খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বসন্ত : সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩০ অপরাহ্ণ
বসন্ত : সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু

প্রকৃতির চির পরিবর্তনশীল রূপের মধ্যে ঋতু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বসন্ত হলো সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ ঋতু। শীতের শুষ্কতা ও নিস্তব্ধতার পর বসন্ত আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার নিয়ে। চারপাশ ভরে ওঠে ফুলের সৌরভ, কোকিলের সুমধুর ডাক আর প্রাণবন্ত বাতাসে। এ ঋতু শুধু প্রকৃতির পরিবর্তনই নয়, বরং মানুষের মনেও এক নতুন উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস ও সৃজনশীলতার সঞ্চার করে। তাই বসন্তকে বলা হয় সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু।
বসন্ত ঋতু প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা শীতের নিষ্প্রাণ পরিবেশের পর এক নতুন জীবনের বার্তা নিয়ে আসে। ফাল্গুন আর চৈত্র, এই দুই মাসজুড়ে বাংলার প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সেজে ওঠে। গাছের নতুন সবুজ পাতা, বাহারি ফুলের মেলা, পাখির গান, বাতাসের মৃদু স্পর্শ— সব মিলিয়ে বসন্ত এক আনন্দঘন আবহ তৈরি করে।

শীতের কারণে যে গাছগুলো পত্রশূন্য হয়ে পড়ে, বসন্তের আগমনে সেগুলোতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চারদিকে ফুটতে শুরু করে কচি সবুজ পাতা। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশ, গুলমোহর ফুলে ফুলে লাল-হলুদ-কমলা রঙে রঙিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি। আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলগাছে মুকুল ধরতে শুরু করে, যা বসন্তের অন্যতম সৌন্দর্য। বসন্তকে ফুলের ঋতু বলা হয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে ওঠে, যা প্রকৃতিকে করে তোলে মনোমুগ্ধকর। লাল-কমলা রঙের আগুনের মতো পলাশ ফুল বসন্তের অন্যতম আকর্ষণ। বড় লাল ফুল বিশিষ্ট শিমুল গাছ বসন্তের রূপ বৈচিত্র্যে অনন্য। কৃষ্ণচুড়া গাছে আগুনের মতো উজ্জ্বল লাল ফুল ফোটে, যা পথ-প্রান্তরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।ররজনীগন্ধা ও বেলি ফুলের মৃদু সুগন্ধ বসন্তের রাতকে আরও মোহনীয় করে তোলে। শীতের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বসন্তে পাখিরা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। কোকিলের ডাকে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। কোকিলের ডাক বসন্তের অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া দোয়েল, শ্যামা, টিয়া, ময়না, শালিক, ফিঙে, বাবুইসহ নানা পাখির কলতানে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুরেলা। বসন্তের বাতাস থাকে হালকা ও মৃদু শীতল। এটি শরীরে এক অনন্য প্রশান্তি এনে দেয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের আগে বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম, neither too hot nor too cold। দিনের আলো হয় মিষ্টি উজ্জ্বল, আর রাতের চাঁদনী বসন্তের মোহময় পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন নদী ও জলাশয় বসন্তে আরও উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। শাপলা, পদ্মসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদও বসন্তে নতুন রূপ লাভ করে। নদীর পাড়ে গাছের সবুজ পাতার প্রতিচ্ছবি ও বাতাসের হালকা দোলায় পানির ঢেউ এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাংলার গ্রাম ও শহর বসন্তের আগমনে এক নতুন প্রাণ ফিরে পায়।

