খুঁজুন
                               
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ, ১৪৩২

সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৪৭ অপরাহ্ণ
সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। এর ভূমিকা নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ পরিবেশন করা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। গণমাধ্যম কি শুধু খবর পৌঁছে দিচ্ছে, নাকি নিজের বয়ান তৈরি করছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে আমাদের গণমাধ্যমের ঝোঁক, তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং এর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।

গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব হলো জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু দিন দিন আমরা লক্ষ্য করছি, সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতার অভাব এবং পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সংবাদ আর তথ্য নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট মতবাদ বা বয়ানের রূপ নিচ্ছে।
এর পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করে, গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ এখন ব্যবসায়িক মডেলের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপনদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকদের চাপে তারা এমন খবর পরিবেশন করে যা জনমত প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে, সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো গল্প বা বয়ান তৈরি করছে যা তাদের আর্থিক স্বার্থে সহায়ক। গণমাধ্যমের একটি অংশ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বা মতবাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। তারা একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সংবাদ পরিবেশন করে, যেখানে তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হয় এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিযোগিতার কারণে অনেক গণমাধ্যম “সংবাদের” পরিবর্তে “সেনসেশন” পরিবেশনে ঝুঁকছে। টিআরপি বাড়ানোর জন্য নাটকীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ খবর পরিবেশনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে সত্য ঘটনা আড়ালে থেকে যায়।

সংবাদ হলো নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন। এটি কোনো মতামত বা অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে নয়। বয়ান, অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা উপস্থাপন করে। তবে গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ান হিসেবে রূপান্তরিত করে, তখন এটি একটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ-একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির খবর যখন নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয়, তখন এটি সংবাদ। কিন্তু সেই খবর যখন একটি দলের সাফল্যের গল্প হিসেবে উপস্থাপিত হয়, তখন তা বয়ানে রূপান্তরিত হয়।

তেমনই, একটি সামাজিক ইস্যুকে অযথা সেনসেশন তৈরি করে পরিবেশন করাও বয়ানের আরেকটি উদাহরণ । গণমাধ্যমের এই ঝোঁক সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এর ফলে: পক্ষপাতদুষ্ট বয়ান সমাজকে বিভক্ত করে। মানুষ নিরপেক্ষ খবর পাওয়ার পরিবর্তে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।গণমাধ্যম যদি বয়ান তৈরিতে মনোযোগ দেয়, তাহলে তথ্যের বিকৃতি ঘটতে পারে। এর ফলে ভ্রান্ত তথ্যের প্রসার ঘটে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়। যখন জনগণ গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে পায় না, তখন এটি তার প্রভাব হারায়।

গণমাধ্যমের ভূমিকা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। কিন্তু যখন এটি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে পক্ষপাতিত্ব করে, তখন এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যমের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ থেকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক চাপ এড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। সেনসেশনাল খবরের পরিবর্তে গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।জনগণকে সচেতন হতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য বুঝতে এবং সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে দক্ষ হতে হবে।

গণমাধ্যমকে স্বচ্ছ হতে হবে। তাদের উৎস, গবেষণার প্রক্রিয়া এবং খবর প্রকাশের কারণগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।সামাজিক মাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্যের বিস্তার রোধে গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করতে হবে।

গণমাধ্যম মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। সংবাদ পরিবেশন করার মাধ্যমে এটি শুধু তথ্য সরবরাহ করে না, বরং জনমত তৈরিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে, গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি তার প্রাথমিক দায়িত্ব থেকে সরে আসে। এতে সাংবাদিকতার মূলনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি সমাজে বিভাজন ও ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হয়।
গণমাধ্যমের কার্যক্রম আর আগের মতো সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন যেমন সংবাদ পরিবেশন করছে, অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যম সমাজে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুহূর্তের মধ্যেই খবর মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য পরিবেশনের প্রবণতাও বাড়ছে।

আজকের গণমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সত্যকে বিকৃত করে এমনভাবে পরিবেশন করা হয়, যা দর্শক বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। এটি শুধু তথ্যের অভাব তৈরি করে না, বরং মানুষের মস্তিষ্কে এমন একটি বয়ান তৈরি করে, যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে পূরণ করে। গণমাধ্যমের বয়ান তৈরি করার পিছনে কিছু নির্দিষ্ট ঝোঁক কাজ করে। এ প্রসঙ্গে কিছু বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো-গণমাধ্যম অনেকাংশে এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতা এবং কর্পোরেট স্বার্থের কারণে গণমাধ্যম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সংবাদ পরিবেশনের ধরণ নির্ধারিত হয় পৃষ্ঠপোষকদের চাহিদা অনুযায়ী।

