খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

বয়সের আগুনে পুড়ছে অবশিষ্ট ভালোবাসা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ
বয়সের আগুনে পুড়ছে অবশিষ্ট ভালোবাসা

ভালোবাসা মানুষের জীবনকে গঠন করে তাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। কখনো সুখের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, আবার কখনো গভীর দুঃখের অতলে ডুবিয়ে দেয়। তবে সময়ের সঙ্গে ভালোবাসার রূপ বদলায়। কোনো সম্পর্কই একই রকম থাকে না। ভালোবাসা যেমন ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তেমনি কখনো কখনো তা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ধ্বংস হয়, আর তার অবশিষ্ট আগুন জ্বলতে জ্বলতে একসময় নিভে যায়। ভালোবাসা মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অনুভূতি, যা কখনো আনন্দ দেয়, কখনো কষ্টের গভীরে নিয়ে যায়। সম্পর্কের সূচনা যেমন আবেগময় হয়, তেমনি সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তিত হয়, বিবর্ণ হতে থাকে, কখনো হারিয়ে যায়, কখনো বা অবশিষ্ট আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। আমাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায়, আবার কখনো তার ছাই থেকে নতুন অনুভূতির জন্ম হয়।
আমাদের জীবনেও হয়তো সেই অবশিষ্ট আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে, পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতিতে, ভুল বোঝাবুঝির যন্ত্রণায় বা অতীতের কোনো অনুভূতির ছায়ায়। কিছু ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, বরং তার রেশ থেকে যায় আমাদের মানসিকতার গভীরে, আচরণে, এবং পরবর্তী সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে।
ভালোবাসা কখনোই একদিনে জন্ম নেয় না, এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, একটি মানুষের অন্তরের গভীরে স্থান করে নেয়। প্রথম প্রেম, প্রথম স্পর্শ, প্রথম অভিজ্ঞতা—সবই মনের গভীরে চিরস্থায়ী হয়ে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের মাঝে ক্লান্তি আসে, ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়, বিশ্বাস ভেঙে পড়ে, এবং কখনো কখনো সম্পর্কের পরিণতি হয় বিচ্ছেদে। অনেক সময় সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ থেকে যায়, হয়তো কোনো গানের লিরিকে, কোনো চেনা গলির মোড়ে, পুরোনো দিনের চিঠিতে বা কিছু ছবির ভাঁজে। সেই অনুভূতির অবশিষ্টাংশ আমাদের মনে বারবার ফিরে আসে, স্মৃতির মতো, কখনো আনন্দদায়ক, কখনো বেদনাদায়ক।
যখন কোনো সম্পর্ক ভেঙে যায়, তার মানে এই নয় যে ভালোবাসা একেবারে মুছে যায়। বরং সম্পর্কের শেষ মুহূর্তগুলোর স্মৃতি, যন্ত্রণা, হতাশা, এবং অভিমান আমাদের মধ্যে বাস করতে থাকে।
কিছু সম্পর্কের অবশিষ্ট আগুন সুখের স্মৃতি হিসেবে থাকে, যা মাঝে মাঝে মনে পড়ে আনন্দ এনে দেয়। আবার কিছু সম্পর্কের অবশিষ্ট আগুন জ্বলতে জ্বলতে কষ্টের এক বিশাল প্রাচীর তৈরি করে, যা আমাদের নতুন সম্পর্ক তৈরি করতে বাধা দেয়। আমরা হয়তো বারবার ফিরে যেতে চাই পুরোনো সেই মুহূর্তগুলোর কাছে, কিন্তু বাস্তবতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সে সময় আর ফিরে আসবে না।
যৌবনের ভালোবাসা আবেগে ভরা থাকে, সেখানে যুক্তির চেয়ে অনুভূতি বড় হয়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে, আমাদের ভালোবাসার ধরনও বদলে যায়। যে আবেগ একসময় বন্য ঝড়ের মতো ছিল, তা ধীরে ধীরে শান্ত নদীর মতো হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সাথে আমরা বুঝতে পারি, ভালোবাসা মানে শুধু আবেগের জয়গান নয়; বরং এটি দায়িত্ব, বিশ্বাস, এবং বোঝাপড়ার সমষ্টি। যখন কোনো সম্পর্কের মধ্যে এই উপাদানগুলো হারিয়ে যেতে থাকে, তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন ধীরে ধীরে নিভে যায়।
