জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে দেওয়ান সামির
মেঘনা ট্র্যাপের নেপথ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা?
 
                                                                    
সুন্দরী নারী দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আলদুহাইনের কাছ থেকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার আদায়ের চেষ্টায় গ্রেফতারকৃত মডেল মেঘনা আলমের সহযোগি দেওয়ান সমির রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, দেওয়ান সামির এই চক্রের বেশ কয়েকজনের নাম বলেছে। একই সাথে কোন কোন রাষ্ট্রদূতকে সুন্দরী নারী দিয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে তাদেরও কয়েকজনের নাম বলেছে। যে তালিকায় কয়েকজন রাষ্ট্রদূতের নাম রয়েছে। এ ছাড়া এই চক্রটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ দ্বারা পরিচালিত বলে ইতোমধ্যে কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্ট হিসাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা এবং কয়েকজন সাংবাদিক মেঘনার মতো পতিতাদের দিয়ে হানিট্র্যাপ বানিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টায় লিপ্ত। তাদের টার্গেট বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ধ্বস নামানো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিলিয়ন বিলিয়ন রেমিট্যান্স আসছে। যা দেশের অর্থনীতিকে ক্রমে চাঙ্গা করছে।
সূত্র জানায়, মডেল মেঘনাকে ব্যবহার করে সউদীর বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের কাছে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হলে তিনি অনানুষ্ঠিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করার পর থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ এর এজেন্টদের চিহ্নিত করা না গেলে আগামীতে দু’একজন উপদেষ্টা এবং কয়েকজন রাষ্ট্রদূতও এমনিভাবে ফেঁসে যেতে পারেন বলে অনলাইন মিডিয়ায় আভাস দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিমান্ডে মেঘনা আলমের সহযোগি দেওয়ান সামির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। প্রাথমিক জ্ঞিাসাবাদেরই সে সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রিমান্ডে জ্ঞিাসাবাদে দেওয়ান সামির এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিদায়ী সউদী রাষ্ট্রদূতের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হয় কয়েকজনের বুদ্ধিতে। তাদের ধারনা ছিল, নিজের মান বাঁচাতে রাষ্টদুত শেষ মুহূর্তে পাঁচ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হবেন। কিন্তু ১ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দিতে রাজি হন তিনি। প্রতারকচক্র পাঁচের নিচে নামতে রাজি হয় নি। বরং বার বার রাষ্ট্রদূতকে ফাঁসানোর জন্য ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। চক্রের হোতাদের বুদ্ধিতে এ কাজটি করে দেওয়ান সামির নিজেই। চক্রের হোতা কারা এ প্রশ্নের জবাবে সামির কয়েকজনের নাম বলেছে। যে তালিকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং কয়েকজন সাংবাদিকের নাম পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ এও জেনেছে এই হানিট্র্যাপে কয়েকজন বিদেশি রাষ্ট্রদূত পা দিয়ে ইতোমধ্যে বিপদের মধ্যে আছেন। তারা কারা সে বিষয়ে সূত্র কিছু জানাতে চায় নি।
অন্যদিকে, মডেল মেঘনা আলমকে দিয়ে হানিট্র্যাপ সাজানোর নেপথ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত বলে অনলাইন মিডিয়ায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা মেঘনাকে প্রথমে সউদী রাষ্ট্রদূতের সাথে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। এর আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন অফিসেও মেঘনাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তা। মেঘনা বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতীয় দূতাবাসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছেন। কয়েকবার ভারত সফরও করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানেও তাকে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা গেছে। এসব কারণেই অনলাইন মিডিয়ায় জানানো হয়েছে, বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংস করতেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মেঘনাকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেছে। শুধু মেঘনা আলম নয়, তারা মেঘনার মতো সুন্দিরী নারীদের দিয়ে এই ট্র্যাপ অব্যাহত রেখেছে। যে ট্যাপে সরকারের দুজন উপদেষ্টা এবং বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে পা দিয়ে ফেলেছেন। যে কোনো মুহূর্তে তারাও ফেঁসে যেতে পারেন। অনলাইন মিডিয়ায় সতর্ক করা হয়েছে, বাংলাদেশের গোয়েন্দারা যেন যতদ্রুত সম্ভব ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টদের চিহ্নিত করে। তা না হলে তারা দেশের শ্রমবাজার ধ্বংসহ বিদেশে ইউনূস সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে পারে।