গণমাধ্যম অনেক সময় নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে খবর পরিবেশন করে। এর ফলে, প্রকৃত ঘটনা আড়ালে চলে যায় এবং বয়ান তৈরি হয়, যা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শকে সমর্থন করে।

টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য দর্শক ধরে রাখা বা বেশি ভিউয়ারশিপ পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা বেশি দর্শক টানার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ এবং সংবেদনশীল খবর পরিবেশন করে। এতে তথ্যের মান ও সত্যতা উপেক্ষিত হয়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের উত্থান গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। দ্রুত এবং ক্লিক-বেইট শিরোনামে খবর প্রকাশ করার তাড়নায় গণমাধ্যম অনেক সময় যাচাই-বাছাই ছাড়াই খবর প্রকাশ করে।

সংবাদ যখন বয়ানে রূপান্তরিত হয়, তখন তা মানুষের মননে গভীর প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে অনেক সময় এমনভাবে খবর প্রচারিত হয়, যা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সংবেদনশীল শব্দ ব্যবহার করে খবর পরিবেশনের ফলে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি হয়।নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দলের প্রচারণার অংশ হিসেবে খবর পরিবেশিত হয়। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়।দারিদ্র্য, নারী নির্যাতন বা পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে কখনো সত্যকে অতিরঞ্জিত করে বা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রকৃত সমাধান খোঁজার পরিবর্তে সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে ওঠে।

গণমাধ্যমের বয়ান তৈরির ঝুঁকি বহুমাত্রিক। এর কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো : যখন সংবাদকে নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয় না, তখন তা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে মানুষ ভিন্নমত গ্রহণ করতে পারে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ব্যাহত হয়। গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। এর ফলে নির্বাচন বা নীতি নির্ধারণের মতো প্রক্রিয়াগুলো প্রভাবিত হয়।

গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা হারালে মানুষের আস্থা কমে যায়। এর ফলে, তারা প্রকৃত তথ্যের জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়ে, যা সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।

বয়ান তৈরি করে জনগণকে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে পরিচালিত করা হলে, দীর্ঘমেয়াদে এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যম, নীতিনির্ধারক এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো : গণমাধ্যমকে অবশ্যই সাংবাদিকতার নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করা এবং পক্ষপাত এড়ানো এর মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। গভীর গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হলে, তা বয়ান তৈরির পরিবর্তে সত্য প্রকাশে সহায়ক হবে।
ফ্যাক্ট-চেকিং টুল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ যাচাই করা উচিত, বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরের ক্ষেত্রে।
গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল থাকার পাশাপাশি জনগণকেও তথ্য যাচাই করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সচেতন পাঠক ও দর্শক তৈরি হলে, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের প্রচার সীমিত হবে।
গণমাধ্যম শুধু খবর পরিবেশনের মাধ্যম নয়; এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার। কিন্তু এই হাতিয়ার যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে এটি সমাজে অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদ এবং বয়ানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে আমরা সত্যকে হারিয়ে ফেলব।

গণমাধ্যমকে অবশ্যই তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতে হবে: নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ সরবরাহ। পক্ষপাতিত্ব, বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে যদি গণমাধ্যম কাজ করতে পারে, তবে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং সঠিক তথ্যের জন্য বিভিন্ন উৎস যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং জনগণের সচেতনতা একসঙ্গে কাজ করলে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।গণমাধ্যমের ভূমিকা হলো সমাজকে তথ্যের মাধ্যমে আলোকিত করা। কিন্তু যখন গণমাধ্যম সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই গণমাধ্যমকে নিজের মূল দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ গ্রহণ করতে পারে।

গণমাধ্যম যখন সত্য, নিরপেক্ষতা এবং নৈতিকতার পথে অটল থাকবে, তখনই এটি তার প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যথায়, গণমাধ্যমের বয়ান সমাজে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন সৃষ্টি করতে থাকবে।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১, পিআইবি।

