খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

আধুনিক সংবাদিকতার প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জ

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
আধুনিক সংবাদিকতার প্রেক্ষাপট ও চ্যালেঞ্জ

সাংবাদিকতা একটি সমাজের প্রতিচ্ছবি এবং গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। এর মাধ্যমে জনগণের মতামত গঠিত হয়, সমাজের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিফলন ঘটে এবং সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়। বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা প্রযুক্তির বিকাশ, সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জড়িত। আমরা জানি, সাংবাদিকতার মূল কাজ হলো তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এটি সমাজে গণতন্ত্র রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। সাংবাদিকরা কেবল তথ্য সরবরাহ করেন না। তারা মতামত তৈরি করেন, সচেতনতা বৃদ্ধি করেন এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটান। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতার ভূমিকা আরও বিস্তৃত এবং জটিল হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সোস্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের প্রসার সাংবাদিকতার ধরণে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
পত্রিকা, টেলিভিশন বা রেডিওর মতো প্রচলিত মাধ্যম ছাড়াও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ব্লগ, পডকাস্ট এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি নতুন প্রজন্মের সংবাদ গ্রহণের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
পাশাপাশি ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। তবে এখান থেকে ভুল তথ্য বা ভুয়া খবরের সমস্যাও বেড়ে গেছে।
সবাই জানি যে, সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হলো নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা। কিন্তু বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের উপর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অনেক সময় মিডিয়া হাউসগুলো রাজনৈতিক দল বা কর্পোরেট স্বার্থের পক্ষপাতিত্ব করে থাকে। এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের কাছে সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
বিভিন্ন সময় সাংবাদিকতার মান উন্নত করার জন্য গভীর সাংবাদিকতা (ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গভীর সাংবাদিকতা সরকারের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সামাজিক অন্যায় উন্মোচনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে বর্তমান যুগে দ্রুত সংবাদ প্রকাশের প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় এই ধরনের গভীর সাংবাদিকতার অভাব দেখা যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি :
১. ভুয়া খবর : প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ার কারণে ভুয়া খবর ছড়ানো সহজ হয়ে গেছে। ফলে সত্যতা যাচাই করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
২. রাজনৈতিক চাপ : বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের উপর রাজনৈতিক চাপ বাড়ছে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৩. অর্থনৈতিক চাপ : অনেক মিডিয়া হাউস অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন। বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীলতা সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
৪. জনগণের আস্থা : ভুল তথ্য, পক্ষপাতিত্ব এবং সেনসেশনালিজমের কারণে সাংবাদিকতার উপর থেকে জনগণের আস্থা কমছে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (অও), বিগ ডেটা এবং ড্রোন সাংবাদিকতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গণমাধ্যমের বিকেন্দ্রীকরণ : ছোট ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো বিকশিত হচ্ছে, যা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে সহায়ক।
সচেতন পাঠকসমাজ : বর্তমান যুগে মানুষ সত্যতা যাচাই করার ব্যাপারে আরও সচেতন হয়ে উঠছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকতা যেমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তেমনি এর সম্ভাবনাও বিশাল। এর মাধ্যমে সমাজে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার কাজ আরও শক্তিশালী হতে পারে। তবে এজন্য সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা জরুরি।
