খুঁজুন
                               
বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬ কার্তিক, ১৪৩২

অধ্যাদেশ সংশোধনের খসড়া

রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞরা নিয়োগে প্রাধান্য পাবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৪১ অপরাহ্ণ
রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞরা নিয়োগে প্রাধান্য পাবেন

এনবিআর ভাগ করে রাজস্বনীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা যে দুটি বিভাগ হচ্ছে, সেখানে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা প্রাধান্য পেতে যাচ্ছেন। দুই বিভাগেই রাজস্ব আদায় কাজে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রাজস্বনীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ সংশোধনের খসড়ায় এমন প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
গত মে মাসে জারি করা অধ্যাদেশ এনবিআর কর্মীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত করে সরকার। আন্দোলনকারীদের মূল দাবি ছিল– পদায়নের ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে অধ্যাদেশ সংশোধনে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সংশোধন প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হচ্ছে।
মূল অধ্যাদেশে বলা হয়েছিল, রাজস্বনীতি  বিভাগে সচিব পদে সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারবে।
সংশোধিত অধ্যাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি, রাজস্বনীতি, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বা  রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। অন্যদিকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বা আদায় বিভাগের সচিব পদে রাজস্ব আহরণ কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সংশোধিত অধ্যাদেশে  বলা হয়েছে,

