খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ২৩ বৈশাখ, ১৪৩২

যে কারণে স্টারলিংক বাংলাদেশে গেম চেঞ্জার হতে যাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ
যে কারণে স্টারলিংক বাংলাদেশে গেম চেঞ্জার হতে যাচ্ছে

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পরিবর্তন এসেছে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে। যার ছোঁয়া লেগেছে ইন্টারনেট পরিসেবার ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবাদাতা স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ উপলক্ষে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, স্টারলিংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ কি সুফল পেতে পারে? প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে দুর্গম এলাকায় খুব সহজে উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা পাওয়া যাবে। ফলে ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের পার্থক্য ঘুচে যাবে। গ্রামে বসেই উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন তরুণেরা। দুর্যোগের পর দ্রুত যোগাযোগ প্রতিস্থাপনে বড়ো ভূমিকা রাখতে পারে স্টারলিংক।
তাছাড়া আরেকটি বড়ো সুবিধা হলো, গোপনীয়তা রক্ষা করে যোগাযোগ রক্ষা করা। স্টারলিংক যদি গোপনীয়তা রক্ষা করে বাংলাদেশে সেবা দেয়, তাহলে অনেকেই প্রতিষ্ঠানটির ইন্টারনেট ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। অবশ্য স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা ব্যবহার করা কঠিন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, স্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট-সেবা দেয়। তার দিয়ে তা সংযুক্ত করতে হয় না। তাই স্টারলিংকের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল ইন্টারনেটের আওতায় আনা যাবে। তিনি বলেন, দেশে বিদ্যমান ইন্টারনেট-সেবার মান নিয়ে সমস্যা রয়েছে। স্যাটেলাইট-সেবা এলে যারা মানসম্পন্ন ইন্টারনেট চান, তাদের জন্যে বিকল্প সুযোগ তৈরি হবে।
১. স্টারলিংক কী
বাংলাদেশে এখন যে ইন্টারনেট-সেবা দেওয়া হয়, তা সাবমেরিন কেবলনির্ভর। অর্থাৎ সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ এনে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা (আইএসপি) মানুষকে ইন্টারনেট-সেবা দেয়।
স্টারলিংক ইন্টারনেট-সেবা দেয় স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে। স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট-সেবা জিওস্টেশনারি (ভূস্থির উপগ্রহ) থেকে আসে, যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপিত হাজার হাজার স্যাটেলাইটের একটি সমষ্টি হচ্ছে স্টারলিংক, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট-সেবা দিতে পারে।
চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে, স্টারলিংকের ৬ হাজার ৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এসব স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) ওপরে কক্ষপথে ঘুরছে।
স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে এবং ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
২. কীভাবে কাজ করে স্টারলিংক?
স্টারলিংকের ইন্টারনেট-সেবা পেতে গ্রাহককে টেলিভিশনের অ্যানটেনার মতো একটি ডিভাইস (যন্ত্র) বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। গ্রাহক এই অ্যানটেনার সঙ্গে একটি স্টারলিংকের রাউটার স্থাপন করে ইন্টারনেট-সেবা পান।
স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড)। তবে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে।
ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা ও বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ওকলা’র গত জানুয়ারির হিসাবে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় ডাউনলোড গতি ৪০ এমবিপিএসের কিছু কম। আপলোডের গতি ১৩ এমবিপিএসের মতো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি প্রায় ৫১ এমবিপিএস। আপলোডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪৯ এমবিপিএস। অবশ্য বাসাবাড়িতে সাধারণ গ্রাহকেরা গতি পান আরও কম। গ্রামে অনেক জায়গায় ইন্টারনেট সংযুক্ত হওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে।
৩. কতোটা ব্যয়বহুল স্টারলিংক?
স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাসাবাড়িতে তাদের সেবা নিতে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। সেখানে থাকে একটি রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটাকে স্টারলিংক কিট বলা হয়, যার মূল্য ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত (৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা)।
আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার (প্রায় ১৫ হাজার টাকা)। তবে করপোরেট গ্রাহকদের জন্যে স্টারলিংক কিটের দাম ও মাসিক ফি দ্বিগুণের বেশি। তবে দেশভেদে দামে ভিন্নতা রয়েছে।
৪. বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযুক্তির সম্ভাবনা কতোটুকু?
তিন বছর ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করার আগ্রহ দেখাচ্ছে স্টারলিংক। তাদের ওয়েবসাইটে কোন্ দেশে তাদের সেবা রয়েছে, তা উল্লেখ করে একটি মানচিত্র পাওয়া যায়। তাতে বলা আছে, চলতি বছর বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হওয়ার কথা।
