খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বাংলা সাহিত্যে গল্প যখন জীবনের প্রতিচ্ছবি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫, ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ
বাংলা সাহিত্যে গল্প যখন জীবনের প্রতিচ্ছবি

সাহিত্য মানেই জীবন, আর গল্প সেই জীবনের প্রতিচ্ছবি। গল্প আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, অনুভূতি, স্বপ্ন এবং সংগ্রামের কথা বলে। বাস্তবতার আয়নায় যখন গল্পের চরিত্রগুলো ফুটে ওঠে, তখন আমরা নিজের জীবনের ছায়া দেখতে পাই। কখনো সেই গল্প আনন্দ দেয়, কখনো কাঁদায়, কখনো প্রশ্ন জাগায়, আবার কখনো আশার আলো দেখায়। গল্প শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা মানুষের চিন্তাভাবনা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। বাস্তব জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, সম্পর্কের জটিলতা, সমাজের বৈষম্য, সুখ-দুঃখ, সংগ্রাম—সবকিছুই গল্পের মধ্য দিয়ে উঠে আসে। গল্প শুধু কাল্পনিক নয়, এটি জীবনের এমন এক আয়না, যা আমাদের ভাবতে শেখায়, উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং কখনো কখনো আমাদের জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও প্রভাব ফেলে।
গল্পকে অনেকেই কল্পনার সৃষ্টি মনে করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গল্প কল্পনার মিশ্রণে বাস্তব জীবনের প্রতিফলন। প্রতিটি গল্পের পেছনে থাকে বাস্তবতার একটি নির্দিষ্ট ভিত্তি। গল্পকার তাঁর অভিজ্ঞতা, চারপাশের সমাজ বা অন্যের জীবনের কাহিনিকে নির্দিষ্ট রূপ দিয়ে গল্পের আকার দেন। যেমন-মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মানদীর মাঝি” উপন্যাসটি কেবল একটি কল্পকাহিনি নয়, এটি তখনকার সমাজের দরিদ্র জেলেদের জীবনযুদ্ধের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী”-তে আমরা অপু-দুর্গার জীবনসংগ্রামের মাধ্যমে গ্রামবাংলার বাস্তব চিত্র পাই। এই গল্পগুলো কেবল কল্পনার ফসল নয়, বরং বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া কাহিনিগুলো কল্পনার রঙে রাঙানো হয়েছে মাত্র। কিছু গল্প আবার আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিচিত্র আঁকে, যা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্য হিসেবে পরিচিত। সত্যজিৎ রায়ের “প্রফেসর শঙ্কু” বা জুল ভার্নের under the sea গল্পগুলো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার এক চেষ্টা ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই এই কল্পনা পরে বাস্তবে পরিণত হয়েছে। গল্পে বাস্তবতা ও কল্পনার সংমিশ্রণ একটি আকর্ষণীয় শৈলী, যা পাঠকদের নতুন অভিজ্ঞতা দেয়। এ ধরনের গল্পে লেখক বাস্তব জীবনের সত্য ঘটনা, চরিত্র বা সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে কল্পনার মিশেল ঘটিয়ে একটি অনন্য জগত সৃষ্টি করেন। গল্পের স্থান, কাল ও পাত্র বাস্তব জীবনের হতে পারে, যাতে পাঠক তা বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন। কিছু অতিপ্রাকৃত, অসম্ভব বা কাল্পনিক উপাদান সংযোজন করা হয়, যা গল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলে। বাস্তব ঘটনার সঙ্গে কল্পনার সংমিশ্রণ সমাজের বিভিন্ন দিক ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। চরিত্ররা বাস্তব জীবনের মতোই হতে পারে, তবে তাদের কিছু বিশেষ ক্ষমতা বা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। যেমন-গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের One Hundred Years of Solitude-যেখানে বাস্তবিক ঐতিহাসিক ঘটনা এবং জাদুবাস্তবতার মিশেল রয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের “গুপী গাইন বাঘা বাইন”-যেখানে সাধারণ চরিত্রদের হাতে জাদুকরি ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। হুমায়ূন আহমেদের অনেক উপন্যাস-যেখানে বাস্তব জীবনের গল্পের মধ্যেও রহস্যময় বা অলৌকিক ঘটনা ঘটে। এই শৈলী গল্পকে একই সঙ্গে বাস্তবসম্মত ও রোমাঞ্চকর করে তোলে, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে রাখতে পারে।
