খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

ফ্যাসিবাদের জামানায় শিকারি সাংবাদিক

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:২৮ অপরাহ্ণ
ফ্যাসিবাদের জামানায় শিকারি সাংবাদিক

ফ্যাসিবাদের যুগে সাংবাদিকতা এবং সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত জটিল এবং বিপজ্জনক। ফ্যাসিবাদী শাসন সাধারণত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দমন করার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা স্থাপন ও রক্ষা করে। এই শাসনব্যবস্থায় সাংবাদিকদের কাজ শুধু কঠিনই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের “শিকারি” হিসেবে উল্লেখ করা যায়, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসন্ধানে নিরন্তর কাজ করে, যদিও তারা নিজেরাই শিকার হয়ে পড়ে। ফ্যাসিবাদ হলো এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, যা জাতীয়তাবাদ, সামরিকতন্ত্র এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর সীমাবদ্ধতা আরোপের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি সাধারণত একনায়কতন্ত্র, মতপ্রকাশের দমন, এবং রাজনীতি ও অর্থনীতির উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখে। ফ্যাসিবাদী সরকার মিডিয়াকে তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তারা সংবাদ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, যাতে জনগণ তাদের শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন করে। মতবিরোধ, সমালোচনা, বা সরকারের অপকর্ম প্রকাশ করার চেষ্টা করলে সাংবাদিকদের শারীরিক নির্যাতন, গ্রেফতার, এমনকি হত্যার শিকার হতে হয়।

সাংবাদিকতার ভূমিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে : সাংবাদিকতা হল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি শাসকদের জবাবদিহিতার মধ্যে রাখে এবং জনগণকে তথ্যসমৃদ্ধ করে। তবে ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে সাংবাদিকরা অনেক বাধার সম্মুখীন হন। এ ধরনের শাসনে সাংবাদিকদের মূল চ্যালেঞ্জ হল : ফ্যাসিবাদী শাসন সাধারণত সাংবাদিকদের উপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করে। তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা প্রচার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। ফ্যাসিবাদী শাসন তাদের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য সাংবাদিকদের বাধ্য করে। এতে সাংবাদিকদের নৈতিকতার ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফ্যাসিবাদী শাসকরা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য গ্রেফতার, হুমকি এবং সহিংসতার আশ্রয় নেয়। অনেক সাংবাদিক নিখোঁজ বা নিহত হন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক সময় এই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা তাদের সমর্থনে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়।

ফ্যাসিবাদী শাসনে “শিকারি সাংবাদিক” বলতে এমন সাংবাদিকদের বোঝানো হয় যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য অনুসন্ধান করেন। তারা শাসকের ভয় দেখানো বা দুর্নীতির মুখোশ খুলে দিতে সচেষ্ট হন। কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপের মধ্যেও তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সত্য তথ্য সংগ্রহ করেন এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেন। অনেকে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রকাশ করেন, যাতে তাদের নিজ দেশের আইন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত না হয়। শিকারি সাংবাদিকরা ব্লগ, সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মতো বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের বার্তা পৌঁছান। এই সাংবাদিকরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। উদাহরণ: ফ্যাসিবাদের যুগে শিকারি সাংবাদিকদের সংগ্রাম ইতিহাসে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন: হিটলারের শাসনামলে জার্মানিতে স্বাধীন সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ করা হয়। তারপরও কিছু সাংবাদিক, যেমন কার্ল ফন অসিয়েতস্কি, তাদের লেখার মাধ্যমে নাৎসি শাসনের অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রকাশ করেন। এর জন্য তাদের জেল, নির্যাতন এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়। স্তালিনের আমলে সংবাদ মাধ্যম কেবলমাত্র শাসকের হাতিয়ার ছিল। তবুও কিছু সাংবাদিক, যেমন আনা পলিটকোভস্কায়া, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য উদ্ঘাটন করেন। মিয়ানমারে, বেলারুশে এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে সাংবাদিকদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। তবুও শিকারি সাংবাদিকরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, যেমন মিয়ানমারের উইন টিন এবং বেলারুশের মারিয়া রাসোলভা।

ফ্যাসিবাদের যুগে সাংবাদিকদের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হল তাদের নিরাপত্তা। রাষ্ট্র এবং কর্পোরেট শক্তি প্রায়শই তাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়। কিন্তু প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকরা নতুন নতুন উপায়ে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদী সরকাররা নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকদের উপর নজরদারি করে এবং তাদের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় সাধারণ মানুষও ভয়ে সাংবাদিকদের সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানায়। ন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি, যেমন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, সাংবাদিকদের রক্ষা করতে ভূমিকা রাখতে পারে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে, যা সেন্সরশিপ এড়াতে সহায়।

ফ্যাসিবাদের যুগে শিকারি সাংবাদিকরা শুধুমাত্র পেশাদার নন; তারা সমাজের জন্য একজন যোদ্ধা। তাদের কাজের মাধ্যমে তারা শুধু সত্য উদ্ঘাটন করেন না, বরং মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেন এবং শাসকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সাহায্য করেন। যদিও তাদের পথ অত্যন্ত কণ্টকাকীর্ণ, তবুও তাদের আত্মত্যাগ মানবজাতির জন্য অনুপ্রেরণা। একবিংশ শতাব্দীতে, যখন ফ্যাসিবাদের নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে, তখন এই শিকারি সাংবাদিকরাই আমাদের গণতন্ত্রের প্রতিরক্ষক।

