খুঁজুন
                               
শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ, ১৪৩২

বাংলা নববর্ষ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের উৎসব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ
বাংলা নববর্ষ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের উৎসব

বাংলা নববর্ষ, যাকে আমরা ভালোবেসে পহেলা বৈশাখ বলি, আমাদের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধুমাত্র একটি ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের দিন নয় বরং একটি আবেগ, একটি সংস্কৃতি, একটি ঐতিহ্য এবং জাতিগত পরিচয়ের প্রতীক। বৈশাখের প্রথম দিনটি বাঙালির আত্মপরিচয়, সংস্কৃতির গৌরব এবং ঐক্যের প্রতীক। এ দিনটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের কাছেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, বাঙালিদের একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এর ইতিহাস অনেকটা রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে জড়িত।
বাংলা সনের উৎপত্তি ও নববর্ষ উদযাপনের ইতিহাস বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে মুঘল আমলে। বাংলা সনের সূচনা মুঘল সম্রাট আকবর-এর আমলে (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) হয়েছিল। মুঘলদের রাজস্ব আদায়ের জন্য তারা হিজরি (চন্দ্রভিত্তিক) সন ব্যবহার করতেন। কিন্তু হিজরি সন চন্দ্র বছরের উপর নির্ভর করায় তা কৃষিভিত্তিক সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কারণ হিজরি বছর ১১ দিন ছোট হওয়ায় প্রতিবার রাজস্ব আদায়ের সময় কৃষকেরা ফসল তুলতে পারত না। এই সমস্যা সমাধানে আকবর ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে একটি নতুন সৌর সন চালু করেন, যেটি পরবর্তীতে বাংলা সন নামে পরিচিত হয়। এই সনের নাম হয় ফসলি সন বা তারিখ-ই-ইলাহী। মূলত ভারতবর্ষে ব্যবহৃত প্রচলিত সৌর পঞ্জিকা ও হিজরি সনের সমন্বয়ে এই নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়।
যদিও বাংলা সনের প্রবর্তন হয় ১৫৮৪ সালে, কিন্তু আকবরের সিংহাসনে আরোহণের বছর অর্থাৎ ১৫৫৬ সাল থেকেই এর গণনা শুরু হয়। সেই হিসেবে বঙ্গাব্দের প্রথম বছর হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ। আজকের বাংলা সাল গণনা এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করেই করা হয়। এই নববর্ষের দিনে হালখাতা নামে এক নতুন ব্যবসায়িক প্রথা চালু হয়, যেখানে পুরনো দেনা-পাওনার হিসাব মিটিয়ে নতুন খাতা খোলা হয়। এটি ছিল মূলত ব্যবসায়িক লেনদেনের একটি পদ্ধতি, যা নববর্ষকে সাধারণ মানুষের জীবনের অংশে পরিণত করে।
ব্রিটিশ শাসনামলেও বাংলা সনের ব্যবহার বহাল ছিল, তবে পশ্চিমা পঞ্জিকার ব্যাপক প্রচলনের কারণে নববর্ষ উদযাপন কিছুটা কম গুরুত্ব পায়। তবে বাংলার গ্রামাঞ্চলে ফসলি বছরের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব থেকে যায়।
স্বাধীনতা পূর্ব বাংলা, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অন্যান্য বাঙালি সাহিত্যিকদের প্রচেষ্টায় নববর্ষ পায় নতুন রূপ। রবীন্দ্রনাথের গান ও সংস্কৃতিচর্চা নববর্ষকে একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে নববর্ষ হয়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয়, যা ২০১৬ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ এবং ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন (তারিখ-ই-ইলাহী/ফসলি সন)। বাংলা সনের ব্যবহার কিছুটা কমে এলেও গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত ছিল।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, এবং বাংলা নববর্ষের সঙ্গে কৃষির একটি গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। নববর্ষের সময়টিই ফসল ঘরে তোলার উৎসবের সময়। তাই কৃষকরা তাঁদের ফসল বিক্রির পর এই দিনটিকে আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকেন। হালখাতা, ব্যবসায়িক দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে নতুন খাতা খোলা, এই দিনের একটি পুরনো রীতি। এতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গ্রাহকদের সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে ওঠে।
