খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৭ কার্তিক, ১৪৩২

বিদেশি বাংলাদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নেপথ্যে কী?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ণ
বিদেশি বাংলাদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নেপথ্যে কী?

চলতি মাসে অন্তর্বর্তী সরকার বছর পূর্ণ করেছে। এ সময়ে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। আচমকা বিদেশে বাংলাদেশি মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এটি করা হয়েছে টেলিফোন নির্দেশনায়।
বছর ব্যবধানে কেন রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর প্রসঙ্গ আসছে, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এর কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় সামনে আসছে। তবে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টার বিদেশ সফরে গিয়ে একটি মিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি টাঙানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিদ্ধান্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিদেশে বাংলাদেশের যেসব মিশনে এখনো রাষ্ট্রপতির ছবি টাঙানো আছে, সেগুলো সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব মিশনকে নির্দেশ না দিয়ে কয়েকজন দূতকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের বলা হয়েছে অন্য মিশনপ্রধানদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য।
গত শনিবার মধ্য রাত থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশনার খবর প্রকাশিত হয়। রোববার (১৮ আগস্ট) পুরোদিন এটি ছিল টক অব দ্যা কান্ট্রি। তবে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি।
এদিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা-বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের এক বৈঠক ছিল। কয়েক ঘণ্টার বৈঠকটি বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ শেষ হয়। বৈঠক থেকে বেরোতে রাষ্ট্রপতির ছবি ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এমনকি, মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাহ আসিফ রহমানও প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমিও আপনার মত পত্রিকায় পড়েছি, কিন্তু যেহেতু আমি বিদেশি দূতাবাসে কাজ করি না, সেহেতু বলতে পারছি না যে আসলে প্রেক্ষিতটা কী।’
সরকারি সিদ্ধান্ত হলে তার লিখিত কাগজপত্র থাকত মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদে এ বিষয়ে আলোচনা হলে বলা যাবে।’
এক প্রশ্নে রিজওয়ানা বলেন, ‘এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা স্পষ্ট। একটা ছবির সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকতে পারে না।’
সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ৮২টি মিশন ও উপমিশন রয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরপরই অনেক মিশন থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে ফেলা হয়। নতুন নির্দেশনার আগ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি মিশন বিগত সময়ের সব ছবি সরিয়ে ফেলে।
নতুন করে রাষ্ট্রপতির ছবি নামিয়ে ফেলার নির্দেশনার পর এরই মধ্যে বাকি মিশনগুলো থেকেও রাষ্ট্রপতির ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ইউরোপের একটি মিশনে পদায়নরত এক কূটনীতিক জানান, এ মিশনে রাষ্ট্রপতির ছবি ছিল। নতুন নির্দেশনা পাওয়ার পর শনিবার বিকেলে মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানো হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের চার অনুচ্ছেদে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহারের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এর বাইরে সরকার প্রধানের ছবি ব্যবহার করা নিয়ে কোনো আইন, বিধি বা সাংবিধানিক নির্দেশনা বিগত সরকারের সময়ে হয়নি। তবে, ২০০২ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীদের কার্যালয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি কিংবা ছবি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশ মোতাবেক বিদেশে বাংলাদেশি মিশনে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের ছবি টাঙানো রীতি চলে আসছে। তবে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছবি টাঙানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেননি। বরং পত্রিকাসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো প্রচারণায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের ছবি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
সাবেক এক রাষ্ট্রদূত বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে সরকারি আদেশে রাষ্ট্রপতির ছবি ব্যবহারের নির্দেশনা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিশনগুলোতে অফিশিয়াল পোর্ট্রেট সরবরাহ করতো। আর এই পোট্রেট কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন করে দেওয়া হতো। মিশন বলে কথা না সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর জন্য একই ছবি নির্বাচন করা হতো। কেউ চাইলেও রেনডমলি ছবি নির্বাচনের সুযোগ ছিল না। হঠাৎ করে শুধু মিশন থেকে ছবি সরানোর নির্দেশনা হবে, এমনটা হওয়ার কথা না। হলে সরকারি অন্য অফিসেও একই নির্দেশনা হওয়ার কথা।
রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘সরকারি দপ্তরে পোট্রেট ব্যবহার শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নিরুৎসাহিত করছে। অলিখিতভাবে জিরো পোট্রেট নীতি বজায় রেখেছে। তারপরও কেউ কেউ সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি নিজ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করেছে। সেগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে এমন কোনো লিখিত নির্দেশনা কোনো দপ্তর কিংবা মিশনকে দেওয়া হয়নি। তারপরও দেখা যাচ্ছে আজ এটা নিয়ে বাজার গরম করে ফেলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় ঘোষণা করার পর রাজনীতি নিয়ে ঘোঁট পাকানোর সুযোগ কমে আসছে। কাটতি ধরে রাখার জন্য ছোট খাটো অনেক বিষয়কেও এখন তাই পাহাড়সম করে তোলা হচ্ছে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপতির ছবি রাখা না রাখা পুরোপুরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত। এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় না। নতুন কোনো নিয়ম হয়েছে কিনা-আমার জানা নেই, তবে মন্ত্রিপরিষদের আগের সিদ্ধান্ত ছিল যে কোনো সরকারি অফিসে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানের ছবি টাঙাতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা না পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ধরনের নির্দেশনা দিতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে মাহফুজুর রহমান বলেন, বলে না থাকলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বলার কথা না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মৌখিক নির্দেশ কেন, সেটা আমার বোধগম্য নয়।

নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৩ অপরাহ্ণ
নটমঞ্চের নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চায়ন

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নটমঞ্চের ২০তম প্রযোজনা নাটক বিদ্যামন্ত্র মঞ্চস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) রাতে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে মেইড ইন কালচারাল ফেস্টিভ্যাল সাংস্কৃতিক উৎসবে নটমঞ্চের বিদ্যামন্ত্র নাটক মঞ্চায়ন করা হয় ।
মহীউদ্দিন ছড়া’র রচনায় আক্রাম খানের নির্দেশনায় ও পিএম বিল্লালের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ নাটকটি মঞ্চায়ন করা হয়। নাটকে যারা অভিনয় করেছেন এবং নেপথ্যে যারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন গোবিন্দ মন্ডল, সাধন চন্দ্র দত্ত, মোরশেদ আলম, আহমেদ তানজিল, মরিয়ম আক্তার রাহা, আছিয়া আক্তার মিথিলা, মুক্তা আক্তার, নূরে আলম, সাইফুল ইসলাম, নূরজাহান বেগম, মৌমিতা, রিয়াদ, রিপন প্রমুখ।
নটমঞ্চের সভাপতি উজ্জ্বল হোসাইন জানান, এটি একটি শিক্ষামূলক নাটক। “বিদ্যামন্ত্র” নাটকের সূচনায় মঞ্চে উপস্থিত হন এক রহস্যময় বৃদ্ধ চরিত্র গল্পবুড়ো। তাঁর কণ্ঠে নাটকের জগত প্রাণপায়। তিনি দর্শকদের বলেন, এই যে পৃথিবী এখানে প্রেম আর অন্ধকার পাশাপাশি বাস করে। কেউ জ্ঞানের আলো খোঁজে, কেউ সেই জ্ঞানকেই মন্ত্র বানিয়ে মানুষকে বশ করে রাখে। গল্পবুড়োর কথায় পর্দা খুলে যায় এক রূপকথার রাজ্যের দরজা। সেই রাজ্যের রাজপুত্র, হৃদয়ে এক অদ্ভুত বেদনা নিয়ে বসবাস করে। প্রতিরাতে স্বপ্নে সে দেখে এক অচেনা রাজকুমারীর মুখ—তার চোখে অনন্ত স্নেহ, তবু গভীর বিষাদের ছায়া। রাজপুত্র জানে না এ প্রেম কল্পনা, না কি নিয়তির নির্দেশ। সেই অজানা মুখের টানে সে দেশ-দেশান্তর পাড়ি দেয়, পর্বত, নদী, মরুভূমি পেরিয়ে একদিন এসে পৌঁছায় এক অদ্ভুত রাজ্যে। সে রাজ্য রাক্ষসে দখলে। সে একসময় ছিল রাজ্যের পণ্ডিত, কিন্তু জ্ঞানের অপব্যবহার করে সে সৃষ্টি করেছে “বিদ্যামন্ত্র” এক অভিশপ্ত শক্তি যার দ্বারা নারীদের মন, দেহ ও চিন্তা সে বশ করে রেখেছে। তার প্রাসাদে বন্দী শত শত নারীর মধ্যে দু’জন প্রধান চরিত্র কেশবতি ও হীরামন। কেশবতি রাজ্যের প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী, যার চোখে এখনো মুক্তির দীপ্তি জ্বলে; হীরামন এক জ্ঞানী নারী, যে বিদ্যামন্ত্রের রহস্য জানে কিন্তু তা ভাঙতে অক্ষম। রাজপুত্র এসে এই অমানবিক দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে যায়। তার হৃদয়ে জ্বলে ওঠে প্রতিবাদের আগুন। কেশবতির চোখে সে চিনে ফেলে সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে যাকে খুঁজে সে এতদিন ঘুরেছে। কিন্তু কেশবতি এখন বিদ্যামন্ত্রে  বন্দী। তাকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো “বিদ্যামন্ত্র” ভাঙা, যা কেবল সত্য প্রেম, সাহস, এবং জ্ঞানের আলোকেই সম্ভব।
গল্পবুড়োর বর্ণনায় নাটক ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। রাজপুত্র হীরামনের সহযোগিতায় রাক্ষসের রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। সেখানে ঘটে আলো ও অন্ধকারের এক ভয়ংকর সংঘর্ষ। শেষে প্রেমের বিশুদ্ধতা ও কেশবতির আত্মত্যাগে ভেঙে যায় বিদ্যামন্ত্র। নারীরা ফিরে পায় মুক্তি, অমরাবতী রাজ্যে ফিরে আসে গান, আলো, আর মানবতার গৌরব।
নাটক “বিদ্যামন্ত্র” প্রেম, জ্ঞান ও মানবমুক্তির এক প্রতীকী কাহিনি। এখানে রাজপুত্রের অভিযান কেবল এক নারীর মুক্তি নয় এটি নারী স্বাধীনতা, জ্ঞানের সঠিক ব্যবহার এবং মানবিকতার জয়গাথা।
নাটকটি চাঁদপুরের বিভিন্ন নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সুধীজন উপভোগ করেন।

মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
মাছ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : জেলেদের দখলে নদী

নিষেধাজ্ঞার পরোয়া না করে নদী থেকে অবাধে ইলিশ শিকার করছেন জেলেরা। প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুতেই দমাতে পারছে না তাদের। জেলেদের নৌকায় এখন ইট-পাথরের মজুত রাখা হয়। হাতে থাকে তাদের লাঠিসোটা। বাধা দিলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পাল্টা আক্রমণ করেন তারা। গত ৪ অক্টোবরের পর দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ বিচরণের নদীগুলো কার্যত চলে গেছে জেলেদের দখলে। ইলিশের প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র মেঘনার অবস্থা আরও ভয়ংকর। সামাজিক মাধ্যমে যেসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাতে দেখা যায়, নদীর মধ্যে জেলেরা যেন শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করছেন। তাদের শত্রু হলো ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে যাওয়া প্রশাসন। মেঘনায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর জাহাজ ও র‍্যাব দিয়ে অভিযান চালিয়ে নদী জেলেদের দখলমুক্ত করা যায়নি।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন সাগর-নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকেই নদী জেলেরা দখলে নিয়েছেন। দিনে পরিস্থিতি কিছুটা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাতে নদীতে চলে জেলেদের রাজত্ব। জেলেদের আক্রমণ প্রতিহত করতে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া মাছ শিকারে জেলেদের বাধা দিতে গিয়ে আনসার বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্র খোয়া গেছে। এমনকি জেলেদের হামলায় স্পিডবোট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা কোস্টগার্ড সদস্যদেরও নাস্তানাবুদ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। মেঘনার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গত সোমবার হিজলার জেলেদের হামলা প্রতিহত করতে মেঘনায় ফায়ার সার্ভিসের জলকামান ব্যবহার করতে হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলার সময় গত ১৭ দিনে কমপক্ষে ১৫টি হামলা হয়েছে। এরমধ্যে গত ১৯ অক্টোবর বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৩টি হামলার ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলা করা হয়।  গত রোববার বিকেলে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলা ঠেকাতে আট রাউন্ড এবং শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল সদর ও মেহেন্দীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী কালাবদর নদীতে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। দুটি অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে  হিজলা ও ভোলার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে হামলার শিকার হয় মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ ও উপপরিচালক মো. নাসিরউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন টিম।
নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রথম রাতে অভিযানে নেমে হামলার শিকার হন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি। দড়িচর-খাজুরিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া নদীতে এ হামলা হয়। ৭ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নের আলীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনা নদীতে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমসহ কোস্টগার্ডের চার সদস্য আহত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদসংলগ্ন নদীতে হামলায় এক আনসার সদস্যের আগ্নেয়াস্ত্র নদীতে পড়ে যায়। অস্ত্রটি পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসাইন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ দিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অভিযানে ৮৭০টি মামলা এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৫৮৯ জনকে। একই সময়ে গত বছর ৭৬৯টি মামলা ও ৪৮২ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ বছর মামলা ও কারাদণ্ড বেশি হলেও পরিস্থিতি পুরোটাই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কেন এই পরিস্থিতি 
মৎস্যজীবী সংগঠকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও হামলার ঘটনা হয়। তবে এ বছরের মতো পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। তাদের মতে, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তাদের শিথিলতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা জেলেদের নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেন বলেও তাদের ধারণা।
ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সামরাজ মাছঘাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আজিজ পাটোয়ারী স্বীকার করেন, এবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন ও প্রশাসনের ওপর হামলার ঘটনা নজিরবিহীন। তিনি বলেন, ‘মৌসুমে নদীতে আকাল গেছে। এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে জেলেরা কোনো আইন মানতে চান না।’ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ রক্ষা নির্ভর করে মেঘনাতীরের রাজনৈতিক নেতা ও মাছঘাট মালিকদের ওপর। তারা যতক্ষণ আইনের উল্টো পথে হাঁটবেন, কোনো আইন দিয়ে ইলিশ সম্পদ রক্ষা করা যাবে না।’ জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল মীর বলেন, ইলিশ নিধনকারী জেলেদের পেছনে প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। জেলেদের ভ্রাম্যমাণ আদালত কারাদণ্ড দিলে জামিনের ব্যবস্থা ও জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন প্রভাবশালীরা।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ সাধারণ জেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। কিছু ডাকাতের মতো, অপেশাদার লোকজন ইলিশ নিধনে যুক্ত। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর মদদ দিচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অপরাধীদেরে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান প্রয়োজন। জনবল এবং বড় স্পিডবোট আরও দরকার।

আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ণ
আরসিডিএস-এর উদ্যোগে জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন

২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনগুলো সারা দেশব্যাপী প্রতি বছর ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে : “কৃষি জমিতে তামাক চাষ, খাদ্য নিরাপত্তায় সর্বনাশ” অবিলম্বে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরসিডিএস-এর উদ্যোগে চাঁদপুরে জন সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারাভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ইতিমধ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। আরসিডিএস নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ সাদেক সফিউল্লাহ বলেন, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের ইতিবাচক নীতিগত পদক্ষেপসমূহ প্রশংসার দাবীদার হলেও কোম্পানিগুলোর কৌশলের কারণে কৃষকরা তামাক চাষের চক্র থেকে বের হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাক চাষে স্বাভাবিক ফসলের তুলনায় ৮–১০ গুণ বেশি রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পরিবেশকে দূষিত এবং জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে রবি মৌসুমে খাদ্য ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরা আটকা পড়ছে ঋণের ফাঁদে। অন্যদিকে, কীটপতঙ্গ, গবাদিপশু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর তামাক চাষের নেতিবাচক প্রভাব দেশের কৃষি জমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশকে হুমকির সম্মুখীন করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন কৌশল, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বিধান না থাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যথাযথ উদ্যোগের অভাব, দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি চুড়ান্তকরণে বিলম্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির অসামঞ্জস্যতা। উল্লেখ্য তামাক রপ্তানিতে শুল্ক ছাড়ের কারণে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রায় ৫০ হাজার একর জমিতে তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। উক্ত সংকট থেকে উত্তোরণে দ্রুত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” চূড়ান্ত করা জরুরী। উল্লেখ্য, সংবিধান ও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এ মতাবস্থায়, আমাদের প্রস্তাবনা : সরকার কর্তৃক প্রণীত “তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা (খসড়া)” অবিলম্বে চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা, উন্নত বীজ, সার ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান নিশ্চিত করা। তামাক চাষের জমিতে দ্বিগুণ হারে ভূমি কর আরোপ করা। সংরক্ষিত বনভূমি ও সরকারি খাসজমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা। তামাক পাতার উপর মওকুফকৃত ২৫% রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করা।