আধুনিক সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ : আধুনিক সাংবাদিকতা প্রযুক্তি, সমাজ এবং রাজনীতির গতিশীল পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। তথ্য সংগ্রহ এবং পরিবেশনের ক্ষেত্রে যেমন নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জও সামনে এসেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসারে ভুয়া খবর বা ভধশব হবংি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্লগের মাধ্যমে অপ্রমাণিত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া এখন অনেক সহজ। এর ফলে সংবাদমাধ্যমগুলোর উপর সত্যতা যাচাইয়ের বড় চাপ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা রাজনৈতিক চাপ ও সেন্সরশিপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ করলে সাংবাদিকদের হয়রানি, গ্রেপ্তার, এমনকি হত্যার শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। গণমাধ্যমগুলো বিজ্ঞাপন আয়ের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর ফলে কর্পোরেট স্বার্থ এবং বাণিজ্যিক চাপের কারণে অনেক সময় সত্য তথ্য প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক সাংবাদিকতায় অনেক সময় রাজনৈতিক বা কর্পোরেট পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যায়। নিরপেক্ষতার অভাব সংবাদমাধ্যমের উপর মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। যদিও প্রযুক্তি সাংবাদিকতার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে, তবে এটি নতুন চ্যালেঞ্জও এনেছে। তথ্য ফাঁস এবং সাইবার আক্রমণ সাংবাদিকদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অ্যালগরিদম নির্ভর সংবাদ পরিবেশনে মানবিক বিশ্লেষণের অভাব দেখা দেয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য সংবাদ দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার চাপ থাকে। এর ফলে অনেক সময় সংবাদ যাচাই না করেই প্রকাশিত হয়, যা ভুল তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সংবাদমাধ্যম অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার লড়াই করছে। প্রিন্ট সাংবাদিকতার চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত করা কঠিন। পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেক সময় সংবাদমাধ্যমগুলো অতিরঞ্জিত শিরোনাম বা ক্লিকবেট ব্যবহার করে। এটি সাংবাদিকতার মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করে।
সোশ্যাল মিডিয়া সাংবাদিকতার জন্য যেমন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তেমনি এটি সাংবাদিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও প্রায়ই তথ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। আধুনিক পাঠকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। সাংবাদিকতার প্রতি তাদের চাহিদা ও প্রত্যাশা দ্রুত বদলাচ্ছে। এটি সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আধুনিক সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জে পূর্ণ, তবে এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলার মধ্যেই এর উন্নতির পথ রয়েছে। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, সত্যতা যাচাই, এবং সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ববোধ ধরে রাখার মাধ্যমে সাংবাদিকতা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম সাংবাদিকতায় মাস্টার্স (ব্যাচ ২০২১), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ
১০৪ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৪ জন। তাদের ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা বলছেন আন্দোলনে সম্পৃক্তকারীরা। এসব ভুয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে সরকার। তাদের নামের গেজেট বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের আট বিভাগে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ছাড়াও একই ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, এমন ২৩ জনের একটি গেজেট রেখে অন্যটি বাতিল করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রকাশিত গেজেট তালিকায় তারা আহত জুলাই-যোদ্ধা। কিন্তু তারা আসলে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত হয়নি। তারা প্রতারণা করেছেন এবং কয়েকজনের নামে একাধিক গেজেট প্রকাশিত হওয়ার গেজেট বাতিলের জন্য জেলা কমিটির সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও ১ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও ১ জনের দুবার গেজেট, চট্টগ্রাম বিভাগের ৩৪ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুর ২ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাইযোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ১২৭ জনের গেজেট বাতিল করবে সরকার। তাদের মধ্যে দুবার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে ২৩ জনের। বাকি ১০৪ জন অহত নন ও আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে জুলাই-যোদ্ধা হিসেবে গেজেট-ভুক্ত হয়েছে। তাই নামের গেজেট বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

