খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ
নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ

নতুন যুগের সাংবাদিকতা : ডিজিটাল মিডিয়া ও ভবিষ্যৎ
উজ্জ্বল হোসাইন
সাংবাদিকতা সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণ্য হয়, কারণ এটি তথ্য সরবরাহ, জনমত গঠন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে সাংবাদিকতার ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, আর এখন ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে প্রবেশ করেছে সাংবাদিকতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইউটিউব চ্যানেলের উত্থান সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
সাংবাদিকতা মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সময়ের সাথে সাথে এটি নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, বিশেষ করে ডিজিটাল যুগের আগমনের পর সাংবাদিকতার চেহারা একেবারেই বদলে গেছে। এরমধ্যে অন্যতম মৌখিক ও লিপিবদ্ধ সংবাদ প্রচার। রাজা-বাদশাহদের ফরমান ও বার্তাবাহক ব্যবস্থার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান। চীনে প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র (Kaiyuan Za Bao, ৭১৩ খ্রিস্টাব্দ)।
আধুনিক মুদ্রণ সাংবাদিকতার উত্থান (১৫-২০ শতক) হয়েছে –১৪৪০ সালে গুত্তেনবার্গের মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র, ১৬০৫ সালে প্রথম আধুনিক সংবাদপত্র (Relation aller Fürnemmen und gedenckwürdigen Historien), ১৯ শতকে দৈনিক পত্রিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও সম্পাদকীয় স্বাধীনতার বিকাশ, সংবাদ সংস্থার (যেমন, রয়টার্স, এপি) আবির্ভাব। সম্প্রচার সাংবাদিকতার যুগ (২০ শতক)-১৯২০-এর দশকে রেডিও সাংবাদিকতার শুরু, ১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন সাংবাদিকতার উত্থান, সরাসরি সম্প্রচার ও রিয়েল-টাইম সংবাদ পরিবেশনের প্রচলন। ইন্টারনেট ও অনলাইন সংবাদ (১৯৯০-এর দশক)-সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ চালু, দ্রুতগতির তথ্যপ্রবাহ ও বৈশ্বিক তথ্য প্রবেশাধিকার, বিনামূল্যে সংবাদপাঠের অভ্যাস তৈরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব (২০০০-এর পর থেকে)-ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে খবর প্রচার, নাগরিক সাংবাদিকতার বিকাশ যে কেউ সংবাদ পরিবেশন করতে পারে, ভুয়া সংবাদ ও গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি।
মোবাইল সাংবাদিকতা ও কনভার্জেন্স মিডিয়া-স্মার্টফোন ও অ্যাপ-ভিত্তিক সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার, মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টিং—ভিডিও, টেক্সট, অডিও একসাথে, ব্লগিং, পডকাস্ট ও লাইভ স্ট্রিমিং জনপ্রিয়তা লাভ।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও অ্যালগরিদম-নির্ভর সাংবাদিকতা-নিউজ অ্যালগরিদম ও পার্সোনালাইজড কন্টেন্ট, ফ্যাক্ট-চেকিং ও স্বয়ংক্রিয় সংবাদ লেখা, সাংবাদিকতায় ডেটা অ্যানালিটিক্সের ব্যবহার বৃদ্ধি।

ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : ভুয়া খবর ও মিথ্যা তথ্য, সংবাদপত্রের আর্থিক সংকট (প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষতি), সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত ঝুঁকি, নাগরিক সাংবাদিকতা ও গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের সুযোগ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন, ডিজিটাল সাবস্ক্রিপশন মডেল ও বিকল্প আয়ের উৎস।
সাংবাদিকতা আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যেখানে তথ্য প্রবাহ দ্রুত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক। যদিও ডিজিটাল যুগ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তবুও এটি গণমাধ্যমের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই এবং নৈতিক সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমে ডিজিটাল সাংবাদিকতা আরও কার্যকর হতে পারে।সাংবাদিকতার ইতিহাস বহু পুরোনো। পাথরের ফলক, হস্তলিখিত চিঠি, প্রিন্ট মিডিয়া, বেতার, টেলিভিশন—এসব মাধ্যম একসময় মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিল। কিন্তু ২১শ শতাব্দীর শুরু থেকে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার সাংবাদিকতায় আমূল পরিবর্তন এনেছে।