শুধু রাজস্ব সংগ্রহে অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তি এ পদে নিয়োগ পাবেন। 
১১টি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন-বিয়োজন করে সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী সচিব পদ বাদে দুই বিভাগের অন্যান্য পদে রাজস্ব আহরণের অভিজ্ঞদের নিয়োগের পরিধি মূল অধ্যাদেশের তুলনায় বেড়েছে। রাজস্বনীতি বিভাগে নীতিসংক্রান্ত কাজে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞরা নিয়োগ পাবেন। মূল অধ্যাদেশে এখানে সরকারের অন্য বিভাগ থেকে পদায়নের সুযোগ ছিল। তবে রাজস্বনীতি বিভাগের অন্যান্য অনুবিভাগে জনপ্রশাসন, হিসাব-নিরীক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কাজে অভিজ্ঞরা নিয়োগ পাবেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামের দুটি বিভাগ করে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজস্বনীতি প্রণয়ন করবে একটি বিভাগ এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে  আশঙ্কা তৈরি হয়, তাদের বদলে প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা কর্মকর্তারা নিয়োগে প্রাধান্য পাবেন। এ আশঙ্কা থেকেই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’সহ নানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। দীর্ঘ সময়ের এই আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে পড়ে রাজস্ব খাত। সাধারণ মানুষ ও করদাতারা এ সংস্থার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে অধ্যাদেশ সংশোধন এবং তাদের আন্দোলন বন্ধের অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি। অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় এনবিআরের আন্দোলন শেষ হয়। এক পর্যায়ে সবাই কাজে ফিরে যেতে বাধ্য হন। তবে আন্দোলনের জেরে এনবিআরের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
অধ্যাদেশ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তা সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে আহ্বায়ক করে গত ৩০ জুন পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী  অধ্যাদেশ সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল  সমকালকে বলেন, ক্যাডারে ক্যাডারে যাতে বিরোধ না থাকে, সংশোধিত অধ্যাদেশের প্রস্তাবে তা বিবেচনা করা হয়েছে। রাজস্বনীতি বিভাগে সচিব পদ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এখানে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং একই সঙ্গে কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিব হতে পারবেন। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে রাজস্ব আহরণসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞদের মধ্য থেকেই নিয়োগ দেওয়া হবে।
খসড়ায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব
সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্বনীতি বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ করবেন বলে বিদ্যমান অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্বনীতি বিভাগের বিভিন্ন পদে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য হবে। তবে এ-সংক্রান্ত উপধারা সংশোধন করে রাজস্বনীতি বিভাগের আয়কর নীতি, দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মতামত শুল্কনীতি, মূল্য সংযোজন করনীতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও কাস্টমস-সংক্রান্ত চুক্তি অনুবিভাগের বিভিন্ন পদে রাজস্ব আহরণ-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একই সঙ্গে রাজস্বনীতি বিভাগের অন্যান্য অনুবিভাগের পদে জনপ্রশাসন, অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতি গবেষণা ও পরিসংখ্যান, হিসাব ও নিরীক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ এবং আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা বা ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন পদে শুল্ক ও আবগারি এবং কর ক্যাডারে কর্মরত জনবলের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়। সংশোধিত অধ্যাদেশের খসড়ায় এ-সংক্রান্ত উপধারা সংশোধন করে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন এবং মাঠ পর্যায়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের বিভিন্ন পদে রাজস্ব আহরণ-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগের বিভিন্ন পদ প্রশাসন, কর এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মচারীদের মধ্য থেকে পূরণ করার বিধান রয়েছে। এ-সংক্রান্ত উপধারা সংশোধন করে এসব পদে রাজস্ব আহরণ ও জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের মধ্যে থেকে পূরণ করার প্রস্তাব করা হয়।
অধ্যাদেশের নবম ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব বিভাগ ও  রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জনবল রাজস্বনীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। সংশোধন প্রস্তাবে এনবিআরের জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হওয়ার বিষয়টি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আর এখান থেকে প্রয়োজনীয় জনবল বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে রাজস্বনীতি বিভাগে পদায়ন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পর্যালোচনা হবে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ 
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হবে। কোন কমিশনের কতটি সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে, সেই চিত্র তুলে ধরা হবে। আশু বাস্তবায়নযোগ্য ৩৬৭টি সুপারিশের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৭টি সুপারিশ এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্য এখন থেকে উপদেষ্টা পরিষদের প্রতিটি বৈঠকে কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে ১ নম্বর এজেন্ডা থাকছে।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার মোট ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি ১০টি কমিশনের মোট ৩৬৭টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ণ
নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নটমঞ্চের ২০তম প্রযোজনা নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) রাতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে মেইড ইন কালচারাল ফেস্টিভ্যাল সাংস্কৃতিক উৎসবে নটমঞ্চের বিদ্যামন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করা হয় ।
মহীউদ্দিন ছড়া’র রচনায় আক্রাম খানের নির্দেশনায় ও পিএম বিল্লালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকে যারা অভিনয় করেছেন এবং নেপথ্যে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন গোবিন্দ মন্ডল, সাধন চন্দ্র দত্ত, মোরশেদ আলম, আহমেদ তানজিল, মরিয়ম আক্তার রাহা, আছিয়া আক্তার মিথিলা, মুক্তা আক্তার, নূরে আলম, সাইফুল ইসলাম, নূরজাহান বেগম, মৌমিতা, রিয়াদ, রিপন প্রমুখ।
নটমঞ্চের সভাপতি উজ্জ্বল হোসাইন জানান, এটি একটি শিক্ষামূলক নাটক। “বিদ্যামন্ত্র” নাটকের সূচনায় মঞ্চে উপস্থিত হন এক রহস্যময় বৃদ্ধ চরিত্র গল্পবুড়ো। তাঁর কণ্ঠে নাটকের জগত প্রাণপায়। তিনি দর্শকদের বলেন, এই যে পৃথিবী এখানে প্রেম আর অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে। কেউ জ্ঞানের আলো খোঁজে, কেউ সেই জ্ঞানকেই মন্ত্র বানিয়ে মানুষকে বশ করে রাখে। গল্পবুড়োর কথায় পর্দা খুলে যায় এক রূপকথার রাজ্যের দরজা। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, হৃদয়ে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে বসবাস করে। প্রতিরাতে স্বপ্নে সে দেখে এক অচেনা রাজকুমারীর মুখ—তার চোখে অনন্ত স্নেহ, তবু গভীর বিষাদের ছায়া। রাজপুত্র জানে না এ প্রেম কল্পনা, না কি নিয়তির নির্দেশ। সেই অজানা মুখের টানে সে দেশ-দেশান্তর পাড়ি দেয়, পর্বত, নদী, মরুভূমি পেরিয়ে একদিন এসে পৌঁছায় এক অদ্ভুত রাজ্যে। সে রাজ্য রাক্ষসে দখলে। সে একসময় ছিল রাজ্যের পণ্ডিত, কিন্তু জ্ঞানের অপব্যবহার করে সে সৃষ্টি করেছে “বিদ্যামন্ত্র” এক অভিশপ্ত শক্তি যার দ্বারা নারীদের মন, দেহ ও চিন্তা সে বশ করে রেখেছে। তার প্রাসাদে বন্দী শত শত নারীর মধ্যে দু’জন প্রধান চরিত্র কেশবতি ও হীরামন। কেশবতি রাজ্যের প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী, যার চোখে এখনো মুক্তির দীপ্তি জ্বলে; হীরামন এক জ্ঞানী নারী, যে বিদ্যামন্ত্রের রহস্য জানে কিন্তু তা ভাঙতে অক্ষম। রাজপুত্র এসে এই অমানবিক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। তার হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। কেশবতির চোখে সে চিনে ফেলে সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে যাকে খুঁজে সে এতদিন ঘুরেছে। কিন্তু কেশবতি এখন বিদ্যামন্ত্রে  বন্দী। তাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো “বিদ্যামন্ত্র” ভাঙা, যা কেবল সত্য প্রেম, সাহস, এবং জ্ঞানের আলোকেই সম্ভব।
গল্পবুড়োর বর্ণনায় নাটক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। রাজপুত্র হীরামনের সহযোগিতায় রাক্ষসের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেখানে ঘটে আলো ও অন্ধকারের এক ভয়ংকর সংঘর্ষ। শেষে প্রেমের বিশুদ্ধতা ও কেশবতির আত্মত্যাগে ভেঙে যায় বিদ্যামন্ত্র। নারীরা ফিরে পায় মুক্তি, অমরাবতী রাজ্যে ফিরে আসে গান, আলো, আর মানবতার গৌরব।
নাটক “বিদ্যামন্ত্র” প্রেম, জ্ঞান ও মানবমুক্তির এক প্রতীকী কাহিনি। এখানে রাজপুত্রের অভিযান কেবল এক নারীর মুক্তি নয় এটি নারী স্বাধীনতা, জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং মানবিকতার জয়গাথা।
নাটকটি চাঁদপুরের বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপভোগ করেন।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।