বাংলা নববর্ষের দিনটি শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। অনেকেই স্নান করে নতুন জামাকাপড় পরে, মন্দিরে যায়, দেবদেবীর পূজা করে এবং শুভ কামনা করে দিনটি শুরু করে। শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, লোকসঙ্গীত, পান্তা-ইলিশ, আর নানা রঙের পোশাকে বৈশাখের রঙ ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা নববর্ষ শুধু একটি নতুন বছরের সূচনা নয়, বরং এটি বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি, লোকজ ঐতিহ্য এবং ধর্মনিরপেক্ষ আনন্দঘন সামাজিক উৎসব। নববর্ষের দিনে পালিত হয় নানা ধরণের রীতিনীতি ও আচার, যা শহর থেকে গ্রাম, ধনী থেকে গরিব—সবার মধ্যেই প্রতিফলিত হয়। দিনের শুরু হয় স্নান ও নতুন পোশাকে। নববর্ষের দিনটি শুরু হয় ভোরে উঠে স্নান করার মধ্য দিয়ে। অনেকেই মনে করেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে নতুন বছরের শুরু করলে সারাবছর ভালো যাবে। এরপর সবাই পরে নতুন বা পরিষ্কার পোশাক—প্রধানত নারীরা পরে লাল-সাদা শাড়ি, পুরুষরা পরে পাঞ্জাবি-পায়জামা। এই পোশাকের মধ্য দিয়ে বাংলার ঐতিহ্য ও রঙিন সংস্কৃতি প্রকাশ পায়। এই দিনে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীদের সাথে শুভ নববর্ষ বলে কুশল বিনিময় করা হয়। সামাজিক সম্পর্ক মজবুত করার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। অনেকে শুভেচ্ছা কার্ড বা এখনকার দিনে ডিজিটাল বার্তার মাধ্যমে শুভকামনা জানায়।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের পুরনো হিসাব শেষ করে নতুন হিসাব খাতা (হালখাতা) খোলেন। এই দিনে ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের মিষ্টি বা উপহার দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এটি একটি লোকায়ত অর্থনৈতিক রীতি, যা ব্যবসায়িক সম্পর্ক মজবুত করে। বর্তমানে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি বিশেষ খাদ্যসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে এই দিনকে ঘিরে হলো পান্তা ভাত ও ইলিশ মাছ খাওয়া। পান্তার সঙ্গে থাকে মরিচ, পেঁয়াজ, আলু ভর্তা ইত্যাদি। যদিও এই রীতির উৎপত্তি কৃষক সমাজ থেকে এখন এটি শহরাঞ্চলেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলা নববর্ষের দিন বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা। মেলায় পাওয়া যায় হস্তশিল্প, পুতুল, কাঠের খেলনা, মাটির জিনিস, বাউলগান, পুঁথিপাঠ, লাঠিখেলা, যাত্রাপালা ইত্যাদি লোকজ বিনোদন। এটি বাংলার লোকসংস্কৃতিকে জীবন্ত করে তোলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিশাল আকৃতির মুখোশ, রঙিন ব্যানার, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রাটি বের হয়। এটি বাঙালির ঐক্য, শান্তি ও শুভবোধের প্রতীক। অনেকেই নববর্ষের সকালে মন্দিরে পূজা দেন, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই পরিবারের সাথে দোয়া করে দিন শুরু করেন। যদিও বাংলা নববর্ষ মূলত ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব, তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ধর্মীয় অনুভব যুক্ত করেন। নববর্ষের দিনটি ঘিরে আয়োজিত হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— বীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য, পথনাটক ইত্যাদি। বিশেষভাবে এসো হে বৈশাখ গানটি এই দিনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসব আয়োজন বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়। নববর্ষের আয়োজনে শিশু ও কিশোরদের জন্য থাকে আলাদা আনন্দের ব্যবস্থা—মেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, রঙ খেলা, পুতুল নাচ, বেলুন, মুখোশ পরে ঘোরা ইত্যাদি। এতে করে তারা ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। অনেক পরিবার নববর্ষের আগে ঘরবাড়ি পরিষ্কার ও সাজসজ্জা করে। বাড়ির উঠোনে আলপনা আঁকা হয়, অনেক সময় দড়িতে ঝুলিয়ে রঙিন কাগজের সাজসজ্জা করা হয়। এতে করে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়।
বাংলা নববর্ষের রীতিনীতি ও আচার শুধু একটি দিন উদযাপনের বিষয় নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ। এইসব আচার-অনুষ্ঠান আমাদের সমাজের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তা বহন করে। তাই এসব রীতিনীতিকে সম্মান জানিয়ে তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
