খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫, ১০ শ্রাবণ, ১৪৩২

সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৫:৪৭ অপরাহ্ণ
সংবাদ না বয়ান : গণমাধ্যমের ঝোঁক ও ঝুঁকি

গণমাধ্যম সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। এর ভূমিকা নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ পরিবেশন করা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে। গণমাধ্যম কি শুধু খবর পৌঁছে দিচ্ছে, নাকি নিজের বয়ান তৈরি করছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে আমাদের গণমাধ্যমের ঝোঁক, তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং এর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে।

গণমাধ্যমের মূল দায়িত্ব হলো জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা। কিন্তু দিন দিন আমরা লক্ষ্য করছি, সংবাদ পরিবেশনে নিরপেক্ষতার অভাব এবং পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সংবাদ আর তথ্য নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট মতবাদ বা বয়ানের রূপ নিচ্ছে।
এর পেছনে কয়েকটি কারণ কাজ করে, গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ এখন ব্যবসায়িক মডেলের ওপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপনদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকদের চাপে তারা এমন খবর পরিবেশন করে যা জনমত প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে, সংবাদ পরিবেশনের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলো গল্প বা বয়ান তৈরি করছে যা তাদের আর্থিক স্বার্থে সহায়ক। গণমাধ্যমের একটি অংশ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের বা মতবাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়ে। তারা একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে সংবাদ পরিবেশন করে, যেখানে তাদের রাজনৈতিক আনুগত্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হয় এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিযোগিতার কারণে অনেক গণমাধ্যম “সংবাদের” পরিবর্তে “সেনসেশন” পরিবেশনে ঝুঁকছে। টিআরপি বাড়ানোর জন্য নাটকীয় এবং উত্তেজনাপূর্ণ খবর পরিবেশনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে সত্য ঘটনা আড়ালে থেকে যায়।

সংবাদ হলো নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন। এটি কোনো মতামত বা অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে নয়। বয়ান, অন্যদিকে, একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা উপস্থাপন করে। তবে গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ান হিসেবে রূপান্তরিত করে, তখন এটি একটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ-একটি রাজনৈতিক কর্মসূচির খবর যখন নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয়, তখন এটি সংবাদ। কিন্তু সেই খবর যখন একটি দলের সাফল্যের গল্প হিসেবে উপস্থাপিত হয়, তখন তা বয়ানে রূপান্তরিত হয়।

তেমনই, একটি সামাজিক ইস্যুকে অযথা সেনসেশন তৈরি করে পরিবেশন করাও বয়ানের আরেকটি উদাহরণ । গণমাধ্যমের এই ঝোঁক সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এর ফলে: পক্ষপাতদুষ্ট বয়ান সমাজকে বিভক্ত করে। মানুষ নিরপেক্ষ খবর পাওয়ার পরিবর্তে পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়।গণমাধ্যম যদি বয়ান তৈরিতে মনোযোগ দেয়, তাহলে তথ্যের বিকৃতি ঘটতে পারে। এর ফলে ভ্রান্ত তথ্যের প্রসার ঘটে এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণের আস্থা কমিয়ে দেয়। যখন জনগণ গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ হিসেবে দেখতে পায় না, তখন এটি তার প্রভাব হারায়।

গণমাধ্যমের ভূমিকা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা। কিন্তু যখন এটি নিরপেক্ষতার পরিবর্তে পক্ষপাতিত্ব করে, তখন এটি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য গণমাধ্যমের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ থেকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে। বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক চাপ এড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। সেনসেশনাল খবরের পরিবর্তে গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে।জনগণকে সচেতন হতে হবে। পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য বুঝতে এবং সঠিক তথ্য খুঁজে বের করতে দক্ষ হতে হবে।

গণমাধ্যমকে স্বচ্ছ হতে হবে। তাদের উৎস, গবেষণার প্রক্রিয়া এবং খবর প্রকাশের কারণগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে হবে।সামাজিক মাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্যের বিস্তার রোধে গণমাধ্যমকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করতে হবে।

গণমাধ্যম মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। সংবাদ পরিবেশন করার মাধ্যমে এটি শুধু তথ্য সরবরাহ করে না, বরং জনমত তৈরিতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে, গণমাধ্যম যখন সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি তার প্রাথমিক দায়িত্ব থেকে সরে আসে। এতে সাংবাদিকতার মূলনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি সমাজে বিভাজন ও ভুল বোঝাবুঝির জন্ম হয়।
গণমাধ্যমের কার্যক্রম আর আগের মতো সীমাবদ্ধ নয়। একদিকে প্রিন্ট মিডিয়া ও টেলিভিশন যেমন সংবাদ পরিবেশন করছে, অন্যদিকে ডিজিটাল মাধ্যম সমাজে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুহূর্তের মধ্যেই খবর মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য পরিবেশনের প্রবণতাও বাড়ছে।

