নাশতায় ফলের রস কতটা উপকারী


কর্মব্যস্ত জীবনে ভোরে ঘুম ভাঙার পর দিন শুরু হয় আর শেষ হয় অনেক রাতে। পেশা অনুযায়ী কেউ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠেন এবং রাত ১০টা কিংবা ১১টা বা এরও পরে ঘুমাতে যান। মাঝের এই সময় কাজ করে সময় কাটে। এর মধ্যে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নাশতা খুবই জরুরি। নাশতা শরীরকে চাঙা রাখে এবং আপনাকে শক্তি সরবরাহ করে।
ব্যস্ততার কারণে গুরুত্বপূর্ণ সকালের নাশতাই করা হয় না অনেকের। সময় স্বল্পতার কারণে কেউ কেউ শুধু ডিম, ব্রেড, কলা বা চা-বিস্কুট খেয়ে অফিসে ছুটেন। কেউ আবার বেছে নেন ফলের রস বা জুস, আবার কেউ বেছে নেন স্মুদি। এ নিয়েই যত বিতর্ক। সকালের ঝটপট নাশতায় ফলের জুস না স্মুদি, কোনটি ভালো তা নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ শ্রেয়সী ভৌমিক ও পুষ্টিবিদের শিক্ষিকা ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়।
নাশতায় ফলের রস খাওয়া কি উচিত:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইরানের কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, কমলালেবু বা আপেলের রস শরীরের প্রদাহ কমায়। একইসঙ্গে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা সচল রাখে। ফলের রসে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। এরপরও ফলের রস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ শ্রেয়সী বলেন, সকালের নাশতায় কোনোভাবেই ফলের রস খাওয়া ঠিক নয়। এটি স্বাস্থ্যকর নয়। আপনি যখন ফল বা সবজি থেকে রস বের করেন, তখন এতে থাকা ফাইবার নষ্ট হয়। শুধু কিছু মিনারেল ও ফ্রুক্টোজ থাকে। যা কিনা ‘ফ্রি সুগার’ও বলা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র টেনে এ পুষ্টিবিদ জানান, দৈনিক ক্যালোরির ১০ শতাংশের কম ফ্রি সুগার খাওয়া উচিত। অন্যদিকে ১৫০ মিলি ফলের রসে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। অর্থাৎ, ফলের রস খাওয়া হলে দৈনিক চাহিদার বেশি পরিমাণ ফ্রি সুগার খাওয়া হয়। আর ফলের রস দীর্ঘদিন খাওয়া হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে পুষ্টিবিদের শিক্ষিকা ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ফলের রস কিনে খায়। এতে ফলের গুণ কম থাকে এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। প্যাকেটজাত ফলের রস বেশি বিপজ্জনক। এর থেকে বাসা-বাড়িতে ফলের রস তৈরি করলে তুলনামূলক কিছুটা বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে এর অর্থ এমন নয় যে, বাসা-বাড়িতে তৈরি ফলের রসকে সমর্থন করা হচ্ছে। কেননা, এতে ফাইবার থাকে না এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে।
পুষ্টিবিদদের মতে―সকালের নাশতা বা দিনের মধ্যাহ্নের নাশতা হিসেবে ফলের রস কখনোই ভালো নয়। এতে শরীরে সঠিক পুষ্টি পৌঁছায় না। বরং রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। পুষ্টিবিদ শ্রেয়সীর ভাষ্য, পুরো ফল খাওয়ার মতো উপকারিতা অন্য কোনো কিছুতে নেই। আর পুষ্টিবিদ ইশানী জানিয়েছেন, চিবিয়ে খাবার খেতে বা গিলতে যদি কষ্ট হয়, তবেই কেবল ফলের রস খেতে পারেন। সেটিও নিয়মিত নয়।
ফলের রসের থেকে স্মুদি কতটা উপকারী:
স্মুদি তৈরিতে দুধ, দই, রকমারি বাদাম, বীজ, ফল ও ওটসের মতো গোটা শস্য ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ আবার শাকসবজিও রাখেন। এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ শ্রেয়সী জানিয়েছেন, ফলের তুলনায় স্মুদি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কেননা, এতে ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল সবই রয়েছে। দিনের শুরুতে বরং এক গ্লাস স্মুদি খাওয়া যেতে পারে।
এছাড়া পুষ্টিবিদ ঈশানী বলেন, আমন্ড, টক দই ও ওটসের মতো খাবার পুষ্টিতে ভরপুর। সকালে এক গ্লাস স্মুদি আর একটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া হলে পেট ভরে যাবে। আবার স্মুদিদে ফলও থাকে। তাই স্মুদি খাওয়াই ভালো। এতে ফলের উপকারও মিলবে। কেউ কেউ আবার স্মুদিদে আদা ও কাঁচা হলুদের মতো উপাদানও মিশিয়ে থাকেন। যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এ জন্য সকালের নাশতায় ফলের রসের থেকে স্মুদি বেশি স্বাস্থ্যকর।
আপনার মতামত লিখুন