খুঁজুন
                               
বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১৩ কার্তিক, ১৪৩২

বাংলায় নারীবাদী সাহিত্য ও নারীদের অধিকার

উজ্জ্বল হোসাইন
প্রকাশিত: বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
বাংলায় নারীবাদী সাহিত্য ও নারীদের অধিকার

বাংলা সাহিত্য যুগে যুগে সমাজের পরিবর্তন, বিশেষ করে নারীদের অবস্থানের প্রতিচিত্র তুলে ধরেছে। নারীবাদী সাহিত্য এমন এক সাহিত্যধারা, যা নারীর অধিকার, সমানাধিকারের সংগ্রাম, সমাজের পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা এবং নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার গল্প বলে। বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী চিন্তাধারা এক নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা নারীদের অধিকার আদায়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নারীবাদী সাহিত্য এমন এক সাহিত্য, যেখানে নারীর অধিকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সাম্য, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং নারীর আত্মপরিচয়কে তুলে ধরা হয়। এই সাহিত্যধারার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীর বঞ্চনার ইতিহাসকে সামনে আনা এবং নারীর স্বাধীনতার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা।
নারীবাদী সাহিত্য শুধুমাত্র নারীদের জন্য লেখা হয় না; বরং এটি সমাজের জন্য এক নতুন চেতনার বার্তা বহন করে। এটি কেবল পুরুষতন্ত্রের সমালোচনা নয়, বরং একটি সমতার সমাজ গড়ার আহ্বানও বটে।
বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক পর্বে নারীর অবস্থা ছিল গৌণ। মধ্যযুগীয় সাহিত্যে নারীদের উপস্থিতি খুবই কম। মূলত পুরুষ লেখকদের হাতেই সাহিত্য গড়ে উঠেছিল, যেখানে নারী চরিত্রগুলোকে প্রধানত পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে চিত্রিত করা হতো।
চন্দ্রাবতী (১৫৫০-১৬০০ খ্রি.) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি, যিনি রামায়ণ রচনা করেছিলেন। তাঁর লেখায় নারীর দুঃখ-কষ্ট, প্রেম, এবং সমাজের কঠোরতা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
উনবিংশ শতাব্দী ছিল বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের যুগ, যখন নারীরা ধীরে ধীরে শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চার সুযোগ পেতে শুরু করেন। এই সময়ে কিছু সাহিত্য নারীদের অধিকার ও সমতার প্রশ্ন তোলে।
বেগম রোকেয়া (১৮৮০-১৯৩২) বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী চেতনার প্রথম ও অন্যতম প্রধান রূপকার। তাঁর সুলতানার স্বপ্ন (১৯০৫) এক অনন্য বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, যেখানে নারীরা সমাজের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় এবং পুরুষরা অবরুদ্ধ থাকে। এই রচনা নারীর সম্ভাবনা ও স্বাধীনতার প্রতীক।
তাঁর অবরোধবাসিনী গ্রন্থে মুসলিম নারীদের অবরুদ্ধ জীবনের নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর লেখনী শুধুমাত্র সাহিত্য নয়, বরং এক সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আশাপূর্ণা দেবী (১৯০৯-১৯৯৫) ছিলেন নারীবাদী সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসত্রয়ী—১. প্রথম প্রতিশ্রুতি ২. সুবর্ণলতা ৩. বকুল কথা