বর্তমান সময়ে নববর্ষ উদযাপনেও আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল মিডিয়া, অনলাইন প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বৈশাখের শুভেচ্ছা আদান-প্রদান, ফ্যাশন ডিজাইন ও রঙে রঙিন জামাকাপড় নববর্ষকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তবে এই আধুনিকতার মধ্যেও লোকজ রীতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াস লক্ষণীয়।
বাংলা নববর্ষ, বাঙালির প্রাণের উৎসব, তার ঐতিহ্যবাহী রূপ অক্ষুণ্ন রেখেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পেয়েছে এক আধুনিক রূপ। নববর্ষ এখন কেবল গ্রামীণ বা লোকজ উৎসব নয়, বরং এটি শহুরে জীবনে, মিডিয়া, ফ্যাশন, প্রযুক্তি এবং অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাংলা নববর্ষ যেমন আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠেছে, তেমনি কিছু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জও এনেছে।
বর্তমানে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে মানুষ বৈশাখী শুভেচ্ছা বিনিময় করে, ছবি শেয়ার করে এবং লাইভ অনুষ্ঠান দেখে। আগে যেখানে নববর্ষে হাতে লেখা শুভেচ্ছাপত্র চালু ছিল, এখন সেটি স্থান দিয়েছে ডিজিটাল গিফ, এনিমেশন, স্ট্যাটাস ও ভিডিও শুভেচ্ছাকে। অনেকে ঘরে বসেই অনলাইনে বৈশাখী গান, নাটক ও মেলা উপভোগ করেন।
এই দিনটি ঘিওে বৈশাখী ফ্যাশনে এসেছে আধুনিক ছোঁয়া। নববর্ষ উপলক্ষে এখন দেশজ ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক নকশা, ব্র্যান্ডিং ও বাণিজ্যিক উপস্থাপন। ফ্যাশন হাউস ও ডিজাইনার কালেকশন: বিভিন্ন নামকরা ফ্যাশন হাউস বৈশাখ উপলক্ষে লাল-সাদা পোশাকের নতুন ডিজাইন বাজারে আনে। এতে দেশীয় তাঁতের কাপড়, ব্লক প্রিন্ট, এবং লোকজ মোটিফের আধুনিক রূপ দেখা যায়। আধুনিক বৈশাখী সাজে হাতে তৈরি গয়না, পুঁতির মালা, কাঁসার কানের দুল, ফুলের টিকলি ইত্যাদি তরুণ-তরুণীদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়।
মিডিয়া ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে নববর্ষ এখন টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা ও অনলাইন কনটেন্টে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে বৈশাখ উপলক্ষে নাটক, গান, কবিতা, নাচের অনুষ্ঠান প্রচার হয়। বৈশাখ কেন্দ্রিক বিজ্ঞাপনে উঠে আসে ফ্যাশন, খাবার, ব্র্যান্ডিংয়ের প্রতিযোগিতা। নববর্ষ কেন্দ্রিক সিনেমা/সিরিজ কিছু নাটক বা ওয়েব সিরিজের প্লটেও বৈশাখকে উপজীব্য করা হয়।
নববর্ষ এখন একটি বড় বাণিজ্যিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। পণ্য বাজারজাতকরণে, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অনলাইন শপিং, ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বৈশাখী ছাড় ও অফার-দোকানপাট, অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও ব্র্যান্ডগুলো বিশেষ ছাড় ও নতুন কালেকশন নিয়ে আসে। রেস্তোরাঁগুলোতে বৈশাখী স্পেশাল মেনু থাকে পান্তা-ইলিশ, দেশি খাবার, নকশাদার পরিবেশনা।
নগরজীবনে আয়োজনের পরিবর্তন চোখে পগে যেমন, শহরের রাস্তাঘাটে, বিশেষ করে ঢাকার রমনা, টিএসসি, চারুকলা প্রাঙ্গণ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা প্রভৃতি শহরে বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মস্থলে আয়োজন করে বৈশাখী মেলা ও কালচারাল প্রোগ্রাম।
আধুনিকতা বনাম ঐতিহ্যের দ্বন্দ্ব-আধুনিকতা যেমন নববর্ষকে নতুনত্ব দিয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও এনেছে। কিছু ক্ষেত্রে উৎসবের মূল উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে যায় পোশাক, খাবার বা সাজসজ্জার প্রতিযোগিতা। এতে মূল সংস্কৃতির হারিয়ে যায়। অনেক সময় লোকজ গান, আবহমান রীতিনীতির জায়গা দখল করে নেয় পশ্চিমা বা অপ্রাসঙ্গিক বিনোদন।
বাংলা নববর্ষের আধুনিকতা আমাদের সংস্কৃতিকে বিস্তৃত করেছে, দিয়েছে গতি ও নতুন এক অভিব্যক্তি। তবে এই আধুনিকতার মধ্যে আমাদের উচিত ঐতিহ্যের মূল সুরটিকে ধরে রাখা। প্রযুক্তি ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নববর্ষ উদযাপন করলেও, এর শেকড় যেন থাকে মাটির কাছেই। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এ মেলবন্ধনই বাংলা নববর্ষকে যুগোপযোগী করে তুলেছে। নববর্ষ উদযাপনের কারণে বিপণন খাত, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, খাবার খাতসহ অনেক অর্থনৈতিক খাতে চাঙ্গাভাব দেখা যায়। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে নিজেদের পণ্যের প্রচার ও বিক্রয়ের সুযোগ পান। এই দিনটি বাঙালি সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করে।
