খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বয়সের আগুনে পুড়ছে অবশিষ্ট ভালোবাসা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
বয়সের আগুনে পুড়ছে অবশিষ্ট ভালোবাসা

ভালোবাসা মানুষের জীবনকে গঠন করে তাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। কখনো সুখের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আবার কখনো গভীর দুঃখের অতলে ডুবিয়ে দেয়। তবে সময়ের সঙ্গে ভালোবাসার রূপ বদলায়। কোনো সম্পর্কই একই রকম থাকে না। ভালোবাসা যেমন ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তেমনি কখনো কখনো তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ধ্বংস হয়, আর তার অবশিষ্ট আগুন জ্বলতে জ্বলতে একসময় নিভে যায়। ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুভূতি, যা কখনো আনন্দ দেয়, কখনো কষ্টের গভীরে নিয়ে যায়। সম্পর্কের সূচনা যেমন আবেগময় হয়, তেমনি সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তিত হয়, বিবর্ণ হতে থাকে, কখনো হারিয়ে যায়, কখনো বা অবশিষ্ট আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায়, আবার কখনো তার ছাই থেকে নতুন অনুভূতির জন্ম হয়।
আমাদের জীবনেও হয়তো সেই অবশিষ্ট আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে, পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতিতে, ভুল বোঝাবুঝির যন্ত্রণায় বা অতীতের কোনো অনুভূতির ছায়ায়। কিছু ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, বরং তার রেশ থেকে যায় আমাদের মানসিকতার গভীরে, আচরণে, এবং পরবর্তী সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে।
ভালোবাসা কখনোই একদিনে জন্ম নেয় না, এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, একটি মানুষের অন্তরের গভীরে স্থান করে নেয়। প্রথম প্রেম, প্রথম স্পর্শ, প্রথম অভিজ্ঞতা—সবই মনের গভীরে চিরস্থায়ী হয়ে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের মাঝে ক্লান্তি আসে, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়, বিশ্বাস ভেঙে পড়ে, এবং কখনো কখনো সম্পর্কের পরিণতি হয় বিচ্ছেদে। অনেক সময় সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ থেকে যায়, হয়তো কোনো গানের লিরিকে, কোনো চেনা গলির মোড়ে, পুরোনো দিনের চিঠিতে বা কিছু ছবির ভাঁজে। সেই অনুভূতির অবশিষ্টাংশ আমাদের মনে বারবার ফিরে আসে, স্মৃতির মতো, কখনো আনন্দদায়ক, কখনো বেদনাদায়ক।
যখন কোনো সম্পর্ক ভেঙে যায়, তার মানে এই নয় যে ভালোবাসা একেবারে মুছে যায়। বরং সম্পর্কের শেষ মুহূর্তগুলোর স্মৃতি, যন্ত্রণা, হতাশা, এবং অভিমান আমাদের মধ্যে বাস করতে থাকে।
কিছু সম্পর্কের অবশিষ্ট আগুন সুখের স্মৃতি হিসেবে থাকে, যা মাঝে মাঝে মনে পড়ে আনন্দ এনে দেয়। আবার কিছু সম্পর্কের অবশিষ্ট আগুন জ্বলতে জ্বলতে কষ্টের এক বিশাল প্রাচীর তৈরি করে, যা আমাদের নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে বাধা দেয়। আমরা হয়তো বারবার ফিরে যেতে চাই পুরোনো সেই মুহূর্তগুলোর কাছে, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সে সময় আর ফিরে আসবে না।
যৌবনের ভালোবাসা আবেগে ভরা থাকে, সেখানে যুক্তির চেয়ে অনুভূতি বড় হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে, আমাদের ভালোবাসার ধরনও বদলে যায়। যে আবেগ একসময় বন্য ঝড়ের মতো ছিল, তা ধীরে ধীরে শান্ত নদীর মতো হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে আমরা বুঝতে পারি, ভালোবাসা মানে শুধু আবেগের জয়গান নয়; বরং এটি দায়িত্ব, বিশ্বাস, এবং বোঝাপড়ার সমষ্টি। যখন কোনো সম্পর্কের মধ্যে এই উপাদানগুলো হারিয়ে যেতে থাকে, তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন ধীরে ধীরে নিভে যায়।
