খুঁজুন
                               
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

বাংলায় নারীবাদী সাহিত্য ও নারীদের অধিকার

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
বাংলায় নারীবাদী সাহিত্য ও নারীদের অধিকার

বাংলা সাহিত্য যুগে যুগে সমাজের পরিবর্তন, বিশেষ করে নারীদের অবস্থানের প্রতিচিত্র তুলে ধরেছে। নারীবাদী সাহিত্য এমন এক সাহিত্যধারা, যা নারীর অধিকার, সমানাধিকারের সংগ্রাম, সমাজের পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা এবং নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার গল্প বলে। বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী চিন্তাধারা এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা নারীদের অধিকার আদায়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নারীবাদী সাহিত্য এমন এক সাহিত্য, যেখানে নারীর অধিকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্য, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নারীর আত্মপরিচয়কে তুলে ধরা হয়। এই সাহিত্যধারার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীর বঞ্চনার ইতিহাসকে সামনে আনা এবং নারীর স্বাধীনতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা।
নারীবাদী সাহিত্য শুধুমাত্র নারীদের জন্য লেখা হয় না; বরং এটি সমাজের জন্য এক নতুন চেতনার বার্তা বহন করে। এটি কেবল পুরুষতন্ত্রের সমালোচনা নয়, বরং একটি সমতার সমাজ গড়ার আহ্বানও বটে।
বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক পর্বে নারীর অবস্থা ছিল গৌণ। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে নারীদের উপস্থিতি খুবই কম। মূলত পুরুষ লেখকদের হাতেই সাহিত্য গড়ে উঠেছিল, যেখানে নারী চরিত্রগুলোকে প্রধানত পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে চিত্রিত করা হতো।
চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০ খ্রি.) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি, যিনি রামায়ণ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখায় নারীর দুঃখ-কষ্ট, প্রেম, এবং সমাজের কঠোরতা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
উনবিংশ শতাব্দী ছিল বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের যুগ, যখন নারীরা ধীরে ধীরে শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চার সুযোগ পেতে শুরু করেন। এই সময়ে কিছু সাহিত্য নারীদের অধিকার ও সমতার প্রশ্ন তোলে।
বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী চেতনার প্রথম ও অন্যতম প্রধান রূপকার। তাঁর সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) এক অনন্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, যেখানে নারীরা সমাজের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এবং পুরুষরা অবরুদ্ধ থাকে। এই রচনা নারীর সম্ভাবনা ও স্বাধীনতার প্রতীক।
তাঁর অবরোধবাসিনী গ্রন্থে মুসলিম নারীদের অবরুদ্ধ জীবনের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর লেখনী শুধুমাত্র সাহিত্য নয়, বরং এক সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯-১৯৯৫) ছিলেন নারীবাদী সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসত্রয়ী—১. প্রথম প্রতিশ্রুতি ২. সুবর্ণলতা ৩. বকুল কথা

