খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

প্রিয় বিদ্যালয় : স্মৃতির অ্যালবামে ভাসা দিনগুলো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
প্রিয় বিদ্যালয় : স্মৃতির অ্যালবামে ভাসা দিনগুলো

আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, যা বহু শিক্ষার্থীর জীবনের ভিত্তি স্থাপনের স্থান হিসেবে পরিচিত, আমার শৈশব এবং কৈশোরের এক অনন্য স্মৃতিস্তম্ভ। বিদ্যালয়ের স্নিগ্ধ পরিবেশ, শিক্ষকদের স্নেহময় আচরণ, আর বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো হাসিখুশি মুহূর্তগুলো আজও আমার হৃদয়ে জীবন্ত। প্রথম দিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্মৃতিটি এখনো স্পষ্ট। অজানা এক উত্তেজনা, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আনন্দ এবং শিক্ষকদের সম্মুখীন হওয়ার উত্তাপ—সব মিলিয়ে এক ভিন্ন অনুভূতি ছিল। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ, যেখানে বড় বড় গাছের ছায়া আর একটি সুন্দর খোলা মাঠ ছিল, মনে করিয়ে দেয় শৈশবের নির্ভেজাল আনন্দ। প্রথমদিনের সেই পরিচিতি ক্লাসে শিক্ষক আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বিদ্যালয় কেবল পড়াশোনার স্থান নয়, এটি তোমাদের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার ভিত্তি। সেই কথাগুলো আজও আমার জীবনের পথপ্রদর্শক।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সবারই ছিল গভীর শ্রদ্ধা। তারা ছিলেন কেবল শিক্ষক নন, আমাদের অভিভাবকও। শিক্ষক তাবারক উল্লাহ স্যার, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন স্যার গণিত শেখানোর সময় যে ধৈর্য এবং কৌশল দেখাতেন, তা আমাকে গণিতে আত্মবিশ্বাসী হতে শিখিয়েছে। অন্যদিকে, নিরঞ্জন চক্রবর্তী বাংলা পড়ানোর সময় গল্পের ভেতর দিয়ে আমাদের ভাবনার দিগন্ত প্রসারিত করতেন। সবসময় মনে পড়ে প্রিয় স্যারদের প্রয়াত সিরাজুল ইসলাম, এনামুল হক, হযরত আলী স্যার, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন বেপারী, কাজল স্যার, নিরঞ্জন চক্রবর্তী, ভুবেনস্বর স্যার, মাওঃ শামছুল ইসলাম স্যার, জেসমিন ম্যাডামসহ আরো অনেককে।

স্মরণীয় একটি ঘটনা হলো, একবার বার্ষিক পরীক্ষার আগে আমি ইংরেজি একটি অধ্যায় নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। আমাদের ইংরেজি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম স্যার নিজ উদ্যোগে বাড়তি সময় দিয়ে শেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই একান্ত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ আমি পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পেরেছিলাম। এই ঘটনাগুলো শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ককে তুলে ধরে।

সহপাঠিদের সাথে সবসময় পড়াশুনায় একটি প্রতিযোতিা থাকতো। ক্লাসে সবসময় ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি, হাসান প্রধানীয়া ও ঊষা রাণী এদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতো। এ প্রতিযোগিতা আমাদের মধ্যে শুরু হয় সপ্তম শ্রেণি থেকেই। এভাবে আমরা যথন এসএসসি পরীক্ষার ধারপ্রান্তে তখন আমাদের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম স্যার মনে জেদ ধরলেন যে ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি স্যারের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে কোনো এক কারণে ইব্রাহিম খলিল সোহাগ আমাদের সাথে স্যারের বাসায় থাকে নি। শেষ পর্যন্ত আমি সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন স্যারের বাসায় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিলো বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমরা পরীক্ষার দুই আগেই স্যারের বাসায় চলে যাই। স্যারের বাসায় আমাদের পিতৃস্নেহে আগলে রাখলেন। সকালে পরীক্ষা দিতে যাবো-স্যার ফজরের নামাজের সময় ডেকে তুললেন। আমরা ফজর নামাজ পড়ে পড়াগুলো রিভিশন দিতে থাকি। সঠিক সময় নাস্তা করালেন-স্যারের সহধর্মিণী যিনি পরম মমতায় মাতৃস্নেহে আমাদের খাওয়াতেন। কয়েকটি দিন স্যারের বাসায় ছিলাম আমরা মনেই করিনি। যে আমাদের নিজের বাসায় আমরা নেই। এতোটা অতিথি পরায়ন মানুষ ছিলেন স্যারের পরিবার যা এখনও অনুভব করি। যা আমরা কোনোদিন ভুলতে পারবো না।
