তাসফিয়া রহমান বলেন, আমি ক্লাসে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার। কেউ চিৎকার করছে, কেউ মোবাইলে কাউকে খুঁজছে। আহত কয়েকজনকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা করেও তেমন কিছু জানতে পারিনি। কারণ কারো আইডি কার্ডে ফোন নম্বর ছিল না, অভিভাবকের তথ্য ছিল না।
আবার ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ শুরু হলেও অল্প সময়ের মধ্যে চারপাশে জনতার ভিড় জমে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি করে ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে না পারায় আশঙ্কাজনক কয়েকজনের অবস্থার আরও অবনতি হয়। ঢামেকসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে অন্তত ৩৫ জনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় নেওয়া হয়।
মাইলস্টোনের কলেজ শাখার শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, আগুনে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। স্বজন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ভিড়ে ব্যাহত হয় আহতদের দ্রুত স্থানান্তর, চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিমান বিধ্বস্তের স্থানটি ঘিরে মুহূর্তেই বিপুল জনসমাগম হয়। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও উৎসুক জনতার ভিড়ে রাস্তায় জট তৈরি হয়। যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো দ্রুত রোগী বহন করতে এসেছিল, সেগুলোর গতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চেষ্টা করছিল আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে কিন্তু রাস্তায় নেমে আসা মানুষের ভিড়ে সেই যাত্রা হয়ে পড়ে দুর্বিষহ।
আলভী নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা দগ্ধ কয়েকজনকে উঠিয়ে রিকশা-অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছিলাম। কিন্তু সামান্য দূরত্ব পাড়ি দিতেই সময় লেগেছে প্রায় আধা ঘণ্টা। পথেই কয়েকজনের শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। আবার অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর কলেজ ক্যান্টিন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে তখন বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দেয়।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, চারদিকে ধোঁয়া, গায়ে পোড়া গন্ধ এমন পরিস্থিতিতে এক বোতল পানির জন্য ঘুরতে হয়েছে পাঁচ জায়গায়। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় খাবার পানি মেলেনি।
অন্যদিকে, দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে রিকশা, অটো ও সিএনজি চালকরা কয়েকগুণ ভাড়া হাঁকিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন অভিভাবক বলেন, সিএনজি চালক ৭০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ২০০ টাকা চাইলেন। বাধ্য হয়েই দিতে হয়েছে, কারণ সন্তান তখন হাসপাতালের পথে।
এমন পরিস্থিতিতে ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ছয়টি দাবি হলো–
১. দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৪. নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে।
মাইলস্টোন আজ রাজ্যের নীরবতা, ফাঁকা ক্লাসরুমে শোকের ছায়া
বিমান বিধ্বস্ত ও আগুনে ঝলসে যাওয়ার পর আজ মাইলস্টোন কলেজ অচেনা এক রূপে। যেখানে প্রতিদিন সকাল থেকেই মুখর হয়ে উঠত ক্লাসরুম, করিডর আর ক্যান্টিন, সেখানে আজ রাজ্যের নীরবতা। নেই কোনো হৈচৈ, নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততা। দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি ২৪ জুলাই পর্যন্ত সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে। তবে কলেজে উপস্থিত অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা বলছেন, এই শিক্ষাঙ্গনে যেন এখন শুধুই শোক, ভয়ার্ত চোখ আর দগ্ধ স্মৃতির ভার। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
শিশুদের বাঁচাতে জীবন দিলেন মাহরীন চৌধুরী

২১ জুলাই, ২০২৫। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পরপর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনে যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, সেই কঠিন সময়ে একজন শিক্ষক রয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের পাশে। তিনি মাহরীন চৌধুরী। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক, যিনি দায়িত্বের জায়গা থেকে সরেননি।
মাহরীন চৌধুরীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে মারা গেছেন তিনি। মাহরীনের ছোট ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী বোনের মৃত্যুর খবর দিয়ে ফেসবুক পোস্টে লেখেন—
‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মাহরীন আপু (মাহরীন চৌধুরী) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমার বড় বোন। যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। তিনি মাইলস্টোন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। ভবনে আগুন লাগার সময় তিনি সবার আগে নিজে বের হননি, বরং যতজন ছাত্রছাত্রীকে পারা যায়, বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। এতে তাঁর শরীরের ১০০ শতাংশ অংশ পুড়ে যায়। আজ রাতে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন দয়া করে। তিনি রেখে গেছেন তাঁর দুই ছেলে—আমার দুটি ভাগনে। আমরা এখনো হাসপাতালে থেকে তাঁর মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’
মাহরীন চৌধুরী ম্যাডামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক পোস্ট চোখে পড়ছে। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে ‘বীর’ হিসেবে বর্ণনা করে লিখছে।
আমরা উত্তরা মাইলস্টোন কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হতাহতের জন্য গভীর শোক জানাচ্ছি। আমরা যাদের হারিয়েছি, তাদের বেশির ভাগই শিশু। কত শিশু, কত মানুষ যে হাসপাতালে পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসে তা ভাবতে গেলে।
এই গভীর শোকে আমরা স্তব্ধ। তবু এ সময়ে মাহরীন ম্যাডামের মতো ‘বীর’ শিক্ষকদের কথা পড়ে, জেনে, শুনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় নত হই। আমাদের চোখ ভিজে আসে। আমরা সাহসে বুক বাঁধি।
আমাদের স্কুলের বইয়ে পড়েছিলাম ফেলেসিয়া ডরোথিয়া হেমানসের লেখা ‘ক্যাসাবিয়াঙ্কা’ কবিতা—
The boy stood on the burning deck
Whence all but he had fled;
The flame that lit the battle’s wreck
Shone round him o’er the dead.
এক সাহসী ছেলের কথা ছিল কবিতায়। ছেলেটির বাবা তাকে জাহাজের একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলেন। জাহাজে আগুন লাগে। ছেলেটি পুড়ে যায়, মারা যায়, কিন্তু তার জায়গা থেকে সরে যায়নি।
‘ছেলেটি জ্বলন্ত জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল
সরে গিয়েছিল সবাই—কেবল সে ছিল বাকি;
সেই আগুনের আলো, ধ্বংসস্তূপের ওপরে পড়ে ছিল
চারদিকে মৃতদেহ।’
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ির মাহরীন ম্যাডাম আরও বড় কাজ করেছেন। তিনি শিশুদের, তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাঁকে আবারও শ্রদ্ধা জানাই।