খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৯ কার্তিক, ১৪৩২

চাঁদপুরে পৃথক ঘটনায় শিশুসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ
চাঁদপুরে পৃথক ঘটনায় শিশুসহ সাতজনের মরদেহ উদ্ধার

চাঁদপুরের চার উপজেলায় পৃথক ঘটনায় সাতজনের মৃতুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সন্ধ্যায় কচুয়া উপজেলায় ইরি ধানে পানি দিতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান দুই ভাই। শাহরাস্তি উপজেলায় স’মিলে গাছ কাটতে গিয়ে এক যুবক, হাজীগঞ্জে ছেলের সাথে অভিমানে মায়ের আত্মহনন ও নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া একই দিনে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পৃথক স্থান থেকে দুই স্কুল ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

কচুয়া উপজেলায় সোমবার সন্ধ্যায় কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের শাসন খোলা গ্রামের বড় বাড়ীর পাশে ইরি-বোরো সেলু মেশিন দিয়ে পানি দিতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হন দুই ভাই। তারা হলেন, আবুল হাসানাত বকাউল (৩৫) ও খোরশেদ আলম বকাউল (৫০)। মুমূর্ষ অবস্থায় তাদেরকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তানভীর আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে আনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার আগেই তারা মারা যান।

পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, দুই ভাই বাড়ির পাশে সেচ পাম্প (সেলু মেশিন) দিয়ে ধান খেতে পানি দিতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট গুরুতর আহত হয়। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি আমারা পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিবার পক্ষ থেকে অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুপুরে শাহরাস্তি উপজেলার আয়নাতলী বাজারে স’ মিলে গাছ কাটতে গিয়ে মারা যান যুবক মো. কবির হোসেন। সে একই উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের নুনিয়া মাইজের বাড়ির বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, দুপুর আড়াইটায় স’ মেইলে গাছ কাটানোর সময় মেশিনে পড়ে যায়। তাকে স্থানীয়রা শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে সোমবার বিকালে হাজীগঞ্জ উপজেলার সুহিলপুর গ্রামে তাকরিম নামের এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে শাহরাস্তি উপজেলার করবা গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার পরিবার জানায়, সে নানার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে পড়ে মারা যায়। তার বয়স হয়েছিল ২ বছর।
অন্যদিকে হাজীগঞ্জে ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে অভিমান করে পারভীন বেগম (৪০) নামের মা আত্মহনন করেন। সোমবার দুপুরে উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের জমাদ্দার বাড়িতে পারিবারিক কলহের জেরে কীটনাশক খেয়ে পেলেন তিনি। পারভীন বেগম ওই বাড়ির মো. মনির হোসেনের স্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দা সফিক ও সাঈদ বলেন, সকাল থেকেই পারিবারিক বিষয় নিয়ে ছেলে মিজানুর রহমান ও ছেলের বউ রিয়ার সাথে পারভিন বেগমের ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিল। এক পর্যায়ে ছেলে ও ছেলের বউয়ের উপর অভিমান করে তিনি কীটনাশক পান করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনেরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পারভীন বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যান।’ হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসান বলেন, ‘হাসপাতালে আনার আগেই পারভীন বেগম মারা যান। হাজীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না পেলে এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হবে।

এছাড়া একই দিনে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় পৃথক স্থান থেকে দুই স্কুল ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। উপজেলার রামদাসেরবাগ ও পশ্চিম পোঁয়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওই দুই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, রামদারসেরবাগ গ্রামের বাবুল মোল্লা ও রিনা আক্তার দম্পত্তির মেয়ে রাখি আক্তার (১৫) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী। সে সোমবার সকালে নিজেদের ঘরের বাতরুমের ঝর্ণার সাথে গলায় ফাঁস দেয়। পরে রাখির মা তার মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ডাক চিৎকার দিলে প্রতিবেশিরা এসে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

