খুঁজুন
                               
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১২ কার্তিক, ১৪৩২

সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৪৭ অপরাহ্ণ
সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। এর ভূমিকা নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ পরিবেশন করা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। গণমাধ্যম কি শুধু খবর পৌঁছে দিচ্ছে, নাকি নিজের বয়ান তৈরি করছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে আমাদের গণমাধ্যমের ঝোঁক, তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং এর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।

গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব হলো জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু দিন দিন আমরা লক্ষ্য করছি, সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতার অভাব এবং পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সংবাদ আর তথ্য নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট মতবাদ বা বয়ানের রূপ নিচ্ছে।
এর পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করে, গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ এখন ব্যবসায়িক মডেলের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপনদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকদের চাপে তারা এমন খবর পরিবেশন করে যা জনমত প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে, সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো গল্প বা বয়ান তৈরি করছে যা তাদের আর্থিক স্বার্থে সহায়ক। গণমাধ্যমের একটি অংশ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বা মতবাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। তারা একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সংবাদ পরিবেশন করে, যেখানে তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হয় এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিযোগিতার কারণে অনেক গণমাধ্যম “সংবাদের” পরিবর্তে “সেনসেশন” পরিবেশনে ঝুঁকছে। টিআরপি বাড়ানোর জন্য নাটকীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ খবর পরিবেশনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে সত্য ঘটনা আড়ালে থেকে যায়।

সংবাদ হলো নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন। এটি কোনো মতামত বা অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে নয়। বয়ান, অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা উপস্থাপন করে। তবে গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ান হিসেবে রূপান্তরিত করে, তখন এটি একটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ-একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির খবর যখন নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয়, তখন এটি সংবাদ। কিন্তু সেই খবর যখন একটি দলের সাফল্যের গল্প হিসেবে উপস্থাপিত হয়, তখন তা বয়ানে রূপান্তরিত হয়।

তেমনই, একটি সামাজিক ইস্যুকে অযথা সেনসেশন তৈরি করে পরিবেশন করাও বয়ানের আরেকটি উদাহরণ । গণমাধ্যমের এই ঝোঁক সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এর ফলে: পক্ষপাতদুষ্ট বয়ান সমাজকে বিভক্ত করে। মানুষ নিরপেক্ষ খবর পাওয়ার পরিবর্তে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।গণমাধ্যম যদি বয়ান তৈরিতে মনোযোগ দেয়, তাহলে তথ্যের বিকৃতি ঘটতে পারে। এর ফলে ভ্রান্ত তথ্যের প্রসার ঘটে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়। যখন জনগণ গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে পায় না, তখন এটি তার প্রভাব হারায়।

গণমাধ্যমের ভূমিকা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। কিন্তু যখন এটি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে পক্ষপাতিত্ব করে, তখন এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যমের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ থেকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক চাপ এড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। সেনসেশনাল খবরের পরিবর্তে গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।জনগণকে সচেতন হতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য বুঝতে এবং সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে দক্ষ হতে হবে।

গণমাধ্যমকে স্বচ্ছ হতে হবে। তাদের উৎস, গবেষণার প্রক্রিয়া এবং খবর প্রকাশের কারণগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।সামাজিক মাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্যের বিস্তার রোধে গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করতে হবে।

গণমাধ্যম মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। সংবাদ পরিবেশন করার মাধ্যমে এটি শুধু তথ্য সরবরাহ করে না, বরং জনমত তৈরিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে, গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি তার প্রাথমিক দায়িত্ব থেকে সরে আসে। এতে সাংবাদিকতার মূলনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি সমাজে বিভাজন ও ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হয়।
গণমাধ্যমের কার্যক্রম আর আগের মতো সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন যেমন সংবাদ পরিবেশন করছে, অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যম সমাজে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুহূর্তের মধ্যেই খবর মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য পরিবেশনের প্রবণতাও বাড়ছে।

