খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ৮ কার্তিক, ১৪৩২

আগস্ট মাসেই হতে পারে জেলা প্রশাসক নিয়োগ

রূপসী বাংলা নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ
আগস্ট মাসেই হতে পারে জেলা প্রশাসক নিয়োগ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েই প্রশাসনে একের পর এক সমালোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। শুরুতে ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। ডিসি হতে না পেরে বেশ কজন কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে মারামারিতেও জড়ান। ডিসি পদে দায়িত্ব চালিয়ে ২১ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হওয়ার সাড়ে চার মাস পরও মাঠ প্রশাসনে রয়ে গেছেন। নানা সমীকরণে তাদের তুলে এনে নতুন ডিসি নিয়োগ দিতে পারছে না সরকার। অবশ্য চলতি আগস্টের মাঝামাঝি কিংবা শেষ দিকে যুগ্ম সচিবদের প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। আর এতে করে ডিসি নিয়োগের ‘প্যাঁচ’ খুলবে বলে আশা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র কালবেলাকে জানিয়েছে, ডিসি নিয়োগে জটিলতা তৈরির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারের উপদেষ্টারা তাদের পছন্দের কর্মকর্তাদের নাম প্রস্তাব করছেন। আবার প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবের একটি তালিকা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবেরও পছন্দের তালিকায় আছে কিছু নাম। এসবের বাইরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের পৃথক পৃথক পছন্দও আছে। ফলে ডিসি পদে নিয়োগপ্রত্যাশী কর্মকর্তার তালিকা বেশ লম্বা হয়ে গেছে। এ তালিকা ছোট করতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে বড় ধরনের প্যাঁচ লেগে গেছে। আর এ প্যাঁচ খুলতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা কিংবা কোনো অভিযোগ ওঠার ভয়েই সময় নিচ্ছে সরকার। তবে চলতি মাস থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখেই নতুন ডিসিদের মাঠে পাঠাবে সরকার। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে বলে এর আগে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

