খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

নারী ও পুরুষ : একে অপরের শক্তি ও সহযোগী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:৩৭ অপরাহ্ণ
নারী ও পুরুষ : একে অপরের শক্তি ও সহযোগী

নারী ও পুরুষের সম্পর্ক মানব সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সূক্ষ্ম দিক। তারা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য বজায় রাখে। সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এই সম্পর্ক গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, নারী ও পুরুষ দুটি ভিন্ন লিঙ্গ হলেও তারা একে অপরের সাথে জীবনের মূল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত। প্রজনন ব্যবস্থায় তাদের ভূমিকা ভিন্ন হলেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশুর জন্মের জন্য যেমন পুরুষের শুক্রাণু প্রয়োজন, তেমনই নারীর ডিম্বাণু ও গর্ভাধারণের ভূমিকা অপরিহার্য। এভাবে তারা একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, যা মানবজাতির টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।

নারী-পুরুষের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও এই বৈচিত্র্য তাদের সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। পুরুষের শক্তি ও ধৈর্য সাধারণত শারীরিক কাজে কার্যকর, যেখানে নারীর সহানুভূতি ও পরিচর্যা সম্পর্কিত গুণাবলী পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

নারী ও পুরুষ একসঙ্গে সমাজ গঠন করেছে। প্রাচীন যুগে পুরুষ প্রধানত শিকার ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত, আর নারী পরিবারের যত্ন ও খাবার সংগ্রহে মনোনিবেশ করত। যদিও আধুনিক যুগে এই ভূমিকার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, তবুও এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এখনও আমাদের আচরণ ও সামাজিক কাঠামোয় প্রভাব ফেলে। নারী ও পুরুষ উভয়েই সমাজে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে থাকে। একজন পুরুষ যেমন পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিতে পারে, তেমনি একজন নারীও কর্মজীবনে অংশগ্রহণ করতে পারে। বর্তমান সমাজে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, কারণ এটি শুধু তাদের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে না, বরং সমাজকে আরও উন্নত করে।

বিভিন্ন ধর্মে নারী ও পুরুষকে স্রষ্টার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে নারী ও পুরুষ একে অপরের “লিবাস” (পোশাক) হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, যা পরস্পরের পূর্ণতা ও নিরাপত্তার প্রতীক। হিন্দুধর্মে স্ত্রী ও পুরুষকে “অর্ধনারীশ্বর” (শিব ও পার্বতীর মিলিত রূপ) বলে চিত্রিত করা হয়েছে, যা তাদের সমান গুরুত্ব বোঝায়। খ্রিস্টান ধর্মে ঈশ্বর আদম ও হাওয়াকে একে অপরের সহচর হিসেবে সৃষ্টি করেছেন বলে বলা হয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক কেবল শারীরিক বা মানসিক নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক সংযোগ। একে অপরের সহায়তা ছাড়া তাদের পূর্ণতা লাভ সম্ভব নয়। আধুনিক সমাজে নারী ও পুরুষের ভূমিকা আরও বৈচিত্র্যময় হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, এবং পুরুষও ঘরোয়া কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এই পরিবর্তন সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তি তৈরি করছে। তবে, এই পরিবর্তনের ফলে নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে। যেমন, অনেক ক্ষেত্রে কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও, নারী ও পুরুষের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে সহায়তা করে। নারী ও পুরুষের মধ্যে মানসিক সংযোগ তাদের সম্পর্কের ভিত্তি। এটি কেবল ভালোবাসা বা রোমান্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তাদের মধ্যে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহযোগিতা সম্পর্ককে মজবুত করে। একটি পরিবার গঠন করার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা অপরিসীম। পুরুষের নেতৃত্ব ও সুরক্ষা এবং নারীর পরিচর্যা ও মানসিক সমর্থন একটি সুস্থ ও সুষ্ঠু পরিবারের জন্য অপরিহার্য।

নারী ও পুরুষের সম্পর্ক যত গভীরই হোক, তাতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, সামাজিক সংস্কার, লিঙ্গবৈষম্য, এবং সমান সুযোগের অভাব। অনেক সমাজে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বা সামাজিক স্বীকৃতিতে নারী পিছিয়ে থাকতে পারে। অনেক সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও সংস্কার নারী ও পুরুষের সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। অনেক সময় নারী ও পুরুষের মধ্যে সঠিক যোগাযোগের অভাব সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করে।

নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা, সচেতনতা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। সমাজে লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠার জন্য নারীর ক্ষমতায়ন ও পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। নারী ও পুরুষ যদি একে অপরকে সমান সম্মান দেয় এবং সহযোগিতার মনোভাব বজায় রাখে, তবে সমাজ আরও প্রগতিশীল ও শক্তিশালী হবে। নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তাদের সম্পর্ক কেবল শারীরিক বা মানসিক নয়, বরং তা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কের মাধ্যমে মানবজাতি একদিকে যেমন টিকে আছে, তেমনি সমাজ, সংস্কৃতি, এবং সভ্যতার অগ্রগতিও নিশ্চিত হচ্ছে। তাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমেই একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

পুরুষের শারীরিক চাহিদা পূরণ হলেই তার মানসিক শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একজন নারী মানসিক শান্তি পেলে তবেই শারীরিক চাহিদার কথা ভাবে। নারী ও পুরুষের চাহিদার এই ভিন্নতার কারণেই তাদের সম্পর্ক আরও জটিল এবং গভীর। পুরুষের সমস্ত ডিপ্রেশন এবং ক্লান্তি দূর হয় সঙ্গীর সাথে শারীরিক সংযোগে। যদি আপনি আপনার পুরুষ সঙ্গীকে খুশি করতে চান, তবে তার সাথে অবশ্যই শারীরিক Attachment থাকা প্রয়োজন, এবং তা মন থেকে হতে হবে। নারীরা, বিপরীতে, মানসিক Attachment-এ বেশি গুরুত্ব দেয়। যদি তার মন ভালো থাকে, তাহলে সে স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক সংযোগে আগ্রহী হয়। কিন্তু যদি তার মানসিক অবস্থা ভালো না থাকে, তাহলে সে কোনো কিছুতেই সাড়া দেয় না। নারীর মনই তার আসল শক্তি। একজন নারী চাইলে একজন পুরুষের জীবনকে নতুন করে সাজাতে পারে। আবার সেই নারী চাইলে একজন পুরুষের জীবনকে পুরোপুরি নষ্টও করে দিতে পারে। একজন নারী চাইলেই একজন পুরুষকে সম্মানের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। আবার চাইলে তাকে অসম্মানের তলানিতে নামিয়ে আনতে পারে।

নারী চাইলে একজন পুরুষকে আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে। আবার চাইলে তাকে নিঃস্ব করে দিতে পারে।
নারী চাইলে একটি সুন্দর পরিবার এবং সুখী সংসার গড়ে তুলতে পারে। আবার চাইলে সেই সংসারকে ধ্বংস করে দিতে পারে। নারী একজন পুরুষকে পরিবার, সমাজ, এবং নিজের প্রতি আবদ্ধ রাখতে পারে। আবার চাইলে সে পুরুষকে একা করে, পরিবারহীন করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে।
নারী তার শিক্ষা, শক্তি, মায়া, ভালোবাসা এবং মমতার মাধ্যমে পুরো পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
নারী চাইলে একজন পুরুষকে শত খারাপ অভ্যাস থেকে মুক্ত করে ভালো মানুষে পরিণত করতে পারে। আবার ভালো মানুষকে নষ্ট করতেও সক্ষম। নারী, তোমার প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস। তুমি তোমার সৌন্দর্য, শিক্ষা, এবং ভালোবাসার শক্তি দিয়ে তোমার সংসার, পরিবার এবং সমাজকে সুন্দর করে তুলবে।

তোমার প্রেম হোক তোমার সংসার,
তোমার ভালোবাসা হোক তোমার স্বামী,
আর তোমার মায়ার বাঁধন হোক তোমার সন্তান।

নারী, তুমি চাইলেই অনেক কিছু করতে পারো। তুমি পারো, পুরো পৃথিবী বদলে দিতে। জীবনের পরিপূরক দুই অঙ্গ। নারী ও পুরুষ মানবজীবনের দুটি অপরিহার্য উপাদান। এদের মধ্যে সম্পর্ক শুধু শারীরিক বা মানসিক নয়, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তারা একে অপরকে পরিপূরক হিসেবে সহযোগিতা করে মানবসভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছে। নারী ও পুরুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তারা প্রজনন প্রক্রিয়ায় সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরুষের শক্তি ও উদ্যম এবং নারীর পরিচর্যা ও সহানুভূতি মানবজাতির টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।