আজকের গণমাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই সত্যকে বিকৃত করে এমনভাবে পরিবেশন করা হয়, যা দর্শক বা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। এটি শুধু তথ্যের অভাব তৈরি করে না, বরং মানুষের মস্তিষ্কে এমন একটি বয়ান তৈরি করে, যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে পূরণ করে। গণমাধ্যমের বয়ান তৈরি করার পিছনে কিছু নির্দিষ্ট ঝোঁক কাজ করে। এ প্রসঙ্গে কিছু বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো-গণমাধ্যম অনেকাংশে এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতা এবং কর্পোরেট স্বার্থের কারণে গণমাধ্যম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সংবাদ পরিবেশনের ধরণ নির্ধারিত হয় পৃষ্ঠপোষকদের চাহিদা অনুযায়ী।

গণমাধ্যম অনেক সময় নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে খবর পরিবেশন করে। এর ফলে, প্রকৃত ঘটনা আড়ালে চলে যায় এবং বয়ান তৈরি হয়, যা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শকে সমর্থন করে।

টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালগুলোর জন্য দর্শক ধরে রাখা বা বেশি ভিউয়ারশিপ পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তারা বেশি দর্শক টানার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ এবং সংবেদনশীল খবর পরিবেশন করে। এতে তথ্যের মান ও সত্যতা উপেক্ষিত হয়। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মের উত্থান গণমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। দ্রুত এবং ক্লিক-বেইট শিরোনামে খবর প্রকাশ করার তাড়নায় গণমাধ্যম অনেক সময় যাচাই-বাছাই ছাড়াই খবর প্রকাশ করে।

সংবাদ যখন বয়ানে রূপান্তরিত হয়, তখন তা মানুষের মননে গভীর প্রভাব ফেলে। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে অনেক সময় এমনভাবে খবর প্রচারিত হয়, যা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সংবেদনশীল শব্দ ব্যবহার করে খবর পরিবেশনের ফলে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি হয়।নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দলের প্রচারণার অংশ হিসেবে খবর পরিবেশিত হয়। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন এবং গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়।দারিদ্র্য, নারী নির্যাতন বা পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে কখনো সত্যকে অতিরঞ্জিত করে বা সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণে উপস্থাপন করা হয়। এতে প্রকৃত সমাধান খোঁজার পরিবর্তে সমস্যাগুলো আরও জটিল হয়ে ওঠে।

গণমাধ্যমের বয়ান তৈরির ঝুঁকি বহুমাত্রিক। এর কিছু উল্লেখযোগ্য দিক হলো : যখন সংবাদকে নিরপেক্ষভাবে পরিবেশন করা হয় না, তখন তা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে। বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে মানুষ ভিন্নমত গ্রহণ করতে পারে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ব্যাহত হয়। গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্ব জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়। এর ফলে নির্বাচন বা নীতি নির্ধারণের মতো প্রক্রিয়াগুলো প্রভাবিত হয়।

গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা হারালে মানুষের আস্থা কমে যায়। এর ফলে, তারা প্রকৃত তথ্যের জন্য বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়ে, যা সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে।

বয়ান তৈরি করে জনগণকে একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে পরিচালিত করা হলে, দীর্ঘমেয়াদে এটি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যম, নীতিনির্ধারক এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো : গণমাধ্যমকে অবশ্যই সাংবাদিকতার নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করা এবং পক্ষপাত এড়ানো এর মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রভাব থেকে মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। তবে এই স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। গভীর গবেষণা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হলে, তা বয়ান তৈরির পরিবর্তে সত্য প্রকাশে সহায়ক হবে।
ফ্যাক্ট-চেকিং টুল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংবাদ যাচাই করা উচিত, বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত খবরের ক্ষেত্রে।
গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল থাকার পাশাপাশি জনগণকেও তথ্য যাচাই করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সচেতন পাঠক ও দর্শক তৈরি হলে, পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের প্রচার সীমিত হবে।
গণমাধ্যম শুধু খবর পরিবেশনের মাধ্যম নয়; এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার। কিন্তু এই হাতিয়ার যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, তাহলে এটি সমাজে অস্থিরতা এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদ এবং বয়ানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারলে আমরা সত্যকে হারিয়ে ফেলব।

গণমাধ্যমকে অবশ্যই তার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করতে হবে: নিরপেক্ষ ও সত্য সংবাদ সরবরাহ। পক্ষপাতিত্ব, বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং রাজনৈতিক প্রভাব এড়িয়ে যদি গণমাধ্যম কাজ করতে পারে, তবে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং সঠিক তথ্যের জন্য বিভিন্ন উৎস যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং জনগণের সচেতনতা একসঙ্গে কাজ করলে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।গণমাধ্যমের ভূমিকা হলো সমাজকে তথ্যের মাধ্যমে আলোকিত করা। কিন্তু যখন গণমাধ্যম সংবাদকে বয়ানে পরিণত করে, তখন এটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। তাই গণমাধ্যমকে নিজের মূল দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, জনগণকেও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা সঠিক ও নিরপেক্ষ সংবাদ গ্রহণ করতে পারে।

গণমাধ্যম যখন সত্য, নিরপেক্ষতা এবং নৈতিকতার পথে অটল থাকবে, তখনই এটি তার প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যথায়, গণমাধ্যমের বয়ান সমাজে বিভ্রান্তি এবং বিভাজন সৃষ্টি করতে থাকবে।

লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, গণমাধ্যম সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ২০২১, পিআইবি।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।