খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩৭ অপরাহ্ণ
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

বৈষম্যহীন সমাজ গঠন একটি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। এটি কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন নয়; এটি ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, বৈষম্যের নানা রূপের সঙ্গে লড়াই করছে—যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য এবং শহর-গ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রম কেবল তথ্য সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যমও।

সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্যের উৎস চিহ্নিত করা, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং নীতি-নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। নিচে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশের সমাজে বৈষম্যের বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান। অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যসেবার অসমতা, এবং ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য—এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা যদি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেন, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের ফারাক প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি এই বৈষম্যের মূল কারণ এবং এর প্রভাব তুলে ধরে, তাহলে নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সুযোগের অপ্রতুলতা, বেতন বৈষম্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা—এসব ইস্যুতে সাংবাদিকরা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সাহায্য করবে। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য, সেখানে গ্রামীণ অঞ্চলে এর অভাব প্রকট। সাংবাদিকরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরে যদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

সাংবাদিকরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য জনগণের মধ্যে মানবাধিকার, সমতা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রচার করা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ  টকশো, ডকুমেন্টারি, ফিচার আর্টিকেল, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে। সাংবাদিকরা তাদের কাজ তুলে ধরে জনগণকে উৎসাহিত করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা, নীতিমালা, এবং প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তারা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণের প্রক্রিয়ার ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ সরকারি বাজেট বা প্রকল্পের বরাদ্দ যদি কোনো বিশেষ অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর পক্ষে থাকে, তবে সাংবাদিকরা এটি প্রকাশ করে সকলের মধ্যে ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে পারেন। বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্নীতি। সাংবাদিকরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প বা কর্মকর্তাদের উন্মোচন করেন, তাহলে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা বাড়বে। বাংলাদেশে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যেমন- হরিজন, আদিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তাদের সমস্যা, চাহিদা, এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। এই জনগোষ্ঠীগুলোর প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তা যদি সাংবাদিকরা তুলে ধরেন, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাংবাদিকরা বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনমত গঠন করতে পারেন। কর্মজীবী নারীদের অধিকার সংরক্ষণেও সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাংবাদিকদের কেবল সমস্যা প্রকাশ করলেই চলবে না; পাশাপাশি তারা নীতিগত সুপারিশ প্রদান করতে পারেন। যেমন- অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সাফল্যের গল্প তুলে ধরা, যাতে অন্যরা তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়।

বর্তমানে সাংবাদিকরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এবং পডকাস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়েছে।বৈষম্যের শিকার মানুষের গল্প যদি সাংবাদিকরা তথ্যপূর্ণ ও আবেগময় উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন, তবে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন বৈষম্যের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে সমস্যার গভীরতা বোঝানো যায়, যা নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে পারে।

সাংবাদিকদের কাজ শুধুমাত্র তথ্য প্রচার নয়; তাদের উচিত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের দুর্বল ও বৈষম্যের শিকার মানুষদের পক্ষে দাঁড়ানো। যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটকালীন সময়ে ত্রাণসামগ্রী বণ্টনে বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদন করা। ধর্ম, জাতি, বা গোষ্ঠীর কারণে বৈষম্যের শিকার মানুষদের কাহিনী তুলে ধরা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বৈষম্য মোকাবিলার সফল উদাহরণগুলো তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারে। অন্য দেশে কীভাবে বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে, তা তুলে ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের অনুপ্রাণিত করা। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বৈষম্যের নতুন দিক উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বৈষম্য এখনো প্রকট। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজলভ্য, গ্রামীণ এবং দরিদ্র অঞ্চলে শিক্ষার মান অত্যন্ত নিম্ন। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সরকারি স্কুলের মান ও বেসরকারি স্কুলের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি এই বৈষম্যের কারণগুলো প্রকাশ করেন এবং সমাধানের প্রস্তাব দেন, তবে তা নীতিনির্ধারকদের চাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এখনো মেয়েদের শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। সাংবাদিকরা এই ইস্যুতে সচেতনতা তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। বাংলাদেশের শ্রমজীবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেন। গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা প্রায়ই বেতন বৈষম্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। সাংবাদিকরা এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে তা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইকে ত্বরান্বিত করতে পারে। গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টিং বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের পদক্ষেপকে জোরদার করতে পারে।

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রকৃত গণতন্ত্র অপরিহার্য। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচার করে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারেন। নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি, ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা প্রায়ই কঠিন হয়। সাংবাদিকরা নির্ভীকভাবে সত্য কথা তুলে ধরে জনগণের কণ্ঠস্বর হতে পারেন।

বাংলাদেশে পরিবেশগত বৈষম্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে গ্রামীণ পরিবেশ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী দূষণ, বন উজাড়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে পারেন সাংবাদিকরা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। তাদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা তুলে ধরলে বৈষম্যের চিত্র পরিষ্কার হবে। শিল্প কারখানার কারণে নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সরকার ও জনগণ সচেতন হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা বৈষম্য সৃষ্টি করে। সাংবাদিকরা এই ধরনের ইস্যুতে নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারেন। সাংবাদিকরা যদি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগে কাজ করেন, তবে সমাজে সহিংসতার আশঙ্কা কমবে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সহিংসতার আসল কারণ বের করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আইন সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হলেও আইনি সহায়তা নিতে পারে না। সাংবাদিকরা আইন ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কীভাবে সহজে আইনি সহায়তা নিতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে হলে সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সাংবাদিকদের উচিত নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করা। সংবাদ পরিবেশনের সময় নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য সফল হয়।

বাংলাদেশে বৈষম্য দূরীকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা সীমাহীন। তারা সমাজের অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নির্ভীক কণ্ঠস্বর। সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্য চিহ্নিত করা, জনগণকে সচেতন করা এবং নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব। তবে এটি করতে হলে সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যভিত্তিক, নৈতিক এবং মানবিক হতে হবে। এভাবে সাংবাদিকরা বৈষম্যহীন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক একটি বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিরপেক্ষ, নৈতিক এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে, বৈষম্যের মূল কারণ চিহ্নিত করে, এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় সাংবাদিকদের অবদান বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথকে সুগম করে। একজন দক্ষ সাংবাদিকের কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব, যা একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।