প্রাচীনকাল থেকে সমাজে নারী ও পুরুষ ভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে। পুরুষ প্রধানত বাহ্যিক কাজ এবং নিরাপত্তা প্রদান করত, আর নারী পরিবার ও সমাজের অন্তর্গত কাজগুলোর ভার বহন করত। আধুনিক যুগে এই দায়িত্ব পালনের ধরন পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নারীরা কর্মক্ষেত্রে পুরুষের সমান অবদান রাখছে, আর পুরুষরা পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছে।

প্রত্যেক ধর্ম নারী ও পুরুষের সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, নারী ও পুরুষ একে অপরের পোশাকস্বরূপ, যা তাদের পারস্পরিক সুরক্ষা ও সম্মানের প্রতীক। অন্যদিকে, হিন্দু ধর্মে স্ত্রী ও পুরুষকে “অর্ধনারীশ্বর” রূপে চিত্রিত করা হয়েছে, যা তাদের সমানতা ও একতার প্রতীক। সমাজে এখনও নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা অর্জন একটি চ্যালেঞ্জ। লিঙ্গবৈষম্য, কর্মক্ষেত্রে নারীর সুযোগের অভাব, এবং সামাজিক কুসংস্কার এই সমতা প্রতিষ্ঠায় বাধা সৃষ্টি করে। তবে শিক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। নারী ও পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। তাদের সম্পর্কের মধ্যে সমতা, সম্মান, এবং সহযোগিতা থাকলে একটি সমাজ উন্নত ও স্থিতিশীল হয়। তাই তাদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে মানবজীবনের সব দিককে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।

ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ঈদে নতুন জামা : স্বপ্ন আর ভালোবাসা জড়ানো

ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব, মিলন এবং নতুন করে বাঁচার প্রেরণা। এই দিনে সবাই চায় নিজেকে সাজিয়ে নিতে, নতুন কাপড় পরে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। কিন্তু এমন অনেকের মধ্যেও থাকে এমন কেউ, যার জন্য একটি নতুন জামা শুধু পোশাক নয়, বরং স্বপ্ন, গর্ব, আত্মমর্যাদা এবং একটি আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই প্রবন্ধে আমরা এমন এক নতুন জামার কথা বলব, যে জামার শুধু দামী কাপড় বা ডিজাইনের গর্ব নেই, বরং রয়েছে আত্মার গভীরে জমে থাকা এক মানুষের স্বপ্নের গল্প।

শহরের এক কোণায় বাস করে ছোট্ট ছেলেটি রিয়াদ। বয়স প্রায় দশ। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোভাবে দিন কাটে তাদের। বছরের প্রতিটি দিন কাটে সংগ্রামের মাঝে, কিন্তু ঈদ আসে স্বপ্নের আলো নিয়ে। ঈদে নতুন জামা পাবে, এই আশায় রিয়াদ এক মাস রোজা রাখে, নিজের মনকে শক্ত করে।

তবে এই জামা আসবে কি না, তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ, বাবার মুখে ভাঁজ আর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। মা বারবার বলেন, “এবার হয়তো পুরনো জামাতেই ঈদ করতে হবে।” কিন্তু রিয়াদ বিশ্বাস করে—আল্লাহ যদি রোজা কবুল করেন, তাহলে একটা নতুন জামা হয়তো আসবেই।

এই জামার অপেক্ষা শুধু রিয়াদের নয়, এটি যেন তার মন-প্রাণের আকুতি। এই জামা তার জন্য স্বপ্নপূরণ, আত্মমর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্বের অনুভব।

আমরা অনেক সময় বুঝি না, একটি নতুন জামা একজন শিশুর জন্য কতটা অর্থবহ হতে পারে। ধনী পরিবারের শিশুর কাছে এটি হয়তো একটি চমকপ্রদ পোশাক, কিন্তু রিয়াদের কাছে এটি স্বপ্ন পূরণের মতো। সে ভাবে, ঈদের দিন সবার মতো তাকেও যদি নতুন জামায় দেখা যায়, তাহলে সে আর অবহেলিত হবে না, তার বন্ধুরা তাকে হাসবে না। তারও মুখে হাসি ফুটবে, তারও ছবি উঠবে মোবাইল ক্যামেরায়।