এই উপন্যাসগুলোতে বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজে নারীর স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের জন্য সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর লেখায় নারীশিক্ষা, কুসংস্কার ও সমাজের বাধা অতিক্রম করে নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে।
মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬-২০১৬) ছিলেন একজন শক্তিশালী সাহিত্যিক, যিনি আদিবাসী ও নিম্নবর্গীয় নারীদের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরেছেন। তাঁর হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীর ভূমিকা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শিকার হওয়া এক মায়ের মানসিক অবস্থা চিত্রিত হয়েছে। তাঁর অরণ্যের অধিকার, স্তনদায়িনী প্রভৃতি রচনায় সমাজের প্রান্তিক নারীদের দুর্দশা ও নারীর শোষণের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামকে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর হাঙর নদী গ্রেনেড মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক চিত্র।
তসলিমা নাসরিন (জন্ম ১৯৬২) নারীবাদী সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখিকা, যিনি পিতৃতন্ত্র ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, নির্বাসন প্রভৃতি গ্রন্থে নারীর অধিকার, সামাজিক নিপীড়ন ও প্রথাগত ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ রয়েছে।
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের (১৯৫০-২০১৫) উপন্যাসগুলোতে শহুরে নারীদের বাস্তবতা ও সামাজিক টানাপোড়েন তুলে ধরা হয়েছে। দহন, অলিখিত, কাছের মানুষ প্রভৃতি রচনায় নারীর আত্মপরিচয় ও সামাজিক অবস্থানের সংকট ফুটে উঠেছে।
বাংলা নারীবাদী সাহিত্য শুধুমাত্র কল্পকাহিনি নয়; বরং এটি নারীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারীবাদী লেখকেরা তাঁদের সাহিত্যের মাধ্যমে নারীর শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ, পারিবারিক ও সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।
নারী শিক্ষা একটি সমাজের সামগ্রিক উন্নতির মূল ভিত্তি। একজন শিক্ষিত নারী শুধু নিজের উন্নতি করেন না, বরং পুরো সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী শিক্ষার প্রসারের ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
শিক্ষিত নারী পরিবার ও সমাজে সচেতনতার প্রসার ঘটায়, যা শিশুশিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিক্ষিত নারীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, যার ফলে পরিবার ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। নারীরা স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হয়, যা শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করে। শিক্ষা নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। নারী শিক্ষা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে সমান সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। নারী শিক্ষার প্রসারের পথে বাধা, দারিদ্র্য ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা, সামাজিক কুসংস্কার ও প্রথা, বাল্যবিবাহ, নিরাপত্তার অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ততা এসব নারীদের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায়।
নারী শিক্ষার প্রসারে করণীয় : শিক্ষাবৃত্তি, উপবৃত্তি এবং বিনামূল্যে বই-খাতা বিতরণের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। গণমাধ্যম, সামাজিক প্রচারণা ও কমিউনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা। মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, নিরাপদ বিদ্যালয় এবং পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অনলাইন শিক্ষা, ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নারী শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করা। বাল্যবিবাহ ও নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা।
নারী শিক্ষার প্রসার কেবল একটি জাতির নয়, পুরো বিশ্বের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সরকার, সমাজ এবং প্রতিটি পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীদের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে, যাতে তারা সমাজের মূলধারায় সমানভাবে অংশ নিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করতে পারে।
নারীর আইনগত অধিকার ও সচেতনতা নিশ্চিত করা একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন নারীদের সুরক্ষা, সমতা এবং ক্ষমতায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তবে, অনেক নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, যার ফলে তারা বিভিন্ন সামাজিক ও আইনি সমস্যার শিকার হয়। নারীর মৌলিক আইনগত অধিকার- বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা, উপবৃত্তি এবং শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অধিকার রয়েছে, যা ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। মুসলিম আইন, হিন্দু আইন ও বিশেষ বিবাহ আইনের ভিত্তিতে নারীদের সম্পত্তির অধিকার বিভিন্ন রকম হতে পারে। বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুযায়ী, মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী, নারীরা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে এবং তালাকপ্রাপ্ত হলে নির্দিষ্ট হক ও অধিকার পায়। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নারীরা মোহরানা, খোরপোষ ও সন্তানদের অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমান মজুরির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০১০ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী, ধর্ষণ, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, নারীদের প্রতি সহিংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০ অনুযায়ী, যৌতুক প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নারীদের জন্য বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ সেবা বৃদ্ধি করা। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে আইন সচেতনতামূলক কর্মশালা পরিচালনা করা। টেলিভিশন, রেডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী অধিকার নিয়ে প্রচার চালানো। নারীদের জন্য বিশেষ সচেতনতা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে নারী অধিকার ও আইন বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা। জয় ফোন (১০৯) – নারী ও শিশুদের সহায়তা প্রদানের জন্য একটি সরকারি হেল্পলাইন। বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে আইনি সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবা দিচ্ছে। নারী অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন যেমন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নারীর আইনগত অধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য কল্যাণকর। সরকার, সামাজিক সংগঠন এবং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজেদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে। এছাড়া নারীরবৈবাহিক ও পারিবারিক অধিকার, নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রশ্ন তুলেছে। নারীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান-নারী কেবল মা, স্ত্রী বা কন্যা নয়; বরং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি।
বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী লেখকদের অবদান অসামান্য। তাঁরা কেবল সাহিত্য রচনা করেননি, বরং সমাজে নারীদের অবস্থানকে প্রশ্ন করেছেন, পরিবর্তন এনেছেন এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছেন। নারীবাদী সাহিত্য নারী জাগরণ ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ভবিষ্যতে নারীবাদী সাহিত্য আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সমাজে নারীর সমানাধিকারের প্রশ্নকে আরও গভীরভাবে উত্থাপন করবে। বাংলা সাহিত্যে নারীদের কণ্ঠ আরও দৃঢ় হবে, যা সমাজকে আরও মানবিক ও সমতাভিত্তিক করে তুলবে।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ণ
জয় দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু বাংলাদেশের

জয়ে এশিয়া কাপ শুরু করল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে হংকংকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
রানতাড়ায় নেমে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৪ রান। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে পারভেজ হোসেন ইমন ১৪ বল ১৯ রান করে ফিরে গেলে জুটি ভাঙে। ৫.৪ ওভারে ৪৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তানজিদ তামিম ফেরেন ১৮ বলে ১৪ রান করে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে লিটন ও হৃদয় মিলে ৭০ বলে ৯৫ রান যোগ করেন। জয় থেকে ২ রান দূরে থাকতে লিটন বোল্ড হয়ে ফিরে যান। ৬ চার ও এক ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৯ রান করেন। পরে জাকের আলি অনিককে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন হৃদয়। ১ চারে ৩৬ বলে ৩৫ রান করেন হৃদয়। রানের খাতা খোলার সুযোগ পাননি জাকের।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রান সংগ্রহ করেছে হংকং। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেছেন নিজাকাত খান। টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে সফল তানজিম হাসান সাকিব ২১ রান খরচায় ২ উইকেট শিকার করেছেন। এ ম্যাচে জয় তুলে নিতে ওভারপ্রতি ৭.২০ রান করতে হবে টাইগারদের।
এদিন টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে শুরু থেকে হংকংকে চাপে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। দলের খাতায় ৩০ রান যোগ করতে ২ উইকেট হারায় তারা। বাংলাদেশকে প্রথম উইকেটটি এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ৫ বলে ৪ রান করে টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে কট বিহাইন্ড হন আনশুমান রাথ। আম্পায়ার যদিও শুরুতে সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এরপর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৪ রান করা বাবর হায়াতকে বোল্ড করেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে হংকং। জিশান আলী ও নিজাকাত খানের ৪১ রানের জুটি শেষমেশ ভাঙেন তানজিম সাকিব। তার বাউন্সার জায়গা নিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে তুলে দেন ওপেনার জিশান। ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ রানে থামে তার ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে নিজাকাত ও ইয়াসিম মুর্তজা হতাশায় ভোগান টাইগার বোলারদের।
অনেক চেষ্টা করেও উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষমেশ ১৮তম ওভারে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে ভাঙে হংকংয়ের চতুর্থ জুটি। ১৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারের মারে ২৮ রান করে রান আউট হন মুর্তজা। ততক্ষণে তারা দলের সংগ্রহ শতরান পার করে দেন। অন্যদিকে ৪০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রান করে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রিশাদ হোসেনের শিকার হন নিজাকাত। পরের বলেই ক্রিজে নেমে টাইগার রিস্ট স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হন কিঞ্চিৎ শাহ।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৩ রানে থামে হংকংয়ের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন, তানজিম সাকিব ও রিশাদ।