ভারত-পাকিস্তানকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ দেশগুলোর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ২:০৬ অপরাহ্ণ
ভারত-পাকিস্তানকে সংঘাত বন্ধের আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-৭ দেশগুলোর

সংঘাত ক্রমেই বেড়ে চলেছে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। চলমান এ সংঘাত বন্ধ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য দেশদুটিকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসলামাবাদে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনার’ জন্য সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, পাকিস্তান-ভারত উভয়পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন রুবিও। একই সঙ্গে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে গঠনমূলক আলোচনা শুরুর জন্য মার্কিন সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জি-৭ জোট। জোটের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে উত্তেজনা কমানো’ ও ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সংঘাত চলা ভারত-পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে তারা বলেছেন, ‘আরও সামরিক উত্তেজনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি। দুই দেশেরই শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সরাসরি সংলাপে বসা উচিত।’

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।

এ ঘটনায় সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। এর পাল্টা জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ শুরু করেছে পাকিস্তান। এ অভিযানের আওতায় ইতোমধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতে ভারতের ১১টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী।

প্লাস্টিক ব্যবহারে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, বছরে মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১:২৫ অপরাহ্ণ
প্লাস্টিক ব্যবহারে ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকি, বছরে মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ

বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্যে আছে ‘থ্যালেটস’ নামক রাসায়নিক পদার্থ। থ্যালেটস এর কারণে মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেশি। থ্যালেটসের সংস্পর্শে আসার কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ৩ লাখ ৫৬ হাজারেরও বেশি মানুষ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে অনুমান করছে একটি গবেষণা। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ল্যাংগোন হেলথের গবেষকরা। তারা প্লাস্টিকের নানা পণ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিকগুলোর স্বাস্থ্যগত প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষনায় তারা দেখেছেন, ডিইএইচপি শরীরে দীর্ঘদিন থেকে গিয়ে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী প্রায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৩৮ জন মানুষ ডিইএইচপি সংশ্লিষ্ট কারণে হৃদরোগে মারা গেছেন। এই সংখ্যা ওই বয়সসীমায় হৃদরোগজনিত মোট মৃত্যুর প্রায় ১৩ শতাংশ।

ডিইএইচপি হলো একটি প্লাস্টিসাইজার, যা প্লাস্টিককে নমনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী করতে ব্যবহার করা হয়। এটি খাদ্য প্যাকেট, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্রসাধনী, শ্যাম্পু, লোশনসহ নানা পণ্যে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করে রক্তনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের রাসায়নিক শুধু হৃদরোগ নয়, বরং মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বন্ধ্যাত্ব এবং ক্যান্সারের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি করে। যেসব দেশে রাসায়নিক ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ দুর্বল, সেসব জায়গায় স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও তীব্রভাবে দেখা দেয়। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ডিইএইচপি-জনিত কারণে ২০১৮ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫১০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। এটি বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৩.৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. লিওনার্দো ট্রাসান্ডে বলেন, ‘এই গবেষণা শুধু একটি রাসায়নিক ও নির্দিষ্ট বয়সসীমার মানুষের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন, যাতে অন্যান্য প্লাস্টিকজাত রাসায়নিকের প্রভাব জানা যায়।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখনই সময় ডিইএইচপি এবং অনুরূপ ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার সীমিত করা এবং নিরাপদ বিকল্প খোঁজার। এ জন্য শুধু গবেষণাই নয়, সরকার ও নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এই গবেষণা একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়, প্রতিদিনকার ব্যবহার্য প্লাস্টিকজাত পণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো শুধু স্বাস্থ্য নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। এখনই সচেতন না হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ গঠনের সুপারিশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১০ মে, ২০২৫, ১:২৩ অপরাহ্ণ
হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ গঠনের সুপারিশ

হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত বিশেষ ইউনিট গঠনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার (৫ মে) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলা হবে। বিএমডিসি, বিএনএমসি, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইনগত ক্ষমতা ও কাঠামো কার্যকর করতে হবে। পেশাগত অবহেলার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না; তদন্ত ও সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

“হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে ‘মেডিকেল পুলিশ’ নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করতে হবে, যা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।” চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করতে হবে। এমবিবিএস বা বিডিএস ব্যতীত কেউ ‘চিকিৎসক’ পরিচয়ে রোগী দেখলে, বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।