অপরদিকে, ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম পোঁয়া গ্রামে বসত ঘরের আঁড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় মাঈশা আক্তার (১৩) নামে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সে ওই গ্রামের মো. মোস্তফা ও জেসমিন আক্তার দম্পত্তির মেয়ে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়–য়া শিক্ষার্থী। মাঈশার মা বলেন, আমি বাড়ির কাজের জন্য ঘরের বাহিরে ছিলাম। কিছুক্ষণপর ঘরে এসে দেখি আমার মেয়ে ঘরের আঁড়ার সাথে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় ঝুলে আছে। পরে আমার ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এসে পুলিশকে খবর দেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, খবর পেয়ে দুটি ঘটনাস্থল থেকে রাখি আক্তার ও মাঈশা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুটি ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সালমান শাহ হত্যার রোমহষর্ক বর্ণনা দিলেন আসামী হত্যাকারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:২২ পূর্বাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যার রোমহষর্ক বর্ণনা দিলেন আসামী হত্যাকারী

জবানবন্দিতে রেজভী বলেন, ‘ডন সালমান শাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সালমানের স্ত্রী সামিরার সঙ্গে ডনের গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং দৈহিক সম্পর্কও ছিল। অন্যদিকে সামিরার মায়ের সঙ্গে চিত্র প্রযোজক আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গোপন ও দৈহিক সম্পর্ক ছিল। তাই সালমান ডনকে এড়িয়ে চলতেন।’হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে রেজভী বলেন, ‘সালমান শাহকে হত্যার আগের দিন ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলিস্তানের একটি বারে পরিকল্পনা করা হয়। ওইদিন রাত ৮টায় ডন, ডেভিড, ফারুক, জাভেদ ও আমি বারে যাই। সেখানে আরও ২ জন ছেলে ছাত্তার ও সাজু আসে। এরপর ফারুক ২ লাখ টাকা বের করে বলে, সামিরার মা ওই টাকা দিয়েছে। কথা ছিল সালমানকে শেষ করার জন্য মোট ১২ লাখ টাকা দেবে। কাজের আগে ৬ লাখ ও কাজের পরে ৬ লাখ। কিন্তু ২ লাখ টাকা পেয়ে ডনের সঙ্গে ফারুকের কথাকাটাকাটি হয়। পরে ফারুক রাগ করে বাইরে যায়। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পরে আরও ৪ লাখ টাকা নিয়ে আসে। তখন ওখানেই ডন প্লাস্টিকের একটি দড়ি নিজের মাজায় বেঁধে উপরে কালো জ্যাকেট গায়ে দেয়। বাকি অর্ধেক রশি ফারুকের কাছে দেয়। এরপর তারা টাকা, সিরিঞ্জ, রিভলবার ইত্যাদি গুছিয়ে নেয়। সামিরার মা এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাই দুজনে মিলেই সালমানকে শেষ করার ব্যাপারে ডন ও ফারুকের সঙ্গে কনটাক্ট হয়।’

