খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

কাঙাল হরিনাথ বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ণ
কাঙাল হরিনাথ বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

কাঙাল হরিনাথ, প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং পথিকৃৎ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে যখন ব্রিটিশ উপনিবেশের চাপে বাঙালি জাতি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছিল, তখন তিনি একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। তিনি সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সমাজ সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কেবল সংবাদ পরিবেশনই নয়, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনন্য।

কাঙাল হরিনাথের জন্ম ১৮৩৩ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার অন্তর্গত গ্রাম চাপড়াতে। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাঁর শৈশব ছিল অভাব-অনটনে ভরা। তিনি প্রথাগত শিক্ষায় খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। তবে নিজের প্রচেষ্টায় বাংলাসহ সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা আয়ত্ত করেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে জ্ঞানার্জনের প্রবল তৃষ্ণা ছিল, যা তাঁকে স্বশিক্ষিত করে তোলে।

১৮৬৩ সালে, হরিনাথ “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা” নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। এটি ছিল গ্রামের সাধারণ মানুষের সমস্যা, তাঁদের জীবনের কথা এবং সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরার একটি প্ল্যাটফর্ম। তাঁর এই পত্রিকা একসময় সাপ্তাহিক রূপ নেয় এবং তা পুরো বাংলায় জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্রিটিশ শাসনের দুর্নীতি, জমিদারদের অত্যাচার এবং সমাজের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।

“গ্রামবার্তা প্রকাশিকা”র বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল এর সহজ-সরল ভাষা। হরিনাথ বিশ্বাস করতেন, সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের কাছে সত্য তুলে ধরা। তাই তাঁর পত্রিকার ভাষা ছিল প্রাঞ্জল এবং সহজবোধ্য। তিনি গ্রামের কৃষক, শ্রমিক এবং দরিদ্র মানুষের জন্য লিখতেন, যা তখনকার অভিজাতদের সাংবাদিকতার ধরন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।

কাঙাল হরিনাথ কেবল সাংবাদিকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি জমিদারদের শোষণ এবং মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে তিনি কৃষকদের অধিকার রক্ষা এবং তাঁদের কষ্টের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষাই পারে সমাজকে পরিবর্তন করতে। তাই গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং শিক্ষার প্রসারে কাজ করেছেন।

হরিনাথ নারীদের শিক্ষা এবং অধিকারেও জোর দিয়েছিলেন। যদিও সে সময় নারী শিক্ষা নিয়ে সামাজিকভাবে প্রচুর বাধা ছিল, তবুও তিনি এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীদের উন্নয়ন ছাড়া সমাজের প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব নয়।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি হরিনাথ সাহিত্যচর্চাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর লেখায় সমাজের বাস্তবতা, মানুষের দৈনন্দিন জীবন এবং তাদের সংগ্রামের চিত্র উঠে আসে। তিনি বিভিন্ন কবিতা, গান এবং প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি নিজে একজন গীতিকার এবং সুরকার ছিলেন। তাঁর রচিত গানগুলো মানুষের হৃদয়ে দেশপ্রেম এবং সমাজ সংস্কারের জন্য উদ্বুদ্ধ করত।

তাঁর দারিদ্র্যপীড়িত জীবনের জন্য তিনি নিজেকে “কাঙাল” বলে অভিহিত করতেন। তবে তাঁর দারিদ্র্য কখনোই তাঁর মানসিক শক্তি এবং সৃজনশীলতার উপর প্রভাব ফেলেনি। তাঁর “কাঙাল” পরিচিতি তাঁকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়। তিনি তাঁদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের জীবনের সঙ্গে একাত্ম করে ফেলেছিলেন।

হরিনাথ ব্রিটিশ শাসনের অবিচার এবং তাদের শোষণমূলক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তাঁর পত্রিকায় তিনি এই শোষণ, বিশেষ করে নীলকর সাহেবদের অত্যাচার, তুলে ধরেছিলেন। নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সময় তাঁর কলম হয়ে ওঠে এক শক্তিশালী অস্ত্র।

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশিত হওয়ার পর এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও, জমিদার এবং ব্রিটিশ শাসকদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হরিনাথকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত আর্থিক সংকটের কারণে পত্রিকাটি বন্ধ করতে হয়। তবে তাঁর সাংবাদিকতার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি ছিল।

১৮৯৬ সালে হরিনাথের মৃত্যু হয়। তাঁর কাজ এবং আদর্শ বাঙালির সাংবাদিকতার ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে সাংবাদিকতা কেবল তথ্য প্রকাশের মাধ্যম নয়; এটি সমাজের পরিবর্তনের একটি হাতিয়ার। তাঁর সাহসী এবং সৎ সাংবাদিকতার ধারা আজও অনুসরণীয়।

কাঙাল হরিনাথের জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, নিষ্ঠা এবং ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা সম্ভব। তাঁর কাজ এবং সংগ্রাম আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি কেবল একজন সাংবাদিক বা লেখক নন; তিনি একজন যোদ্ধা, যিনি সাধারণ মানুষের অধিকারের জন্য জীবনভর লড়াই করেছেন।