গল্প শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। একটি ভালো গল্প মানুষের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে পারে, সামাজিক অসঙ্গতি তুলে ধরতে পারে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। যুগে যুগে সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র সমাজ পরিবর্তনের বড় ভূমিকা রেখেছে। গল্পের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনের উপায়। গল্প সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলে, যা মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবদাস” উপন্যাসে সামাজিক কুসংস্কার ও নারীর দুর্দশার কথা উঠে এসেছে, যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। গল্পের চরিত্ররা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা বাস্তব জীবনের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। মার্ক টোয়েনের “অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন” দাসপ্রথার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। গল্প মানুষের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে পারে। “মা” (ম্যাক্সিম গোর্কি) উপন্যাসটি রাশিয়ার বিপ্লবের পটভূমিতে রচিত, যা বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। গল্প সমাজের ভুল ধ্যানধারণা ভাঙতে সাহায্য করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “গোরা” উপন্যাস হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছে, যা সামাজিক ঐক্য গঠনে ভূমিকা রেখেছে। গল্প শিশুরা যেমন নৈতিক শিক্ষা পায়, তেমনি প্রাপ্তবয়স্করাও জীবনের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করে। হুমায়ূন আহমেদের গল্পগুলো বাস্তব জীবনের জটিলতা সহজভাবে বুঝিয়ে দেয়, যা পাঠকদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনে। গল্প শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যম। একটি গল্প মানুষের মনোভাব বদলাতে পারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস জোগাতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে। তাই, গল্পকারদের দায়িত্বশীলভাবে গল্প বলা উচিত, যাতে তা সমাজের কল্যাণে অবদান রাখতে পারে। গল্প কেবল বিনোদনের জন্য লেখা হয় না, এটি সমাজ পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও। অনেক সময় সমাজের অসংগতি, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গল্পকারেরা গল্পের আশ্রয় নেন। উদাহরণস্বরূপ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবদাস” কেবল প্রেমের কাহিনি নয়, এটি তৎকালীন সমাজে নারীদের অবস্থা ও সামাজিক বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে এক গভীর বার্তা বহন করে। একইভাবে, রবি ঠাকুরের “গোরা” গল্পে জাতিভেদপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। প্রতিবাদী সাহিত্য যেমন ছিল, তেমনি গল্পের মাধ্যমে অনুপ্রেরণাও দেওয়া হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “আনন্দমঠ” উপন্যাসটি ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমানে, গল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য, লিঙ্গবৈষম্য, পরিবেশ বিপর্যয়, প্রযুক্তির অপব্যবহার, যুদ্ধ, অভিবাসন সমস্যার মতো বিষয়গুলোও উঠে আসছে। গল্প মানুষের মনকে নাড়া দেয়, পরিবর্তনের চিন্তা জাগায় এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে ধাবিত করে।
