খুঁজুন
                               
শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ, ১৪৩২

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২৫ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আগামী এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি, সীমান্ত হত্যা এবং জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহার, আদানি পাওয়ার প্রকল্পের ইস্যুগুলোসহ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তাপ ছড়ানো বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে গত রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। এর পরদিন দ্য হিন্দুকে এই সাক্ষাৎকার দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো—

দ্য হিন্দু: সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আপনার বৈঠক সম্পর্কে আমাদের বলুন…

তৌহিদ হোসেন: স্পষ্ট করে বলতে গেলে, সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়)। এটি খুব উত্তেজনাপূর্ণ ভাবেই শুরু হয়েছিল, যেমনটি আমি দেখছি, কারণ ভারত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন এক ধরনের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই খুব দ্রুত সেটি ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, তার সম্পর্কে বৈরি মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমি মনে করি ছয় মাস পরে, এটি আসলে শেষ হওয়া উচিত এবং আমাদের এমন একটি পরিবেশ দরকার যেখানে আমরা একে অপরের সাথে কাজ করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায়, অবশ্যই আমরা এখন একে অপরের সাথে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।

দ্য হিন্দু: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিবের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনি কি জয়শঙ্করকে এই উদ্বেগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলেই না। আমি জিজ্ঞাসা করিনি, কারণ এটি ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সাথে কী আলোচনা করবে)। আমি মনে করি না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যে। বাণিজ্যে স্বল্প সময়ের জন্য কিছুটা সমস্যা ছিল, কিন্তু তা আবার বেড়েছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে— দুটি দেশ, অন্তত বেসরকারি খাত, লোকেরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। উভয় দেশেরই একে অপরের স্বার্থ আছে এবং আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দ্য হিন্দু: ভারত বারবার যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা হলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে। আপনি কি মনে করেন যে— আপনার সরকার এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে? আর ভারত কি একমত? কারণ এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, আমি খুব স্পষ্ট করে বলি— বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সমান অধিকারের সাথে সমান নাগরিক এবং সুরক্ষার সমান অধিকার ভোগ করেন। এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের কাজ করছে। সরকার তাদের রক্ষায় কাজ করছে, যেমন দেশের অন্য নাগরিকদের রক্ষা করাও সরকারের কাজ। দুর্ভাগ্যবশত, ৫ আগস্টের ঠিক পরে ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে সত্যিকার অর্থেই প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, সেটিও আবার বেশিরভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। আমি আপনাকে জাতিসংঘের রিপোর্ট ও তাদের ফলাফল দেখার জন্য বলব, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে— (অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতার সাথে জড়িত ছিল না)। তারা আমাদের অনুরোধে এসেছিল কারণ আমরা পরিস্থিতির একেবারে নিরপেক্ষ জরিপ চেয়েছিলাম।

দ্য হিন্দু: আমি কমিটির রিপোর্ট পড়েছি, জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের কিছু বাড়াবাড়ির কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তাতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার সরকার কি কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: অবশ্যই, এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কথা বলা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। এটা একেবারেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে— আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত চারজন সদস্য রয়েছেন যারা মানবাধিকার কর্মী এবং তারা বহু, বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে, ভারত ঠিক কী করবে বলে আপনি আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা ভারতকে তাকে পাঠাতে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার এটি না করছে, আমরা আশা করব যে— তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যাতে তিনি উস্কানিমূলক এবং মিথ্যা বিবৃতি না দিতে পারেন যা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে তোলে, কারণ বিষয়গুলো এখনও খুব তরতাজা। ১৫ বছর ধরে তিনি (হাসিনা) ক্ষমতায় ছিলেন এবং লোকেরা তার কর্মকাণ্ডের জন্য খুব, খুব তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। তাই তিনি (হাসিনা) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না, এমনটাই তারা দেখতে চায় মানুষ।

দ্য হিন্দু: তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করার জন্য জনতাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তৌহিদ হোসেন: বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

দ্য হিন্দু: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত শুধু মৌখিক নোট পাঠিয়েছে, যা হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি কূটনৈতিক নোট। আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি ভারতও তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) এর জন্য আপনার পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন সেই প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: ঠিক আছে, সেই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে রয়েছে। আমরা তাদের (তাড়াহুড়ো করে) কাজ করতে বাধ্য করতে পারি না। এবং আমরা এই বিষয়েও অবগত যে— তিনি (হাসিনা) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারে। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা যা চাই তা হলো— তিনি (হাসিনা) ভারতে থাকাকালীন কোনও ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।

দ্য হিন্দু: সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। জেলেদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন— তিনি বাংলাদেশের জেল থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলেছেন, যাদের মারধর করা হয়েছিল। আপনি কি মনে করেন যে— এটি খারাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ফলেই হয়েছে?

সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বিজিবির বাধা

তৌহিদ হোসেন: আমি তেমনটি মনে করি না। প্রথম সমস্যা হচ্ছে— সীমান্ত। ২০২৪ সালে — যে বছরের অর্ধেক আগের সরকারের অধীনে ছিল — ২৪ জন সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বের কোথাও এটি করা হয় না। আমি মনে করি, আপনি এই বিষয়ে আমার সাথে একমত হবেন কারণ ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়শই বলা হয় যে— যেহেতু অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তাই এটি ঘটছে। পৃথিবীর প্রতিটি সীমান্তে অপরাধ আছে। কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে মারা হয় না। যদি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে, আপনি তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে, জেলে নিয়ে যান বা আদালতের সিদ্ধান্তে যেকোনও কিছু করেন, কিন্তু আপনি সীমান্তে তাদের কেবল হত্যা করতে পারবেন না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের অধীনেই সীমান্তে সেটাই হয়ে আসছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। এটি এমন একটি জিনিস যা আমি মনে করি ভারত যদি চায় তবে থামতে পারে এবং এটি বন্ধ হওয়া উচিত। আর অন্য ইস্যুটি হচ্ছে— সামুদ্রিক ইস্যু।

দ্য হিন্দু: কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়েছে। তাহলে এখনও একে অপরের জেলেদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে…

তৌহিদ হোসেন: আমি এই বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না, তবে যতদূর পর্যন্ত বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে জেনেছি, আপনি জানেন— জেলেরা মাছকে অনুসরণ করে। এখন, প্রায়শই স্থলভাগে আপনার একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে, আপনি জানেন যে এটাই সীমা। তবে সমুদ্রে, এটি এত সহজ নয়। প্রায়শই, উভয় দিক থেকে তারা প্রায়শই অন্য দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রবেশ করে। আমাদের কিছু জেলে ভারতের হেফাজতে রয়েছে, আবার আমাদের হেফাজতে ভারতের কিছু জেলে আছে এবং আমরা উভয় দেশই পর্যায়ক্রমে তাদেরকে ছেড়ে দিই। দুর্ব্যবহার সম্পর্কে… আমরা ইতোমধ্যেই তদন্তের জন্য বলেছি এবং যদি আমরা দেখতে পাই যে— আসলেই নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও লোক এই ঘটনায় জড়িত ছিল বা তারা যদি আইন ভঙ্গ করে থাকে, অবশ্যই আমরা তা বিবেচনা করব। কিন্তু এটা সাধারণত করা হয় না। আমি কলকাতায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন কূটনীতিক হিসেবে ছিলাম… এবং এই ধরনের বিনিময়গুলো পরিচালনা করেছি এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয় না। যদি কোনও ব্যতিক্রম হয়ে থাকে, আমরা অবশ্যই তা দেখব।

দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে— বাংলাদেশ সরকার এই গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে আলোচনা করছে। আপনি কি নিশ্চিত করতে পারেন যে— বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি অব্যাহত রাখতে চায়?

তৌহিদ হোসেন: আমি মনে করি আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে (এবং দ্বিতীয়টি) আমরা চুক্তি স্বাক্ষরের পর আলোচনা করি। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে, কিন্তু যদি আমরা মনে করি যে চুক্তিটি সঠিকভাবে করা হয়নি, তাহলে আমরা সর্বদা এটি আবার খতিয়ে দেখার জন্য পারস্পরিকভাবে সম্মত হতে পারি। এবং আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সাথে এটি দেখব এবং চুক্তিটিকে আরও যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করব। আমি কোনও টেকনিশিয়ান বা টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই, তাই আমি সঠিক বিবরণে যেতে পারছি না, কিন্তু তারপরও অন্যান্য চুক্তির সাথে তুলনামূলক যে তুলনা করা হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে— বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি নেওয়া হয়েছে, মূলত চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে— আবার আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা কেনার প্রশ্নে। যে কোনও যুক্তিবাদী ব্যক্তিই বলবেন, এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য সর্বোত্তম মূল্যে কয়লা কেনা উচিত। সেটা করা হয়নি। সুতরাং এইগুলো এমন ইস্যু যেখানে আমরা সম্ভবত আদানির সাথে ভালোভাবে আলোচনা করতে পারি এবং আমরা তা করতে চাই। এই মুহূর্তে, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলেছি কারণ আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন এবং তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভিত্তিতে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই আমরা চাই তারা এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং তারপরে আমরা এর জন্য অর্থ প্রদান করব।

