খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

আধুনিক সাংবাদিকতায় জনজীবনের উপর প্রভাব

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ
আধুনিক সাংবাদিকতায় জনজীবনের উপর প্রভাব

আধুনিক সাংবাদিকতা জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, কারণ এটি শুধু তথ্য পরিবেশনেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের মতামত গঠন, সামাজিক পরিবর্তন এবং নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং অনলাইন সাংবাদিকতার কারণে তথ্য এখন দ্রুত এবং সহজলভ্য। এটি মানুষকে বিশ্বব্যাপী ঘটমান ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। সাংবাদিকতা জনমত তৈরির একটি শক্তিশালী মাধ্যম। প্রতিবেদনের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করা সম্ভব। বিশেষত, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে সংবাদ পরিবেশন জনমতের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের দায়বদ্ধ রাখা সম্ভব। দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অন্যায় প্রকাশ করার মাধ্যমে সাংবাদিকতা জনস্বার্থ রক্ষা করে। সাংবাদিকতা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করে এবং সচেতন করে। এটি স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অধিকার, এবং সামাজিক সমস্যাগুলোর বিষয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাংবাদিকতা সামাজিক আন্দোলন এবং সংস্কৃতির পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করে। নারী অধিকার, মানবাধিকার, এবং পরিবেশগত ইস্যুতে জনমত গঠনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আধুনিক সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভুয়া খবর এবং প্রোপাগান্ডার বিস্তার। ভুল তথ্য জনজীবনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়ায়। একটানা নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের কারণে মানুষ মানসিক চাপ এবং হতাশার শিকার হতে পারে। তাই সাংবাদিকতার ইতিবাচক এবং ভারসাম্যপূর্ণ দিকও জরুরী।

আধুনিক সাংবাদিকতা জনজীবনে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এর ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগানো সম্ভব, যা একটি সচেতন ও উন্নত সমাজ গঠনে সহায়ক হবে। গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক সাংবাদিকতা জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে এবং শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসে। এটি নির্বাচন, রাজনৈতিক আলোচনা এবং নীতিনির্ধারণী বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

ডিজিটাল যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে সাংবাদিকতা আরও গতিশীল ও বহুমাত্রিক হয়েছে। এখন প্রত্যেকেই সাংবাদিকতার একটি অংশ হয়ে উঠছে (যেমন: সিটিজেন জার্নালিজম)। এটি তথ্য প্রবাহকে আরও বিস্তৃত করেছে এবং জনগণকে সরাসরি প্রভাবিত করছে।

বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারি বা রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো পরিস্থিতিতে সাংবাদিকতা জরুরি তথ্য দ্রুত পৌঁছে দিয়ে জীবন রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। এটি দুর্যোগকালীন সময়ে জনগণের সঠিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক।

সাংবাদিকতা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে, যেমন শেয়ারবাজারের খবর, পণ্যমূল্যের ওঠানামা বা নতুন নীতিমালা। এটি ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।

সাংবাদিকতা ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পণ্যের গুণগত মান, প্রতারণা, এবং বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করে সাংবাদিকতা জনগণের স্বার্থে কাজ করে।

শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় যেমন নতুন নীতি, পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন, এবং শিক্ষার সুযোগ নিয়ে আধুনিক সাংবাদিকতা জনগণকে সচেতন করে। এটি শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়।

আধুনিক সাংবাদিকতা মানুষকে শুধু তাদের স্থানীয় পরিবেশের খবর জানায় না, বরং বিশ্বব্যাপী সংযোগ ঘটায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক রাজনীতি, এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তন নিয়ে তথ্য মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।

সাংবাদিকতা বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। এটি সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহমর্মিতা বাড়ায়।

আধুনিক সাংবাদিকতা মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করে এবং অসাম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। এটি অবহেলিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরকে তুলে ধরে।

সাংবাদিকতা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন নিয়ে সচেতনতা তৈরি করে। নতুন আবিষ্কার, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে রিপোর্টিং মানুষকে উন্নত জীবনের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তরুণ প্রজন্ম সাংবাদিকতার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি তাদের ভবিষ্যৎ গঠন এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য প্রভাবিত করে।

আধুনিক সাংবাদিকতা জনজীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করছে। এর ইতিবাচক দিকগুলো যেমন সমাজে সচেতনতা, উন্নয়ন, এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে, তেমনই এর অপব্যবহার বিভ্রান্তি, মিথ্যা প্রচার এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সাংবাদিকতা পরিচালিত হলে এটি সমাজকে আরও উন্নত করতে পারে।

আধুনিক সাংবাদিকতা জনজীবনে গভীর ও বিস্তৃত প্রভাব ফেলছে, এবং এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূত্রপাত করছে। আরও কিছু দিক বিশদভাবে উল্লেখ করা হলো: সাংবাদিকতা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। প্রথাগত কুসংস্কার ও ধ্যানধারণা ভাঙার মাধ্যমে এটি মানুষকে প্রগতিশীল ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে সহায়তা করে।আধুনিক সাংবাদিকতা পরিবেশের সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। এটি জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারকদের পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হতে অনুপ্রাণিত করে।

ডিজিটাল সাংবাদিকতা মানুষের জীবনধারা প্রযুক্তি-নির্ভর করে তুলেছে। লাইভ নিউজ, মোবাইল নোটিফিকেশন, এবং দ্রুত তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে গতিশীল করেছে।

সংবাদমাধ্যম অপরাধের ঘটনা তুলে ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলিকে সক্রিয় হতে বাধ্য করে। পাশাপাশি, এটি নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে তাদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

আধুনিক সাংবাদিকতা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরে। যেমন: নতুন রোগ, ভ্যাকসিন, স্বাস্থ্যনীতি, এবং প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা। মহামারীর সময়ে এটি আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। সাংবাদিকতা বিনোদন জগতের খবর যেমন সিনেমা, সংগীত, এবং নাটকের প্রচার করে। এটি সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায় এবং শিল্পীদের কাজ সবার সামনে তুলে ধরে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সাংবাদিকতা যেমন সহজলভ্যতা বাড়িয়েছে, তেমনই এর ফলে ভুল তথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকতা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ফ্যাক্ট-চেকিং এবং দায়িত্বশীল রিপোর্টিংয়ের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে।

আঞ্চলিক সাংবাদিকতা মানুষের স্থানীয় সমস্যাগুলো তুলে ধরে। রাস্তা, পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাবের মতো বিষয়গুলো সরকারের নজরে এনে সমাধান করতে সাহায্য করে।

আধুনিক সাংবাদিকতা নারী অধিকার, সমতা এবং তাদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। এটি নারীশিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং তাদের মর্যাদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

সাংবাদিকতার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম রাজনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারে। এটি তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়ক।সাংবাদিকতা মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের কার্যক্রম নিয়ে বিশ্লেষণ বা বিতর্ক অনুষ্ঠান মানুষের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং দুর্যোগের খবর পৌঁছে দিয়ে বৈশ্বিক সহানুভূতি সৃষ্টি করে। এটি মানবিক সাহায্যের জন্য জনগণ এবং সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করা।

আধুনিক সাংবাদিকতা শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহের মাধ্যম নয়; এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। তবে এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জনজীবনে ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য সাংবাদিকতার নৈতিকতা, সত্যতা, এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: উজ্জ্বল হোসাইন, গনমাধ্যম ও‌ সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১, পিআইবি।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।