গল্প শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি জীবনের প্রতিফলনও। গল্পের চরিত্রগুলো আমাদের চারপাশের মানুষের প্রতিচ্ছবি বহন করে। তাদের সুখ-দুঃখ, সংগ্রাম, প্রেম, হতাশা—সবকিছুই বাস্তব জীবনের অনুভূতির প্রতিফলন। একটি ভালো গল্প বাস্তবতার সঙ্গে এতটাই মিশে যায় যে পাঠক তার সঙ্গে সংযোগ অনুভব করে, কখনো নিজের জীবনকে চরিত্রের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে, কখনো নতুন কিছু শেখে। গল্পকারেরা চরিত্র তৈরির সময় বাস্তব জীবনের মানুষদের পর্যবেক্ষণ করেন। যেমন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “শ্রীকান্ত” উপন্যাসের শ্রীকান্ত চরিত্রটি অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। আবার, হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের হিমু বা মিসির আলি চরিত্রগুলো সমাজের নানা দিককে তুলে ধরে। গল্পের চরিত্রগুলো মানুষের হাসি-কান্না, ভালোবাসা-বেদনা, সংগ্রাম-সফলতার প্রতিচিত্র। প্রেমের উপন্যাসে যেমন চরিত্ররা ভালোবাসার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে, তেমনি যুদ্ধ বা বিপ্লবমূলক গল্পে তারা লড়াই ও আত্মত্যাগের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। গল্পের চরিত্ররা তাদের সময় ও সমাজের প্রতিফলন বহন করে। যেমন, মার্ক্সিম গোর্কির “মা” উপন্যাসের নায়িকা একজন সাধারণ রুশ শ্রমজীবী নারী, যিনি ধীরে ধীরে বিপ্লবের অংশ হয়ে ওঠেন। আবার, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী”-এর অপু চরিত্রটি দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনসংগ্রামের বাস্তব প্রতিচিত্র। মহাভারতের যুধিষ্ঠির চরিত্র সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অটল থাকার শিক্ষা দেয়, আবার শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ চরিত্র ক্ষমতার লোভের কুফল দেখায়। কোনো চরিত্রের জীবনসংগ্রাম, প্রেম বা আত্মত্যাগ পাঠককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। সামাজিক অবিচার বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে গল্পের চরিত্ররা লড়াই করে, যা পাঠকদের সচেতন করে তোলে। অনেক চরিত্র মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে, যেমন হ্যারি পটারের সাহসিকতা বা রবীন্দ্রনাথের “গোরা”-র আত্ম-অনুসন্ধান।
গল্পের চরিত্র শুধু কল্পনার সৃষ্টি নয়; তারা জীবনেরই অংশ। বাস্তব জীবনের ঘটনা ও অনুভূতিগুলো গল্পে এসে মিশে যায়, যা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়, সমাজকে সচেতন করে এবং জীবনের গভীর সত্যকে তুলে ধরে। তাই, গল্পের চরিত্রগুলো আমাদের চারপাশের বাস্তবতারই এক বিশেষ প্রতিফলন। গল্পের চরিত্র ও জীবনের প্রতিফলন গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এর চরিত্রগুলো। মানুষ জীবনে নানা সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে যায়—পিতা-মাতা, ভাই-বোন, বন্ধু, প্রেমিক-প্রেমিকা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী—প্রত্যেকেরই আলাদা গল্প আছে। গল্পের চরিত্রগুলো সেই বাস্তব জীবনেরই প্রতিচিত্র। উদাহরণ হিসেবে, প্রেমচাঁদের “গবন” উপন্যাসের চরিত্ররা মধ্যবিত্ত সমাজের লোভ, লাঞ্ছনা ও সংগ্রামের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। “নসিবন”, “হিরামন”, “সোহিনী”-রা বাস্তব জীবনেরই চরিত্র, যারা আমাদের আশেপাশে দেখা যায়। শরৎচন্দ্রের গল্পে গ্রামের সাধারণ মেয়ে রাজলক্ষ্মী বা অভিজাত পরিবারের দেবদাস, বঙ্কিমের উপন্যাসে দুর্ধর্ষ স্বাধীনতাকামী নারীরা প্রত্যেকটি চরিত্র বাস্তব জীবনেরই ছায়া। পাঠক এই চরিত্রগুলোর মধ্যে নিজেদের খুঁজে পান।