স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ অপরাহ্ণ
স্থূলতা তরুণদের কতটা ক্ষতি করছে?

বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রা বিগত এক দশকের থেকে অনেকটাই আলাদা। এখন সবাই নিজের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততার প্রভাব দেখা যায় আমাদের স্বাস্থ্যেও বিশেষ করে তরুণদের মাঝে। প্রসেসড খাবার, ডিজিটাল জীবনযাপন ও শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি মিলিয়ে তরুণদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে স্থূলতা। আর এই স্থূলতা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য বা ওজনের বিষয় নয়, বরং ডেকে আনছে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
হিন্দুস্তান টাইমস নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. পিয়ুষ রঞ্জন জানান, স্থূল কিশোররা ভবিষ্যতে মারাত্মক লিভার রোগের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তার মতে, ভারতে কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার রোগের হার প্রায় ৩৮ শতাংশ। এদের অনেকেই পরবর্তীতে সিরোসিস কিংবা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
স্থূলতার ঝুঁকি: ডা. রঞ্জনের মতে, চিকিৎসাবিহীন স্থূলতা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে রয়েছে—কোলন, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় স্থূল মানুষের লিভার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও, স্থূলতা ও লিভার জটিলতার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
প্রতিরোধের উপায়: তরুণ প্রজন্মকে এই ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে ডা. রঞ্জন কয়েকটি প্রতিরোধমূলক পরামর্শ দিয়েছেন—
> সুস্থ জীবনধারা গড়ে তোলা।
> তেল–চর্বিযুক্ত ও উচ্চ-ক্যালরির খাবার এড়িয়ে চলা।
> অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়া।
> নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং স্থূলতার ঝুঁকি কমাবে।
তরুণদের মধ্যে স্থূলতার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে, যা শুধু আজকের নয়, ভবিষ্যতেরও ভয়ানক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। ডা. পিয়ুষ রঞ্জনের পরামর্শ স্পষ্ট সুস্থ জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এখনই সচেতন হলে কেবল ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা লিভারের রোগই নয়, অসংখ্য জটিলতা থেকে নিজেদের বাঁচানো সম্ভব।

ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১১ অপরাহ্ণ
ডিজিটাল প্রতারণায় কয়েক কোটি টাকা খোয়ালেন ভারতীয় নারী

অঞ্জলির (ছদ্মনাম) এই দুঃস্বপ্নের শুরুটা হয়েছিল একটা ফোন কলের মাধ্যমে। যার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে পাঁচ কোটি পঁচাশি লাখ টাকা খোয়াতে হয়। ওই ফোন কলের সময় অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে একটা কুরিয়ার সংস্থার কর্মচারী বলে পরিচয় দিয়ে দাবি করেছিলেন, মুম্বাই কাস্টমস বেইজিংয়ে পাঠানোর সময় অঞ্জলির একটা পার্সেল বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই পার্সেলে মাদক পাওয়া গেছে।
গুরুগ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি বাস্তবে ডিজিটাল অ্যারেস্ট নামে সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এতে অভিযুক্তরা ভিডিও কল করে নিজেদের ভারতের আর্থিক তদারকি প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির কর্মকর্তা বলে দাবি ফাঁদে ফেলে।
এর জন্য প্রতারকরা সাধারণত ভুক্তভুগীদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার বা পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়। এভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অঞ্জলিকে টানা পাঁচ দিন ধরে ডিজিটাল অ্যারেস্ট করে রাখা হয়েছিল। স্কাইপ কলের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রেখে তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল; যাতে তিনি টাকা ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।
অঞ্জলির কথায়, এরপর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ দেয়। অসাড় হয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ওই ফোনকল বন্ধ হয়, ততদিনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন অঞ্জলি, নিজের সমস্ত সম্পত্তিও খুইয়েছেন।