২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি এনে পরীক্ষা করা হয়। সে সময় তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে স্টারলিংকের বৈঠকও হয়েছিল।
২০২৪ সালের অক্টোবরে স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) অক্টোবরে একটি নির্দেশিকার খসড়াও তৈরি করেছে।
৫. বাংলাদেশে স্টারলিংকের সম্ভাব্য নাম কী হতে পারে?
বিটিআরসির প্রস্তাবিত নির্দেশিকার নাম, ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর’। এটা মূলত স্টারলিংকের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে। খসড়াটি এখনো অনুমোদন পায়নি।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী শনিবার বলেন, খসড়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করে বিটিআরসি খসড়াটি এ সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবে।
দেড় বছর আগে স্টারলিংকের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে যখন তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে, তখন এর প্রযুক্তিগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল। তখন জানানো হয়েছিল, পরীক্ষার ফল ইতিবাচক ছিল।
৬. স্টারলিংকে আড়িপাতার সুযোগ থাকবে কিনা?
বড়ো প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছিল টেলিযোগাযোগ খাতে সরকারের বিধিসম্মত প্রবেশাধিকারের (লফুল ইন্টারসেপশন) বা আড়িপাতার সুযোগ থাকবে কি না। বিগত সরকার স্টারলিংকের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছিল, আড়িপাতার সুযোগ দিতে হবে।
বিটিআরসি স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট-সেবার নির্দেশিকার যে খসড়া প্রকাশ করেছে, তাতেও আড়িপাতার সুযোগ রাখার শর্ত রয়েছে। যদিও স্টারলিংক সাধারণত আড়িপাতার সুযোগ দিতে চায় না।
নতুন সরকার কি আড়িপাতার ক্ষেত্রে ছাড় দেবে, নাকি স্টারলিংক শর্ত মেনে বাংলাদেশে আসবে, তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে যে কোনো মূল্যে বাংলাদেশে ইলন মাস্কের স্টার লিংক ইন্টারনেট- সেবা নিয়ে আসা হবে জানিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ‘দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন কথা ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা যে কোনো মূল্যে স্টার লিংক বাংলাদেশে নিয়ে আসবো। এটা আমাদের পলিটিক্যাল প্রমিস। এ প্রমিসের মাধ্যমে আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাইবো যে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ বান্ধব দেশ। এফডিআইকে ব্র্যান্ডিং করার জন্যে আমরা এ কাজটি করবো।
দেশীয় ইন্টারনেট সেবাদাতাগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, স্টার লিংক যখন আসবে তখন আরবান এবং রুরালের যে প্রিমিয়ার কাস্টমার সে স্টার লিংকে চলে যাবে। আপনি বলতে পারেন তার প্রাইস অনেক বেশি হবে। তার প্রাইস পাঁচ হাজার টাকা হবে, আমি ৫০০ টাকায় দিচ্ছি। আপনার সেই আত্মতুষ্টির কী উত্তর? আমার সোসাইটিতে কনজিউমার আছে, এমন কনজিউমার যারা ফ্রিল্যান্সার, যারা ক্ষুদ্রঋণের ব্যবসা করে এনজিও, এন্ট্রাপ্রেনিউর, এসএমই বিজনেসম্যান আরবান এবং রুরাল; তারা কিন্তু বেটার সার্ভিসের জন্যে স্টার লিংকে চলে যাবে। সেটা আপনার প্রিমিয়ার কাস্টমার লেভেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে ডেফিনেটলি। এটা মোবাইল এমএনওদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাহলে তার বিরুদ্ধে আপনি কীভাবে প্রিপারেশন নেবেন, আমি মনে করি আপনারা কোয়ালিটি অব সার্ভিস ইনশিওর করবেন। সুতরাং স্টার লিংক আসার বিপরীতে আমি যদি দেশীয় ব্যবসাকে সুরক্ষা দিতে চাই তাহলে সবার আগে আমি যে সার্ভিসটা দিচ্ছি এই সার্ভিসটা স্ট্যান্ডার্ড করতে হবে।
এ সময় ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, একটা সময় ছিলো, মোবাইল ইন্টারনেট ডমিনেটিং ছিলো প্রায় ৯৬-৯৭ শতাংশ। এই চার বছর আগে। এ সময়ের মধ্যে আইএসপি সার্ভিস গ্রো করেছে, কিন্তু আইএসপির সার্ভিস কোয়ালিটি বেটার না হওয়ায় আবার মোবাইলের দিকে টার্ন করেছে। আমরা একটা ট্রানজিশনে আছি, সেই ট্রানজিশনে নতুন করে প্রিমিয়ার কাস্টমার স্টার লিংকের দিকে চলে যাবে। সে ক্ষেত্রে আপনাদের সতর্ক হতে হবে। সুতরাং আপনারা বুঝতে পারছেন যে, আপনারা কনসাসলি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে যাচ্ছেন। পলিসি এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কনসাসলি ইন্টারটেন করবে। তার বিপরীতে আপনাদের ডিফেন্স সিস্টেম তৈরি করতে হবে।
দাম কমানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে ভি-স্যাটগুলোর কানেকশনের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনবো। তাহলে ভি-স্যাটের ব্যবসাটা কিছুটা হলেও ফ্লাই করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মাহতাব উদ্দিন, আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম, বিডি জবসের সিইও ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিনিয়র ডাইরেক্টর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত, বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবির রেগুলেশনের ডিরেক্টর শাহ মো. ফজলে খোদা।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ মোস্তফা হুসাইন