বিতর্কের ভয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ১০৮ কর্মকর্তার ফিটলিস্ট তৈরি করা হয়। যেখান থেকে ৬১ জেলায় ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগ ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছিল। অনেকে নিজেদের ‘বঞ্চিত’ দাবি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নজিরবিহীন কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। তারা মারামারি ও হাতাহাতি পর্যন্ত করেছেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন হয়। আবার অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভালো ভালো দপ্তর-সংস্থায় চাকরি করেও গত বছরের ৫ আগস্টের পর ডিসি পদ বাগিয়ে নেন। যাদের অনেকেই পতিত আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ছিলেন। তবুও তারা নতুন সরকার ও প্রশাসনে ডিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই এবার বিতর্ক এড়াতে ডিসি নিয়োগে সরকার অতিরিক্ত সতর্ক রয়েছে। চলছে নিবিড় যাচাই-বাছাই। অর্থাৎ আওয়ামী সুবিধাভোগী কোনো কর্মকর্তাকে ডিসি করবে না সরকার। কেউ ছলচাতুরী বা তথ্য গোপন করে ডিসি হলে এবং পরে তা প্রমাণিত হলে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন ‘ভালো’ হবে না।
এদিকে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে নতুন ফিটলিস্ট তৈরির কাজ শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, যার অংশ হিসেবে ছয় ধাপে বিসিএস প্রশাসন ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের ২৬৯ জন উপসচিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। যদিও কতজনকে ফিটলিস্টে রাখা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে কেউ কেউ বলেছেন, সর্বশেষ সাক্ষাৎকারগুলো থেকে অর্ধশতের কিছু বেশি কর্মকর্তাকে ফিটলিস্টে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ফিটলিস্টের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।
ভিন্ন ভিন্ন ‘চাওয়ার’ কারণেই জটিলতা : জনপ্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১২ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে রয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ ব্যাচের ২৬ জনের মধ্যে ২১ জন গত ২০ মার্চ পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হন। ডিসি পদে উপসচিবরাই দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতির পর যুগ্ম সচিবদের মাঠ প্রশাসন থেকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় পদায়ন করা হয়। অথচ পদোন্নতির সাড়ে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও এই ২১ যুগ্ম সচিবকে এখনো জেলা প্রশাসন থেকে তুলে আনতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কারণ তাদের ছেড়ে আসা জেলাগুলোতে যাদের পাঠানো হবে সেই ২১ নতুন ডিসির নাম চূড়ান্ত করা যায়নি, যা বর্তমান প্রশাসনের ব্যর্থতা বলেই মনে করেন প্রশাসন বিশ্লেষকরা। নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন চাওয়াকে কেন্দ্র করেই এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগসূত্র জানায়, চলতি মাসে ২১ যুগ্ম সচিবকে জেলা প্রশাসন থেকে তুলে আনার পর ২৫ ও ২৭ ব্যাচ থেকেই নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়াও নির্বাচনের আগে আরও বেশ কয়েকজন ডিসিকে তুলে আনবে সরকার। সেখানে নতুন করে ২৮তম ব্যাচ থেকে ডিসি পদায়ন দেওয়া হতে পারে। তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং নিয়োগের আগে আরও ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগ) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, ‘ডিসি নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটির ওপর নির্ভর করছে। তারাই বলতে পারবে কবে নাগাদ নিয়োগ হবে। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানি।’
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, সরকার জনপ্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য চারজন উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন সচিবকে নিয়ে ‘জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটি’ করেছে। এ কমিটি গঠনের পরই নিয়োগে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। কমিটির মতের সঙ্গে অন্য উপদেষ্টাদের তদবিরের অমিল দেখা দিচ্ছে। ফলে নিয়োগ-বদলিতে হচ্ছে বিলম্ব।
শীর্ষ কর্তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন: প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এসব কর্মকর্তা এক থেকে দেড় দশক আগে অবসরে গেছেন। বর্তমান প্রশাসনের কাজকর্মের ধরন অনেক পাল্টেছে। সরকারের প্রতিটি দপ্তর এখন ডিজিটালাইজড। কিন্তু প্রশাসনের ‘শীর্ষ মুরুব্বিরা’ এই ডিজিটাল কার্যক্রমে অভ্যস্ত নন। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেও সাহস পান না। ছোট ছোট সিদ্ধান্তের জন্যও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আবার প্রধান উপদেষ্টার সাচিবিক কর্মকর্তারাও দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বর্তমান প্রশাসনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। প্রশাসন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রবেশ ও ভাঙচুর তাই প্রমাণ করেছে। আর একটি বিশেষ ব্যাচের (৮২ ব্যাচ) কর্মকর্তাদের ঢালাওভাবে চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে তাদের হাতে প্রশাসন তুলে দিয়ে ভুল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা তাদের কাজের দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমানের বিরুদ্ধেই কর্মকর্তাদের অভিযোগ বেশি। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণিও নিজেকে প্রমাণ করতে ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে নিজের ‘অযোগ্যতার’ প্রমাণ দিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে বদলি হয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।
একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি ঠিকমতো দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারত, তাহলে সব কিছুর জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার দরকার হতো না; কিন্তু তারা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। শুধু ডিসি নিয়োগ নয়, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলছে ভারপ্রাপ্ত সচিব দিয়ে। উপদেষ্টা ও সচিবদের ‘ঠেলাঠেলিতে’ সচিব পদগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আগামীতে ‘বুড়ো’ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। তাদের ভাষ্য, চুক্তিভিত্তিক সচিবদের সঙ্গে অধস্তন কর্মকর্তাদের সম্পর্ক সচরাচর ভালো হয় না। কেউ কাউকে ‘ওউন’ করেন না। এমন সম্পর্ক প্রশাসনকে আরও দুর্বলতার দিকে নিয়ে যাবে।
সাবেক সচিব ও প্রশাসনবিষয়ক বিশ্লেষক এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘সিভিল ব্যুরোক্রেসিকে (বেসামরিক প্রশাসন) বলা হয় সরকারের খুঁটি। তাদের ওপর আস্থা ও ভরসা রেখেই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করে এবং কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। একটি সৎ, দক্ষ, পেশাজীবী আমলাতন্ত্র ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না; কিন্তু বর্তমান সরকারের দুর্ভাগ্য তারা সেরকম সিভিল ব্যুরোক্রেসি পাননি। তারা পেয়েছেন, দুমড়েমুচড়ে পড়া একটি আমলাতন্ত্র। এ আমলাতন্ত্রের ওপর ভর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সত্যিই অসাধ্য।’
প্রশাসনের নানা দুর্বলতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ইঙ্গিত করে আউয়াল মজুমদার আরও বলেন, ‘১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১-এর অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এমন দুরবস্থায় পড়তে হয়নি।’ তবে এখনো প্রশাসন ঠিক করা সম্ভব বলে মনে করেন সাবেক এই সচিব।

উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪১ অপরাহ্ণ
উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত নয়, বলা ভালো, গরম চুল্লির ঢাকনা সবে নড়তে শুরু করেছে। কারণ একটাই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি এবার শুধু অর্থনীতির সমীকরণ নয়, রাজনীতির সমীকরণও মেলাতে নেমেছেন। কিন্তু তার কাগজের খাতা যেন উলটেপালটে গেছে উপদেষ্টাদের নিয়েই।

গত ক’দিনে পরপর তিনটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। প্রতিটি বৈঠকই ছিল রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই তিন দল এক সুরে বলেছে, উপদেষ্টাদের অনেকে নিরপেক্ষ নন, তারা দলীয় ভূমিকা পালন করছে।

একই কথা তিন দলের মুখে শুনে মনে হতে পারে, যেন পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কে? তা নিয়ে এখনই জল্পনা তুঙ্গে।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দুই নাম, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। দু’জনই তরুণ, এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের বর্তমান নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁরা অন্তবর্তী নিরপেক্ষ সরকারের থেকে এনসিপির হয়ে কাজ করছেন।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার প্রধানের কার্যালয় থেকে এই দুই উপদেষ্টাকে নাকি পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আলমের পরিবারের একজন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। আর আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচন পূর্ব দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের যেতে হবে’। বিএনপির দাবি, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নেই,অন্তর্বর্তী সরকারকেই সেই ভূমিকা নিতে হবে। তাই অন্তত নিরপেক্ষতার আবরণটুকু বজায় থাকুক।
কিন্তু ‘নিরপেক্ষতা’ কথাটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত মুদ্রা। যেদিকেই উলটে ধরো, কারও না কারও মুখ সেখানে ফুটে ওঠে।
বিএনপি একা নয়। জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপিও অভিযোগ তুলেছে – সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ তো অতীতে নির্বাচনে প্রার্থীও ছিলেন। আবার জাতীয় পার্টির একাংশ ও গণ অধিকার পরিষদও বলেছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
এমনটা যদি অবস্থা হয় তাহলে অধ্যাপক ইউনুস কি আসন্ন নির্বাচনে এমন এক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আছেন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু দেশের ভেতরে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, ইউনুস সাহেব হয়তো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না উপদেষ্টাই।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিজেরাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
বাংলাদেশে ‘নির্দলীয়’ শব্দটির এক বিশেষ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই ছিল নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন। ২০১১ সালে সেই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এক জায়গায় – এখন নির্বাচন দেখবে কে?
অধ্যাপক ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারত। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মানদণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সেই সমীকরণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে?
ঢাকার রাজনৈতিক চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন নাগরিক সমাজও প্রশ্ন তুলছে – ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের উপদেষ্টারা আসলে কতটা নিরপেক্ষ? কেউ ব্যাংকের পরিচালক,কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি,কেউ আবার সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কারও না কারও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারে বসে সেই যোগাযোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়েই বড় আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস’ নামের জিনিসটা বহুদিন আগেই অনুপস্থিত। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করে না, প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না, এমনকি গণমাধ্যমকেও করে না। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে,তাহলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
অধ্যাপক ইউনুস এখন যে পরিস্থিতিতে আছেন, তাতে তাকে একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— তিন ভূমিকাতেই অভিনয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতি তিনি বোঝেন, রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু মনস্তত্ত্ব? সেটাই সবচেয়ে জটিল। কারণ,তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাকে উপদেষ্টা করা হলো, কোন দলের অনুরোধে করা হলো, কে কী ভূমিকা রাখছেন – সব কিছু নিয়েই চলছে ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যা।
তাঁর সামনে এখন দুটি পথ – হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে একদম পরিষ্কার বার্তা দেওয়া, নয়তো রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড়ের গতি এমন যে,তাতে অভিজ্ঞ নাবিকও দিক হারিয়ে ফেলেন।
এখন নাগরিক সমাজের কৌতূহল একটাই – এই উপদেষ্টাদের নিয়েই কি অধ্যাপক ইউনুস নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা কি আর মুছবে?
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক রণক্ষেত্র। সেই মাঠে যদি রেফারির পক্ষপাত নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে,তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর নিশ্চয়ই তা জানে। এখন দেখা যাক, অধ্যাপক ইউনুস এই ঝড়ের মধ্যে কীভাবে নিজের নৌকো চালান – অর্থনীতির সূত্রে,নাকি রাজনীতির কৌশলে।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩০ অপরাহ্ণ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কি-না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলার সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করে। ফলে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৫তম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কিস্তি ও আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ এর দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি মিশন দুই সপ্তাহ করে বাংলাদেশে এসে রিভিউ করে থাকে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবরে এই মিশন আসছে বাংলাদেশে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবগুলো পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।’ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণের আগামী কিস্তির অর্থ ডিসেম্বরের বদলে মার্চ-এপ্রিলে ছাড় করবে আইএমএফ।

‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ অপরাহ্ণ
‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

বলিউড কিংবা হলিউডের অনেক তারকাই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। মার্কিন পপ তারকা কার্ডি বি থেকে বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি, আনুশকা শর্মা—অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা স্বীকারও করেছেন। যদিও ঢাকার তারকাদের মধ্যেও অনেকের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তা নিয়ে তাদের খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি এক পডকাস্ট শোতে হাজির হয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সেখানে জয়া আহসান বলেন, ‘মানুষ বলে, আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা। এটা কিন্তু আমি শুনেছি।আমার নাকি হেড টু টো (মাথা থেকে পা পর্যন্ত) প্লাস্টিক সার্জারি করা।’ এরপর তিনি বলেন, ‘বোটক্স, এটা-সেটা (ব্যবহার করি)—এগুলো বলে মানুষ। মানুষ মনে করে, এগুলো (মন্তব্য) আমি দেখি না। আমি দেখি মাঝেমধ্যে। আমাদের কমেন্ট বক্স দেখলে আমাদের দেশের পুরুষদের স্টেট অব মাইন্ডটা (মানসিক অবস্থা) বোঝা যায়।’ তবে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন, নাকি করেননি—তা স্পষ্ট করেননি এই অভিনেত্রী। এ সময় ট্রল প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’ ছবিতে তাঁর বলা ‘মারোওও’ সংলাপটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রল হয়।
এই প্রসঙ্গে জয়া বলেন, এটা খুব দরকার ছিল, ভালো হয়েছে তো, পচানি খাইছি না। সব সময় সবকিছুতে সফল হব? ভুল করেছি, সেটাই ঠিক আছে। আমার জীবনে কোনো কিছু ভুল না। ওই ভুলগুলো নিয়েই আজকের জয়া আমি। ২০২৫ সাল জয়া আহসানের জন্য বেশ সফল একটি বছর। বাংলাদেশ ও ভারতে তার অভিনীত ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ডিয়ার মা’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার নতুন ছবি ‘ফেরেশতে’। পাশাপাশি ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ‘জয়া আর শারমিন’ ও ‘নকশীকাঁথার জমিন’।