যদিও নববর্ষ আমাদের গৌরবের বিষয়, তবুও এ উৎসবের বিকৃতি ঘটছে কিছু জায়গায়। অতিরিক্ত ভোগবাদিতা, অশালীনতা, পরিবেশ দূষণ, কিংবা ঐতিহ্যের নামে বাড়াবাড়ি – এসব অনেক সময় নববর্ষের মূল চেতনাকে আঘাত করে। আবার কিছু মৌলবাদী গোষ্ঠী এই উৎসবের বিরোধিতা করে, যেটি বাঙালির সার্বজনীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে যায়।
বাংলা নববর্ষ কেবল একটি দিন নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। এই উৎসব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন এবং জাতিগত স্বকীয়তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী।
বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ, শুধু একটি ক্যালেন্ডারের পাতা বদলের দিন নয়, বরং এটি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এটি এমন একটি উৎসব, যা ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি ও রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলিয়ে বাঙালিদের এক অভিন্ন সাংস্কৃতিক ছাতার নিচে একত্রিত করে। এই দিনটির মধ্য দিয়ে বাঙালির ঐতিহ্য, চেতনা, সংস্কৃতি এবং জাতীয় পরিচয়ের প্রকাশ ঘটে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন হলো বাঙালি সংস্কৃতির শেকড়ে ফেরার দিন। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বাঙালির হাজার বছরের লোকজ সংস্কৃতি, পোশাক, খাদ্য, সংগীত, শিল্পকলা ও ভাষার প্রকাশ ঘটে। বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, লোকসংগীত, পান্তা-ইলিশ খাওয়া—এসবই এক গভীর সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ।
বাংলা নববর্ষ একটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব, যা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান—সব ধর্মের মানুষ একসাথে পালন করে। এটি এমন একটি দিন, যেখানে ধর্ম নয়, সংস্কৃতি মুখ্য। এর ফলে এই উৎসব জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা নববর্ষের উদযাপন ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানি শাসনামলে যখন রবীন্দ্রসংগীত ও বাংলা ভাষা সংকুচিত করার চেষ্টা হয়, তখন এই উৎসব হয়ে ওঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের অস্ত্র। পরবর্তীতে নববর্ষ উদযাপন জাতীয় পরিচয়ের সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দিন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এমনকি ২০১৬ সালে ইউনেস্কো যখন মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তখন তা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতিকে আরও দৃঢ় করে।
বাংলা নববর্ষ এমন একটি উৎসব, যা শহরের উচ্চশ্রেণি থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত সবাই উদযাপন করে। এটি সমগ্র জাতির সংস্কৃতির একটি সমন্বিত রূপ, যা বাঙালি জাতির চেতনার মূল ভিত্তি গড়ে তোলে।
এই উৎসবের মাধ্যমে বাংলা ভাষা, কবিতা, সংগীত, নৃত্য এবং লোকজ শিল্পের সংরক্ষণ ও চর্চা হয়। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, বাউলগান—সবকিছু মিলিয়ে এই উৎসব হয়ে উঠেছে আমাদের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক শক্তিশালী প্রকাশভঙ্গি। নববর্ষ উপলক্ষে স্কুল-কলেজে যেসব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হয়, তাতে অংশগ্রহণ করে নতুন প্রজন্ম। তারা গান গায়, কবিতা আবৃত্তি করে, মেলা ঘোরে, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে। এর ফলে তারা ছোটবেলা থেকেই শেখে— আমি বাঙালি, আমার একটা আলাদা জাতীয় পরিচয় আছে।
বাংলা নববর্ষ কেবল একটি ক্যালেন্ডারভিত্তিক উৎসব নয়, এটি একটি জাতিগত আত্মবোধের দিন। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা ধর্মে বিভক্ত হলেও সংস্কৃতিতে এক। বাংলা নববর্ষ তাই আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক, ঐক্যের ভিত্তি, এবং সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের প্রেরণা। এই উৎসব উদযাপন করেই আমরা বিশ্বের কাছে গর্ব করে বলতে পারি আমি বাঙালি।