এই জামা তার আত্মবিশ্বাস, যেটা সে স্কুলে পড়ার সময় খুঁজে বেড়ায়, যখন ক্লাসের অন্য ছেলেরা নতুন জামা পরে আসে আর সে পড়ে থাকে একঘেয়ে মলিন কাপড়।

এখানে জামার একটি কল্পিত স্বর ও ভাষা কল্পনা করা যাক—যেখানে জামাটি যেন নিজের মনে নিজের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করছে: “আমি কোনো বিলাসী দোকানের শেলফে ঝুলে থাকা দামি জামা নই। আমি সেই জামা, যাকে এক দরিদ্র বাবার কষ্টের টাকায় কিনে আনা হবে তার ছেলের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে।
আমি হয়তো রঙিন নই, হয়তো আমার ডিজাইনে জাঁকজমক নেই, কিন্তু আমি গর্বিত। কারণ আমি হব একটি শিশুর ঈদের স্বপ্ন পূরণের বাহক। আমি হব আত্মমর্যাদার প্রতীক, আমি হব ঈদের প্রাপ্তির প্রতিচ্ছবি।”

এই ভাবনার মধ্যেই ফুটে ওঠে জামার স্বপ্ন—সে চায়, তাকে কেউ ভালোবাসুক, পরিধান করুক, আর আনন্দ পাক।

রিয়াদের মা হয়তো নিজের জন্য কোনো কাপড় কিনবেন না, বাবা হয়তো একজোড়া চপ্পল না কিনে সেই টাকায় ছেলের জামা কিনে দেবেন। কারণ, সন্তানের হাসির চেয়ে বড় কিছু তাদের কাছে নেই। একটি নতুন জামার পেছনে লুকিয়ে থাকে একটি পরিবারের নীরব ত্যাগ, ভালোবাসা আর গোপন কান্না।

ঈদের নতুন জামা এই পরিবারগুলোর কাছে শুধু পোশাক নয়—এটা এক সম্মান, ভালোবাসা এবং আত্মতৃপ্তির চিহ্ন। অনেক সময় বাবা-মায়েরা নিজেদের প্রয়োজন বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মুখে হাসি দেখতে চান। নতুন জামা যেন সেই আত্মত্যাগের স্বাক্ষর হয়ে উঠে।

ঈদের দিন আমরা যখন দেখি কেউ চকচকে কাপড় পরে বেরিয়েছে, আর কেউ পুরনো জামা পরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তখন সামাজিক বৈষম্যের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নতুন জামার গুরুত্ব সেখানে দ্বিগুণ। এটি একধরনের সামাজিক মর্যাদা।

রিয়াদ হয়তো তার বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ভাবে—আমারও যদি এমন একটা জামা থাকত! শুধু ঈদের দিনটা নয়, পুরো জীবনজুড়ে সেই হাহাকার থেকে যায়। এই এক টুকরো জামাই তার স্বপ্নকে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে, আর না থাকলে আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে।

দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদে জামার প্রাপ্তি মানে কী? সমান মর্যাদা – অন্যদের মতো তাকেও দেখা হয় একজন ‘পূর্ণ’ শিশুর মতো।  আত্মবিশ্বাস – নতুন জামা পরে সে খুশি মনে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। পরিবারের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি – সে উপলব্ধি করে, তার মা-বাবা তাকে কত ভালোবাসে।

৪. ভবিষ্যতের স্বপ্ন – একজন শিশু জানে, সে যদি চেষ্টার মধ্যে থাকে, তার স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই।

ঈদের সকালে রিয়াদের ঘুম ভাঙে ভোরবেলা। মা হাসিমুখে এসে বলে—
“এই দেখ, তোমার নতুন জামা।”
রিয়াদ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে না। হাত বাড়িয়ে জামাটা নেয়, চোখে জল চলে আসে। “আমার?”
মা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, “হ্যাঁ বাবা, তোমার।”
রিয়াদ তার ছোট জামাটিকে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে, যেন এটিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

সেই জামা তখন আর শুধু সুতা ও রঙের মিশ্রণ নয়, সেটি তখন একটি ‘স্বপ্ন’। একটি সন্তুষ্টির প্রতীক, একটি ছোট শিশুর গর্বের নিশান।