রেজভী আরও বলেন, ‘এরপর ওই রাতে বার থেকে এফডিসি এসে শুটিং শেষে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আড়াইটার সময় আমাকে সালমান শাহর বাসায় নিয়ে যায় ডন। ওই বাসায় ডন, ডেভিড ও ফারুকের যাতায়াত ছিল বলে দারোয়ান কিছু বলেনি। সালমানের বাসায় লিফটে ওঠার আগেই ডান পাশে রুবী নামে এক মেয়ের রুমের দরজায় ডন নক করলে রুবী নাইটি পরা অবস্থায় দরজা খোলে। এরপর বলে, “ও তোমরা এসেছ।” তখন ডন রুবীকে বলে, ‘আজিজ ভাই কোথায়?’ বাথরুম থেকে আজিজ ভাই বের হয়ে আসে। এরপর আমরা উপরে উঠি। আজিজ ভাই চারতলায় নেমে যায়। আর আমরা ১১ তলায় নেমে সালমানের বাসায় যাই। দরজা আগে থেকেই চাপানো ছিল। দরজা খুলেই দেখা যায় সালমান বেডরুমে শুয়ে আছে। পাশে সামিরা নাই। তখন ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুকরা মিলে সালমানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় ফারুক তার পকেট থেকে ক্লোলোফর্মের সিসি বের করে সামিরাকে দেয়। সামিরা তা দিয়ে সালমানের নাকের ওপর চেপে ধরে। ডন সালমানের বুকের ওপর গিয়ে বসে। আর ফারুককে বলে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে ডাক। ফারুক তখন বাইরে গিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে নিয়ে আসে। এরই মধ্যে সামিরার মা ড্রেসিংরুম থেকে বের হয়ে আসে। তখন ধস্তাধস্তি হচ্ছিল। সালমানের খুব শক্তি ছিল। ইনজেকশন দেওয়া যাচ্ছিল না। তখন সবাই মিলে সালমানকে ড্রেসিং রুমে নিয়ে ডেভিড সালমানের পা বাঁধে। আজিজ ভাই ডনকে ইনজেকশন দিতে বলে। পরে সামিরা পুশ করে, তার মা সামিরাকে পুশ করতে সাহায্য করে। পরে সালমান নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইনজেকশন পুশ করার আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ফ্যানটা সালমান শাহর ঘাড়ের ওপর ছুড়ে মেরেছিল। ড্রেসিং রুমে একটা মই ছিল। আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমাকে মইটা আনতে বলে। আমি এনে দিই। এরপর তিনি দড়ি চান। তখন ডন নিজের কোমরের দড়িটা খুলে আজিজ ভাইয়ের হাতে দেয়। আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে দড়িটি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে বাঁধে। তাতে আমি, সামিরা, সামিরার মা সাহায্য করি। পরে সালমানের পায়ে বাঁধা রশিটা খুলে বুকের ওপর উঠে গলায় চাপ দিয়ে রাখে এবং পরীক্ষা করে দেখে যে নিঃশ্বাস নেই। উপরের রশিটা খানিকটা ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে দেখানো যায় যে, লাশটাকে ঝোলানো থেকে খোলা হয়েছে। পরে সালমান সুইসাইড করেছে এটা দেখানোর জন্য তাকে তেল মালিশ করা হয়, কাপড় ভিজিয়ে শরীরে রাখা হয়। এরপর যে যার মতো চলে যাই। আমিও ফরিদপুর চলে যাই। এরপর কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। কিছুদিন পর ডনের সঙ্গে ঢাকায় দেখা হলে আমাকে জানায় দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। আজিজ মোহাম্মদ ভাই সব ঠান্ডা করে দিয়েছে। পরে আমি আবার বাড়িতে গেলে ১৯৯৭ সালের ৪ঠা জুলাই ডন ও ডেভিড আমাদের বাড়িতে আসে। ডন আমাকে বলে, কেইসটা আবার নাড়া দিয়ে উঠেছে। যেহেতু আমাদের সঙ্গে ছিলে। এখন আমাদের সাহায্য করতে হবে। আমাকে তারা প্রয়াত চিত্রপরিচালক আলমগীর কবিরের ছেলে লেনিন সেজে সালমানের বাবা-মার বাসায় যেতে বলে। এরপর গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সালমানের ছোট ভাই বিল্টুকে অপহরণ করে সালমান হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে পরিকল্পনা হয়। তবে ওই বাসায় লেলিন সেজে গেলে আমি ধরা পড়ি। সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

শুধু আসামি রেজভীই নয়, আসামি রুবীও স্বীকার করেন এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪১ অপরাহ্ণ
উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত নয়, বলা ভালো, গরম চুল্লির ঢাকনা সবে নড়তে শুরু করেছে। কারণ একটাই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি এবার শুধু অর্থনীতির সমীকরণ নয়, রাজনীতির সমীকরণও মেলাতে নেমেছেন। কিন্তু তার কাগজের খাতা যেন উলটেপালটে গেছে উপদেষ্টাদের নিয়েই।

গত ক’দিনে পরপর তিনটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। প্রতিটি বৈঠকই ছিল রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই তিন দল এক সুরে বলেছে, উপদেষ্টাদের অনেকে নিরপেক্ষ নন, তারা দলীয় ভূমিকা পালন করছে।