আধুনিক যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা এবং এর প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় ভালোবাসা মানে ছিল সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, ভালোবাসার জন্য লড়াই করা, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু বর্তমান সমাজে ভালোবাসার স্থায়ীত্ব কমে যাচ্ছে, সম্পর্কগুলো দ্রুত গড়ে ওঠে এবং দ্রুত ভেঙে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রযুক্তির উন্নতি, এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করার ফলে ভালোবাসার রূপান্তর হচ্ছে। আমাদের সম্পর্কগুলো এখন অনেকটাই তাৎক্ষণিক, যেখানে গভীরতা কম কিন্তু অভিজ্ঞতা বেশি। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন আমাদের জীবন থেকে দ্রুত নিভে যায়, স্মৃতিগুলো মুছে যায়, এবং নতুন বাস্তবতা আমাদের সামনে উপস্থিত হয়।
যে আগুন একসময় আমাদের পুড়িয়েছিল, তা হয়তো আমাদের আরও পরিপক্ক করেছে। একবার ভালোবাসায় পোড়ার পর মানুষ আরও সতর্ক হয়ে যায়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে ভালোবাসা আর আসবে না। বরং, পুরোনো আগুনের ছাই থেকে নতুন ভালোবাসার ফুল ফোটে। কেউ কেউ পুরোনো ক্ষত থেকে শিখে নতুন করে জীবন শুরু করে, আবার কেউ হয়তো সেই স্মৃতির আগুনেই সারাজীবন পুড়ে যেতে থাকে।
ভালোবাসা প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু মুহূর্তের সাথে যুক্ত হয়—প্রথম দেখা, প্রথম কথা, প্রথম ছোঁয়া, প্রথম অনুভূতি। এটি আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে দাগ কাটে, একধরনের স্বপ্ন তৈরি করে, যেখানে একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি, ভালোবাসার আবেগ এবং একে অপরকে ধরে রাখার ইচ্ছে কাজ করে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের ধরন বদলায়। জীবনের বাস্তবতা, পারস্পরিক দূরত্ব, মানসিক পরিবর্তন এবং পরিস্থিতির চাপে সম্পর্কের গভীরতা কমতে থাকে। যখন সম্পর্কের উত্তাপ কমে আসে, তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকু টিকে থাকে স্মৃতির আকারে। সেই স্মৃতির আগুন হয়তো আমাদের মনে কষ্ট দেয়, কিন্তু সেটাই আমাদের ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। কিছু কিছু সম্পর্ক আমাদের জীবন থেকে চলে গেলেও তার ছাপ মুছে যায় না। কিছু মুহূর্ত আমাদের মনে থেকে যায়, কোনো গানের সুরে, পুরোনো এক খামে লুকানো চিঠিতে, অথবা কোনো বিশেষ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকার সময়। এই স্মৃতিগুলো আমাদের মনে একধরনের অদৃশ্য অনুভূতি তৈরি করে, যা সুখ বা দুঃখের রূপ নিতে পারে। অন্যদিকে, বাস্তবতা আমাদের শেখায় যে অতীতকে ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমরা যতই পুরোনো অনুভূতিতে বেঁচে থাকতে চাই, জীবন আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করে। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন ক্রমশ নিভে আসে, কিন্তু তার তাপ আমাদের মনে দীর্ঘস্থায়ীভাবে থেকে যায়। যৌবনের ভালোবাসা আবেগপ্রবণ ও বেপরোয়া হতে পারে, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমরা বুঝতে পারি ভালোবাসা কেবল আবেগের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি দায়িত্ব, আত্মত্যাগ, বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্মানের ওপর ভিত্তি করে টিকে থাকে।
যখন আমরা তরুণ থাকি, তখন ভালোবাসাকে শুধুমাত্র আবেগ ও রোমাঞ্চের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি। কিন্তু সময়ের সাথে বাস্তবতা আমাদের শেখায় যে শুধুমাত্র আবেগ টিকিয়ে রাখা যথেষ্ট নয়, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন বোঝাপড়া, ধৈর্য এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ। অনেক সম্পর্ক শুধু আবেগের কারণে টেকে না, বরং পারস্পরিক বিশ্বাস ও মানসিক পরিপক্বতার কারণে দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিছু সম্পর্ক একসময় শেষ হয়ে যায়, এবং তখন ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকু আমাদের মনকে দ্বিধায় ফেলে। আমরা কি সেই পুরোনো মুহূর্তগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকব, নাকি নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাব?