সরিষা ফুলের হলুদ মাঠ, ধানক্ষেতের কচি সবুজ চারাগাছ, তাল ও খেজুর গাছের কচি পাতা বসন্তের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে রাস্তাঘাট, পার্ক, ক্যাম্পাস, বাগান সাজানো হয় বিভিন্ন রঙিন ফুল দিয়ে। বসন্ত প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু। এটি শুধু গাছপালা ও ফুলের পরিবর্তন নয়, বরং পাখির গান, বাতাসের মিষ্টি পরশ, নদীর কূলের স্নিগ্ধতা— সব মিলিয়ে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। বসন্ত আমাদের শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগই দেয় না, বরং এটি আমাদের মনকেও আনন্দ ও সৃজনশীলতায় ভরিয়ে তোলে। বসন্ত ঋতুর আগমনে প্রকৃতির চেহারা বদলে যায়। শুষ্ক গাছগুলো নতুন পাতায় সজীব হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রকম ফুলের সমারোহে চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বসন্তে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষণীয়—শীতের কারণে ঝরে যাওয়া পাতা বসন্তের আগমনে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পত্রপল্লবে ভরে ওঠে। আম, কাঁঠাল, লিচু, কদম, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ— এসব গাছে নতুন পাতা ও ফুল ফুটতে শুরু করে। বসন্তের প্রধান আকর্ষণ ফুল। এই ঋতুতে পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, গুলঞ্চ, কেয়া, বেলি, রজনীগন্ধা ইত্যাদি ফুল ফুটে। ফুলের রঙ ও সুবাস প্রকৃতিকে মোহনীয় করে তোলে। বসন্ত মানেই কোকিলের মধুর গান। এ সময় শুধু কোকিল নয়, দোয়েল, শ্যামা, টিয়া, ময়না, ফিঙে, বাবুই, শালিকের কণ্ঠেও ভরে ওঠে প্রকৃতি।
বাতাসের মৃদুমন্দ পরশ: বসন্তের হালকা মৃদু বাতাস শরীরে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। এটি প্রকৃতিতে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।
বাংলাদেশে বসন্ত ফাল্গুন ও চৈত্র মাসজুড়ে স্থায়ী হয়। শীতের বিদায়ের পর বসন্তের উষ্ণতা অনুভূত হয়, তবে এটি তীব্র গরমের মতো নয়। আবহাওয়া থাকে মনোরম, neither too cold nor too hot। সূর্যের আলো হয় মিষ্টি উজ্জ্বল, বাতাস থাকে হালকা ও সতেজ। বসন্তের এই মনোরম পরিবেশ মানবমনেও এক স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ নিয়ে আসে। এ সময় প্রকৃতি যেমন নবজাগরণ লাভ করে, তেমনি মানুষের মনেও সৃষ্টিশীলতা ও নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়।

বাংলাদেশে বসন্ত শুধুমাত্র একটি ঋতুই নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বসন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান রয়েছে—বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন বাংলাদেশে অত্যন্ত আনন্দঘনভাবে উদযাপিত হয়।
নারীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি আর গাঁদা ফুলের মালা পরে উৎসবে যোগ দেন। তরুণরা পাঞ্জাবি পরে, ফুল হাতে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও অন্যান্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এই দিনে গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটকের আয়োজন করে। আধুনিক সময়ে পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও পালিত হয়। ফলে বসন্তের আনন্দের সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার আবহও যুক্ত হয়। তরুণ-তরুণীরা এই দিনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষের প্রস্তুতি বসন্তের শেষ মাস চৈত্র। এটি বাংলা বছরের শেষ মাস। চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো হয় এবং নতুন বছরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় গ্রামীণ মেলা, বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও খাবারের আয়োজন হয়।
বসন্ত ঋতু বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে। কবি-সাহিত্যিকরা এই ঋতুর রূপ, রং, সুর ও সৌন্দর্যকে তাদের কাব্য, গান, উপন্যাস ও গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন। বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি মানুষের মনেও এক নতুন আবেগ, সৃজনশীলতা ও প্রেমের উদ্দীপনা জাগায়। তাই বাংলা সাহিত্যে বসন্তের উপস্থিতি এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তকে শুধু প্রকৃতির ঋতু হিসেবে দেখেননি, বরং এর সঙ্গে প্রেম, ভালোবাসা ও নবজাগরণের ভাবনা যুক্ত করেছেন। তার অসংখ্য কবিতা, গান ও গল্পে বসন্ত এসেছে এক অনন্য রূপে। তার বিখ্যাত গান “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” বসন্তের শেষ লগ্নে গ্রীষ্মের আগমনকে উদযাপন করে। বসন্ত নিয়ে তার বিখ্যাত কবিতাগুলো হলো—
“বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে”
“ওরে গৃহবাসী, খুলে দে দ্বার, আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে”