এই উপন্যাসগুলোতে বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজে নারীর স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের জন্য সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাঁর লেখায় নারীশিক্ষা, কুসংস্কার ও সমাজের বাধা অতিক্রম করে নারীর এগিয়ে যাওয়ার গল্প বলা হয়েছে।
মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬-২০১৬) ছিলেন একজন শক্তিশালী সাহিত্যিক, যিনি আদিবাসী ও নিম্নবর্গীয় নারীদের জীবনসংগ্রামকে তুলে ধরেছেন। তাঁর হাজার চুরাশির মা উপন্যাসে রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীর ভূমিকা এবং রাষ্ট্রদ্রোহের শিকার হওয়া এক মায়ের মানসিক অবস্থা চিত্রিত হয়েছে। তাঁর অরণ্যের অধিকার, স্তনদায়িনী প্রভৃতি রচনায় সমাজের প্রান্তিক নারীদের দুর্দশা ও নারীর শোষণের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে।
সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যে নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগ্রামকে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর হাঙর নদী গ্রেনেড মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক চিত্র।
তসলিমা নাসরিন (জন্ম ১৯৬২) নারীবাদী সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখিকা, যিনি পিতৃতন্ত্র ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর লজ্জা, আমার মেয়েবেলা, নির্বাসন প্রভৃতি গ্রন্থে নারীর অধিকার, সামাজিক নিপীড়ন ও প্রথাগত ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ রয়েছে।
সুচিত্রা ভট্টাচার্যের (১৯৫০-২০১৫) উপন্যাসগুলোতে শহুরে নারীদের বাস্তবতা ও সামাজিক টানাপোড়েন তুলে ধরা হয়েছে। দহন, অলিখিত, কাছের মানুষ প্রভৃতি রচনায় নারীর আত্মপরিচয় ও সামাজিক অবস্থানের সংকট ফুটে উঠেছে।
বাংলা নারীবাদী সাহিত্য শুধুমাত্র কল্পকাহিনি নয়; বরং এটি নারীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারীবাদী লেখকেরা তাঁদের সাহিত্যের মাধ্যমে নারীর শিক্ষার অধিকার, কর্মসংস্থানের সুযোগ, পারিবারিক ও সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।
নারী শিক্ষা একটি সমাজের সামগ্রিক উন্নতির মূল ভিত্তি। একজন শিক্ষিত নারী শুধু নিজের উন্নতি করেন না, বরং পুরো সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী শিক্ষার প্রসারের ফলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
শিক্ষিত নারী পরিবার ও সমাজে সচেতনতার প্রসার ঘটায়, যা শিশুশিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শিক্ষিত নারীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, যার ফলে পরিবার ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। নারীরা স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হয়, যা শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সাহায্য করে। শিক্ষা নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। নারী শিক্ষা লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে এবং সমাজে সমান সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে। নারী শিক্ষার প্রসারের পথে বাধা, দারিদ্র্য ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা, সামাজিক কুসংস্কার ও প্রথা, বাল্যবিবাহ, নিরাপত্তার অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপর্যাপ্ততা এসব নারীদের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায়।
নারী শিক্ষার প্রসারে করণীয় : শিক্ষাবৃত্তি, উপবৃত্তি এবং বিনামূল্যে বই-খাতা বিতরণের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা। গণমাধ্যম, সামাজিক প্রচারণা ও কমিউনিটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নারী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরা। মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, নিরাপদ বিদ্যালয় এবং পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অনলাইন শিক্ষা, ডিজিটাল ক্লাসরুম এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নারী শিক্ষাকে আরও সহজলভ্য করা। বাল্যবিবাহ ও নারীদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা।
নারী শিক্ষার প্রসার কেবল একটি জাতির নয়, পুরো বিশ্বের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সরকার, সমাজ এবং প্রতিটি পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীদের শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে হবে, যাতে তারা সমাজের মূলধারায় সমানভাবে অংশ নিতে পারে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত করতে পারে।
নারীর আইনগত অধিকার ও সচেতনতা নিশ্চিত করা একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন নারীদের সুরক্ষা, সমতা এবং ক্ষমতায়নের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তবে, অনেক নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, যার ফলে তারা বিভিন্ন সামাজিক ও আইনি সমস্যার শিকার হয়। নারীর মৌলিক আইনগত অধিকার- বাংলাদেশ সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের শিক্ষার অধিকার রয়েছে। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে সরকার বিনামূল্যে শিক্ষা, উপবৃত্তি এবং শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। নারীদের পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত অধিকার রয়েছে, যা ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। মুসলিম আইন, হিন্দু আইন ও বিশেষ বিবাহ আইনের ভিত্তিতে নারীদের সম্পত্তির অধিকার বিভিন্ন রকম হতে পারে। বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুযায়ী, মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী, নারীরা বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারে এবং তালাকপ্রাপ্ত হলে নির্দিষ্ট হক ও অধিকার পায়। পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নারীরা মোহরানা, খোরপোষ ও সন্তানদের অভিভাবকত্বের দাবি করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমান মজুরির অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০১০ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী, ধর্ষণ, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। দণ্ডবিধি ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, নারীদের প্রতি সহিংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০ অনুযায়ী, যৌতুক প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নারীদের জন্য বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ সেবা বৃদ্ধি করা। গ্রাম ও শহরাঞ্চলে আইন সচেতনতামূলক কর্মশালা পরিচালনা করা। টেলিভিশন, রেডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী অধিকার নিয়ে প্রচার চালানো। নারীদের জন্য বিশেষ সচেতনতা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে নারী অধিকার ও আইন বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা। জয় ফোন (১০৯) – নারী ও শিশুদের সহায়তা প্রদানের জন্য একটি সরকারি হেল্পলাইন। বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনামূল্যে আইনি সহায়তা ও কাউন্সেলিং সেবা দিচ্ছে। নারী অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সংগঠন যেমন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ব্র্যাক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নারীর আইনগত অধিকার রক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য কল্যাণকর। সরকার, সামাজিক সংগঠন এবং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে নিজেদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে। এছাড়া নারীরবৈবাহিক ও পারিবারিক অধিকার, নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রশ্ন তুলেছে। নারীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান-নারী কেবল মা, স্ত্রী বা কন্যা নয়; বরং একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি।
বাংলা সাহিত্যে নারীবাদী লেখকদের অবদান অসামান্য। তাঁরা কেবল সাহিত্য রচনা করেননি, বরং সমাজে নারীদের অবস্থানকে প্রশ্ন করেছেন, পরিবর্তন এনেছেন এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছেন। নারীবাদী সাহিত্য নারী জাগরণ ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ভবিষ্যতে নারীবাদী সাহিত্য আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং সমাজে নারীর সমানাধিকারের প্রশ্নকে আরও গভীরভাবে উত্থাপন করবে। বাংলা সাহিত্যে নারীদের কণ্ঠ আরও দৃঢ় হবে, যা সমাজকে আরও মানবিক ও সমতাভিত্তিক করে তুলবে।
লেখক পরিচিতি : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক, চাঁদপুর।

সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪৮ অপরাহ্ণ
সংবাদ : সাংবাদিকতার অর্থনীতি, রাজনৈতিক চাপ ও নৈতিক দ্বন্দ্ব

বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। গণমাধ্যম এখন আর শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক সংকটের জটিল সমীকরণের ভেতরে বন্দী।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞাপননির্ভর হওয়ায় তাদের স্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক প্রতিষ্ঠানের আয়ের মূল উৎস। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের বিপরীতে প্রতিবেদন প্রকাশে সাংবাদিকরা প্রায়ই বাধার সম্মুখীন হন। ডিজিটাল যুগে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিয়ে নেওয়ায় সংবাদমাধ্যমগুলো আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
রাজনৈতিক চাপও সাংবাদিকতার অন্যতম বড় বাধা। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় সংবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রভাব বিস্তার করে, সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা দেয়। মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকরা প্রায়ই হয়রানি, মামলা ও হামলার শিকার হন। এতে সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এছাড়া নৈতিক দ্বন্দ্বও আজ সাংবাদিকতার মূল সমস্যা। ভিউ বা ক্লিক বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় অনেক সময় সত্যের চেয়ে আকর্ষণীয় শিরোনামকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে পেশাগত সততা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সত্য ও মানবতার পক্ষে সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে সাংবাদিকতা আবারও হতে পারে সমাজের আয়না ও রাষ্ট্রের প্রকৃত চতুর্থ স্তম্ভ।
সাংবাদিকতা একটি জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ এবং রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা আর কেবল তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি আজ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং নৈতিকতার জটিল সম্পর্কের ভেতর আটকে পড়া একটি প্রতিষ্ঠান। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা যেখানে গণতন্ত্রের মূল শর্ত, সেখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক চাপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্ব এই স্বাধীনতাকে প্রতিনিয়ত সংকুচিত করে চলেছে।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। বিজ্ঞাপনের ওপর নির্ভরশীল এই শিল্প অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ফলে সাংবাদিকতার মূল লক্ষ্য—সত্য প্রকাশ—প্রায়ই বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর কাছে বন্দী হয়ে পড়ছে।
সাংবাদিকতার অর্থনীতি ও স্বাধীনতার শর্ত :
একটি সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করতে যেমন সাংবাদিকতার আদর্শ প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। সাংবাদিকতার অর্থনীতি মূলত তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে—বিজ্ঞাপন, পাঠক বা দর্শক নির্ভর আয়, এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ।
১. বিজ্ঞাপন নির্ভরতা ও তার প্রভাব : বেশিরভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান আয় আসে বিজ্ঞাপন থেকে। সরকারি ও কর্পোরেট বিজ্ঞাপনই অনেক পত্রিকার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। ফলে সংবাদপত্রগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থের বিপরীতে যেতে পারে না।
একটি বড় কোম্পানির অনৈতিক কার্যক্রম বা পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন অনেক সময় চাপের মুখে বাতিল হয়ে যায়, কারণ সেই কোম্পানি পত্রিকাটির অন্যতম বিজ্ঞাপনদাতা।
২. ডিজিটাল যুগের অর্থনৈতিক রূপান্তর : অনলাইন সাংবাদিকতার যুগে বিজ্ঞাপন আয় আরও বিভক্ত হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো টেক জায়ান্টরা এখন বিজ্ঞাপন আয়ের বড় অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে। ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যেখানে অ্যালগরিদম নির্ধারণ করে কোন সংবাদ বেশি প্রচার পাবে। এর ফলে গঠনমূলক সাংবাদিকতার চেয়ে ‘ক্লিকবেট’ সংবাদ, উত্তেজক শিরোনাম ও ভিউ নির্ভর কনটেন্ট বাড়ছে।