ফ্যাসিবাদের যুগে শিকারি সাংবাদিকদের প্রসঙ্গে আরো গভীর বিশ্লেষণ যোগ করা যেতে পারে, যা সাংবাদিকতার নৈতিকতা, ফ্যাসিবাদী সরকারের কৌশল, এবং সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত সংগ্রামের দিকগুলোকে বিশদভাবে আলোচনা করবো।ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা সাধারণত তিনটি মূল বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে দমন করে। ফ্যাসিবাদী সরকার সংবাদ মাধ্যমের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। তারা এমন সংবাদ প্রচার করতে বাধ্য করে যা শাসকদের সুনাম বাড়ায় এবং জনগণের মধ্যে ভয় বা একত্রীকরণ তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, নাৎসি জার্মানিতে জোসেফ গোয়েবেলসের প্রোপাগান্ডা মেশিন “ফ্রিহার প্রেস” নামমাত্র স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমকে সম্পূর্ণরূপে দমন করেছিল। সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য শারীরিক আক্রমণ, বিচারহীন গ্রেপ্তার, এমনকি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। মেক্সিকো, ফিলিপাইন, এবং তুরস্কের মতো দেশে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে। ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদী সরকারের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে বিবেচিত হন।

অনেক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র সংবাদ মাধ্যমকে তাদের “রাষ্ট্রের যুদ্ধ” নীতি বাস্তবায়নের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। সামরিকীকৃত প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে যুদ্ধ, জাতীয়তাবাদ, এবং শাসকদের কর্তৃত্বকে সঠিক প্রমাণ করা হয়। ঝুঁকি ও নৈতিকতার প্রশ্নে ফ্যাসিবাদী শাসনে সাংবাদিকদের কাজ শুধু তথ্য সংগ্রহ বা প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ একটি যুদ্ধ। ফ্যাসিবাদের অধীনে সাংবাদিকরা প্রায়শই পছন্দের দুই পথের মুখোমুখি হন: শাসকের সাথে আপস করে কাজ চালিয়ে যাওয়া। বা সত্য উদঘাটনের জন্য জীবন, পরিবার এবং পেশা সবকিছুর ঝুঁকি নেওয়া।

আলোচিত কয়েকটি উদাহরণ : ড্যাফনে কারুয়ানা গ্যালিজিয়া (মাল্টা): তিনি মাল্টার শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। ২০১৭ সালে বোমা হামলায় তার মৃত্যু ঘটে।জামাল খাশোগি (সৌদি আরব): সৌদি সরকারের নীতির সমালোচনা করার জন্য ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়।

ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে কাজ করা সাংবাদিকদের নৈতিক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাদার নীতিবোধের মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়। ফ্যাসিবাদী শাসকের চাপের মুখে কিছু সাংবাদিক বাধ্য হন সরকারের পক্ষে লিখতে। অন্যদিকে, যারা এর বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তারা প্রায়শই নিজেদের এবং তাদের পরিবারের জীবন বিপন্ন করে। শিকারি সাংবাদিকদের শক্তি ও কৌশল শিকারি সাংবাদিকরা একদিকে শাসকদের প্রোপাগান্ডার মুখোশ উন্মোচন করেন, অন্যদিকে তারা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেন। তাদের প্রতিরোধের কিছু কৌশল হলো:গোপন সংবাদ সংযোগ:কিছু সাংবাদিক সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম এড়িয়ে বিকল্প উপায়ে তথ্য সংগ্রহ ও প্রচার করেন। তারা নির্ভর করেন অনলাইন মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ওপর।

প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে ফ্যাসিবাদী শাসকদের সেন্সরশিপ এড়ানোর নতুন পথ তৈরি হয়েছে। এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকরা তথ্য সরবরাহ করে থাকেন। ফ্যাসিবাদী শাসনে কাজ করা সাংবাদিকরা প্রায়শই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতো সংস্থাগুলি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করে।

শিকারি সাংবাদিকদের ভূমিকা শুধু তাৎক্ষণিক তথ্য সরবরাহে সীমাবদ্ধ নয়। তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতা তৈরি করেন, যা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।সাংবাদিকরা ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যায়, দুর্নীতি, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন তুলে ধরে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ফ্যাসিবাদী সরকার তথ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণকে অজ্ঞ করে রাখার চেষ্টা করে। সাংবাদিকরা সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সাহস এবং সচেতনতা তৈরি করেন।

অনেক সময় ফ্যাসিবাদী শাসন পতনের পর সাংবাদিকরা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করেন। তারা নথিভুক্ত করেন যে কীভাবে একটি জাতি ফ্যাসিবাদের করালগ্রাসে পড়েছিল এবং সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেছিল।

ফ্যাসিবাদের যুগে সাংবাদিকদের ভূমিকা কেবলমাত্র একটি পেশার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি নৈতিক, রাজনৈতিক, এবং সামাজিক দায়িত্ব। শিকারি সাংবাদিকরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার স্বার্থে কাজ করেন। তারা কেবল শাসকদের বিরুদ্ধে নয়, বরং জনগণের উদাসীনতা এবং ভয়কেও চ্যালেঞ্জ জানায়।

যখন ফ্যাসিবাদ সব কিছুকে দমন করতে চায়, তখন এই সাংবাদিকরাই সমাজের অন্ধকার সময়ে আলোর ঝলকানি হয়ে ওঠে। ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, সত্যের অনুসন্ধানীরা শাসকদের ভয় পায় না। তাদের আত্মত্যাগ ও সাহস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনো সহজে পাওয়া যায় না।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১ ব্যাচ, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট (পিআইবি)।

 

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।