খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩২

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ
উজ্জ্বল হোসাইন
সাংবাদিকতা সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য হয়, কারণ এটি তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকতার ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আর এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে প্রবেশ করেছে সাংবাদিকতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইউটিউব চ্যানেলের উত্থান সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সাংবাদিকতা মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সময়ের সাথে সাথে এটি নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ডিজিটাল যুগের আগমনের পর সাংবাদিকতার চেহারা একেবারেই বদলে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম মৌখিক ও লিপিবদ্ধ সংবাদ প্রচার। রাজা-বাদশাহদের ফরমান ও বার্তাবাহক ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান। চীনে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র (Kaiyuan Za Bao, ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ)।
আধুনিক মুদ্রণ সাংবাদিকতার উত্থান (১৫-২০ শতক) হয়েছে –১৪৪০ সালে গুত্তেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র (Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien), ১৯ শতকে দৈনিক পত্রিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতার বিকাশ, সংবাদ সংস্থার (যেমন, রয়টার্স, এপি) আবির্ভাব। সম্প্রচার সাংবাদিকতার যুগ (২০ শতক)-১৯২০-এর দশকে রেডিও সাংবাদিকতার শুরু, ১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন সাংবাদিকতার উত্থান, সরাসরি সম্প্রচার ও রিয়েল-টাইম সংবাদ পরিবেশনের প্রচলন। ইন্টারনেট ও অনলাইন সংবাদ (১৯৯০-এর দশক)-সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ চালু, দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ ও বৈশ্বিক তথ্য প্রবেশাধিকার, বিনামূল্যে সংবাদপাঠের অভ্যাস তৈরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব (২০০০-এর পর থেকে)-ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে খবর প্রচার, নাগরিক সাংবাদিকতার বিকাশ যে কেউ সংবাদ পরিবেশন করতে পারে, ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি।
মোবাইল সাংবাদিকতা ও কনভার্জেন্স মিডিয়া-স্মার্টফোন ও অ্যাপ-ভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টিং—ভিডিও, টেক্সট, অডিও একসাথে, ব্লগিং, পডকাস্ট ও লাইভ স্ট্রিমিং জনপ্রিয়তা লাভ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অ্যালগরিদম-নির্ভর সাংবাদিকতা-নিউজ অ্যালগরিদম ও পার্সোনালাইজড কন্টেন্ট, ফ্যাক্ট-চেকিং ও স্বয়ংক্রিয় সংবাদ লেখা, সাংবাদিকতায় ডেটা অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার বৃদ্ধি।

ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : ভুয়া খবর ও মিথ্যা তথ্য, সংবাদপত্রের আর্থিক সংকট (প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষতি), সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত ঝুঁকি, নাগরিক সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের সুযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন, ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন মডেল ও বিকল্প আয়ের উৎস।
সাংবাদিকতা আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে তথ্য প্রবাহ দ্রুত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক। যদিও ডিজিটাল যুগ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তবুও এটি গণমাধ্যমের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই এবং নৈতিক সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে ডিজিটাল সাংবাদিকতা আরও কার্যকর হতে পারে।সাংবাদিকতার ইতিহাস বহু পুরোনো। পাথরের ফলক, হস্তলিখিত চিঠি, প্রিন্ট মিডিয়া, বেতার, টেলিভিশন—এসব মাধ্যম একসময় মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিল। কিন্তু ২১শ শতাব্দীর শুরু থেকে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার সাংবাদিকতায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।
পরিবর্তনের কয়েকটি ধাপ : প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন) ১৮-২০ শতকে মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির প্রধান মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়া (রেডিও ও টেলিভিশন): ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেডিও ও টেলিভিশন খবর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ২১ শতকে ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে।
আজকের যুগে মানুষ দ্রুততম সময়ে সংবাদ পেতে চায়, যা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ এবং পডকাস্ট এখন তথ্য প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশন : যেকোনো বড় ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
ইন্টারঅ্যাকটিভিটি : পাঠকরা মন্তব্য, শেয়ার এবং লাইভ আলোচনার মাধ্যমে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।
বহুমাত্রিক উপস্থাপন  : টেক্সট, ছবি, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবহার করা হয়।
কম খরচে সংবাদ পরিবেশন: প্রচলিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের তুলনায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার খরচ অনেক কম।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ইতিবাচক দিক : ডিজিটাল মিডিয়া সাংবাদিকতাকে দ্রুত ও কার্যকর করে তুলেছে। আগে যেখানে সংবাদপত্র ছাপতে বা টিভি সম্প্রচারের জন্য সময় লাগত, এখন তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে খবর প্রকাশ করা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সংবাদ এখন আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। একটি ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা বৈশ্বিক সংবাদে পরিণত হতে পারে। ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও সাংবাদিকতার অংশ হতে পারছে। মোবাইল ফোনে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রচার করতে পারছে। আগে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হতো, কিন্তু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও নেতিবাচক দিক : অনলাইন মিডিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’। অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয় না। ফলে গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করে শুধুমাত্র ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করে। অনেক সময় ডিজিটাল সাংবাদিকরা অনলাইনে হয়রানির শিকার হন। সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় হুমকি, সাইবার আক্রমণ বা ট্রোলিং-এর সম্মুখীন হন অনেকে। অনেক সময় অনলাইন মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যা ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ : ডিজিটাল সাংবাদিকতা ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিক ও কার্যকর হয়ে উঠবে। এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তি সংবাদ বিশ্লেষণ, তথ্য যাচাই ও অটোমেটেড রিপোর্টিংয়ে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত এআই সিস্টেম সাংবাদিকদের কাজ সহজ করবে। সংবাদ পরিবেশন আরও আকর্ষণীয় করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। ফেক নিউজ প্রতিরোধে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনার দিকে যাচ্ছে। এটি উচ্চমানের সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে পারে। ভবিষ্যতে সংবাদমাধ্যমের জন্য নৈতিকতা বজায় রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতা আধুনিক বিশ্বের তথ্য প্রবাহের মূল চালিকা শক্তি। এটি যেমন দ্রুত সংবাদ সরবরাহের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি ভুয়া খবর ও হলুদ সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
তাই সাংবাদিকতা যেন বস্তুনিষ্ঠ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, সে জন্য সংবাদমাধ্যম, সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতার আরও সমন্বিত ব্যবহার সমাজকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবেই ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে—এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক পরিচিতি : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৮ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ) নামের একটি ফেডারেল সংস্থা। জুলাই মাসে নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তারা। চলতি বছরের মে মাসে ঢাকায় সংস্থাটির সফরের ভিত্তিতে রিপোর্টটি তৈরি করা হয়। তখন তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। পুরো রিপোর্টটি লিখেছেন সীমা হাসান, যিনি ইউএসসিআইআরএফ-এর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং আগস্টে সেনাবাহিনীর সমর্থনে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। যদিও নতুন সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাব করেছে, তারপরও দেশে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এখনো অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ থেকে ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও সরকার পতনের সময় দেশে কার্যকর কোনো প্রশাসন না থাকায় ভয়াবহ সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এ সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া যায়, যেগুলো মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থক বা সদস্য ভেবে প্রতিশোধমূলকভাবে চালানো হয়।
পুলিশের একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউএসসিআইআরএফ জানায়, ৫ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে মোট ১,৭৬৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১,২৩৪টি রাজনৈতিক, ২০টি সাম্প্রদায়িক ও ১৬১টি ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সংঘটিত হয়। এই সময়ে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ও নাগরিক সংখ্যালঘু মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় পাহারা দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
রিপোর্টে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যার সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কমিশন সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ বা ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। দলটি প্রস্তাবিত শব্দের পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা’ শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আংশিক সমর্থন জানিয়ে ‘বহুত্ববাদ’-এর পরিবর্তে বাংলা বিকল্প ‘বহুসংস্কৃতিবাদ’ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্টে নারী সংস্কার কমিশন গঠনের পর চলতি বছরের মে মাসে কমিশনটি ৪৩৩টি সুপারিশ দেয়। এর মধ্যে একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব, যা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনকে সম্পূরক করবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছে ইসলামপন্থি সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তারা কমিশনকে ‘ইসলামবিরোধী’ আখ্যা দেয় এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে। নারীদের উদ্দেশ করে কটূক্তি করার অভিযোগে ৬ নারী হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দেন। পরে সংগঠনটি ক্ষমা চায়। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে একটি নারী ফুটবল ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য করে এবং নাদিরা ইয়াসমিন নামের এক নারী অধ্যাপককে হুমকির মুখে কলেজ বদল করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিচালিত এই সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে এখনো ব্লাসফেমি সংক্রান্ত ধারা (দণ্ডবিধি ১৯৫এ) বলবৎ রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০২৩ সালের সাইবার সিকিউরিটি আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এমন ডিজিটাল কনটেন্ট প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এসব বিষয় নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউএসসিআইআরএফ।
সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। সংবিধান সংস্কারে সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত না হলে, এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে বৈষম্য আরও গভীর করতে পারে। ইউএসসিআইআরএফ-এর মতে, বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা রক্ষায় একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কারের এই পর্যায়ে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।

শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ
শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন

তথ্য কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। কয়েক দিনের মধ্যে তথ্য কমিশন গঠন-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। শনিবার (২৬ জুলাই) তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী একজন প্রধান তথ্য কমিশনার এবং দুজন তথ্য কমিশনার নিয়ে এই কমিশন গঠিত হবে। দুই জন তথ্য কমিশনারের মধ্যে ন্যূনতম এক জন নারী হবেন।

কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১:০৩ অপরাহ্ণ
কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই: মির্জা ফখরুল

দেশের কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আগে যে ব্যবসায়ীকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে হতো, এখন তাকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। কোথাও কোনো সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা বই ‌’অর্থনীতি শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’-এর প্রকাশ ও আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সংস্কারে সময় লাগবে জানিয়ে ফখরুল বলেন, রাতারাতি সংস্কার করে ফেলা সম্ভব নয়। তবে সে জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। এ জন্য কোনো রকম বিলম্ব না করে অতি দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের প্রতিনিধিকে সংসদে পাঠিয়ে সংস্কার করতে হবে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের ট্যারিফ (শুল্ক) সামনে বড় বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, রাজনৈতিক দল দেশের উন্নয়নে জনস্বার্থে সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।