আধুনিক যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা এবং এর প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় ভালোবাসা মানে ছিল সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, ভালোবাসার জন্য লড়াই করা, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু বর্তমান সমাজে ভালোবাসার স্থায়ীত্ব কমে যাচ্ছে, সম্পর্কগুলো দ্রুত গড়ে ওঠে এবং দ্রুত ভেঙে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রযুক্তির উন্নতি, এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করার ফলে ভালোবাসার রূপান্তর হচ্ছে। আমাদের সম্পর্কগুলো এখন অনেকটাই তাৎক্ষণিক, যেখানে গভীরতা কম কিন্তু অভিজ্ঞতা বেশি। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন আমাদের জীবন থেকে দ্রুত নিভে যায়, স্মৃতিগুলো মুছে যায়, এবং নতুন বাস্তবতা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়।
যে আগুন একসময় আমাদের পুড়িয়েছিল, তা হয়তো আমাদের আরও পরিপক্ক করেছে। একবার ভালোবাসায় পোড়ার পর মানুষ আরও সতর্ক হয়ে যায়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ভালোবাসা আর আসবে না। বরং, পুরোনো আগুনের ছাই থেকে নতুন ভালোবাসার ফুল ফোটে। কেউ কেউ পুরোনো ক্ষত থেকে শিখে নতুন করে জীবন শুরু করে, আবার কেউ হয়তো সেই স্মৃতির আগুনেই সারাজীবন পুড়ে যেতে থাকে।
ভালোবাসা প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু মুহূর্তের সাথে যুক্ত হয়—প্রথম দেখা, প্রথম কথা, প্রথম ছোঁয়া, প্রথম অনুভূতি। এটি আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে, একধরনের স্বপ্ন তৈরি করে, যেখানে একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, ভালোবাসার আবেগ এবং একে অপরকে ধরে রাখার ইচ্ছে কাজ করে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের ধরন বদলায়। জীবনের বাস্তবতা, পারস্পরিক দূরত্ব, মানসিক পরিবর্তন এবং পরিস্থিতির চাপে সম্পর্কের গভীরতা কমতে থাকে। যখন সম্পর্কের উত্তাপ কমে আসে, তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকু টিকে থাকে স্মৃতির আকারে। সেই স্মৃতির আগুন হয়তো আমাদের মনে কষ্ট দেয়, কিন্তু সেটাই আমাদের ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু সম্পর্ক আমাদের জীবন থেকে চলে গেলেও তার ছাপ মুছে যায় না। কিছু মুহূর্ত আমাদের মনে থেকে যায়, কোনো গানের সুরে, পুরোনো এক খামে লুকানো চিঠিতে, অথবা কোনো বিশেষ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার সময়। এই স্মৃতিগুলো আমাদের মনে একধরনের অদৃশ্য অনুভূতি তৈরি করে, যা সুখ বা দুঃখের রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে, বাস্তবতা আমাদের শেখায় যে অতীতকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমরা যতই পুরোনো অনুভূতিতে বেঁচে থাকতে চাই, জীবন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন ক্রমশ নিভে আসে, কিন্তু তার তাপ আমাদের মনে দীর্ঘস্থায়ীভাবে থেকে যায়। যৌবনের ভালোবাসা আবেগপ্রবণ ও বেপরোয়া হতে পারে, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি ভালোবাসা কেবল আবেগের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি দায়িত্ব, আত্মত্যাগ, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকে।
যখন আমরা তরুণ থাকি, তখন ভালোবাসাকে শুধুমাত্র আবেগ ও রোমাঞ্চের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। কিন্তু সময়ের সাথে বাস্তবতা আমাদের শেখায় যে শুধুমাত্র আবেগ টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট নয়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন বোঝাপড়া, ধৈর্য এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। অনেক সম্পর্ক শুধু আবেগের কারণে টেকে না, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও মানসিক পরিপক্বতার কারণে দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিছু সম্পর্ক একসময় শেষ হয়ে যায়, এবং তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকু আমাদের মনকে দ্বিধায় ফেলে। আমরা কি সেই পুরোনো মুহূর্তগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকব, নাকি নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাব?