মেঘনা আলমকে আটকাদেশ দেয়ার পর কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো যেভাবে মেঘলার পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে তাতে অনেকেরই সন্দেহ এটি ছিল আন্ত:রাষ্ট্রীয় যড়যন্ত্রের অংশ। ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চক্রান্ত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র সউদী আরবে জনশক্তি রফতানি অব্যাহত আছে। বন্ধ আছে ব্রুনাই, দুবাই, কাতার, বাহরাইন, মালয়েশিয়াসহ সবগুলো দেশে জনশক্তি রফতানি। সউদী আরবের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে যড়যন্ত্রকারীরা প্রায় ৩০ লাখ সউদী প্রবাসীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় ফেলার পাশাপাশি রেমিট্যান্সের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। মেঘনার পক্ষ নেয়ায় তাই কথিত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব দেখা গেছে প্রবাসীসহ নেটিজেনদের। অনেকেই কমেন্ট করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন লিখেছেন, এটা নিশ্চিত ভারতপন্থী তথা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের যড়যন্ত্র ছিল। তারা যে কোনো উপায়ে ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মেঘনার পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে। অরেকজন লিখেছেন, মেঘনাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করতে যায় তখন সে যে পোশাকে ফেসবুক লাইভে এসেছিল, তাতে বোঝাই যায় সে প্রথম শ্রেণির পতিতা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো পতিতার পক্ষ নিয়ে তাদের গ্রহনযোগ্যতা হারিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের পোস্টের জবাবে আরেকজন লিখেছেন, হাসিনা যখন হাজার হাজার মানুষের উপর গুলি চালিয়েছিল তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? তখন আপানাদের মানবতা জাগ্রত হলো না কেন? আরেকজন লিখেছেন, গাজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে খুন করছে ইসরাইলি বাহিনী। অথচ মানবাধিকার সংস্থাগুলো সেগুলো চোখে দেখে না। মেঘনার মতো প্রথম শ্রেণির পতিতাদের জন্য এদের মায়াকান্না দেখে অবাক হই। কেউ কেউ মেঘনার অন্ধকার জগতের কাহিনী বর্ণনা করে লিখেছেন, ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় এসব পতিতাদের আনাগোনা বন্ধ না করলে এরকম যড়যন্ত্র চলতেই থাকবে।
এদিকে, কারাগারে আটক মেঘনার বাবা দাবি করেছেন, তার মেয়ে জানতো না যে রাষ্ট্রদূত বিবাহিত। এই যুক্তিকে অনেকেই অবান্তর বলে উল্লেখ করে বলেছেন, একজন রাষ্ট্রদূত যখন কোনো দেশে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তখনই তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পত্রিকা তথা সংশ্লিষ্ট দেশের কূটনৈতিক মিশনসহ ঢাকাস্থ মিশনে বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে। সউদী রাষ্ট্রদূতেরও তথ্য দেয়া ছিল। আর অবিবাহিত হলেই কারো সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে হবে কেন? পতিতাবৃত্তিরও একটা সীমা থাকা উচিত।
প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: বিশেষ সহকারী
অন্যদিকে, প্রচলিত আইনেই মডেল মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটি সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
সম্প্রতি মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, এ আইনটা ব্যবহার হচ্ছে, একটা ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে বিষয়টা কিন্তু তা না। এটা বেআইনি কাজতো না। এখন আপনি যদি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কেন কি হয়েছে, একটা ঘটনা ঘটেছে, অভিযোগ আসছে, কাজ হচ্ছে, হাইকোর্টে গেছে। হাইকোর্টে গেলেইতো বিচারাধীন ইস্যু। এ বিষয়েতো কথা বলা ঠিক হবে না। আমরা দেখি ওখান থেকে কি আসে। তিনি বলেন, তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে, প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারো প্রতি বেআইনি কোনো আচরণ করা হয়নি। আপনারা সব তথ্য পাবেন। অগ্রিম তথ্য নিয়েতো আলোচনা করা ঠিক না।
মেঘনার বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১০ এপ্রিল রাজধানীর ভাটারা এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র সুন্দরী মেয়েদের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। ওইদিন রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে মেঘনাকে আটক করা হয়। সহযোগি দেওয়ান সমিরকেও সেখানে পাওয়া যায়। মেঘনা আলমকে গ্রেফতার করে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো তথ্য না দেয়ায় তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার দিখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত বাদী ও বিবাদীপক্ষের বক্তব্য শুনে মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অন্যদিকে, মেঘনার সহযোগি দেওয়ান সামিরকে গ্রেফতার করে গত শনিবার আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই আরিফুল ইসলাম। আসামিপক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।

 
                
 
                 
                                 
                                 
                                             
                                             
                                             
                                             
                                             
                                     
                                             
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মতামত লিখুন