খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

বসন্ত : সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩০ অপরাহ্ণ
বসন্ত : সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু

প্রকৃতির চির পরিবর্তনশীল রূপের মধ্যে ঋতু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বসন্ত হলো সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ ঋতু। শীতের শুষ্কতা ও নিস্তব্ধতার পর বসন্ত আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার নিয়ে। চারপাশ ভরে ওঠে ফুলের সৌরভ, কোকিলের সুমধুর ডাক আর প্রাণবন্ত বাতাসে। এ ঋতু শুধু প্রকৃতির পরিবর্তনই নয়, বরং মানুষের মনেও এক নতুন উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস ও সৃজনশীলতার সঞ্চার করে। তাই বসন্তকে বলা হয় সৌন্দর্য, আনন্দ ও নবজাগরণের ঋতু।
বসন্ত ঋতু প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, যা শীতের নিষ্প্রাণ পরিবেশের পর এক নতুন জীবনের বার্তা নিয়ে আসে। ফাল্গুন আর চৈত্র, এই দুই মাসজুড়ে বাংলার প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সেজে ওঠে। গাছের নতুন সবুজ পাতা, বাহারি ফুলের মেলা, পাখির গান, বাতাসের মৃদু স্পর্শ— সব মিলিয়ে বসন্ত এক আনন্দঘন আবহ তৈরি করে।

শীতের কারণে যে গাছগুলো পত্রশূন্য হয়ে পড়ে, বসন্তের আগমনে সেগুলোতে নতুন প্রাণ ফিরে আসে। চারদিকে ফুটতে শুরু করে কচি সবুজ পাতা। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশ, গুলমোহর ফুলে ফুলে লাল-হলুদ-কমলা রঙে রঙিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি। আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলগাছে মুকুল ধরতে শুরু করে, যা বসন্তের অন্যতম সৌন্দর্য। বসন্তকে ফুলের ঋতু বলা হয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে ওঠে, যা প্রকৃতিকে করে তোলে মনোমুগ্ধকর। লাল-কমলা রঙের আগুনের মতো পলাশ ফুল বসন্তের অন্যতম আকর্ষণ। বড় লাল ফুল বিশিষ্ট শিমুল গাছ বসন্তের রূপ বৈচিত্র্যে অনন্য। কৃষ্ণচুড়া গাছে আগুনের মতো উজ্জ্বল লাল ফুল ফোটে, যা পথ-প্রান্তরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।ররজনীগন্ধা ও বেলি ফুলের মৃদু সুগন্ধ বসন্তের রাতকে আরও মোহনীয় করে তোলে। শীতের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে বসন্তে পাখিরা যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। কোকিলের ডাকে চারপাশ মুখরিত হয়ে ওঠে। কোকিলের ডাক বসন্তের অন্যতম প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া দোয়েল, শ্যামা, টিয়া, ময়না, শালিক, ফিঙে, বাবুইসহ নানা পাখির কলতানে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সুরেলা। বসন্তের বাতাস থাকে হালকা ও মৃদু শীতল। এটি শরীরে এক অনন্য প্রশান্তি এনে দেয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের আগে বসন্তের আবহাওয়া থাকে মনোরম, neither too hot nor too cold। দিনের আলো হয় মিষ্টি উজ্জ্বল, আর রাতের চাঁদনী বসন্তের মোহময় পরিবেশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন নদী ও জলাশয় বসন্তে আরও উজ্জ্বল ও স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। শাপলা, পদ্মসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদও বসন্তে নতুন রূপ লাভ করে। নদীর পাড়ে গাছের সবুজ পাতার প্রতিচ্ছবি ও বাতাসের হালকা দোলায় পানির ঢেউ এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাংলার গ্রাম ও শহর বসন্তের আগমনে এক নতুন প্রাণ ফিরে পায়।