আজকের গণমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সত্যকে বিকৃত করে এমনভাবে পরিবেশন করা হয়, যা দর্শক বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। এটি শুধু তথ্যের অভাব তৈরি করে না, বরং মানুষের মস্তিষ্কে এমন একটি বয়ান তৈরি করে, যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে পূরণ করে। গণমাধ্যমের বয়ান তৈরি করার পিছনে কিছু নির্দিষ্ট ঝোঁক কাজ করে। এ প্রসঙ্গে কিছু বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো-গণমাধ্যম অনেকাংশে এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতা এবং কর্পোরেট স্বার্থের কারণে গণমাধ্যম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সংবাদ পরিবেশনের ধরণ নির্ধারিত হয় পৃষ্ঠপোষকদের চাহিদা অনুযায়ী।

গণমাধ্যম অনেক সময় নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে খবর পরিবেশন করে। এর ফলে, প্রকৃত ঘটনা আড়ালে চলে যায় এবং বয়ান তৈরি হয়, যা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শকে সমর্থন করে।

টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য দর্শক ধরে রাখা বা বেশি ভিউয়ারশিপ পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা বেশি দর্শক টানার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ এবং সংবেদনশীল খবর পরিবেশন করে। এতে তথ্যের মান ও সত্যতা উপেক্ষিত হয়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের উত্থান গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। দ্রুত এবং ক্লিক-বেইট শিরোনামে খবর প্রকাশ করার তাড়নায় গণমাধ্যম অনেক সময় যাচাই-বাছাই ছাড়াই খবর প্রকাশ করে।

সংবাদ যখন বয়ানে রূপান্তরিত হয়, তখন তা মানুষের মননে গভীর প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে অনেক সময় এমনভাবে খবর প্রচারিত হয়, যা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সংবেদনশীল শব্দ ব্যবহার করে খবর পরিবেশনের ফলে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি হয়।নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দলের প্রচারণার অংশ হিসেবে খবর পরিবেশিত হয়। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়।দারিদ্র্য, নারী নির্যাতন বা পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে কখনো সত্যকে অতিরঞ্জিত করে বা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রকৃত সমাধান খোঁজার পরিবর্তে সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে ওঠে।

গণমাধ্যমের বয়ান তৈরির ঝুঁকি বহুমাত্রিক। এর কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো : যখন সংবাদকে নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয় না, তখন তা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে মানুষ ভিন্নমত গ্রহণ করতে পারে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ব্যাহত হয়। গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। এর ফলে নির্বাচন বা নীতি নির্ধারণের মতো প্রক্রিয়াগুলো প্রভাবিত হয়।

গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা হারালে মানুষের আস্থা কমে যায়। এর ফলে, তারা প্রকৃত তথ্যের জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়ে, যা সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।

বয়ান তৈরি করে জনগণকে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে পরিচালিত করা হলে, দীর্ঘমেয়াদে এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যম, নীতিনির্ধারক এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো : গণমাধ্যমকে অবশ্যই সাংবাদিকতার নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করা এবং পক্ষপাত এড়ানো এর মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। গভীর গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হলে, তা বয়ান তৈরির পরিবর্তে সত্য প্রকাশে সহায়ক হবে।
ফ্যাক্ট-চেকিং টুল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ যাচাই করা উচিত, বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরের ক্ষেত্রে।
গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল থাকার পাশাপাশি জনগণকেও তথ্য যাচাই করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সচেতন পাঠক ও দর্শক তৈরি হলে, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের প্রচার সীমিত হবে।
গণমাধ্যম শুধু খবর পরিবেশনের মাধ্যম নয়; এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার। কিন্তু এই হাতিয়ার যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে এটি সমাজে অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদ এবং বয়ানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে আমরা সত্যকে হারিয়ে ফেলব।