কাঙাল হরিনাথ তাঁর সাংবাদিকতায় যে বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছিলেন, তা ছিল সেই সময়ের জন্য এক নতুন দিগন্ত। তখনকার সমাজে সাংবাদিকতা মূলত অভিজাত শ্রেণির কণ্ঠস্বর হিসেবেই পরিচিত ছিল। জমিদার, ব্রিটিশ প্রশাসন ও ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু হরিনাথ এই প্রথার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতাকে সাধারণ মানুষের সমস্যার কণ্ঠস্বর করে তোলেন। তিনি মনে করতেন, সাংবাদিকতার মাধ্যমে কৃষক, শ্রমিক ও সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের সমস্যাগুলোকে তুলে ধরা প্রয়োজন।

“গ্রামবার্তা প্রকাশিকা”র প্রতিটি সংখ্যায় তখনকার সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ও সমসাময়িক বিষয়গুলো উঠে আসত। এর মধ্যে জমিদারদের অত্যাচার, ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ, মহাজনদের চক্রান্ত এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার দুঃখ-কষ্ট ছিল মূল প্রতিপাদ্য। হরিনাথ তাঁর কলামে গ্রামের কৃষকদের শোষণ এবং নীল চাষের ভয়াবহতা তুলে ধরেন, যা ব্রিটিশ শাসক ও স্থানীয় জমিদারদের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে ওঠে।

তাঁর সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি সমাজের দুর্নীতি, কুসংস্কার, বর্ণবৈষম্য এবং নারী অধিকার নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা তৈরি করা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাই সাংবাদিকতার আসল লক্ষ্য।

নীল বিদ্রোহ বাংলার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। নীলচাষীদের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার এবং তাদের শোষণের কাহিনী কাঙাল হরিনাথ তুলে ধরেন তাঁর পত্রিকায়। নীলচাষীদের দুরবস্থা এবং তাদের প্রতি ব্রিটিশ ও জমিদারদের নিষ্ঠুর আচরণ নিয়ে তাঁর প্রতিবেদনগুলো মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল।

নীল বিদ্রোহের সময় হরিনাথ তাঁর কলমকে একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা”র মাধ্যমে নীল চাষের শোষণ ও অত্যাচারের বিষয়টি জনসম্মুখে আনেন। সাধারণত, নীলকর সাহেবদের ক্ষমতা ও প্রভাবের কারণে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেত না। কিন্তু হরিনাথ সাধারণ কৃষকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যা তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি। তিনি বিভিন্ন প্রতিবেদনে চাষিদের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনী বর্ণনা করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের শোষণমূলক নীতিগুলোর প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রতিবেদনগুলো ব্রিটিশ শাসকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাঁর লেখার মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে প্রতিরোধের চেতনা জাগ্রত হয় এবং তাদের একত্রিত করে আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর এই ভূমিকা তাঁকে শুধু সাংবাদিকই নয়, একজন সমাজসংস্কারক এবং সংগ্রামী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করে।

কাঙাল হরিনাথের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল তাঁর ভাষার সহজতা। তিনি গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের কথা সহজ, সরল এবং প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করতেন। “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা”র প্রতিটি লেখায় গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবন এবং তাঁদের সংকটগুলো উঠে আসত। তিনি মনে করতেন, সাংবাদিকতার ভাষা এমন হওয়া উচিত যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। এর ফলে তাঁর পত্রিকা গ্রামবাংলার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

হরিনাথ সাংবাদিকতার পাশাপাশি গীতিকার, সুরকার এবং কবি হিসেবেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বহু গান রচনা করেছিলেন, যা পরবর্তীতে গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর গানগুলোয় সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, প্রেম এবং সমাজের অসঙ্গতিগুলো প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে, তাঁর রচিত “পল্লীগীতি” এবং “বাউল গান” সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

তাঁর রচনাগুলো কেবল সাহিত্যিক গুরুত্বের জন্যই নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তন এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীত এবং সাহিত্য সমাজ পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।

দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও হরিনাথের মানবিকতা ছিল গভীর। তিনি সবসময় অসহায় এবং দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। তিনি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে কখনো পিছপা হননি। “কাঙাল” উপাধিটি নিজেই ধারণ করে তিনি দেখিয়েছেন, দারিদ্র্য মানুষকে মহৎ হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বরং তিনি প্রমাণ করেছেন যে, আত্মনিবেদন এবং সৎ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে জয় করা সম্ভব।

হরিনাথ মজুমদারের কাজ ও আদর্শ বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। তিনি সাংবাদিকতাকে কেবল তথ্যানুসন্ধান এবং পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং সাংবাদিকতাকে সমাজের সমস্যার সমাধান ও জনমতের পরিবর্তনের হাতিয়ারে রূপান্তরিত করেছিলেন।

তাঁর সাহসিকতা এবং নীতিবোধ নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক ও লেখকদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তাঁর দেখানো পথ ধরে পরবর্তীতে আরও অনেক সাংবাদিক এবং সমাজ সংস্কারক এগিয়ে এসেছেন।

১৮৯৬ সালে কাঙাল হরিনাথের জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু তাঁর কাজ এবং আদর্শ তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রেখেছে। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কঠিন পরিস্থিতিতেও নৈতিকতা এবং সাহস বজায় রেখে সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।

কাঙাল হরিনাথ ছিলেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য। সাংবাদিকতা, সাহিত্য, সংগীত এবং সমাজসেবার মাধ্যমে তিনি বাঙালির সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন এমন একজন পথিকৃৎ, যিনি নিজের সীমিত সম্পদ এবং অসুবিধা সত্ত্বেও সমাজের জন্য অবিচলভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর জীবন ও কাজ আমাদের দেখায় যে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো কখনো বৃথা যায় না।

লেখক পরিচিতি  : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ ২০২১), পিআইবি।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।