পরিবর্তনের কয়েকটি ধাপ : প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন) ১৮-২০ শতকে মানুষের তথ্যপ্রাপ্তির প্রধান মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। ইলেকট্রনিক মিডিয়া (রেডিও ও টেলিভিশন): ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রেডিও ও টেলিভিশন খবর প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ২১ শতকে ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে সংবাদমাধ্যম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরিত হয়েছে।
আজকের যুগে মানুষ দ্রুততম সময়ে সংবাদ পেতে চায়, যা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ এবং পডকাস্ট এখন তথ্য প্রচারের অন্যতম মাধ্যম। তাৎক্ষণিক সংবাদ পরিবেশন : যেকোনো বড় ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
ইন্টারঅ্যাকটিভিটি : পাঠকরা মন্তব্য, শেয়ার এবং লাইভ আলোচনার মাধ্যমে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন।
বহুমাত্রিক উপস্থাপন  : টেক্সট, ছবি, ভিডিও, অ্যানিমেশন ও লাইভ স্ট্রিমিং ব্যবহার করা হয়।
কম খরচে সংবাদ পরিবেশন: প্রচলিত সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলের তুলনায় অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার খরচ অনেক কম।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ইতিবাচক দিক : ডিজিটাল মিডিয়া সাংবাদিকতাকে দ্রুত ও কার্যকর করে তুলেছে। আগে যেখানে সংবাদপত্র ছাপতে বা টিভি সম্প্রচারের জন্য সময় লাগত, এখন তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে খবর প্রকাশ করা সম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সংবাদ এখন আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। একটি ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তা বৈশ্বিক সংবাদে পরিণত হতে পারে। ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষও সাংবাদিকতার অংশ হতে পারছে। মোবাইল ফোনে ছবি বা ভিডিও ধারণ করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রচার করতে পারছে। আগে কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের ওপর নির্ভর করতে হতো, কিন্তু এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও নেতিবাচক দিক : অনলাইন মিডিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভুয়া খবর বা ‘ফেক নিউজ’। অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে কেউ সংবাদ প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই করা হয় না। ফলে গুজব ও অসত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ক্লিকবেইট শিরোনাম ব্যবহার করে শুধুমাত্র ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করে। অনেক সময় ডিজিটাল সাংবাদিকরা অনলাইনে হয়রানির শিকার হন। সত্য সংবাদ প্রকাশ করায় হুমকি, সাইবার আক্রমণ বা ট্রোলিং-এর সম্মুখীন হন অনেকে। অনেক সময় অনলাইন মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়, যা ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ : ডিজিটাল সাংবাদিকতা ক্রমাগত উন্নতি করছে এবং ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিক ও কার্যকর হয়ে উঠবে। এআই-ভিত্তিক প্রযুক্তি সংবাদ বিশ্লেষণ, তথ্য যাচাই ও অটোমেটেড রিপোর্টিংয়ে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নত এআই সিস্টেম সাংবাদিকদের কাজ সহজ করবে। সংবাদ পরিবেশন আরও আকর্ষণীয় করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে। ফেক নিউজ প্রতিরোধে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক সংবাদ পরিবেশনার দিকে যাচ্ছে। এটি উচ্চমানের সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে পারে। ভবিষ্যতে সংবাদমাধ্যমের জন্য নৈতিকতা বজায় রাখা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।
ডিজিটাল সাংবাদিকতা আধুনিক বিশ্বের তথ্য প্রবাহের মূল চালিকা শক্তি। এটি যেমন দ্রুত সংবাদ সরবরাহের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি ভুয়া খবর ও হলুদ সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
তাই সাংবাদিকতা যেন বস্তুনিষ্ঠ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, সে জন্য সংবাদমাধ্যম, সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে প্রযুক্তি ও সাংবাদিকতার আরও সমন্বিত ব্যবহার সমাজকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল করে তুলবে। সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবেই ডিজিটাল সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে—এই প্রত্যাশা করছি।
লেখক পরিচিতি : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।