ইলন মাস্কের এক্সে চাকরির সুযোগ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৫ মে, ২০২৫, ৯:৩৪ অপরাহ্ণ
ইলন মাস্কের এক্সে চাকরির সুযোগ

প্রযুক্তি জগতের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক তার ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি “হার্ডকোর” সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সেরা কাজ প্রদর্শনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে এক্সে এ বিষয়ে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছেন তিনি।

মাস্ক এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘আপনি যদি একজন ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হন আর সবকিছুর জন্য অ্যাপটি তৈরি করতে চান, তাহলে আপনার সেরা কাজটি ই-মেইলে (code@x. com) পাঠিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন। আপনি কোন স্কুলে গেছেন বা কোথায় পড়েছেন, তা আমরা চিন্তা করি না। আপনি স্কুলে গিয়েছিলেন কি না বা বড় কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, তা আমাদের চিন্তায় নেই। শুধু আমাদের কাছে আপনার কোড পাঠান।’

মাস্কের এই ঘোষণা প্রথাগত নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তার মতে, একাডেমিক যোগ্যতা বা বড় প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতার চেয়ে প্রকৃত দক্ষতাই গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, “কোডই এখানে সবকিছু বলে দিবে।”

ইলন মাস্ক বহুদিন ধরেই ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মকে একটি বহুমুখী অ্যাপে রূপান্তর করার পরিকল্পনার কথা বলে আসছেন। চীনের উইচ্যাটের মতো একটি “এভরিথিং অ্যাপ” বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে মাস্ক টুইটারের পরিবর্তনশীল পথচলার কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, কীভাবে এটি ‘টুইটার ১.০’ থেকে ‘এভরিথিং অ্যাপ’-এ রূপান্তরিত হচ্ছে। তার লক্ষ্য ‘এক্স’-কে একটি “এভরিথিং অ্যাপ”-এ রূপান্তরিত করা, যেখানে পেমেন্ট, মেসেজিং ও ই-কমার্সসহ সবকিছু একসঙ্গে থাকবে।

কয়েক মাস ধরেই বেশ কিছু নতুন সুবিধা চালু করছে এক্স। আরও বেশ কিছু সুবিধা চালুর জন্য চেষ্টা করছে খুদে ব্লগ লেখার সাইট। এক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিন্ডা ইয়াকারিনো এ মাসের শুরুতে জানিয়েছেন, ‘২০২৪ সালে এক্স পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে। এখন আপনি নিজেই মিডিয়া। ২০২৫ সালে এক্স সবাইকে যুক্ত করবে, যা আগে কখনো ভাবা হয়নি। শিগগিরই এক্স টিভি, এক্স মানি, গ্রোক ও আরও অনেক কিছু আসবে।’

এই নতুন উদ্যোগ মাস্কের এক্স-কে কেবল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বহুমাত্রিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করার একটি বড় পদক্ষেপ। বাংলাদেশি তরুণ সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য এটি হতে পারে একটি অনন্য সুযোগ।

আইন প্রণয়নে আরব আমিরাতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৫ মে, ২০২৫, ৯:৩০ অপরাহ্ণ
আইন প্রণয়নে আরব আমিরাতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