আমরা যারা সমাজের ভাগ্যবান অংশ, তাদের উচিত এই বৈষম্য দূর করতে সচেষ্ট হওয়া। প্রতিবছর ঈদের আগে আমরা অনেকেই প্রচুর জামা কিনি, কিন্তু ভাবি না পাশের দরিদ্র শিশুটার কথা। যদি আমরা একটি নতুন জামা কাউকে দিতে পারি, তাহলে তার ঈদটা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সেরা দিন।সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার—সবাই যদি চায়, তাহলে প্রত্যেক শিশুর ঈদে একটি নতুন জামা নিশ্চিত করা সম্ভব। এটি দান নয়, এটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতা।

“ঈদে একটি নতুন জামা যার স্বপ্ন” এই বাক্যটি শুধুমাত্র কোনো এক জামা বা একটি শিশুর গল্প নয়, এটি হাজারো রিয়াদের গল্প। এটি আমাদের সমাজে লুকিয়ে থাকা অসংখ্য মানুষের জীবনবোধের চিত্র। একটি নতুন জামা কেবল দেহ ঢাকার উপকরণ নয়, এটি মানুষের সম্মান, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতীক। আমরা যদি এই একটুকরো জামার ভেতর মানুষের আবেগ, স্বপ্ন ও আত্মত্যাগ দেখতে পারি, তাহলে সমাজে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। আসুন, এই ঈদে আমরা কেবল নিজেদের জন্য না, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও একটি নতুন জামার স্বপ্ন বুনি।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি ইকবাল আজম সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দাস

চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নের নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভা (১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ২০২৫) নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি (২০২৫-২০২৮) ঘোষণা করা হয়েছে। সমবায় সমিতি আইন ২০০১ (সর্বশেষ সংশোধন ২০১৩) ও সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪ (সর্বশেষ সংশোধন ২০২০) অনুযায়ী নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন (পরিদর্শক, জেলা সমবায় কার্যালয়, চাঁদপুর) কোন পদে একাধিক প্রার্থী না থাকায়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেন। নবনির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি- মোঃ ইকবাল আজম (প্রতিনিধি, দি চাঁদপুর মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সহ-সভাপতি- মোঃ আফজাল হোসেন খান (প্রতিনিধি, মিলেনিয়াম বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সম্পাদক- দুলাল চন্দ্র দাস (প্রতিনিধি, বাগড়া শিক্ষিত বেকার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- মোঃ আক্কাস ফরাজী (প্রতিনিধি, রূপসী পল্লী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ), সদস্য- খন্দকার ফখরুল আলম (প্রতিনিধি, আশার আলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ), সদস্য- মোঃ খোরশেদ আলম (প্রতিনিধি, খাজুরিয়া বাজার সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ)।
জেলার বিভিন্ন সমবায় সমিতির প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ও নির্বাচন কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের কৃতি সন্তান, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সমবায়ী ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন জেলা সমবায় ইউনিয়ন, জেলার সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করার দায়িত্ব থাকলেও চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নে দীর্ঘদিন নির্বাচিত কমিটি ছিল না, যার কারণে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন থেকে চাঁদপুর জেলা সমবায় ইউনিয়নকে কার্যকর করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমবায় বিভাগ এতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন করে, যার ফলশ্রুতিতে আজকে আমরা একটি নির্বাচিত ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে পেরেছি। এজন্য তিনি সমবায় বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান পাশাপাশি নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানান। সভায় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা সকলের সামনে উপস্থাপন করেন। সকলের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়নের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যন্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সভাপতি মুরাদ হোসেন খান, জুন হাউজিং কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ এর প্রতিনিধি এ ওয়াই এম জাকারিয়া, ওয়ারলেস বাজার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ জিয়াউদ্দিন, ইসলামীয়া সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ এর প্রতিনিধি নাজমুল হুদা প্রমূখ।
উল্লেখ্য প্রতি ৩ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও ২০১২ সালের পর, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হলো।

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আগামী ২ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

সম্প্রতি কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও বাজেট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সংসদ না থাকায় এবার সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে না। অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনে নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ কারণে ২ জুন বাজেট ঘোষণার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণত আগের অর্থবছরগুলোতে বৃহস্পতিবার বাজেট দেওয়া হতো, এবার সোমবার ঘোষণা করা হবে। বাজেট ঘোষণার পর আগের রীতি অনুযায়ী অর্থ উপদেষ্টা বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় বড় রাখা হয়। তবে এবার বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বাজেট ছোট কারার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকীকরণ সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ ধরতে পারে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।