খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

প্রিয় বিদ্যালয় : স্মৃতির অ্যালবামে ভাসা দিনগুলো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
প্রিয় বিদ্যালয় : স্মৃতির অ্যালবামে ভাসা দিনগুলো

আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, যা বহু শিক্ষার্থীর জীবনের ভিত্তি স্থাপনের স্থান হিসেবে পরিচিত, আমার শৈশব এবং কৈশোরের এক অনন্য স্মৃতিস্তম্ভ। বিদ্যালয়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, শিক্ষকদের স্নেহময় আচরণ, আর বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো হাসিখুশি মুহূর্তগুলো আজও আমার হৃদয়ে জীবন্ত। প্রথম দিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্মৃতিটি এখনো স্পষ্ট। অজানা এক উত্তেজনা, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আনন্দ এবং শিক্ষকদের সম্মুখীন হওয়ার উত্তাপ—সব মিলিয়ে এক ভিন্ন অনুভূতি ছিল। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ, যেখানে বড় বড় গাছের ছায়া আর একটি সুন্দর খোলা মাঠ ছিল, মনে করিয়ে দেয় শৈশবের নির্ভেজাল আনন্দ। প্রথমদিনের সেই পরিচিতি ক্লাসে শিক্ষক আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বিদ্যালয় কেবল পড়াশোনার স্থান নয়, এটি তোমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ভিত্তি। সেই কথাগুলো আজও আমার জীবনের পথপ্রদর্শক।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সবারই ছিল গভীর শ্রদ্ধা। তারা ছিলেন কেবল শিক্ষক নন, আমাদের অভিভাবকও। শিক্ষক তাবারক উল্লাহ স্যার, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন স্যার গণিত শেখানোর সময় যে ধৈর্য এবং কৌশল দেখাতেন, তা আমাকে গণিতে আত্মবিশ্বাসী হতে শিখিয়েছে। অন্যদিকে, নিরঞ্জন চক্রবর্তী বাংলা পড়ানোর সময় গল্পের ভেতর দিয়ে আমাদের ভাবনার দিগন্ত প্রসারিত করতেন। সবসময় মনে পড়ে প্রিয় স্যারদের প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম, এনামুল হক, হযরত আলী স্যার, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বেপারী, কাজল স্যার, নিরঞ্জন চক্রবর্তী, ভুবেনস্বর স্যার, মাওঃ শামছুল ইসলাম স্যার, জেসমিন ম্যাডামসহ আরো অনেককে।

স্মরণীয় একটি ঘটনা হলো, একবার বার্ষিক পরীক্ষার আগে আমি ইংরেজি একটি অধ্যায় নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। আমাদের ইংরেজি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম স্যার নিজ উদ্যোগে বাড়তি সময় দিয়ে শেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই একান্ত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আমি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পেরেছিলাম। এই ঘটনাগুলো শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ককে তুলে ধরে।

সহপাঠিদের সাথে সবসময় পড়াশুনায় একটি প্রতিযোতিা থাকতো। ক্লাসে সবসময় ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি, হাসান প্রধানীয়া ও ঊষা রাণী এদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতো। এ প্রতিযোগিতা আমাদের মধ্যে শুরু হয় সপ্তম শ্রেণি থেকেই। এভাবে আমরা যথন এসএসসি পরীক্ষার ধারপ্রান্তে তখন আমাদের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম স্যার মনে জেদ ধরলেন যে ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি স্যারের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে কোনো এক কারণে ইব্রাহিম খলিল সোহাগ আমাদের সাথে স্যারের বাসায় থাকে নি। শেষ পর্যন্ত আমি সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন স্যারের বাসায় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিলো বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমরা পরীক্ষার দুই আগেই স্যারের বাসায় চলে যাই। স্যারের বাসায় আমাদের পিতৃস্নেহে আগলে রাখলেন। সকালে পরীক্ষা দিতে যাবো-স্যার ফজরের নামাজের সময় ডেকে তুললেন। আমরা ফজর নামাজ পড়ে পড়াগুলো রিভিশন দিতে থাকি। সঠিক সময় নাস্তা করালেন-স্যারের সহধর্মিণী যিনি পরম মমতায় মাতৃস্নেহে আমাদের খাওয়াতেন। কয়েকটি দিন স্যারের বাসায় ছিলাম আমরা মনেই করিনি। যে আমাদের নিজের বাসায় আমরা নেই। এতোটা অতিথি পরায়ন মানুষ ছিলেন স্যারের পরিবার যা এখনও অনুভব করি। যা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
সহপাঠীদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো আজও আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত হিসেবে গণ্য হয়। টিফিনের সময় সবাই মিলে বড় মাঠে দৌড়ঝাঁপ করা, গল্পের আসর বসানো, আর ছোটখাটো দুষ্টুমিগুলো যেন জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়। টিফিনের সময় বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে আম গাছের নিচে আড্ডা এখনো শৈশবে ফিরিয়ে নেয়। আজো খুঁজে ফিরি সেই বন্ধুদের-ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি, হাসান প্রধানীয়া, ঊষা রাণী, জাহাঙ্গীর আলম পলাশ, মিজানুর রহমান বেপারী, ভজন চন্দ্র দাস, রাজন চন্দ্র দাস, বিকাশ পাল, গোলাম কিবরিয়া সুজন, হাসেম বেপারী, জাবেদ হোসেন, রাশেদ খান, সামিম মোল্লা, খাইরুন নাহার মিতা, শিল্পী আক্তার, পান্না আক্তার, জেসমিন আক্তার, ইয়াসমিন আক্তার, রোকেয়া আক্তা, মুক্তা আক্তা, খোকন চন্দ্র বালা, আব্দুল্লাহ নোমান, ফারুক হোসেন, হাসান খান, সবুর খান, সালাউদ্দিন, ইসমাইল, বিল্লাল, কামাল, আলাউদ্দিন, খোকন খান ও বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
একবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমি এবং আমার বন্ধু মিজান একসঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। আমরা দুজনই সেরা পুরস্কার পাওয়ার জন্য লড়াই করছিলাম, কিন্তু শেষে মিজান জিতেছিল। পরে আমরা একসঙ্গে পুরস্কার উদযাপন করেছিলাম, কারণ বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কোনো প্রতিযোগিতা নেই। বিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানের দিনগুলো ছিল সত্যিই রঙিন। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, নৃত্য, আবৃত্তি, জারিগান—সবকিছুতেই ছিল প্রাণের ছোঁয়া।। দর্শকদের প্রশংসা আর শিক্ষকদের উৎসাহ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।
পাশাপাশি, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় বিদ্যালয়ের মাঠ পরিণত হতো উৎসবের কেন্দ্রস্থল। প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেওয়া ছাড়াও, অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার মুহূর্তগুলোও ছিল ভীষণ আনন্দদায়ক। বিদ্যালয়ের সংগীত শিক্ষক এনামুল স্যার যখন গান শিখাতেন, তখন মনে হতো, এই বিদ্যালয় কেবল পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি আমাদের প্রতিভা বিকাশের মঞ্চ।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমাকে শুধু শিক্ষাগত জ্ঞান দেয়নি, জীবনের মূল্যবান শিক্ষাও দিয়েছে। এখানে আমি শিখেছি নেতৃত্বের গুণাবলি, সহযোগিতার মানসিকতা, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার শক্তি। বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের বাইরের কার্যক্রমগুলো আমার চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি ছিল আনন্দের মধ্যেও এক বিষণ্ণতার দিন। আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা যখন আমাদের আশীর্বাদ করছিলেন, তখন চোখে জল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেদিন আমি অনুভব করেছিলাম, এই বিদ্যালয় শুধু একটি ভবন নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক বিশাল পরিবারের মতো। বিদায়ের পর আজও যখন বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাই, হৃদয়ে এক অদ্ভুত টান অনুভব করি। মনে হয়, সেই দিনগুলো কি আর কখনো ফিরে আসবে? যদিও বাস্তবে তা সম্ভব নয়, তবে স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলো আজও অমলিন।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমার জীবনের ভিত্তি। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান, মূল্যবোধ, এবং স্মৃতিগুলো আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে প্রেরণা জোগায়। বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট-পাথর, গাছ-পালা, এবং স্মৃতি চিরকাল আমার হৃদয়ে অমলিন থাকবে। এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আমার ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকবে।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। প্রায় প্রতিদিন ক্লাসের পর আমরা একসঙ্গে গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতাম। আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল অনেক বৈচিত্র্যময়—পাঠ্যবইয়ের বিষয় থেকে শুরু করে ক্রিকেট ম্যাচ, পছন্দের সিনেমা, বা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
একবার আমরা সবাই মিলে মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলাম। খেলার মাঝখানে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তের আনন্দ, নির্ভেজাল হাসি, এবং মাঠে দৌড়াদৌড়ির সেই স্মৃতি আজও মনে পড়লে মুখে হাসি ফোটে। সেই খেলাগুলো আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছিল। একবার বার্ষিক শিক্ষা সফরে আমরা সবাই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি ঐতিহাসিক স্থান সোনারগাঁও পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। লঞ্চে যাওয়ার সময় আমরা গান গেয়ে, গল্প করে সবাইকে স্মরণীয় করে তুলেছিলাম। সেদিনের সেই প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো আজও আমার জীবনের সেরা স্মৃতির তালিকায় রয়েছে।
আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তাদের আন্তরিকতা এবং ধৈর্য আমাদের জীবনের পথ চলায় প্রেরণার উৎস। আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষক ভুবনেশ্বর স্যার একটি বিজ্ঞান বিষয়ক নানা দিক শিখিয়ে ছিলেন আজও আমার প্রেরণার উৎস। আমাদের  শিক্ষক স্যার আমাকে বলেছিলেন, “তুমি যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো, তাহলে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।” সেই কথাগুলো সেদিন শুধু সাহস জোগায়নি, বরং পরবর্তী জীবনে আমাকে বহুবার আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে।
আমাদের ক্লাসে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো দুষ্টুমিগুলো আজও মনে পড়লে হাসি পায়। একবার ক্লাসে একজন বন্ধু চুপিচুপি আমের আঁটি নিয়ে এসেছিল এবং সবাইকে ভাগ করে খাওয়ানোর সময় শিক্ষক আমাদের ধরে ফেলেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম তিনি আমাদের শাস্তি দেবেন, কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি হেসে বলেছিলেন, “পরের বার ক্লাসের সময় এভাবে ফল খেয়ো না।” তার সেই হালকা শাসন এবং পরম করুণার ব্যবহার আমাদের জন্য শিক্ষণীয় ছিল।
আরেকবার ক্লাসের মধ্যে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমরা সবাই মিলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ শিক্ষক এসে পড়ায় আমরা ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের শুধুমাত্র সতর্ক করে বলেছিলেন, “ক্লাসটাই মাঠ হয়ে যাবে যদি তোমরা নিয়ম মানতে না শিখো।” সেই মুহূর্তে লজ্জা পেলেও তার আচরণ আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু পড়াশোনা নয়, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, কুইজ—সবকিছুতেই সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করেছিল। আমি মনে করি, একবার বিদ্যালয়ের বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় “প্রযুক্তি আমাদের জীবনের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ” বিষয় নিয়ে আমি পক্ষ সমর্থন করেছিলাম। আমার যুক্তিগুলো দর্শকদের এবং বিচারকদের মুগ্ধ করেছিল। সেদিন প্রথম পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিলাম যে আমি ভবিষ্যতে বড় মঞ্চেও নিজের কথা বলার ক্ষমতা রাখি।
আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশও স্মৃতির ভাণ্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গাছগাছালিতে ভরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, যেখানে পাখির ডাক আর দমকা হাওয়ার শব্দে মন শান্ত হয়ে যেত। বিদ্যালয়ের খোলা মাঠ আমাদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত ছিল। বৃষ্টির দিনে মাঠে পানি জমে গেলে আমরা কাদা মাখা খেলায় মেতে উঠতাম। এই সরল আনন্দগুলো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।
বিশেষ করে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে বই পড়ার সুযোগ আমাকে অনেক নতুন জগৎ চিনতে সাহায্য করেছিল। লাইব্রেরির নীরব পরিবেশে বই পড়তে বসা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ। সেদিনগুলোতে আমি জীবন এবং জ্ঞান নিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছিলাম।
বিদ্যালয়ের শেষ দিনে বিদায় অনুষ্ঠান ছিল আমার জীবনের এক আবেগঘন মুহূর্ত। বন্ধু, শিক্ষক এবং প্রিয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে সেদিন অনেকের চোখেই জল ছিল। বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক যখন আমাদের জীবনের জন্য আশীর্বাদ করছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, এ যেন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন এক যাত্রার সূচনা।
সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, আমার বিদ্যালয়ের স্মৃতি এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা কখনোই ভুলব না। মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে ফিরে গেলে সেই দিনগুলোকে আবার মনে করার সুযোগ পাই, যা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শিক্ষা দিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে এবং আমার জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বহু দূর এগিয়ে গেলেও এই বিদ্যালয়ের স্মৃতি, শিক্ষা এবং মূল্যবোধ চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে। বিদ্যালয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সীমাহীন। প্রিয় আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা চিরন্তন। তুমি শুধু একটি বিদ্যালয় নও; তুমি আমার জীবনের পথপ্রদর্শক, আমার শৈশবের আশ্রয়, আর আমার আজকের অস্তিত্বের ভিত্তি।
লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, (এসএসসি ব্যাচ ১৯৯৯), সংগঠক ও লেখক, চাঁদপুর।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।