দ্য হিন্দু: আপনার সঙ্গে দুইবার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা হয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের মধ্যে এখনও দেখা হয়নি। আপনি কি এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাদের মধ্যে বৈঠকের আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই দিনে কোনও ভেন্যুতে না থাকায় তাদের দেখা করার সুযোগ হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অবাধে এবং খোলামেলাভাবে দেখা ও আলোচনা করার ইচ্ছা রয়েছে। এটা সহায়ক হয়। আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতিতে, যখন ‘শীর্ষ কর্তারা’ একসঙ্গে বসেন, তারা বছরের পর বছর ধরে আলোচনার জন্য আমাদের মতো লোকদের কাছে কোনও ইস্যু ছেড়ে না দিয়ে শুধুমাত্র এক কথায় একটি সমস্যা সমাধান করতে পারেন। আমি মনে করি, দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক সেই অর্থে ঘটতে পারে। তারা এই সরকারের শুরুতে একবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা বিমসটেকের জন্য একই ভেন্যুতে থাকবেন, কারণ সমস্ত সরকার প্রধান সেখানে থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে তারা একে অপরের সাথে কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ এটি একটি ছোট গ্রুপ। উদাহরণস্বরূপ, সার্ক (সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিটি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান সবসময় অন্য সাত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে কথা বলতেন। তাই আমি মনে করি এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দ্য হিন্দু: আপনি কি জয়শঙ্করের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আমি এইমাত্র উল্লেখ করেছি। বৈঠকের ব্যাপারে কোনো মতৈক্য হয়নি… এখনও অনেক সময় বাকি। প্রোগ্রামটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা মাত্র কয়েক দিন আগে এই জিনিসগুলো ঠিক করি। দেখা যাক কি হয়।

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রনীতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে, বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকায়, আপনি কি মনে করেন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আবারও সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, কিন্তু শুধু গত ১৫ বছরের দিকে তাকান কেন? বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সময়েও (২০০১-২০০৬) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমি মনে করি না— (উভয় দেশের) সম্পর্কটি নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে আমাদের গঙ্গা পানি চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই রাজধানীতে যে সরকার, যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করা উচিত নয়, কারণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর। এবং আমি বিশ্বাস করি, আমাদের উভয় পক্ষই বুঝতে পারে যে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতে পারি।

চাঁদপুরে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, আটক ৩

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১০:৫৩ অপরাহ্ণ
চাঁদপুরে চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, আটক ৩

চাঁদপুরে পুলিশের অভিযানে চোরাই ৬টি মোটরসাইকেল উদ্ধার এবং চুরির সাথে জড়িত চোর চক্রের ৩ সদস্য আটক হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফুর রহমান। আটক চোর চক্রের সদস্যরা হলেন-জেলার ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড কাচিয়াড়া পশ্চিম পাঠান বাড়ির হারু অর রশিদের ছেলে রাফসান ইসলাম নিলয় (২০), একই উপজেলার রূপসা ইউনিয়নের বারো পাইকা গ্রামের মো. সেলিমের ছেলে মো. ইয়ামিন (২১) ও সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের নিজগাছতলা বাদামতলী খান বাড়ীর আব্দুল মান্নান খানের ছেলে আব্দুস সালাম (২৬)।