অনেকে ভালোবাসার অতীত স্মৃতিকে মনে ধরে রাখে, কারণ তারা বিশ্বাস করে সেই অনুভূতির আর কোনো বিকল্প নেই। আবার কেউ কেউ মনে করে, পুরোনো অনুভূতিকে স্মৃতির পাতায় রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
এই দ্বন্দ্ব মানুষের ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে। কেউ হয়তো আগের সম্পর্কের স্মৃতিকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলতে চায়, আবার কেউ সেই স্মৃতিকে সঙ্গী করেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়। যে আগুন একসময় আমাদের পুড়িয়েছে, সেটাই হয়তো আমাদের নতুনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে। ভালোবাসার অভিজ্ঞতা, কষ্ট, এবং বিচ্ছেদ আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে, আমাদের আরও সংবেদনশীল করে তোলে।
বিচ্ছেদের পর মানুষ দুটি পথে হাঁটে- কেউ পুরোনো অনুভূতিতে আটকে থাকে, নতুন ভালোবাসার পথে আর পা বাড়ায় না। কেউ পুরোনো স্মৃতিকে জীবনের অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করে, এবং নতুন করে জীবন শুরু করে।
কিছু মানুষ একা থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, আবার কেউ নতুন সম্পর্ক তৈরি করে, যেখানে তারা অতীত থেকে শেখা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
আজকের ডিজিটাল যুগে ভালোবাসার সংজ্ঞা ও প্রকাশভঙ্গি আগের চেয়ে অনেক বদলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, এবং সম্পর্কের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ভালোবাসাকে আরও ক্ষণস্থায়ী করে তুলেছে।
আগের দিনে সম্পর্কগুলো ধৈর্য, ত্যাগ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে গড়ে উঠত, কিন্তু বর্তমান সময়ে সম্পর্ক দ্রুত গড়ে ওঠে এবং দ্রুত ভেঙেও যায়। ফলে ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন জ্বলে ওঠার সুযোগই পায় না; বরং মানুষ নতুন সম্পর্কে ঢুকে পড়ে পুরোনো ক্ষতকে ভুলে থাকার জন্য। কিন্তু এর ফলে অনেক মানুষই একাকীত্ব অনুভব করে, কারণ তারা সত্যিকারের ভালোবাসার গভীরতা থেকে বঞ্চিত হয়।
আমরা যদি ভালোবাসার অবশিষ্ট অংশটুকুকে কেবল যন্ত্রণা হিসেবে দেখি, তাহলে সেটি আমাদের মনকে আরও ভারাক্রান্ত করবে। কিন্তু যদি এটিকে জীবন শিক্ষার অংশ হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে আমরা ব্যক্তিগতভাবে আরও পরিণত হতে পারব। আমরা ভালোবাসতে পেরেছিলাম, সেটাই এক বড় ব্যাপার। ভালোবাসার অনুভূতি হারিয়ে গেলেও, সেটি আমাদের জীবনকে রঙিন করেছিল। নতুন সম্পর্কের পথে হাঁটার আগে পুরোনো সম্পর্কের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি।
অতএব, ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন শুধুমাত্র কষ্টের প্রতীক নয়, এটি আমাদের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা, যা আমাদের আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায় না, বরং এটি সময়ের সাথে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। আমাদের জীবন, সম্পর্ক, এবং সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই আগুন কখনো জ্বলে ওঠে, কখনো নিভে যায়।
যদি আমরা পুরোনো ভালোবাসার ছায়ায় আটকে থাকি, তাহলে নতুন ভালোবাসা আসার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যদি আমরা সেই অবশিষ্ট আগুনকে অভিজ্ঞতা হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে তা আমাদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করতে পারে। ভালোবাসা শেষ হতে পারে, কিন্তু তার শিক্ষা, তার স্মৃতি আমাদের জীবনকে নতুনভাবে গড়তে সাহায্য করে। শেষ পর্যন্ত, আমাদের জীবন ভালোবাসারই গল্প—কখনো তা আনন্দে ভরা, কখনো বেদনার আগুনে পোড়া। কিন্তু সেই আগুন থেকেই আমরা নতুন আলো খুঁজি, নতুন জীবনের পথে এগিয়ে যাই।
ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন কখনো পুরোপুরি নিভে যায় না, বরং এটি আমাদের হৃদয়ে এক ধরনের আলো হয়ে থাকে। কিছু স্মৃতি আমাদের কষ্ট দেয়, কিছু আমাদের হাসায়, কিছু আমাদের নতুন করে জীবন শুরু করতে অনুপ্রাণিত করে।
যদি আমরা পুরোনো ক্ষত নিয়ে বাঁচতে চাই, তাহলে সেই আগুন আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু যদি আমরা সেই আগুনকে অভিজ্ঞতার আলো হিসেবে দেখি, তাহলে তা আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেবে।
ভালোবাসা শেষ হতে পারে, সম্পর্কের পরিণতি যা-ই হোক, কিন্তু ভালোবাসার চিহ্ন থেকে যায়—আমাদের অনুভূতিতে, স্মৃতিতে, এবং জীবনের সিদ্ধান্তে। তাই ভালোবাসার অবশিষ্ট আগুন শুধু পোড়ায় না, কখনো কখনো এটি আমাদের নতুন আলোও দেখায়।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।