সরিষা ফুলের হলুদ মাঠ, ধানক্ষেতের কচি সবুজ চারাগাছ, তাল ও খেজুর গাছের কচি পাতা বসন্তের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে রাস্তাঘাট, পার্ক, ক্যাম্পাস, বাগান সাজানো হয় বিভিন্ন রঙিন ফুল দিয়ে। বসন্ত প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু। এটি শুধু গাছপালা ও ফুলের পরিবর্তন নয়, বরং পাখির গান, বাতাসের মিষ্টি পরশ, নদীর কূলের স্নিগ্ধতা— সব মিলিয়ে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। বসন্ত আমাদের শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগই দেয় না, বরং এটি আমাদের মনকেও আনন্দ ও সৃজনশীলতায় ভরিয়ে তোলে। বসন্ত ঋতুর আগমনে প্রকৃতির চেহারা বদলে যায়। শুষ্ক গাছগুলো নতুন পাতায় সজীব হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রকম ফুলের সমারোহে চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বসন্তে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষণীয়—শীতের কারণে ঝরে যাওয়া পাতা বসন্তের আগমনে নতুন কুঁড়ি ও সবুজ পত্রপল্লবে ভরে ওঠে। আম, কাঁঠাল, লিচু, কদম, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ— এসব গাছে নতুন পাতা ও ফুল ফুটতে শুরু করে। বসন্তের প্রধান আকর্ষণ ফুল। এই ঋতুতে পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, গুলঞ্চ, কেয়া, বেলি, রজনীগন্ধা ইত্যাদি ফুল ফুটে। ফুলের রঙ ও সুবাস প্রকৃতিকে মোহনীয় করে তোলে। বসন্ত মানেই কোকিলের মধুর গান। এ সময় শুধু কোকিল নয়, দোয়েল, শ্যামা, টিয়া, ময়না, ফিঙে, বাবুই, শালিকের কণ্ঠেও ভরে ওঠে প্রকৃতি।
বাতাসের মৃদুমন্দ পরশ: বসন্তের হালকা মৃদু বাতাস শরীরে এক অদ্ভুত প্রশান্তি এনে দেয়। এটি প্রকৃতিতে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।
বাংলাদেশে বসন্ত ফাল্গুন ও চৈত্র মাসজুড়ে স্থায়ী হয়। শীতের বিদায়ের পর বসন্তের উষ্ণতা অনুভূত হয়, তবে এটি তীব্র গরমের মতো নয়। আবহাওয়া থাকে মনোরম, neither too cold nor too hot। সূর্যের আলো হয় মিষ্টি উজ্জ্বল, বাতাস থাকে হালকা ও সতেজ। বসন্তের এই মনোরম পরিবেশ মানবমনেও এক স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ নিয়ে আসে। এ সময় প্রকৃতি যেমন নবজাগরণ লাভ করে, তেমনি মানুষের মনেও সৃষ্টিশীলতা ও নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়।

বাংলাদেশে বসন্ত শুধুমাত্র একটি ঋতুই নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বসন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠান রয়েছে—বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন বাংলাদেশে অত্যন্ত আনন্দঘনভাবে উদযাপিত হয়।
নারীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি আর গাঁদা ফুলের মালা পরে উৎসবে যোগ দেন। তরুণরা পাঞ্জাবি পরে, ফুল হাতে রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও অন্যান্য স্থানে ঘুরে বেড়ায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন এই দিনে গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটকের আয়োজন করে। আধুনিক সময়ে পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও পালিত হয়। ফলে বসন্তের আনন্দের সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার আবহও যুক্ত হয়। তরুণ-তরুণীরা এই দিনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষের প্রস্তুতি বসন্তের শেষ মাস চৈত্র। এটি বাংলা বছরের শেষ মাস। চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো হয় এবং নতুন বছরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ সময় গ্রামীণ মেলা, বিভিন্ন রকম হস্তশিল্প ও খাবারের আয়োজন হয়।
বসন্ত ঋতু বাংলা সাহিত্যে এক বিশাল প্রভাব ফেলেছে। কবি-সাহিত্যিকরা এই ঋতুর রূপ, রং, সুর ও সৌন্দর্যকে তাদের কাব্য, গান, উপন্যাস ও গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন। বসন্ত শুধু প্রকৃতির পরিবর্তন নয়, এটি মানুষের মনেও এক নতুন আবেগ, সৃজনশীলতা ও প্রেমের উদ্দীপনা জাগায়। তাই বাংলা সাহিত্যে বসন্তের উপস্থিতি এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তকে শুধু প্রকৃতির ঋতু হিসেবে দেখেননি, বরং এর সঙ্গে প্রেম, ভালোবাসা ও নবজাগরণের ভাবনা যুক্ত করেছেন। তার অসংখ্য কবিতা, গান ও গল্পে বসন্ত এসেছে এক অনন্য রূপে। তার বিখ্যাত গান “এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” বসন্তের শেষ লগ্নে গ্রীষ্মের আগমনকে উদযাপন করে। বসন্ত নিয়ে তার বিখ্যাত কবিতাগুলো হলো—
“বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে”
“ওরে গৃহবাসী, খুলে দে দ্বার, আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে”