যেসব জুলাই-যোদ্ধার গেজেট বাতিল করতে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটি, এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের ২০ জন হলেন নেত্রকোনার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৮০; মোহাম্মদ নুরুল আমিন, গেজেট নম্বর ৮৮; তানভীর আহমেদ, গেজেট নম্বর ১২১; আছিয়া খাতুন গেজেট, নম্বর ১২৩; রুহুল আমিন, গেজেট নম্বর ১২৭; মো. আমি হাসান রুপম, গেজেট নম্বর ১২৯, মোহাম্মদ আকিব তালুকদার, গেজেট নম্বর ১৪৬; মো. সুজন মিয়া, গেজেট নম্বর ১৫৫; মো. ইমন শাহারিয়া, গেজেট নম্বর ১৬৫; আশরাফুল ইসলাম জাসাম, গেজেট নম্বর ১৭২; মুশফিকুর রহমান, গেজেট নম্বর ১৯৭; মো সজিব, গেজেট নম্বর ১৯৮; সোহাগ মিয়া, গেজেট নম্বর ১৯৯; রুবেল মিয়া, গেজেট নম্বর ৩৬২; মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৩৬৩; রাব্বি হাসান শ্রীনি, গ্যাজেট নম্বর ৫৬৫; মোহাম্মদ আজহারুল ইসলামিক, গেজেট নম্বর ৫৬৬; মো. আবু ফরিদ আহামেদ, গেজেট নম্বর ৫৬৭; আফরিনা জান্নাত, গেজেট নম্বর ৫৭০; মাজহারুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৬৪৮।
ঢাকা বিভাগে ৭ জন ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ও ৭ জনের নাম দুবার গেজেট-ভুক্ত হয়েছে, রাসেলে, গেজেট নম্বর ৬৭০; খন্দকার রাজ, গেজেট নম্বর ১০৬৩; রাফিউল নাঈম, গেজেট নম্বর ১১৬১; রাশেদুল ইসলাম অনিক, গেজেট নাম্বার ১১৬৩, আব্দুল্লাহ আল রাহাত, গেজেট নম্বর ১১৬৬; মো. মঞ্জমুল আলম, জিসান গেজেট নম্বর ১৯৩২; মো. সাইফুল ইসলাম শুভ, গেজেট নম্বর ২৬৮২; রিয়াজুল হাসান, গেজেট নম্বর ২৮৩৮; বেলায়াত হোসেন শাহীন, গেজেট নম্বর ২৮৩৯; মুজবর মৃধা, গেজেট নম্বর ৩৯৬৪; জিহাদ, গেজেট নম্বর ৩৪১৩; মো. রফিকুল সরদার, গেজেট নম্বর ৭৩৩; মো. মাসুদুর রহমান, গেজেট নম্বর ৬৪৫; মোছা রুমি, গেজেট নম্বর ৩৪৩১; মো. রিয়াজ শরীফ, গেজেট নম্বর ১৩৮২।
চট্টগ্রাম বিভাগ ভুয়া জুলাই-যোদ্ধা ৩৫জন তারা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার মো. শাগর, গেজেট নম্বর ৩২৮; আবদুল্লাহ আল নোমান গেজেট নম্বর ৪৬৯; নাইম উদ্দীন শাঈদ, গেজেট নম্বর ৪৯২; মোহা. শরিফুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫১৫; শাহাদাত ইকবাজ তাহনি, গেজেট নম্বর ৫২১; তাহমিনা ইকরার তারকি, গেজেট নম্বর ৫২২; মাহাবী তাজওয়ার, গেজেট নম্বর ৫৩৪; জসিম উদ্দিন, গেজেট নম্বর ৫৪২; মো. আতিকুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৫২; মো. ইয়াছিন, গেজেট নম্বর ৫৬০; আরফাতুল ইসলাম, গেজেট নম্বর ৫৯৫; ফরহাদ আলম, গেজেট নম্বর ৬০১; মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান, গেজেট নম্বর ৬০৩; মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর, গেজেট নম্বর ৬১৬; পঠন চন্দ্র নাথ, গেজেট নম্বর ৬২২; মিশকাত-আলম রিয়াদ, গেজেট নম্বর ৬৭৫; মো. এমরান, গেজেট নম্বর ৭৯৭; মাহাম্মদ সাগর, গেজেট নম্বর ৭৬৮; নুরুল্লাহ, গেজেট নম্বর ৭৮৯; সোহাম্মদ রাফি, গেজেট নম্বর ৭৯৯; ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস, গেজেট নম্বর ৮০২; মোছা. ইছনিয়া আকতার, গেজেট নম্বর ৮২৪; মো. মাঈনুদ্দীন, গেজেট নম্বর ৮২৫; সাইমন, গেজেট নম্বর ৯৭৩; মো. আরিফ, গেজেট নম্বর ১৯৭৬; রাসেল, গেজেট নম্বর ১৯৮৬; রমজান আলী, গেজেট নম্বর ৯৮৭; মাহিম চৌধুরী, গেজেট নম্বর ৯৯৯; রিফাত বিন আল, গেজেট নম্বর ১৯৯৯।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়ে অনেকেই জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, এমন অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই-যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নেওয়া কথা বলেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক)।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তথ্যমতে, ক শ্রেণিতে অতি গুরুতর আহত ৬০২ জন, খ শ্রেণিতে গুরুতর আহত ১১১৮ জন, গ শ্রেণিতে আহত ১২০৮০ জন। নিহত ৮৪৪ জন। যার মধ্যে ৮ জনের গেজেট বাতিল করা হয়েছে। মোট ১৪ হাজার ৬৩৬ জনের নামে গেজেট করা প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব (জুলাই গণ অভ্যুত্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে অভিযোগ ছিল সেসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের গেজেট বাতিল করা হবে এবং গেজেট বাতিল করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গেজেট বাতিলের কাজ চলমান আছে।
জুলাই-যোদ্ধা না হয়েও যারা এককালীন অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।