খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

গণমাধ্যম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
গণমাধ্যম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের দাবি

গণমাধ্যম একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি। এটি সমাজের দৃষ্টি, শ্রবণ এবং কণ্ঠস্বর। সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তবে সময়ের পরিক্রমায় গণমাধ্যমে কিছু সমস্যাও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, যা এর প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতাকে ব্যাহত করছে। তাই গণমাধ্যম সংস্কার আজ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান গণমাধ্যমে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ঘাটতি স্পষ্ট। গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ রাজনৈতিক বা কর্পোরেট প্রভাবের অধীন। সংবাদ পরিবেশনে পক্ষপাতিত্ব, বিভ্রান্তিকর শিরোনাম এবং তথ্যের অপব্যবহার সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উত্থানের ফলে ভুয়া সংবাদ এবং গুজবের মাত্রা বেড়েছে। অনেক সময় সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই সংবাদ প্রচার করা হয়, যা সমাজে বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি করে। গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ এখন বাণিজ্যিক স্বার্থে পরিচালিত। বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপে অনেক সময় মূল সংবাদকে আড়ালে রেখে মনগড়া খবর প্রকাশিত হয়। এর ফলে প্রকৃত ঘটনা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। তাদের মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া হয়, এবং অনেক সময় তাদের জীবন ঝুঁকির মুখেও পড়ে। এটি শুধু সাংবাদিকতার মানকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারও বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার এবং প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে এর ব্যবহার গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

গণমাধ্যমের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এর সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। কিছু মৌলিক ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করা গেলে গণমাধ্যমকে সঠিক পথে পরিচালিত করা সম্ভব। গণমাধ্যমের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য স্বচ্ছ এবং কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন। ভুয়া সংবাদ ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর বাস্তবায়ন জরুরি। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটি সাংবাদিকতার মান উন্নত করবে। গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাদারিত্ব বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নৈতিক সাংবাদিকতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। গণমাধ্যমকে দলীয় ও কর্পোরেট প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এটি করতে হলে স্বাধীন সম্পাদকীয় বোর্ড গঠন এবং সংবাদ পরিবেশনার সময় নীতিমালা মেনে চলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সাথে সমন্বয় এবং নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।

গণমাধ্যমের সংস্কার হলে এর প্রভাব শুধু সংবাদমাধ্যমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা সমাজের সর্বস্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ গণমাধ্যম গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও মজবুত করবে। এটি জনমতের প্রতিফলন ঘটাবে এবং জনস্বার্থে কাজ করবে। গুজব এবং ভুয়া সংবাদ কমলে সমাজে বিভেদ কমে আসবে। এর ফলে বিভিন্ন শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে। সংস্কারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরবে। সাধারণ মানুষ নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য পেতে সক্ষম হবে। গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বাড়লে এটি শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। সরকার, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গণমাধ্যমকে বলা হয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি নাগরিকদের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করে এবং সমাজের নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলার রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। তবে সময়ের সাথে সাথে গণমাধ্যম তার আদর্শ থেকে সরে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর সংস্কার একান্ত জরুরি। গণমাধ্যমের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সমাজের মৌলিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

গণমাধ্যম প্রাচীনকাল থেকেই জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করেছে। এক সময় প্রিন্ট মিডিয়া সমাজের জাগরণে নেতৃত্ব দিয়েছিল। স্বাধীনতার আন্দোলনে কিংবা সামাজিক বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সময়ের পরিক্রমায় টেলিভিশন এবং পরে ডিজিটাল মিডিয়া সেই দায়িত্বকে আরও বিস্তৃত করে। গণমাধ্যম শুধু তথ্য পরিবেশনই করে না, বরং নৈতিকতা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশেও সহায়ক। এটি একদিকে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, অন্যদিকে জনগণকে সচেতন করার কাজে নিয়োজিত থাকে। আজকের গণমাধ্যমে অনেক সময় খবরের গভীরে যাওয়ার চেয়ে সেনসেশন তৈরি করার প্রবণতা দেখা যায়। রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে অনেক সময় সংবাদকে বিকৃত করা হয়। গণমাধ্যমে মানসম্মত কনটেন্টের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিনোদনকে খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে ট্যাবলয়েড সংস্কৃতির উত্থানের ফলে প্রকৃত খবর আড়ালে চলে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি বহু পুরোনো। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে একপক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব এবং অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সত্ত্বেও অনেক সাংবাদিক তথ্য যাচাই বা ন্যূনতম পেশাদারিত্বের মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। ফলে ভ্রান্ত খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়া গণমাধ্যমের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে, তেমনি ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং ঘৃণামূলক বার্তা ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা এবং গবেষণার উপর জোর দিতে হবে। সাংবাদিকদের জন্য কঠোর নৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক এবং কর্পোরেট প্রভাবমুক্ত গণমাধ্যম গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল মিডিয়ার বিকাশ গণমাধ্যমকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে। তবে এর অপব্যবহার রোধ করতে উপযুক্ত প্রযুক্তিগত সমাধান প্রয়োগ করতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যারা গণমাধ্যমের কার্যক্রমের উপর নজরদারি করবে। সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কর্মসূচি চালু করতে হবে। এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, যাচাই এবং উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বাড়বে। ভুয়া খবর ছড়ানোর প্রবণতা বন্ধ করতে গণমাধ্যমকে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিশেষ দল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সততা এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করলে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়বে। সংস্কারের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা গেলে ভুয়া খবর এবং অপপ্রচারের মতো সমস্যা দূর হবে। গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে।

গণমাধ্যমের প্রকৃত শক্তি নিহিত রয়েছে তার স্বাধীনতা, সততা এবং বস্তুনিষ্ঠতার মধ্যে। সময়ের সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠানটি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যা এর গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। তাই এখনই সময় গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে গণমাধ্যমকে তার মূল আদর্শে ফিরে যেতে হবে। একটি স্বাধীন, নৈতিক এবং আধুনিক গণমাধ্যমই কেবল একটি উন্নত এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। এটি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমকে পুনর্গঠিত করে ন্যায়, সততা এবং স্বচ্ছতার উপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজন। এজন্য সমাজের প্রতিটি অংশের, বিশেষ করে নীতি-নির্ধারকদের, দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি। গণমাধ্যম সংস্কারের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, বিএসসি, এলএলবি, এমসিএস, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (২০২১), পিআইবি।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।