একই কথা তিন দলের মুখে শুনে মনে হতে পারে, যেন পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কে? তা নিয়ে এখনই জল্পনা তুঙ্গে।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দুই নাম, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। দু’জনই তরুণ, এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের বর্তমান নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁরা অন্তবর্তী নিরপেক্ষ সরকারের থেকে এনসিপির হয়ে কাজ করছেন।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার প্রধানের কার্যালয় থেকে এই দুই উপদেষ্টাকে নাকি পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আলমের পরিবারের একজন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। আর আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচন পূর্ব দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের যেতে হবে’। বিএনপির দাবি, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নেই,অন্তর্বর্তী সরকারকেই সেই ভূমিকা নিতে হবে। তাই অন্তত নিরপেক্ষতার আবরণটুকু বজায় থাকুক।
কিন্তু ‘নিরপেক্ষতা’ কথাটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত মুদ্রা। যেদিকেই উলটে ধরো, কারও না কারও মুখ সেখানে ফুটে ওঠে।
বিএনপি একা নয়। জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপিও অভিযোগ তুলেছে – সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ তো অতীতে নির্বাচনে প্রার্থীও ছিলেন। আবার জাতীয় পার্টির একাংশ ও গণ অধিকার পরিষদও বলেছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
এমনটা যদি অবস্থা হয় তাহলে অধ্যাপক ইউনুস কি আসন্ন নির্বাচনে এমন এক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আছেন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু দেশের ভেতরে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, ইউনুস সাহেব হয়তো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না উপদেষ্টাই।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিজেরাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
বাংলাদেশে ‘নির্দলীয়’ শব্দটির এক বিশেষ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই ছিল নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন। ২০১১ সালে সেই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এক জায়গায় – এখন নির্বাচন দেখবে কে?
অধ্যাপক ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারত। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মানদণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সেই সমীকরণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে?
ঢাকার রাজনৈতিক চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন নাগরিক সমাজও প্রশ্ন তুলছে – ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের উপদেষ্টারা আসলে কতটা নিরপেক্ষ? কেউ ব্যাংকের পরিচালক,কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি,কেউ আবার সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কারও না কারও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারে বসে সেই যোগাযোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়েই বড় আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস’ নামের জিনিসটা বহুদিন আগেই অনুপস্থিত। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করে না, প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না, এমনকি গণমাধ্যমকেও করে না। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে,তাহলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
অধ্যাপক ইউনুস এখন যে পরিস্থিতিতে আছেন, তাতে তাকে একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— তিন ভূমিকাতেই অভিনয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতি তিনি বোঝেন, রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু মনস্তত্ত্ব? সেটাই সবচেয়ে জটিল। কারণ,তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাকে উপদেষ্টা করা হলো, কোন দলের অনুরোধে করা হলো, কে কী ভূমিকা রাখছেন – সব কিছু নিয়েই চলছে ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যা।
তাঁর সামনে এখন দুটি পথ – হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে একদম পরিষ্কার বার্তা দেওয়া, নয়তো রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড়ের গতি এমন যে,তাতে অভিজ্ঞ নাবিকও দিক হারিয়ে ফেলেন।
এখন নাগরিক সমাজের কৌতূহল একটাই – এই উপদেষ্টাদের নিয়েই কি অধ্যাপক ইউনুস নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা কি আর মুছবে?
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক রণক্ষেত্র। সেই মাঠে যদি রেফারির পক্ষপাত নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে,তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর নিশ্চয়ই তা জানে। এখন দেখা যাক, অধ্যাপক ইউনুস এই ঝড়ের মধ্যে কীভাবে নিজের নৌকো চালান – অর্থনীতির সূত্রে,নাকি রাজনীতির কৌশলে।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩০ অপরাহ্ণ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কি-না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলার সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করে। ফলে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৫তম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কিস্তি ও আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ এর দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি মিশন দুই সপ্তাহ করে বাংলাদেশে এসে রিভিউ করে থাকে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবরে এই মিশন আসছে বাংলাদেশে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবগুলো পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।’ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণের আগামী কিস্তির অর্থ ডিসেম্বরের বদলে মার্চ-এপ্রিলে ছাড় করবে আইএমএফ।