খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

গণতন্ত্র ও পুরুষতন্ত্র : বর্তমান প্রেক্ষাপট

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
গণতন্ত্র ও পুরুষতন্ত্র : বর্তমান প্রেক্ষাপট

গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা, যেখানে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল উৎস। এই ব্যবস্থায় স্বাধীনতা, সমতা এবং ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অন্যদিকে, পুরুষতন্ত্র (প্যাট্রিয়ার্কি) একটি সামাজিক কাঠামো, যেখানে পুরুষদের আধিপত্য সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান। এ দুটি ধারণার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতরেও পুরুষতন্ত্র প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেখানে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছে। এই প্রবন্ধে গণতন্ত্রে পুরুষতন্ত্রের ভূমিকা, তার প্রভাব, এবং সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করা হবে। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগণের শাসন। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এই ব্যবস্থায় মুক্ত বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, আইনের শাসন এবং লিঙ্গসমতা একটি আদর্শ লক্ষ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

তবে বাস্তবিক পরিস্থিতি ভিন্ন। লিঙ্গসমতা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়া সত্ত্বেও, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রের মূল আদর্শকে বিকৃত করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে পুরুষতন্ত্রের আধিপত্য গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুরুষতন্ত্র একটি সামাজিক কাঠামো, যেখানে পুরুষরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। এটি কেবলমাত্র নারীদের নয়, বরং প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অধিকারকে সীমিত করে। পুরুষতন্ত্রের কারণে সমাজে ক্ষমতার বণ্টন অসম হয়, যা গণতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে সরাসরি সংঘাত সৃষ্টি করে।

পুরুষতন্ত্রের প্রভাব প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সীমিত। সংসদ বা প্রশাসনিক পদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত কম। উদাহরণস্বরূপ, অনেক দেশেই নারী সংসদ সদস্যের হার পুরুষদের তুলনায় নগণ্য। ফলে নারীদের ইস্যু যেমন মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, এবং লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ গুরুত্ব পায় না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে অবহেলিত। নারীরা সমান কাজের জন্য পুরুষদের তুলনায় কম মজুরি পায়। কর্পোরেট নেতৃত্বেও পুরুষদের আধিপত্য লক্ষণীয়। সামাজিক রীতিনীতি এবং সংস্কৃতিতে পুরুষতন্ত্র গভীরভাবে প্রোথিত। নারী-পুরুষের মধ্যে কাজের বিভাজন, নারীর প্রতি সহিংসতা, এবং নারীদের উপর সামাজিক চাপ এটির উদাহরণ। গণতান্ত্রিক সমাজে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত। উদাহরণস্বরূপ, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হলেও, প্রার্থিতা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বে তারা পিছিয়ে। বিশ্বব্যাপী গড়ে ২৫% এর কম সংসদীয় আসনে নারীরা প্রতিনিধিত্ব করে।

যদিও কিছু দেশ কোটা পদ্ধতি চালু করে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে, তবুও এই উদ্যোগগুলির কার্যকারিতা সীমিত। অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের নেতৃত্ব কেবল প্রতীকী মাত্রায় থাকে। ফলে পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না।গণতন্ত্রে ন্যায়বিচার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু অনেক সময় বিচারব্যবস্থায় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, নারী নির্যাতন বা যৌন হয়রানির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয় না। পুরুষতন্ত্রের কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে লিঙ্গবৈষম্য রয়ে গেছে। চাকরি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবায় নারীদের অবদমিত রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে নারীদের পছন্দ এবং চাহিদা গুরুত্ব পায় না।

গণতন্ত্রে মিডিয়া জনগণের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু অনেক সময় মিডিয়া পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী করে। নারীদের অবদানের পরিবর্তে তাদের চেহারা, পোশাক বা ব্যক্তিগত জীবনের উপর অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হয়। এটি নারীর ক্ষমতায়নকে বাধাগ্রস্ত করে। শিক্ষা হলো লিঙ্গবৈষম্য দূর করার প্রথম ধাপ। লিঙ্গসমতা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য বিশেষ সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত। রাজনীতিতে এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কোটা পদ্ধতি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এটি নারীদের নেতৃত্বের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে।

নারী অধিকার সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ এবং নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যেমন সমান মজুরি আইন কার্যকর করা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা।পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তনে পরিবার এবং সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা প্রদান এবং তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

মিডিয়া এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে। নারীদের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরা এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সমালোচনা করার মাধ্যমে মিডিয়া একটি শক্তিশালী প্রভাব রাখতে পারে।গণতন্ত্রে পুরুষতন্ত্র ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করতে গেলে আরও কিছু বিষয় সংযুক্ত করা প্রয়োজন, যা বিষয়টির গভীরতা ও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে সাহায্য করবে।