গণমাধ্যমকে অবশ্যই তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতে হবে: নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ সরবরাহ। পক্ষপাতিত্ব, বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে যদি গণমাধ্যম কাজ করতে পারে, তবে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং সঠিক তথ্যের জন্য বিভিন্ন উৎস যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং জনগণের সচেতনতা একসঙ্গে কাজ করলে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।গণমাধ্যমের ভূমিকা হলো সমাজকে তথ্যের মাধ্যমে আলোকিত করা। কিন্তু যখন গণমাধ্যম সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই গণমাধ্যমকে নিজের মূল দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ গ্রহণ করতে পারে।

গণমাধ্যম যখন সত্য, নিরপেক্ষতা এবং নৈতিকতার পথে অটল থাকবে, তখনই এটি তার প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যথায়, গণমাধ্যমের বয়ান সমাজে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন সৃষ্টি করতে থাকবে।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১, পিআইবি।

উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
উত্তাল সাগর, শক্তি সঞ্চয় করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি সঞ্চয় করছে। এটি ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর (পুন.) ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্য কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।

হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ
হাঁটা বন্ধ করবেন না, কেনো হাঁটবেন

হাঁটা বন্ধ করবেন না যেন, মস্তিষ্ক নয়, ডিমেনশিয়া শুরু হয় আপনার পা থেকে! বিশ্বজুড়ে বয়স্ক মানুষের অক্ষমতা ও নির্ভরশীলতার প্রধান কারণ হিসেবে ডিমেনশিয়া এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতা। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন, এবং প্রতিবছর নতুন করে আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ এতে ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, মস্তিষ্ক সচল রাখাই ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। কিন্তু ভারতের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) প্রশিক্ষিত স্নায়ুশল্য বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণ এল. নাইক জানালেন চমকপ্রদ তথ্য—ডিমেনশিয়ার সূত্রপাত নাকি মস্তিষ্কে নয়, পা থেকেই!
ডিমেনশিয়া কী?
ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি স্মৃতি, চিন্তাশক্তি ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে এমন একাধিক স্নায়ুরোগের সামষ্টিক নাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। তবে সময়মতো নির্ণয়, যত্নশীল পরিচর্যা, জীবনযাপনে পরিবর্তন ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডিমেনশিয়া শুরু হয় পা থেকে
ডা. নাইক এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আপনি কি জানেন, ডিমেনশিয়া আসলে শুরু হয় আপনার পা থেকে? শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পায়ের পেশিকে দুর্বল করে, যার ফলে স্যারকোপেনিয়া বা পেশি ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে। এখানেই শুরু হয় বিপদ। গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল পায়ের কারণে জ্ঞানগত ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায় এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, শরীরের সক্রিয় পেশি এমন রাসায়নিক উৎপাদন করে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। এই রাসায়নিকগুলোর নাম ব্রেইন-ডিরাইভড নিউরোট্রফিক ফ্যাক্টর (BDNF), যা মস্তিষ্কের স্মৃতিনির্ভর অংশ হিপোক্যাম্পাসে সংযোগ বৃদ্ধি করে। শক্তিশালী পা শুধু ভারসাম্য বজায় রাখে না, বয়স বাড়লেও পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমায়। “৬৫ বছরের পর পড়ে যাওয়াই সবচেয়ে বিপজ্জনক,” বলেন ডা. নাইক।
তিনি ২০২০ সালের Neurology সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণার উদাহরণ দেন, যেখানে দেখা গেছে, যাদের হাঁটার গতি কম, তাদের মস্তিষ্কের আকারও ছোট এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বেশি। “হাঁটা শুধু শরীরচর্চা নয়, এটি পুরো মস্তিষ্কের এক অনুশীলন,” যোগ করেন তিনি।
কীভাবে হাঁটা মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে
হাঁটা এমন এক সহজ ব্যায়াম যা শরীর ও মস্তিষ্ক দুটিকেই সক্রিয় রাখে। ডা. নাইক বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত থাকে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব, সেরিবেলাম, স্পাইনাল কর্ড ও স্নায়ু প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।” হাঁটা রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং টক্সিন দূর করে। তিনি আরও বলেন, “হাঁটার ধরনে বা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখা গেলে সেটি মস্তিষ্কের আগাম সতর্ক সংকেত। এটি প্রায়ই স্মৃতি সমস্যার বছরখানেক আগেই দেখা দেয়।” হাঁটা নিউরোপ্লাস্টিসিটির এক জীবন্ত উদাহরণও বটে। “হাঁটার সময় শরীরে BDNF সক্রিয় হয়, যা নিউরনগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করে,” বলেন ডা. নাইক।
কীভাবে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করবেন ডা. নাইক কয়েকটি সহজ অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়মিত চর্চা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় থাকে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম যেমন এক পায়ে দাঁড়ানো বা সরলরেখায় হাঁটার অভ্যাস করুন। হাঁটার সময় কথা বলা বা হালকা মানসিক কাজ করুন—এটি মস্তিষ্কের সমন্বয় ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পায়ের পেশির ব্যায়াম করুন, এটি মস্তিষ্কের জন্য একপ্রকার ‘বিমা’।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পরিহার করুন; প্রতি ঘণ্টায় কিছুটা নড়াচড়া করুন। তিনি বলেন, “যখন আপনার পা ধীরে ধীরে কাজ হারায়, তখন মস্তিষ্কও তার পথ অনুসরণ করে। আপনার হাঁটার গতি বজায় রাখুন, তাহলেই সুরক্ষিত থাকবে মস্তিষ্ক।”
ডা. নাইক আরও পরামর্শ দেন, পেশির গঠন রক্ষায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। তার মতে, কখনোই দেরি হয়ে যায় না। “গবেষণায় দেখা গেছে, ষাট বছর বয়সেও হাঁটা ও ব্যায়াম শুরু করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। মনে রাখবেন, শক্ত পা মানেই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক। স্যারকোপেনিয়া মাথা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই সচেতন হোন—চল্লিশের কোঠা থেকেই শুরু করুন।”
সর্বোপরি, সক্রিয় থাকা শুধু চলাফেরার বিষয় নয়; এটি মস্তিষ্ককে তরুণ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্য—এই তিন অভ্যাসই হতে পারে বার্ধক্যের ডিমেনশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ।

বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ
বন্ধ হচ্ছে সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। সোমবার (২৭ অক্টোবর) এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ। পরিপত্রে বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, চলমান সংকোচনমূলক নীতির প্রেক্ষাপটে গত কয়েক বছরের মতো সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। এর আওতায় বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি কেনাসহ বেশ কিছু ব্যয় বন্ধ থাকবে। এ নীতি অনুসরণ করে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৯ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে বরাদ্দের মধ্যেই থাকতে হবে। কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সরকারের অগ্রাধিকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রয়োজনে মূল বাজেটে বরাদ্দের ব্যয়সীমার মধ্যে থেকে একই ধরনের বিভিন্ন কাজে বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। কিন্তু উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে অনুমিত হলে ওই অর্থ কোনোক্রমেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
এতে আরও বলা হয়, সংশোধীত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয় বা কৃচ্ছ্রসাধন নীতির আওতায় সরকারি খরচে সব ধরনের বৈদেশিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা হবে। তা ছাড়া কেনা যাবে না গাড়ি, জাহাজ ও বিমান। তবে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের পুরোনো গাড়ির প্রতিস্থাপন হিসেবে নতুন গাড়ি কেনা যাবে। এমনকি পরিচালন বাজেটে আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচও বন্ধ রাখতে হবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় শর্তসাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। আরও কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় স্থগিত রাখা হয়েছে আবার গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ক্ষেত্রে ব্যয়ে কিছুটা ছাড়ও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে সরকারি ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই কোনো খাতে ব্যয় সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে সংশোধিত বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে। সাধারণত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে মার্চে সরকার জাতীয় বাজেট সংশোধন করে। তবে এবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আগেভাগে বাজেট সংশোধন করা হচ্ছে।