৩. সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা : অর্থনৈতিক দুরবস্থার ফলে অনেক সংবাদকর্মী ন্যায্য বেতন পান না, কিংবা নিয়মিত বেতন পেতেও সমস্যার সম্মুখীন হন। চাকরির অনিশ্চয়তা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার অভাব সাংবাদিকদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। ফলস্বরূপ তারা পেশাগত স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন, এবং কখনও কখনও আত্মরক্ষার তাগিদে আপোষে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক চাপ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু : বাংলাদেশসহ বহু দেশে রাজনৈতিক প্রভাব সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। গণমাধ্যমের কাজ হলো ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা, কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শাসকগোষ্ঠী সেই স্বাধীনতাকে নিজের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।
১. সরকারি প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ : সরকার প্রায়ই বিজ্ঞাপন, নিবন্ধন, ফ্রিকোয়েন্সি বা লাইসেন্স ইস্যুর মাধ্যমে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। যেসব পত্রিকা বা টেলিভিশন সরকারবিরোধী সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের ওপর বিভিন্ন প্রশাসনিক বা আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। কখনও কখনও ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড’ বা ‘ভুয়া তথ্য প্রচার’-এর অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়, যা সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
২. রাজনৈতিক দলীয় বিভাজন : রাজনৈতিক বিভাজন সাংবাদিকতার ভেতরও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের অনুগত হয়ে কাজ করছে। এতে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নষ্ট হচ্ছে, আর পাঠকের আস্থা কমছে। ‘একপক্ষীয় সাংবাদিকতা’ সাধারণ মানুষের চোখে মিডিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট ও অবিশ্বাস্য করে তুলছে।
৩. মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক সহিংসতা : জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিকরা প্রায়ই রাজনৈতিক নেতাদের হুমকি ও হামলার শিকার হন। তাদের ওপর মামলা, লাঞ্ছনা, কিংবা পেশাগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘কথা না শোনার’ কারণে সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন।
নৈতিক দ্বন্দ্ব ও সাংবাদিকতার আত্মার পরীক্ষা : সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটি একধরনের নৈতিক দায়িত্ব। সত্য অনুসন্ধান ও সমাজের কল্যাণের জন্য সাংবাদিকের মননে থাকা চাই সততা, মানবিকতা ও সাহস। কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই নৈতিক মানদণ্ডকে রক্ষা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।
১. সত্য বনাম জনপ্রিয়তা : ডিজিটাল যুগে ক্লিক, ভিউ ও লাইকই হয়ে উঠেছে সংবাদমূল্যের মাপকাঠি। ফলে অনেক সাংবাদিক সত্যের চেয়ে ‘ট্রেন্ডিং’ বিষয়কে প্রাধান্য দেন। সংবাদে অতিরঞ্জন, ভুয়া তথ্য, এমনকি গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করে ‘সেন্সেশন’ তৈরি করা এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটি সাংবাদিকতার নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করছে।
২. গোপন স্বার্থ ও প্রলোভন : কখনও রাজনৈতিক সুবিধা, কখনও আর্থিক প্রলোভন সাংবাদিকদের নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত করে। কোনো কোনো সাংবাদিক নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণায় জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে পেশাদার ন্যায়বোধ দুর্বল হয়, সংবাদপত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
৩. ব্যক্তিগত ঝুঁকি ও ভয় : সত্য প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। অনেক সাংবাদিক হুমকি, অপহরণ কিংবা হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ভয় অনেককে আত্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করে যা নৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন যুগের নতুন চ্যালেঞ্জ : সামাজিক মাধ্যম আজ সংবাদ প্রচারের নতুন প্ল্যাটফর্ম, কিন্তু এটি সাংবাদিকতার নীতি ও পেশাদারিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জও বটে। যেকোনো ব্যক্তি এখন সংবাদ প্রচার করতে পারে, কিন্তু যাচাই-বাছাই ছাড়া তথ্য ছড়ানো সহজ হয়ে যাওয়ায় মিথ্যা সংবাদ ও বিভ্রান্তি বাড়ছে।
‘সিটিজেন জার্নালিজম’-এর ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে—ঘটনার দ্রুত প্রচার, তেমনি এর অপব্যবহারও ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রেই ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল হওয়া সংবাদই পরে ভুয়া প্রমাণিত হয়, কিন্তু ততক্ষণে সেটি জনমত প্রভাবিত করে ফেলে। পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য এটি এক কঠিন প্রতিযোগিতা—যেখানে গতি ও জনপ্রিয়তা সত্য ও দায়িত্বের চেয়ে বেশি মূল্য পায়।