সহপাঠীদের সঙ্গে কাটানো দিনগুলো আজও আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত হিসেবে গণ্য হয়। টিফিনের সময় সবাই মিলে বড় মাঠে দৌড়ঝাঁপ করা, গল্পের আসর বসানো, আর ছোটখাটো দুষ্টুমিগুলো যেন জীবনের এক বিশেষ অধ্যায়। টিফিনের সময় বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে আম গাছের নিচে আড্ডা এখনো শৈশবে ফিরিয়ে নেয়। আজো খুঁজে ফিরি সেই বন্ধুদের-ইব্রাহিম খলিল সোহাগ, সিরাজুল ইসলাম, মাজহারুল ইসলাম তুহিন, আমি, হাসান প্রধানীয়া, ঊষা রাণী, জাহাঙ্গীর আলম পলাশ, মিজানুর রহমান বেপারী, ভজন চন্দ্র দাস, রাজন চন্দ্র দাস, বিকাশ পাল, গোলাম কিবরিয়া সুজন, হাসেম বেপারী, জাবেদ হোসেন, রাশেদ খান, সামিম মোল্লা, খাইরুন নাহার মিতা, শিল্পী আক্তার, পান্না আক্তার, জেসমিন আক্তার, ইয়াসমিন আক্তার, রোকেয়া আক্তা, মুক্তা আক্তা, খোকন চন্দ্র বালা, আব্দুল্লাহ নোমান, ফারুক হোসেন, হাসান খান, সবুর খান, সালাউদ্দিন, ইসমাইল, বিল্লাল, কামাল, আলাউদ্দিন, খোকন খান ও বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
একবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আমি এবং আমার বন্ধু মিজান একসঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। আমরা দুজনই সেরা পুরস্কার পাওয়ার জন্য লড়াই করছিলাম, কিন্তু শেষে মিজান জিতেছিল। পরে আমরা একসঙ্গে পুরস্কার উদযাপন করেছিলাম, কারণ বন্ধুত্বের চেয়ে বড় কোনো প্রতিযোগিতা নেই। বিদ্যালয়ের বার্ষিক অনুষ্ঠানের দিনগুলো ছিল সত্যিই রঙিন। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, নৃত্য, আবৃত্তি, জারিগান—সবকিছুতেই ছিল প্রাণের ছোঁয়া।। দর্শকদের প্রশংসা আর শিক্ষকদের উৎসাহ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল।
পাশাপাশি, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় বিদ্যালয়ের মাঠ পরিণত হতো উৎসবের কেন্দ্রস্থল। প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেওয়া ছাড়াও, অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার মুহূর্তগুলোও ছিল ভীষণ আনন্দদায়ক। বিদ্যালয়ের সংগীত শিক্ষক এনামুল স্যার যখন গান শিখাতেন, তখন মনে হতো, এই বিদ্যালয় কেবল পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি আমাদের প্রতিভা বিকাশের মঞ্চ।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমাকে শুধু শিক্ষাগত জ্ঞান দেয়নি, জীবনের মূল্যবান শিক্ষাও দিয়েছে। এখানে আমি শিখেছি নেতৃত্বের গুণাবলি, সহযোগিতার মানসিকতা, এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখার শক্তি। বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের বাইরের কার্যক্রমগুলো আমার চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি ছিল আনন্দের মধ্যেও এক বিষণ্ণতার দিন। আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা যখন আমাদের আশীর্বাদ করছিলেন, তখন চোখে জল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। সেদিন আমি অনুভব করেছিলাম, এই বিদ্যালয় শুধু একটি ভবন নয়; এটি আমাদের সবার জন্য এক বিশাল পরিবারের মতো। বিদায়ের পর আজও যখন বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাই, হৃদয়ে এক অদ্ভুত টান অনুভব করি। মনে হয়, সেই দিনগুলো কি আর কখনো ফিরে আসবে? যদিও বাস্তবে তা সম্ভব নয়, তবে স্মৃতির পাতায় সেই দিনগুলো আজও অমলিন।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমার জীবনের ভিত্তি। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান, মূল্যবোধ, এবং স্মৃতিগুলো আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে প্রেরণা জোগায়। বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট-পাথর, গাছ-পালা, এবং স্মৃতি চিরকাল আমার হৃদয়ে অমলিন থাকবে। এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আমার ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকবে।
আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অভিজ্ঞতাগুলোর একটি। প্রায় প্রতিদিন ক্লাসের পর আমরা একসঙ্গে গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতাম। আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল অনেক বৈচিত্র্যময়—পাঠ্যবইয়ের বিষয় থেকে শুরু করে ক্রিকেট ম্যাচ, পছন্দের সিনেমা, বা ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
একবার আমরা সবাই মিলে মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলাম। খেলার মাঝখানে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তের আনন্দ, নির্ভেজাল হাসি, এবং মাঠে দৌড়াদৌড়ির সেই স্মৃতি আজও মনে পড়লে মুখে হাসি ফোটে। সেই খেলাগুলো আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছিল। একবার বার্ষিক শিক্ষা সফরে আমরা সবাই বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি ঐতিহাসিক স্থান সোনারগাঁও পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। লঞ্চে যাওয়ার সময় আমরা গান গেয়ে, গল্প করে সবাইকে স্মরণীয় করে তুলেছিলাম। সেদিনের সেই প্রাণবন্ত মুহূর্তগুলো আজও আমার জীবনের সেরা স্মৃতির তালিকায় রয়েছে।
আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তাদের আন্তরিকতা এবং ধৈর্য আমাদের জীবনের পথ চলায় প্রেরণার উৎস। আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষক ভুবনেশ্বর স্যার একটি বিজ্ঞান বিষয়ক নানা দিক শিখিয়ে ছিলেন আজও আমার প্রেরণার উৎস। আমাদের  শিক্ষক স্যার আমাকে বলেছিলেন, “তুমি যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো, তাহলে বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব।” সেই কথাগুলো সেদিন শুধু সাহস জোগায়নি, বরং পরবর্তী জীবনে আমাকে বহুবার আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে।
আমাদের ক্লাসে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো দুষ্টুমিগুলো আজও মনে পড়লে হাসি পায়। একবার ক্লাসে একজন বন্ধু চুপিচুপি আমের আঁটি নিয়ে এসেছিল এবং সবাইকে ভাগ করে খাওয়ানোর সময় শিক্ষক আমাদের ধরে ফেলেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম তিনি আমাদের শাস্তি দেবেন, কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি হেসে বলেছিলেন, “পরের বার ক্লাসের সময় এভাবে ফল খেয়ো না।” তার সেই হালকা শাসন এবং পরম করুণার ব্যবহার আমাদের জন্য শিক্ষণীয় ছিল।
আরেকবার ক্লাসের মধ্যে শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমরা সবাই মিলে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ শিক্ষক এসে পড়ায় আমরা ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাদের শুধুমাত্র সতর্ক করে বলেছিলেন, “ক্লাসটাই মাঠ হয়ে যাবে যদি তোমরা নিয়ম মানতে না শিখো।” সেই মুহূর্তে লজ্জা পেলেও তার আচরণ আমাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু পড়াশোনা নয়, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, কুইজ—সবকিছুতেই সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের মানসিক বিকাশে সাহায্য করেছিল। আমি মনে করি, একবার বিদ্যালয়ের বার্ষিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় “প্রযুক্তি আমাদের জীবনের জন্য আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ” বিষয় নিয়ে আমি পক্ষ সমর্থন করেছিলাম। আমার যুক্তিগুলো দর্শকদের এবং বিচারকদের মুগ্ধ করেছিল। সেদিন প্রথম পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছিলাম যে আমি ভবিষ্যতে বড় মঞ্চেও নিজের কথা বলার ক্ষমতা রাখি।
আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশও স্মৃতির ভাণ্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গাছগাছালিতে ভরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, যেখানে পাখির ডাক আর দমকা হাওয়ার শব্দে মন শান্ত হয়ে যেত। বিদ্যালয়ের খোলা মাঠ আমাদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত ছিল। বৃষ্টির দিনে মাঠে পানি জমে গেলে আমরা কাদা মাখা খেলায় মেতে উঠতাম। এই সরল আনন্দগুলো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়।
বিশেষ করে বিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে বই পড়ার সুযোগ আমাকে অনেক নতুন জগৎ চিনতে সাহায্য করেছিল। লাইব্রেরির নীরব পরিবেশে বই পড়তে বসা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ। সেদিনগুলোতে আমি জীবন এবং জ্ঞান নিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেছিলাম।
বিদ্যালয়ের শেষ দিনে বিদায় অনুষ্ঠান ছিল আমার জীবনের এক আবেগঘন মুহূর্ত। বন্ধু, শিক্ষক এবং প্রিয় বিদ্যালয়ের পরিবেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে সেদিন অনেকের চোখেই জল ছিল। বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক যখন আমাদের জীবনের জন্য আশীর্বাদ করছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, এ যেন একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং নতুন এক যাত্রার সূচনা।
সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, আমার বিদ্যালয়ের স্মৃতি এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা কখনোই ভুলব না। মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে ফিরে গেলে সেই দিনগুলোকে আবার মনে করার সুযোগ পাই, যা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে শিক্ষা দিয়েছে, আনন্দ দিয়েছে এবং আমার জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলেছে। বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে বহু দূর এগিয়ে গেলেও এই বিদ্যালয়ের স্মৃতি, শিক্ষা এবং মূল্যবোধ চিরকাল আমার সঙ্গে থাকবে। বিদ্যালয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সীমাহীন। প্রিয় আমিরাবাদ গোলাম কিবরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা চিরন্তন। তুমি শুধু একটি বিদ্যালয় নও; তুমি আমার জীবনের পথপ্রদর্শক, আমার শৈশবের আশ্রয়, আর আমার আজকের অস্তিত্বের ভিত্তি।
লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, (এসএসসি ব্যাচ ১৯৯৯), সংগঠক ও লেখক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।