রবীন্দ্রসংগীতে বসন্তের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার রচিত “ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়”, “ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে”, “আজি ঝর ঝর মুখর বায়” ইত্যাদি গান বসন্ত উৎসবের অংশ হয়ে গেছে।

কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় বসন্ত এসেছে এক উচ্ছ্বল, বর্ণিল ও বিপ্লবী রূপ নিয়ে। তার কবিতায় বসন্ত মানেই প্রাণচাঞ্চল্য, প্রেম, উচ্ছ্বাস ও বিদ্রোহের সমন্বয়।

তার বিখ্যাত কবিতা “আসছে বসন্ত, গাইবে ভুবন, ফাগুন লেগেছে বনে বনে”
বসন্তকে তিনি প্রেমের উন্মাদনা ও নতুন জীবনের বার্তা হিসেবে দেখেছেন—
“ফাগুনের আগুনে ঝর ঝর ঝরিছে পলাশ শিমুল”
“আজ বসন্ত জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে”
৩. জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বসন্ত

জীবনানন্দ দাশ বসন্তকে প্রকৃতির এক মায়াময় ও বিষণ্ন সৌন্দর্য হিসেবে দেখেছেন। তার কবিতায় বসন্ত শুধু রঙিন ফুলের নয়, বরং এক নৈঃশব্দ্যপূর্ণ, একাকীত্বময় অনুভূতিরও প্রতিচ্ছবি।

তার বিখ্যাত কবিতায় বসন্তের রূপ ধরা পড়ে—
“কিন্তু বসন্ত চলে যায়, কেবল প্রকৃতি থেকে যায়”।
“বনলতা সেন”-এ বসন্তের চিত্র ফুটে ওঠে, যেখানে কবি হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে।
বাংলার লোকগান, পালাগান, বাউল গান ও ভাটিয়ালিতে বসন্তের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষ করে— বসন্তের রঙ, প্রেম ও আধ্যাত্মিক ভাব ধরা পড়ে বাউল গানে।  গ্রামবাংলার বসন্ত উৎসবের আনন্দ ফুটে ওঠে এসব গানে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বসন্ত প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অনেক উপন্যাস ও গল্পে বসন্তকে ভালোবাসা, নতুন জীবনের সূচনা ও প্রকৃতির পুনর্জন্ম হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

বসন্ত বাংলা সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি কবিদের অনুপ্রাণিত করেছে, প্রেমিকের মনে ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়েছে, আর প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যকে সাহিত্যে চিরন্তন করে তুলেছে। বসন্ত তাই কেবল ঋতু নয়, এটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ। বসন্ত কেবল একটি ঋতুই নয়, এটি সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে ফুল, পোশাক, গয়না, খাবারের দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। পোশাকের বাজারে হলুদ ও বাসন্তী রঙের পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়। বসন্তকালে দেশের বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান, পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় বাড়ে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজারের মতো স্থানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নাটক, গান, কবিতা পাঠের আয়োজন করে। এতে শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। যদিও বসন্ত আনন্দের ঋতু, তবু কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। বসন্তে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা অনেকের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়।
বসন্তকালে অনেক গাছের পরাগায়ন শুরু হয়, যা অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে। বসন্ত শেষে তীব্র গরমের সূচনা হয়, যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বসন্তের আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগের মতো বসন্তের দীর্ঘস্থায়িত্ব এখন আর নেই।
বসন্ত প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু। এটি শুধু ফুল, পাখি ও বাতাসের পরিবর্তন নিয়ে আসে না, বরং মানুষের মনেও এক নতুন আশার আলো জ্বালায়। বসন্তের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ আমাদের জীবনকে রঙিন করে তোলে। তাই, বসন্তের প্রকৃতি ও আবহ সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। বসন্ত হোক আনন্দের, সৃষ্টিশীলতার ও মানবতার উৎসব!

লেখক পরিচিতি : ‍উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।