নৈতিক সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা : সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতার একটি স্পষ্ট নৈতিক কাঠামো থাকা জরুরি। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আচরণবিধি, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কোড অব কন্ডাক্ট—এসব কেবল কাগজে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করাই প্রধান চ্যালেঞ্জ।
সাংবাদিকদের উচিত :  তথ্য যাচাই না করে কিছুই প্রকাশ না করা। ব্যক্তিগত বা দলীয় পক্ষপাত এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মতামত অন্তর্ভুক্ত করা। সমাজে শান্তি ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। একই সঙ্গে সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোরও প্রয়োজন পেশাদার প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ : সাংবাদিকতার টিকে থাকার জন্য দরকার মুক্ত চিন্তা, নিরাপদ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব। সরকারকে বুঝতে হবে—স্বাধীন সাংবাদিকতা কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ নয়, বরং তা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।
সত্যের পক্ষে কলমই এখন সবচেয়ে বড় শক্তি। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বা সাইবার আইনের মতো বিধান সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে নয়, বরং ভুয়া সংবাদ ও ঘৃণা প্রচার রোধে ব্যবহার করা উচিত। একই সঙ্গে গণমাধ্যমকে নিজস্ব ‘অভ্যন্তরীণ সেন্সরশিপ’ সংস্কৃতি থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।
সাংবাদিকতার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো সমাজে সত্য, ন্যায় ও মানবতার আলো ছড়ানো। কিন্তু এই পথে রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নৈতিক দ্বন্দ্বের পাহাড়। তবুও সাহসী ও নৈতিক সাংবাদিকরাই সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন—যারা আপোষহীনভাবে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান। আজকের সাংবাদিকতার সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সে কি টিকে থাকবে স্বাধীন ও সৎভাবে, নাকি অর্থ ও ক্ষমতার দাসত্বে পরিণত হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সততা, সমাজের সচেতনতা, এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মনোভাবের ওপর। সত্য প্রকাশের এই কঠিন যাত্রায় সাংবাদিকদের হাতে এখনো সেই কলম রয়েছে—যা বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী। এই শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব।
সাংবাদিকতার অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক প্রভাব এবং নৈতিক দুরবস্থা—এই তিনটি চ্যালেঞ্জ একসঙ্গে সাংবাদিকতার অস্তিত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী—যে জাতির কলম বেঁচে থাকে, তার বিবেক কখনো মরে না। আজও অনেক সাংবাদিক অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আলো জ্বালাচ্ছেন। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, সাংবাদিকতা কেবল একটি পেশা নয়—এটি এক মহৎ প্রতিশ্রুতি, মানবতার প্রতি অঙ্গীকার।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সাংবাদিক ও লেখক, চাঁদপুর।
সত্যের পক্ষে সেই কলমকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের সকলের দায়িত্ব, কারণ সত্য প্রকাশের শক্তি সব সময়ই বন্দুকের চেয়ে বড়।

সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০১ অপরাহ্ণ
সালমান শাহ হত্যা মামলা : আগাম জামিন চাইবেন সামিরা, হাইকোর্টে বর্তমান স্বামী

চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সামিরা হক আজ হাইকোর্টে আগাম জামিন চাইবেন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) তার বর্তমান স্বামী হাইকোর্টে আসেন জামিন শুনানির জন্য আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে। এদিন সকাল ৯ টায় সামিরার বর্তমান স্বামী  ইশতিয়াক আহমেদকে আপিল বিভাগে বসে থাকতে দেখা যায়। এসময় বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এর আগে সালমান শাহ এর সাবেক স্ত্রী এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানিতে গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  সাইফুজ্জামান এ আদেশ দেন।
গত ২০ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ি লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের তিন জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। এর পরেই তিনি গা ঢাকা দেন বলে জানা যায়। তবে আজ তার বর্তমান স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়েছেন তার জামিন বিষয়ে কথা বলতে।

মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
মেট্রোরেল দুর্ঘটনা : বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মেট্টোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত সোমবার মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান নির্ণয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। রিটে মেট্রোরেল ও সব ফ্লাইওভারে ব্যবহার করা বিয়ারিং প্যাডের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করতে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২৬ অক্টোবর) ফার্মগেট মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওপর থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম আজাদ নামে এক পথচারীর মাথায় আঘাত হানে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলেই প্রচুর রক্তপাত হলে স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।