খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৩৭ অপরাহ্ণ
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা

বৈষম্যহীন সমাজ গঠন একটি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। এটি কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন নয়; এটি ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। বাংলাদেশ, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে, বৈষম্যের নানা রূপের সঙ্গে লড়াই করছে—যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য এবং শহর-গ্রামের উন্নয়ন বৈষম্য। এই প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রম কেবল তথ্য সরবরাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সমাজ পরিবর্তনের জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যমও।

সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্যের উৎস চিহ্নিত করা, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং নীতি-নির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। নিচে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:

বাংলাদেশের সমাজে বৈষম্যের বিভিন্ন রূপ বিদ্যমান। অর্থনৈতিক বৈষম্য, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার অপ্রতুলতা, স্বাস্থ্যসেবার অসমতা, এবং ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্য—এসব বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা যদি তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন করেন, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ ধনী-গরিবের মধ্যে সম্পদের ফারাক প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যদি এই বৈষম্যের মূল কারণ এবং এর প্রভাব তুলে ধরে, তাহলে নীতিনির্ধারকরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সুযোগের অপ্রতুলতা, বেতন বৈষম্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা—এসব ইস্যুতে সাংবাদিকরা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে সাহায্য করবে। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য, সেখানে গ্রামীণ অঞ্চলে এর অভাব প্রকট। সাংবাদিকরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরে যদি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।

সাংবাদিকরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য জনগণের মধ্যে মানবাধিকার, সমতা এবং সাম্যবাদের ধারণা প্রচার করা অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ  টকশো, ডকুমেন্টারি, ফিচার আর্টিকেল, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সাংবাদিকরা সাধারণ মানুষের মধ্যে বৈষম্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে। সাংবাদিকরা তাদের কাজ তুলে ধরে জনগণকে উৎসাহিত করতে পারেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা, নীতিমালা, এবং প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। তারা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে বৈষম্য দূরীকরণের প্রক্রিয়ার ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ সরকারি বাজেট বা প্রকল্পের বরাদ্দ যদি কোনো বিশেষ অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর পক্ষে থাকে, তবে সাংবাদিকরা এটি প্রকাশ করে সকলের মধ্যে ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে পারেন। বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দুর্নীতি। সাংবাদিকরা যদি এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প বা কর্মকর্তাদের উন্মোচন করেন, তাহলে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা বাড়বে। বাংলাদেশে অনেক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে, যেমন- হরিজন, আদিবাসী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, এবং সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তাদের সমস্যা, চাহিদা, এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। এই জনগোষ্ঠীগুলোর প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তা যদি সাংবাদিকরা তুলে ধরেন, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সাংবাদিকরা বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জনমত গঠন করতে পারেন। কর্মজীবী নারীদের অধিকার সংরক্ষণেও সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাংবাদিকদের কেবল সমস্যা প্রকাশ করলেই চলবে না; পাশাপাশি তারা নীতিগত সুপারিশ প্রদান করতে পারেন। যেমন- অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সাফল্যের গল্প তুলে ধরা, যাতে অন্যরা তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়।

বর্তমানে সাংবাদিকরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বৈষম্যবিরোধী প্রচারণা চালাতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, এবং পডকাস্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়েছে।বৈষম্যের শিকার মানুষের গল্প যদি সাংবাদিকরা তথ্যপূর্ণ ও আবেগময় উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন, তবে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে সমাজে প্রভাব ফেলতে পারে। বিভিন্ন বৈষম্যের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে সমস্যার গভীরতা বোঝানো যায়, যা নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করতে পারে।

সাংবাদিকদের কাজ শুধুমাত্র তথ্য প্রচার নয়; তাদের উচিত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের দুর্বল ও বৈষম্যের শিকার মানুষদের পক্ষে দাঁড়ানো। যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকটকালীন সময়ে ত্রাণসামগ্রী বণ্টনে বৈষম্য নিয়ে প্রতিবেদন করা। ধর্ম, জাতি, বা গোষ্ঠীর কারণে বৈষম্যের শিকার মানুষদের কাহিনী তুলে ধরা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাংবাদিকরা বৈষম্য মোকাবিলার সফল উদাহরণগুলো তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারে। অন্য দেশে কীভাবে বৈষম্য দূর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে, তা তুলে ধরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের অনুপ্রাণিত করা। রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের মতো আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বৈষম্যের নতুন দিক উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে বৈষম্য এখনো প্রকট। শহরাঞ্চলে যেখানে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সহজলভ্য, গ্রামীণ এবং দরিদ্র অঞ্চলে শিক্ষার মান অত্যন্ত নিম্ন। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সরকারি স্কুলের মান ও বেসরকারি স্কুলের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। সাংবাদিকরা যদি এই বৈষম্যের কারণগুলো প্রকাশ করেন এবং সমাধানের প্রস্তাব দেন, তবে তা নীতিনির্ধারকদের চাপ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এখনো মেয়েদের শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। সাংবাদিকরা এই ইস্যুতে সচেতনতা তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন। বাংলাদেশের শ্রমজীবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী নানা বৈষম্যের শিকার। তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। সাংবাদিকরা তাদের সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেন। গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা প্রায়ই বেতন বৈষম্য ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। সাংবাদিকরা এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে তা শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার লড়াইকে ত্বরান্বিত করতে পারে। গ্রামীণ ও শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টিং বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের পদক্ষেপকে জোরদার করতে পারে।

বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে প্রকৃত গণতন্ত্র অপরিহার্য। সাংবাদিকরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রচার করে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করতে পারেন। নির্বাচনী অনিয়ম, দুর্নীতি, ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা প্রায়ই কঠিন হয়। সাংবাদিকরা নির্ভীকভাবে সত্য কথা তুলে ধরে জনগণের কণ্ঠস্বর হতে পারেন।

বাংলাদেশে পরিবেশগত বৈষম্যও গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে গ্রামীণ পরিবেশ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী দূষণ, বন উজাড়, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে পারেন সাংবাদিকরা। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। তাদের জীবনযাত্রার বাস্তবতা তুলে ধরলে বৈষম্যের চিত্র পরিষ্কার হবে। শিল্প কারখানার কারণে নদী দূষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করলে সরকার ও জনগণ সচেতন হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা বৈষম্য সৃষ্টি করে। সাংবাদিকরা এই ধরনের ইস্যুতে নিরপেক্ষ ও সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারেন। সাংবাদিকরা যদি বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগে কাজ করেন, তবে সমাজে সহিংসতার আশঙ্কা কমবে। সাংবাদিকরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে সহিংসতার আসল কারণ বের করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারেন। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আইন সম্পর্কে সচেতন নয়। ফলে তারা বৈষম্যের শিকার হলেও আইনি সহায়তা নিতে পারে না। সাংবাদিকরা আইন ও অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারেন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কীভাবে সহজে আইনি সহায়তা নিতে পারে, তা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা।

বৈষম্য নিয়ে কাজ করতে হলে সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সাংবাদিকদের উচিত নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করা। সংবাদ পরিবেশনের সময় নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য সফল হয়।

বাংলাদেশে বৈষম্য দূরীকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা সীমাহীন। তারা সমাজের অসাম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নির্ভীক কণ্ঠস্বর। সাংবাদিকতার মাধ্যমে বৈষম্য চিহ্নিত করা, জনগণকে সচেতন করা এবং নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব। তবে এটি করতে হলে সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্যভিত্তিক, নৈতিক এবং মানবিক হতে হবে। এভাবে সাংবাদিকরা বৈষম্যহীন, সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক একটি বাংলাদেশ গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, যেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের নিরপেক্ষ, নৈতিক এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে, বৈষম্যের মূল কারণ চিহ্নিত করে, এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষায় সাংবাদিকদের অবদান বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথকে সুগম করে। একজন দক্ষ সাংবাদিকের কাজের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব, যা একটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

লেখক পরিচিতি: উজ্জ্বল হোসাইন, লেখক ও সাংবাদিক, চাঁদপুর।

জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ণ
জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্র প্যানেলের জিতু, জিএস ছাত্রশিবিরের মাজহারুল

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। এজিএস (পুরুষ) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (নারী) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

ভিপি পদে আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট, জিএস পদে মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট, এজিএস (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং এজিএস (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যান্য পদে জয়ীরা হলেন- পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক তানভীর রহমান, খাদ্যনিরাপত্তা সম্পাদক হুসনি মোবারক, সহ-সমাজসেবা সম্পাদক তৌহিদ হাসান, সমাজসেবা সম্পাদক আহসান লাবিব, তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) মাহাদী হাসান, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) ফারহানা আকতার, সহ-সমাজসেবা সম্পাদক (নারী) নিগার সুলতানা, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান উদ্দীন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মহিবুল্লাহ শেখ, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে জয়ী তিনজন হলেন- নুসরাত জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন ও ফাবলিহা জাহান।
কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে জয়ীরা হলেন- মোহাম্মদ আলী চিশতী, আবু তালহা ও তরিকুল ইসলাম।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু ৩৩৩৪ ভোট পেয়ে ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২৩৯২ ভোট। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল পেয়েছেন ১২১১ ভোট। আর ছাত্রদলের মো. শেখ সাদি হাসান পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম ৩৯৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম পেয়েছেন ১২৩৮ ভোট। ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম, সদস্য লুৎফুল এলাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, আব্দুর রশিদ জিতু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আন্দোলনের সময় সর্বপ্রথম ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন পরিচালনা করেন তিনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করে ‘গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফর্মের সূচনা করেন এবং এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।
ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ শেষে হল কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যালট বাক্স সিনেট ভবনে আনা হয় এবং ওইদিন রাত ১০টার কিছু পর থেকে ভোট গণনা শুরু হয়। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ৫ হাজার ৭২৮ জন এবং ছাত্র ভোটার ছিলেন ৬ হাজার ১৫ জন। ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।

সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে : উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ণ
সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে : উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত

নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘোষিত সময় অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। এত প্রাণের বিনিময়ে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার মধ্য দিয়ে গঠিত গণতান্ত্রিক সরকার হবে জবাবদিহিমূলক। এটি আর অতীতের সরকারের মতো হবে না।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বরিশালে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনে এসে দুপুরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ডাকসু নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় নয়। অনেকেই বলেছিল, এই নির্বাচন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অক্ষুণ্ন  রেখেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো দেখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা যতদিন থাকছি, ততদিন সম্ভবপর নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। তবে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।
এ সময় উপদেষ্টা বরিশালের নদীবন্দর, জেলখাল, পোর্ট রোড ও স্টিমার ঘাট পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বরিশালে বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) খেলা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে নৌরুটে প্যাডেলচালিত জাহাজ চলাচল শুরু হবে।
পরিদর্শনকালে বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার, জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।