খুঁজুন
                               
বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫, ২২ শ্রাবণ, ১৪৩২

ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পতনের ১বছর পুর্তিতে দ. রাঙ্গুনিয়া যুবদলের বিজয় র‍্যালী

এম. মতিন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ
ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পতনের ১বছর পুর্তিতে দ. রাঙ্গুনিয়া যুবদলের বিজয় র‍্যালী

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের ১ বছর পুর্তি উপলক্ষে চট্টগ্রাম দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় বিজয় র‍্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫আগস্ট) বিকাল ৫টায় দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সরফভাটার ইত্যাদি চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া যুবদল নেতা দিদার আলমের নেতৃত্বে বিজয়ের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি বিজয় মিছিল ও র‍্যালী গোডাউন সেতু’র দক্ষিণ প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে সরফভাটার ক্ষেত্রফাল বাজার পর্যন্ত সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে ইত্যাদি চত্বরের সামনে এসে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে দিদার আলম বলেন, গতবছর আজকের এই দিনে ছাত্রজনতার আন্দোলনে সাবেক স্বৈরাশাসক ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল। জাতীয়তাবাদী দলের শহীদ ওয়াসিমসহ যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচার হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে বাংলার জনগন মুক্তি পেয়েছে, মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখন জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইনটেরিয়াম সরকারকে আহবান করবো যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

দিদার আলম বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র, টালবাহানা বিএনপির নেতাকর্মীরা মেনে নিবেনা। আগামীতে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে দেশ ও হুমাম কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে রাঙ্গুনিয়া গঠন করা হবে।

রাঙ্গুনিয়া কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় ও ফরিদুল আলম জনির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানা যুবদল নেতা দিদার আলম।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নূর, যুবদল নেতা গিয়াস উদ্দিন, আলী আজগর, শাহাদাৎ হাসান মুরাদ, সাইফুল ইসলাম, শওকত আলী, কাজী শওকত, মনজুর আলম, রাশেদুল ইসলাম, ইয়াকুব, ইয়াছিন প্রমূখ।

রাঙ্গুনিয়ার আ. লীগ নেতা সুদি সাহাব মিয়া গ্রেফতার, এলাকায় মিস্টি বিতরণ

এম. মতিন, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
রাঙ্গুনিয়ার আ. লীগ নেতা সুদি সাহাব মিয়া গ্রেফতার, এলাকায় মিস্টি বিতরণ

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও দাদন বাবসায়ী সাহাব মিয়া তালুকদার (৫৮) সুদি সাহাব মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার দিনগত রাত ২টার দিকে ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে নগরীর বালুছড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাহাব মিয়ার বিরুদ্ধে রাঙ্গুনিয়া থানায় এক ডজনের উপর বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।

সুদি সাহাব মিয়া ইসলামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বাছুর মোহাম্মদ পাড়া এলাকার মৃত নুরুল হক তালুকদারের ছেলে। তাকে মঙ্গলবার রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাকে আজ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি এটিএম শিফাতুল মাজদার জানান, গ্রেফতার সাহাব মিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে সাহাব মিয়া গ্রেফতার হওয়ায় তার অত্যাচারেরশিকার ভুক্তভোগীরা নিজ এলাকার ইসলামপুরে মিস্টি বিতরণ করেন।

মিস্টি বিতরণে অংশ নেন সাহাব মিয়ার আপন বড় ভাই মো. আবছার। শুধু তাই নয় একইসাথে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে ফেস্টুন হাতে সড়কে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন।

এসময় তিনি জানান, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন করেছে সাহাব মিয়া। তার বড় মেয়ে গ্রেফতার সাহাব ময়ার আপন ভাতিজি হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছিলো। এটি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে সাহাব মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা মো. ইলিয়াস। তাকে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে গ্রেফতার করানোসহ নানাভাবে নির্যাতন-হয়রানি করেছে। এছাড়া উত্তরজেলা যুবদল নেতা নাজিম উদ্দীন, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের কামরুল পারভেজ, উপজেলা ছাত্রদলের নেতা জমিরসহ আরও একাধিক বিএনপি নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

এলাকায় সাহাব মিয়ার বিরুদ্ধে জমি দখল, ইটভাটা করতে গিয়ে জোরপূর্বক নিরীহ মানুষের ফসলিজমির মাটি খনন করে নিয়ে যাওয়াসহ আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান : ঘোষণাপত্রে যা যা আছে

রূপসী বাংলা রিপোর্ট
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৫৩ অপরাহ্ণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থান : ঘোষণাপত্রে যা যা আছে

জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে এই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সমাবেশ স্থলে ছিলেন বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা যা যা বলেন–