গল্প মানুষের হৃদয়ের ভাষা। এতে সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বিষাদ, প্রেম, বিরহসহ জীবনের নানা অনুভূতি মূর্ত হয়ে ওঠে। আবেগ হলো গল্পের প্রাণ, যা পাঠকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। আনন্দ ও বিরহ এই দুটি আবেগ গল্পের অন্যতম শক্তিশালী উপাদান। কিছু গল্প হাসায়, আনন্দ দেয়, আবার কিছু গল্প কাঁদায়, ব্যথিত করে। জীবনের মতোই গল্পেও এই দুই বিপরীত অনুভূতির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। আনন্দ ও বিরহ কেবল গল্পের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং চরিত্র ও কাহিনির গভীরতা বাড়িয়ে পাঠকের মনে গভীর রেখাপাত করে। গল্পের প্রধান কাজ হলো পাঠকের মনকে স্পর্শ করা। এজন্য গল্পে আবেগের উপস্থিতি অপরিহার্য। আবেগহীন গল্প প্রাণহীন হয়ে যায়। আনন্দ ও বিরহের সংমিশ্রণ গল্পকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। গল্পের আবেগ পাঠকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল খুঁজে পেতে সাহায্য করে। কেউ যখন আনন্দময় গল্প পড়ে, তখন তার নিজের জীবনের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো মনে পড়ে যায়। তেমনই, বিরহের গল্প পাঠকের মনে দুঃখের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। আবেগের কারণে গল্পের চরিত্রগুলো বাস্তব মনে হয়। তাদের হাসি-কান্না, ভালোবাসা, বেদনা পাঠকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। শুধুমাত্র ঘটনা দিয়ে গল্প হয় না; আবেগ গল্পকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আনন্দময় গল্প পাঠককে হাসায়, স্বস্তি দেয়, আর বিরহের গল্প পাঠককে দুঃখের গভীরে নিয়ে যায়।
আনন্দ মানুষের জীবনের অপরিহার্য অংশ। গল্পেও এই আনন্দের প্রকাশ ভিন্ন ভিন্নভাবে ঘটে। হাস্যরস এমন একটি উপাদান, যা পাঠকের মনকে আনন্দিত করে। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ মুজতবা আলী, পরশুরাম, সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্পে চমৎকার রসবোধ রয়েছে। এসব গল্পে আনন্দ পাঠকের ক্লান্ত মনকে চাঙ্গা করে তোলে। টেনিদা সিরিজ (নরেন্দ্রনাথ মিত্র)-যেখানে চরিত্রদের কৌতুকপূর্ণ সংলাপ পাঠককে হাসতে বাধ্য করে। গোগোল (সত্যজিৎ রায়) রহস্যময় গল্প হলেও অনেক মজার সংলাপ ও পরিস্থিতি পাঠককে আনন্দ দেয়। প্রেম সবসময় দুঃখের হয় না, কিছু প্রেমের গল্প পাঠকের মনে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রেম যখন সফল হয়, তখন তা গল্পে সুখের আবেশ এনে দেয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ল্যাবরেটরি”-প্রেমের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা একটি গল্প, যেখানে নারী চরিত্রের শক্তিশালী উপস্থিতি গল্পের আনন্দের মাত্রা বাড়ায়। হুমায়ূন আহমেদের “হিমু” সিরিজ যেখানে হিমুর উদ্ভট জীবনযাপন ও সংলাপ পাঠককে আনন্দ দেয়। পরিবার ও বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা অনেক গল্প রয়েছে, যা পাঠকের মনে উষ্ণতা ও আনন্দ আনে। সত্যজিৎ রায়ের “গুপী গাইন বাঘা বাইন” দুই বন্ধুর সঙ্গীত ও দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী” অপু ও দুর্গার শৈশবের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো গল্পে এক অনন্য আনন্দের আবহ সৃষ্টি করে। বিরহ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভালোবাসা যেমন জীবনে সুখ এনে দেয়, তেমনি বিচ্ছেদ আনে দুঃখ ও বেদনা। গল্পেও বিরহের গভীর ছোঁয়া পাওয়া যায়, যা পাঠককে আবেগপ্রবণ করে তোলে। প্রেমের গল্পে বিরহ সবসময় একটি শক্তিশালী উপাদান। বিচ্ছেদ, অপূর্ণতা, ভুল বোঝাবুঝি এসব বিষয় প্রেমের গল্পে বিরহের আবহ তৈরি করে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দেবদাস” – প্রেমের কষ্ট ও বিচ্ছেদ কীভাবে একজন মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে, তা চিত্রিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” যেখানে অমিত ও লাবণ্যের প্রেম পরিণতি পায় না, কিন্তু তাতে এক অনন্য বেদনার সৌন্দর্য রয়ে যায়। গল্পে কখনো সমাজের কারণে মানুষের জীবনে বিরহ আসে। সামাজিক নিয়ম, কুসংস্কার, দারিদ্র্য এসবের ফলে অনেক চরিত্রের জীবন দুঃখময় হয়ে ওঠে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “আরণ্যক” যেখানে শহর ছেড়ে অরণ্যের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিলেও, শেষ পর্যন্ত সেই অরণ্য থেকে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা রয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মানদীর মাঝি” যেখানে কুবের চরিত্রটি দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবনের প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করে। যুদ্ধের গল্পে বিচ্ছেদ, মৃত্যু ও হারানোর ব্যথা গভীরভাবে ফুটে ওঠে। এরিচ মারিয়া রেমার্কের “অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট” যেখানে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও বন্ধুদের হারানোর বেদনা বিরহের আবহ তৈরি করে।