অনেকে ভালোবাসার অতীত স্মৃতিকে মনে ধরে রাখে, কারণ তারা বিশ্বাস করে সেই অনুভূতির আর কোনো বিকল্প নেই। আবার কেউ কেউ মনে করে, পুরোনো অনুভূতিকে স্মৃতির পাতায় রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
এই দ্বন্দ্ব মানুষের ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। কেউ হয়তো আগের সম্পর্কের স্মৃতিকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে চায়, আবার কেউ সেই স্মৃতিকে সঙ্গী করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। যে আগুন একসময় আমাদের পুড়িয়েছে, সেটাই হয়তো আমাদের নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে। ভালোবাসার অভিজ্ঞতা, কষ্ট, এবং বিচ্ছেদ আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে, আমাদের আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
বিচ্ছেদের পর মানুষ দুটি পথে হাঁটে- কেউ পুরোনো অনুভূতিতে আটকে থাকে, নতুন ভালোবাসার পথে আর পা বাড়ায় না। কেউ পুরোনো স্মৃতিকে জীবনের অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করে, এবং নতুন করে জীবন শুরু করে।
কিছু মানুষ একা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার কেউ নতুন সম্পর্ক তৈরি করে, যেখানে তারা অতীত থেকে শেখা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
আজকের ডিজিটাল যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা ও প্রকাশভঙ্গি আগের চেয়ে অনেক বদলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, এবং সম্পর্কের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ভালোবাসাকে আরও ক্ষণস্থায়ী করে তুলেছে।
আগের দিনে সম্পর্কগুলো ধৈর্য, ত্যাগ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে উঠত, কিন্তু বর্তমান সময়ে সম্পর্ক দ্রুত গড়ে ওঠে এবং দ্রুত ভেঙেও যায়। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন জ্বলে ওঠার সুযোগই পায় না; বরং মানুষ নতুন সম্পর্কে ঢুকে পড়ে পুরোনো ক্ষতকে ভুলে থাকার জন্য। কিন্তু এর ফলে অনেক মানুষই একাকীত্ব অনুভব করে, কারণ তারা সত্যিকারের ভালোবাসার গভীরতা থেকে বঞ্চিত হয়।
আমরা যদি ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকুকে কেবল যন্ত্রণা হিসেবে দেখি, তাহলে সেটি আমাদের মনকে আরও ভারাক্রান্ত করবে। কিন্তু যদি এটিকে জীবন শিক্ষার অংশ হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আরও পরিণত হতে পারব। আমরা ভালোবাসতে পেরেছিলাম, সেটাই এক বড় ব্যাপার। ভালোবাসার অনুভূতি হারিয়ে গেলেও, সেটি আমাদের জীবনকে রঙিন করেছিল। নতুন সম্পর্কের পথে হাঁটার আগে পুরোনো সম্পর্কের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।
অতএব, ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন শুধুমাত্র কষ্টের প্রতীক নয়, এটি আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা, যা আমাদের আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায় না, বরং এটি সময়ের সাথে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। আমাদের জীবন, সম্পর্ক, এবং সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই আগুন কখনো জ্বলে ওঠে, কখনো নিভে যায়।
যদি আমরা পুরোনো ভালোবাসার ছায়ায় আটকে থাকি, তাহলে নতুন ভালোবাসা আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি আমরা সেই অবশিষ্ট আগুনকে অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে তা আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে পারে। ভালোবাসা শেষ হতে পারে, কিন্তু তার শিক্ষা, তার স্মৃতি আমাদের জীবনকে নতুনভাবে গড়তে সাহায্য করে। শেষ পর্যন্ত, আমাদের জীবন ভালোবাসারই গল্প—কখনো তা আনন্দে ভরা, কখনো বেদনার আগুনে পোড়া। কিন্তু সেই আগুন থেকেই আমরা নতুন আলো খুঁজি, নতুন জীবনের পথে এগিয়ে যাই।
ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায় না, বরং এটি আমাদের হৃদয়ে এক ধরনের আলো হয়ে থাকে। কিছু স্মৃতি আমাদের কষ্ট দেয়, কিছু আমাদের হাসায়, কিছু আমাদের নতুন করে জীবন শুরু করতে অনুপ্রাণিত করে।
যদি আমরা পুরোনো ক্ষত নিয়ে বাঁচতে চাই, তাহলে সেই আগুন আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু যদি আমরা সেই আগুনকে অভিজ্ঞতার আলো হিসেবে দেখি, তাহলে তা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেবে।
ভালোবাসা শেষ হতে পারে, সম্পর্কের পরিণতি যা-ই হোক, কিন্তু ভালোবাসার চিহ্ন থেকে যায়—আমাদের অনুভূতিতে, স্মৃতিতে, এবং জীবনের সিদ্ধান্তে। তাই ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন শুধু পোড়ায় না, কখনো কখনো এটি আমাদের নতুন আলোও দেখায়।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।