বাংলা নববর্ষ আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য, যা যুগ যুগ ধরে আমাদের সংস্কৃতির শিকড়কে সুদৃঢ় করেছে। নববর্ষ উদযাপন কেবল আনন্দ আর উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভাষা ও আত্মপরিচয়ের উৎসব। তাই এ ঐতিহ্যকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রক্ষা ও সমুন্নত রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ
শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ, অন্ধকারে থাকবে পৃথিবীর একাংশ!

শতাব্দীর দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এটি হতে যাচ্ছে শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সোমবার (২২ জুলাই) সংবাদমাধ্যম মেট্রো এবং টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের ২ আগস্ট এক বিরল পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। এটি ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা দেখতে পাবেন। এই মহাজাগতিক ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা এটি প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী হবে। এছাড়া এটি শতকের অন্যতম দীর্ঘতম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে।
এই সূর্যগ্রহণে চাঁদ পুরোপুরি সূর্যকে আচ্ছাদিত করবে। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় পূর্ণতা (Totality) বলা হয়। এ সময় দিনের আকাশ রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যাবে। পূর্ণতার রেখা পৃথিবীর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবে, যা দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকার এক বিশাল অংশকে ঢেকে দেবে। প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই অন্ধকার দর্শনের সুযোগ পাবে।
সূর্যগ্রহণটি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ একাধিক দেশে দেখা যাবে।
দীর্ঘতম গ্রহণের রহস্য
রয়্যাল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউনের মতে, এই গ্রহণটি প্রায় ছয় মিনিট স্থায়ী হবে, যা এ ধরনের মহাজাগতিক ঘটনার জন্য অসাধারণভাবে দীর্ঘ।
তিনি বলেন, এটি মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়। এই তারতম্য চাঁদ এবং সূর্যের দৃশ্যমান আকারের পার্থক্যের কারণে ঘটে, যা চাঁদের পৃথিবীর কক্ষপথে এবং পৃথিবীর সূর্যের কক্ষপথে তাদের দূরত্বের সামান্য পরিবর্তনের ফলে হয়।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেয়। এটি শুধু অমাবস্যা তিথিতে ঘটতে পারে। এ সময় চাঁদ ঠিক সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করে। চাঁদের কক্ষপথ কিছুটা কাত হওয়ায়, বেশিরভাগ সময় এটি সূর্যের কিছুটা উপর বা নিচ দিয়ে চলে যায়, ফলে সূর্যগ্রহণ সবসময় হয় না।

জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ
জলবায়ু পরিবর্তন : এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে

এখন থেকে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির কারণে বলে যুগান্তকারী এক রায়ে জানিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত।এমনকি অতীতে কারা কত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস ছেড়েছে, সেটাও বিবেচনায় আসতে পারে বলেও রায়ে জানানো হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) বুধবার এই রায় দেয়। যদিও এই রায় বাধ্যতামূলক নয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এর বৈশ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে।
বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য এটা একটি বড় জয়। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক মহলের নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ হয়ে এই মামলার পথ বেছে নিতে পারে।
বিবিসি বলছে, ২০১৯ সালে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মাধ্যমে এই মামলার সূচনা হয়েছিল। প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জের কিছু তরুণ আইনের ছাত্র এই ধারণাটি প্রথম সামনে আনেন। তাদেরই একজন ছিলেন টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুনে এবং বুধবার হেগে তিনি আদালতের রায় শোনেন।