সেলিনা হোসেনের “হাঙর নদী গ্রেনেড” মুক্তিযুদ্ধের কষ্ট, হারানোর বেদনা এবং দেশপ্রেমের বিরহ এই উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে।
গল্পে কখনো কখনো আনন্দ ও বিরহ পাশাপাশি থাকে। জীবনের মতোই গল্পেও হাসি-কান্না একসঙ্গে মিশে যায়। হুমায়ূন আহমেদের “কোথাও কেউ নেই” – বাকের ভাইয়ের চরিত্রটি প্রথমে আনন্দ দেয়, কিন্তু গল্পের শেষ পরিণতি পাঠককে কাঁদিয়ে তোলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “কাবুলিওয়ালা” – প্রথমে মিনি ও কাবুলিওয়ালার সম্পর্ক আনন্দ দেয়, কিন্তু কাবুলিওয়ালার বিদায়ের দৃশ্য পাঠকের মনে গভীর দুঃখ সৃষ্টি করে। আনন্দ ও বিরহ গল্পের দুই অপরিহার্য অংশ। জীবনের মতো গল্পেও সুখ ও দুঃখ হাত ধরাধরি করে চলে। কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়। আনন্দময় গল্প পাঠককে স্বস্তি দেয়, আর বিরহের গল্প পাঠককে ভাবিয়ে তোলে, গভীর আবেগে আপ্লুত করে। ভালো গল্পের সৌন্দর্য এটাই—যেখানে আনন্দ ও বিরহ একসঙ্গে মিলেমিশে পাঠকের মনে স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। গল্প আবেগকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। সুখ, দুঃখ, প্রেম, বিরহ, আনন্দ—সবকিছু গল্পের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” প্রেমের এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে লাবণ্য ও অমিতের সম্পর্কের টানাপোড়েন জীবনের বাস্তবতার প্রতিচিত্র। একইভাবে, বিভূতিভূষণের “আরণ্যক” আমাদের প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে সংযোগের গল্প বলে। কিছু গল্প কেবল আনন্দ দেয়, কিছু গল্প আবার কাঁদায়। বিভূতিভূষণের “পথের পাঁচালী”-তে দুর্গার মৃত্যু পাঠকের চোখে জল এনে দেয়, আবার “অপরাজিত”-তে অপু যখন নতুন জীবনের পথে এগিয়ে যায়, তখন পাঠকের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়। প্রতিটি যুগে গল্পের ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকালে গল্প ছিল পৌরাণিক, যেমন “মহাভারত”, “রামায়ণ”, “থাকুরমার ঝুলি”। উনিশ শতকে গল্পের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা দেখা যায়, যেমন বঙ্কিম, শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য। বিশ শতকে মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব, বিশ্বযুদ্ধ, রাজনৈতিক পরিবর্তন—এসব গল্পের মধ্যে উঠে এসেছে। একবিংশ শতকে প্রযুক্তি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, নারীবাদ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি গল্পের মূল বিষয় হয়ে উঠছে।
গল্প শুধু কিছু শব্দের বিন্যাস নয়, এটি জীবনের প্রতিচ্ছবি। গল্প আমাদের বাস্তবতার দর্পণ, যা আমাদের জীবন ও সমাজকে নতুনভাবে দেখতে শেখায়। কখনো গল্প আমাদের ভাবায়, কখনো স্বপ্ন দেখায়, কখনো প্রতিবাদী করে তোলে, আবার কখনো আনন্দ দেয়। সাহিত্যের এই শক্তিশালী মাধ্যম আমাদের অতীতের সঙ্গে পরিচয় করায়, বর্তমানকে বোঝায় এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। গল্প শুধু কল্পনার খেলা নয়, এটি বাস্তবতার এক রঙিন ছোঁয়া, যা আমাদের চিন্তাভাবনার গভীরে প্রবেশ করে এবং আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। গল্প জীবনকে শেখায়, জীবন গল্পকে বাঁচিয়ে রাখে।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।