১। যেহেতু উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের সুদীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের বঞ্চনা ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল;
এবং
২। যেহেতু, বাংলাদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বিবৃত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে;
এবং
৩। যেহেতু স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রনয়ন পদ্ধতি, এর কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের ফলে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করেছিল;
এবং
৪। যেহেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাকশালের নামে সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করে এবং মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে, যার প্রতিক্রিয়ায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মতপ্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়,
এবং
৫। যেহেতু আশির দশকে সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছর ছাত্র-জনতার অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং ১৯৯১ইং সনে পুনরায় সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
এবং
৬। যেহেতু দেশী-বিদেশী চক্রান্তে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় ১/১১ -এর ষড়যন্ত্রমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও ফ্যাসিবাদের পথ সুগম করা হয়;
এবং
৭। যেহেতু গত দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক এবং গণবিরোধী শাসনব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে এবং একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অতি উগ্র বাসনা চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তন করা হয় এবং যার ফলে একদলীয় একচ্ছত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়;
এবং
৮। যেহেতু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, আইন-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধ্বংস করে;
এবং
৯। যেহেতু, হাসিনা সরকারের আমলে তারই নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক, ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে;
এবং
১০। যেহেতু, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করে;
এবং
১১। যেহেতু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ গত প্রায় ষোল বছর যাবত নিরন্তর গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করে জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়;
এবং
১২। যেহেতু বাংলাদেশে বিদেশী রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারিত্বের বিরুদ্ধে এদেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে বহিঃশক্তির তাবেদার আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে;
এবং
১৩। যেহেতু অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন) এদেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে;
এবং
১৪। যেহেতু, আওয়ামী লীগ আমলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয় এবং সরকারী চাকুরীতে একচেটিয়া দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে ছাত্র, চাকুরী প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়;
এবং
১৫। যেহেতু বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ওপর চরম নিপীড়নের ফলে দীর্ঘদিন ধরে জনরোষের সৃষ্টি হয় এবং জনগণ সকল বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই চালিয়ে যায়;
এবং
১৬। যেহেতু, সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার বিলোপ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক ব্যাপক দমন-পীড়ন, বর্বর অত্যাচার ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়, যার ফলে সারা দেশে দল-মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়;
এবং
১৭। যেহেতু ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে অদম্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দল, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ যোগদান করে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী বাহিনী রাজপথে নারী-শিশুসহ প্রায় এক হাজার মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে, অগনিত মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করে এবং আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন প্রদান করে;
এবং
১৮। যেহেতু, অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে জনগণ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে, পরবর্তী সময়ে ৫ আগস্ট ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ পরিচালনা করে এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সকল শ্রেণী, পেশার আপামর জনসাধারণের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়;
এবং
১৯। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবেলায় গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক ও আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসঙ্গত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত;
এবং
২০। যেহেতু জনগণের দাবি অনুযায়ী এরপর অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রীম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়;
এবং
২১। যেহেতু, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়;
এবং
২২। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধান ও সকল রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
এবং
২৩। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ষোল বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম কালে এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালীন সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধসমূহের দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে;
এবং
২৪। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এবং
২৫। সেহেতু, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এবং
২৬। সেহেতু বাংলাদেশের জনগণ এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে যে একটি পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষিত হবে।
এবং
২৭। বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।
এবং
২৮। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হলো।

বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, হালাল অর্থনীতির সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর।
রোববার (৩ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘হালাল ইকোনমি ৩৬০ : ড্রাইভিং গ্লোবাল গ্রোথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে হালাল অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনা, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিশ্বব্যাপী ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই খাত নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করতে এতে অংশ নেন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ, নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ হালাল পণ্যই অমুসলিম দেশগুলো উৎপাদন করে থাকে। এটি আমাদের মতো মুসলিম-প্রধান দেশের জন্য দুঃখজনক। তবে এ পরিস্থিতি আমাদের জন্য বড় একটি সুযোগও। সঠিক নীতিমালা ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ খাতে সাফল্যের সাথে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে পারে।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও হালাল উৎপাদনের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি সরকারি-বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, হালাল অর্থনীতির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এই অংশীদারিত্ব অপরিহার্য, যা উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
সেমিনারের শুরুতে বিএমসিসিআই সভাপতি সাব্বির এ খান অংশগ্রহণকারীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, হালাল অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।
তিনি বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশকে এই লাভজনক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সব অংশীজনকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএমসিসিআই সভাপতি বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির বাইরে বাংলাদেশ হালাল পণ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগানদাতা হয়ে উঠতে পারে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, সহজতর সনদ প্রক্রিয়া এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু মালয়েশিয়াতেই আমরা ৭-৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হালাল পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরও জানান, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক হালাল খাদ্যবাজারের আকার ৩.৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে এটি ৯.৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার হবে ১২.৪২ শতাংশ।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান।
তিনি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেন এবং হালাল অর্থনীতি গঠনে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, এই সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য সুফল বয়ে আনতে পারে।
সেমিনারের একটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের উপদেষ্টা সৈয়দ আলমগীর। এতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি)-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোমিনুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি হালাল অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিত্র এবং সম্ভাব্য উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরেন।
প্যানেল আলোচনায় বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং পরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হালাল অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় হয়। অংশগ্রহণকারীরা এ খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে জোরালো আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করলেও একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে মাত্র ২৯৩.৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য।