রবীন্দ্রসংগীতে বসন্তের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার রচিত “ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়”, “ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে”, “আজি ঝর ঝর মুখর বায়” ইত্যাদি গান বসন্ত উৎসবের অংশ হয়ে গেছে।

কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় বসন্ত এসেছে এক উচ্ছ্বল, বর্ণিল ও বিপ্লবী রূপ নিয়ে। তার কবিতায় বসন্ত মানেই প্রাণচাঞ্চল্য, প্রেম, উচ্ছ্বাস ও বিদ্রোহের সমন্বয়।

তার বিখ্যাত কবিতা “আসছে বসন্ত, গাইবে ভুবন, ফাগুন লেগেছে বনে বনে”
বসন্তকে তিনি প্রেমের উন্মাদনা ও নতুন জীবনের বার্তা হিসেবে দেখেছেন—
“ফাগুনের আগুনে ঝর ঝর ঝরিছে পলাশ শিমুল”
“আজ বসন্ত জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে”
৩. জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বসন্ত

জীবনানন্দ দাশ বসন্তকে প্রকৃতির এক মায়াময় ও বিষণ্ন সৌন্দর্য হিসেবে দেখেছেন। তার কবিতায় বসন্ত শুধু রঙিন ফুলের নয়, বরং এক নৈঃশব্দ্যপূর্ণ, একাকীত্বময় অনুভূতিরও প্রতিচ্ছবি।

তার বিখ্যাত কবিতায় বসন্তের রূপ ধরা পড়ে—
“কিন্তু বসন্ত চলে যায়, কেবল প্রকৃতি থেকে যায়”।
“বনলতা সেন”-এ বসন্তের চিত্র ফুটে ওঠে, যেখানে কবি হারিয়ে যান প্রকৃতির মাঝে।
বাংলার লোকগান, পালাগান, বাউল গান ও ভাটিয়ালিতে বসন্তের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিশেষ করে— বসন্তের রঙ, প্রেম ও আধ্যাত্মিক ভাব ধরা পড়ে বাউল গানে।  গ্রামবাংলার বসন্ত উৎসবের আনন্দ ফুটে ওঠে এসব গানে। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে বসন্ত প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অনেক উপন্যাস ও গল্পে বসন্তকে ভালোবাসা, নতুন জীবনের সূচনা ও প্রকৃতির পুনর্জন্ম হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।

বসন্ত বাংলা সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি কবিদের অনুপ্রাণিত করেছে, প্রেমিকের মনে ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়েছে, আর প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যকে সাহিত্যে চিরন্তন করে তুলেছে। বসন্ত তাই কেবল ঋতু নয়, এটি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ। বসন্ত কেবল একটি ঋতুই নয়, এটি সমাজ ও অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করে ফুল, পোশাক, গয়না, খাবারের দোকানগুলোতে কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। পোশাকের বাজারে হলুদ ও বাসন্তী রঙের পোশাকের চাহিদা বেড়ে যায়। বসন্তকালে দেশের বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান, পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় বাড়ে। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজারের মতো স্থানগুলোতে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নাটক, গান, কবিতা পাঠের আয়োজন করে। এতে শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়। যদিও বসন্ত আনন্দের ঋতু, তবু কিছু চ্যালেঞ্জও দেখা দেয়। বসন্তে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা অনেকের শ্বাসকষ্টের কারণ হয়।
বসন্তকালে অনেক গাছের পরাগায়ন শুরু হয়, যা অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে। বসন্ত শেষে তীব্র গরমের সূচনা হয়, যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বসন্তের আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আগের মতো বসন্তের দীর্ঘস্থায়িত্ব এখন আর নেই।
বসন্ত প্রকৃতির নবজাগরণের ঋতু। এটি শুধু ফুল, পাখি ও বাতাসের পরিবর্তন নিয়ে আসে না, বরং মানুষের মনেও এক নতুন আশার আলো জ্বালায়। বসন্তের সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও আনন্দ আমাদের জীবনকে রঙিন করে তোলে। তাই, বসন্তের প্রকৃতি ও আবহ সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। বসন্ত হোক আনন্দের, সৃষ্টিশীলতার ও মানবতার উৎসব!

লেখক পরিচিতি : ‍উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।