নতুন আইন তৈরি এবং পুরোনো আইন পর্যালোচনা ও সংশোধনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। বিশ্বে এই প্রথম কোনো দেশ সরাসরি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় এআইকে সম্পৃক্ত করছে। এ উদ্যোগকে আমিরাতের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও প্রগতিশীল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইউএই সরকার ইতোমধ্যে এই খাতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো এ প্রকল্পকে ‘এআই-চালিত আইন প্রণয়ন’ নাম দিয়েছে। যেখানে অন্য দেশগুলো সরকার পরিচালনায় এআইকে সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করছে, সেখানে আমিরাত আইন প্রণয়নের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে এআইকে অংশীদার করার পরিকল্পনা করছে।

দুবাইয়ের শাসক ও দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুম বলেছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এই নতুন আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া আমাদেরকে আরও দ্রুত, সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরভাবে আইন তৈরি করতে সহায়তা করবে।”

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মন্ত্রিসভা সম্প্রতি ‘রেগুলেটরি ইন্টেলিজেন্স অফিস’ নামের একটি বিশেষ সংস্থা গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। সংস্থাটি এআই-ভিত্তিক আইন প্রণয়নের বিষয়টি তদারকি করবে।

আইন প্রণয়ন ব্যবস্থায় এআইকে কার্যকরভাবে যুক্ত করতে দেশটি একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলছে। এতে থাকবে ফেডারেল ও স্থানীয় আইন, আদালতের রায় এবং সরকারি সেবার বিস্তারিত তথ্য। এর মাধ্যমে এআই বিশ্লেষণ করে নিয়মিত আইন সংস্কারের পরামর্শ দিতে পারবে।

শেখ মোহাম্মদ আশা প্রকাশ করে বলেন, “এআই ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দ্রুততর হবে।”

তবে বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে যেমন যুগান্তকারী হিসেবে দেখছেন, তেমনি সতর্কতাও জানিয়েছেন। কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক রনি মেডাগলিয়া একে ‘সাহসী পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এই উদ্যোগে এআইকে সহ-আইনপ্রণেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

অন্যদিকে গবেষকরা বলছেন, প্রশিক্ষণ ডেটায় পক্ষপাত থাকতে পারে, ব্যাখ্যাগত দুর্বলতা দেখা দিতে পারে এবং ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকিও থেকে যায়। এজন্য এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও মানবিক তদারকির ওপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

গুজবের বিরুদ্ধে হানিয়া হাকিমের কড়া প্রতিবাদ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ৫ মে, ২০২৫, ৯:২৬ অপরাহ্ণ
গুজবের বিরুদ্ধে হানিয়া হাকিমের কড়া প্রতিবাদ

ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের রেশ বরাবরই গিয়ে পড়ে দুই দেশের বিনোদন অঙ্গনে। বিশেষ করে পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর চাপ বাড়ে প্রতিবারই। ২০১৬ সালে উরির হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা, যা বহাল ছিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত। চলটি বছরের ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত হন ২৬ জন পর্যটক। এ ঘটনার পর ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুই দেশের সম্পর্ক। পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় আবারও আঙুল তোলা হচ্ছে পাকিস্তানি শিল্পীদের দিকে।

এনডিটিটি থেকে জানা যায়, এ সময় বলিউডে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ফাওয়াদ খান অভিনীত ‘আবির গুলাল’ আটকে দেয়া হয়। হানিয়া আমিরের অভিনয় করার কথা ছিল দিলজিৎ দোসাঞ্জের সঙ্গে ‘সর্দারজি থ্রি’-তে, সেই প্রকল্পও পড়ে গেছে অনিশ্চয়তায়। শুধু তাই নয়, আলি জাফর, সজল আলী, ইকরা আজিজ, ইমরান আব্বাসসহ একাধিক পাকিস্তানি তারকার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, গুজব উঠেছে অভিনেত্রী হানিয়া আমির নাকি কাশ্মীর হামলার পেছনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন হানিয়া। তিনি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার নামে একটি মিথ্যা বিবৃতি ছড়ানো হয়েছে। আমি এমন কিছু বলিনি। পুরো বিষয়টি সাজানো এবং বিভ্রান্তিকর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা খুবই সংবেদনশীল সময়। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের জন্য আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। এ ঘটনায় সমবেদনা প্রয়োজন, রাজনৈতিক দোষারোপ নয়। সন্ত্রাসীদের কাজের দায় কোনো দেশ বা তার সাধারণ নাগরিকদের ওপর চাপানো ঠিক নয়। প্রমাণ ছাড়া দোষারোপ বিভাজন আরও বাড়িয়ে তোলে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও তথ্য বিকৃতির যে ধারা চলছে, তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন হানিয়া আমির। এই সময় অভিনেত্রীকে শান্ত থাকতে বলছেন তার ভক্তরা।