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের সমাজের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা যে কষ্ট সহ্য করেছি, সেই বাস্তবতা আদালত স্বীকার করেছে”। অন্যদিকে ভানুয়াতুর জলবায়ু কর্মী ফ্লোরা ভানো বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের, যাদের কথা এতদিন ধরে শোনা হচ্ছিল না।”
যুগান্তকারী এই রায়ে বিচারপতি ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, যদি কোনো দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা না নেয়, তাহলে সেটা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হবে। এমনকি যারা প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি বা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে চায় (যেমন— যুক্তরাষ্ট্র), তাদেরও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
আদালত বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে। কোনো নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতির জন্য যদি প্রমাণ করা যায় যে তা জলবায়ুর কারণে হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ চাওয়া যাবে।
এমনকি যদি কোনো দেশ তাদের কোম্পানিকে তেল ও গ্যাস খাতে নতুন লাইসেন্স দেয় বা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতকে ভর্তুকি দেয়, তবে তা তার আইনি দায়বদ্ধতার পরিপন্থি হতে পারে।
আইসিজের এই মতামতের ভিত্তিতে যেকোনো দেশ চাইলে জাতিসংঘ আদালত বা নিজস্ব কোনো জাতীয় আদালতেও মামলা করতে পারবে। তবে আইসিজে-তে সরাসরি মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে অবশ্যই আদালতের এখতিয়ার স্বীকার করতে হবে। যেটি যুক্তরাজ্য করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীন করেনি।
তবে আইনজীবী জোই চৌধুরী বলেন: “জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো আদালতে আইসিজের মতামত উদ্ধৃত করে মামলা করা যাবে। তাই কোনো দেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টেও মামলা করতে পারে।”

নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ
নারী কর্মীদের ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক পরিহার করতে বললো বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সব স্তরের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য নতুন পোশাকবিধি জারি করেছে। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার লক্ষ্য একটি পেশাদার ও মার্জিত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্দেশনায় পুরুষ ও নারী কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক পরিধানের কথা বলা হয়েছে এবং কিছু পোশাক পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
পুরুষ কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
পুরুষ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট (লম্বা হাতা বা হাফ হাতা) এবং ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা পরতে হবে। এই নির্দেশিকায় জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
নারী কর্মীদের জন্য পোশাকবিধি
নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার–কামিজ ও ওড়না অথবা অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে। এর সঙ্গে ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। নির্দেশিকায় শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস (ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক) এবং লেগিংস পরিহার করার কথা বলা হয়েছে।
পোশাকবিধির ১১ ক্রমিক নম্বরে আরও তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১ (ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩–এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ ১–এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
১১ (খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ ২–এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
১১ (গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করার জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব–কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।
গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।