গণতন্ত্রের আদর্শ হলো সবার জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং ক্ষমতার কাঠামো এই আদর্শকে বারবার চ্যালেঞ্জ করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পুরুষতন্ত্রের উপস্থিতি শুধু নারীদেরই নয়, বরং সমাজের অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্যও বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলো নাগরিকের মৌলিক অধিকার। কিন্তু পুরুষতন্ত্র পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে এতটাই শিকড় গেড়ে বসেছে যে অনেক সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভেতর থেকেও এটি মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। পরিবারই শিশুর প্রথম সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া। এখানে ছেলে এবং মেয়েদের প্রতি ভিন্ন আচরণ এবং দায়িত্ব আরোপের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রের বীজ বোনা হয়। ছেলেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতা দেওয়া হয়, যেখানে মেয়েদের বাধ্য করা হয় অন্যের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে। বেশিরভাগ ধর্মীয় কাঠামোতে পুরুষতন্ত্র প্রোথিত। নারীদের উপর ধর্মীয় বিধি-নিষেধ আরোপ করে তাদের স্বাধীনতা সীমিত করা হয়।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য পুরুষতন্ত্রের একটি অন্যতম চিহ্ন। নারীদের কাজের মূল্যায়ন কম করা, নেতৃত্বস্থানে নারীদের অগ্রাহ্য করা, এবং মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়া – এসবই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার উদাহরণ।

গণতন্ত্র শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সকলের জন্য সমান সুযোগের কথা বলে। তবে অনেক দেশে মেয়েদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়। গরিব ও গ্রামীণ অঞ্চলে নারীদের স্কুলছুট হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। মেয়েদের জন্য নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা একটি বড় সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রে হুমকি, যৌন হয়রানি, এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদাসীনতার কারণে মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ফল নয়, এটি গণতন্ত্রের ব্যর্থতারও প্রতীক। নারীদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, পারিবারিক নির্যাতন ইত্যাদি সমস্যাগুলো আইন ও শাসনব্যবস্থার অকার্যকারিতা তুলে ধরে।অনেক দেশে ধর্ষণের মামলা প্রমাণ করা কঠিন। ভুক্তভোগীদের হয়রানি এবং সামাজিক লজ্জার শিকার হতে হয়।আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারী নিরাপত্তার পথে একটি বড় বাধা।

বর্তমান সময়ে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। গণতন্ত্রে নারীর অংশগ্রহণ এবং অবদান সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে।বিভিন্ন দেশে নারী নেতৃত্ব গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। উদাহরণস্বরূপ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অসাধারণ সাফল্য এসেছে।নারীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য মী টু (MeToo) আন্দোলন এবং টাইমস আপ (TimesUp) আন্দোলন বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক চেতনা জাগিয়ে তুলেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরুষতন্ত্রের উপস্থিতি গণতন্ত্রের প্রকৃতি ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে পুরুষতন্ত্র গভীরভাবে প্রোথিত। এখানে নারীরা বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা, এবং সামাজিক নিপীড়নের শিকার। শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানে নারীদের সীমিত অংশগ্রহণ গণতন্ত্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত দেশে নারীরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে ভালো অবস্থানে থাকলেও, সেখানে “গ্লাস সিলিং” বা অদৃশ্য বাধার উপস্থিতি রয়েছে।যৌন হয়রানি এবং পারিশ্রমিকের বৈষম্য উন্নত দেশেও একটি বড় সমস্যা।

গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর উচিত নারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা। যেমন: কর্মক্ষেত্রে সমান বেতন নিশ্চিত করা।নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি করা।মাতৃত্বকালীন এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা।

সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গবৈষম্য দূর করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। নারীদের নেতৃত্বে আসার জন্য প্রশিক্ষণ ও সুযোগ দিতে হবে।পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনার জন্য সামাজিক সচেতনতা জরুরি। মিডিয়া, শিক্ষা, এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্র বিরোধী বার্তা প্রচার করতে হবে। নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটি নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার সুরক্ষায় সাহায্য করবে।

গণতন্ত্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং কার্যকর শাসনব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পুরুষতন্ত্রের প্রভাব দূর করতে হবে। এটি শুধু নারীদের জন্য নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য জরুরি। লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মৌলিক শর্ত। শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে পুরুষতন্ত্রমুক্ত গণতন্ত্র গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব হলো এমন একটি সমাজ তৈরি করা যেখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ, নিরাপত্তা এবং সম্মান নিশ্চিত করা যায়। গণতন্ত্রের আসল শক্তি তার অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকৃতিতে নিহিত। তাই পুরুষতন্ত্রের বাধা অতিক্রম করেই একটি সমতাপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

গণতন্ত্র এবং পুরুষতন্ত্র একে অপরের বিপরীত ধারণা হলেও বর্তমান বিশ্বে এদের সহাবস্থান দেখা যায়। পুরুষতন্ত্র গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে, যা একটি সমতাপূর্ণ সমাজ গঠনের পথে প্রধান অন্তরায়। তবে শিক্ষা, আইন, এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।