পুলিশ জানায়, ৩০ জুলাই বিকেলে সদর মডেল থানা পুলিশ শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুইজন মোটরসাইকেল চোরকে চুরি করে আনা মোটরসাইকেলসহ আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চুরিতে জড়িত রাফসান ও ইয়ামিনের সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব মোটরসাইকেল চুরির সাথে জড়িত নিজগাছতলা এলাকার সালাম মটরস এর আব্দুস সালাম এর সন্ধান মিলে। তিনি চোরাইকৃত মোটরসাইকেল তার গ্যারেজে সংরক্ষণ করতেন।আটক চোর চক্রের সদস্যরা পুলিশকে জানান, তারা লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা চোর চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে এসব মোটরসাইকেল ক্রয় করতেন। এর মধ্যে অধিকাংশ মোটরসাইকেলের নিবন্ধন নেই। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, বুধবার বিকেলে মডেল থানা পুলিশ প্রথমে শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের সদস্য নিলয় ও ইয়ামিনকে আটক করে। তাদের দেয়া তথ্যে চোরাই মোটরসাইকেলগুলো নিজগাছতলা সালামের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করা হয়। সালাম চোরাই মোটরসাইকেলের ব্যবসা করে। তাকেও আটক করা হয়েছে। আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

নায়িকা হতে গেলে ক্লিভেজ দরকার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ৮:৪০ অপরাহ্ণ
নায়িকা হতে গেলে ক্লিভেজ দরকার

বর্তমানে টলিউডে ‘দেখতে সুন্দর’ হওয়ার চাপ এতটাই বেড়েছে যে, রূপ-সৌন্দর্য ধরে রাখতে বহু অভিনেত্রী বেছে নিচ্ছেন প্লাস্টিক সার্জারি, লিপ ফিলার, নোস জব, এমনকি শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি। কারণ, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একাংশের দাবি, এসব না করালে ‘নায়িকা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় না। এবার এই বিষয়েই মুখ খুললেন ওপার বাংলার ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শোলাঙ্কি রায়।
সম্প্রতি একটি পডকাস্টে শোলাঙ্কি জানিয়েছেন, তিনি কখনও নিজের মুখে কোনও ইনজেকশন নেননি, কোনও রকম কসমেটিক সার্জারির পথেও হাঁটেননি। আর এই ‘স্বাভাবিকত্ব’-এর জন্যই তাকে বহুবার কটু কথা শুনতে হয়েছে।
শোলাঙ্কির কথায়, ‘অনেকেই বলেন আমার মুখ টিভির তুলনায় সিনেমায় দেখতে খারাপ লাগে। আসলে মুখে তো কখনও কিছু করাইনি, ইনজেকশন নিইনি। তাই হয়তো!’
এখানেই থামেননি অভিনেত্রী। জানালেন, তিনি যেহেতু চিরকালই রোগা, তা নিয়েও নানা কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাকে। এতটাই যে এক সময় আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে যায়। পারিবারিক অনুষ্ঠানেও যাওয়া বন্ধ করে দেন। ‘অনুষ্ঠানে গেলেই অনেকে জিজ্ঞেস করতেন আমি এত রোগা হয়ে গেছি কেন। যেন এটা কোনও নতুন ব্যাপার! আমি তো ছোটবেলা থেকেই এমন,’ বললেন শোলাঙ্কি।
তবে সবচেয়ে অপমানজনক অভিজ্ঞতার কথাও এদিন অকপটে শেয়ার করেন তিনি। একবার এক পরিচালক তাঁকে সরাসরি পরামর্শ দেন ব্রেস্ট সার্জারির।

শোলাঙ্কির ভাষায়, ‘তিনি বলেছিলেন, ‘নায়িকা হতে গেলে একটু ক্লিভেজ থাকা দরকার’। এই কথাটা শুনে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও আমি যথেষ্ট ম্যাচিওর ছিলাম, তাই কথাটা এড়িয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। কিন্তু ভাবুন তো, এই কথাটা যদি কোনও নতুন বা কম বয়সি মেয়ে শুনত! কতটা ভেঙে পড়ত সে।’
শোলাঙ্কি আরও বলেন, ‘আজও সেই ঘটনা মাথায় গেঁথে আছে। প্রভাব তো ফেলেছিলই, না হলে এতদিন পরেও এটা নিয়ে বলতাম না। বাইরে থেকে শুনলেই একরকম লাগে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে কী যন্ত্রণা হয়, সেটা শুধু মেয়েরাই বোঝে।’
অভিনেত্রীর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, গ্ল্যামার দুনিয়ার আড়ালে কতটা নিষ্ঠুর এক মানসিক চাপ কাজ করে প্রতিটি তারকার পরে। সাহস করে সেই রূঢ় বাস্তবের মুখোশ খুলে দিলেন শোলাঙ্কি রায়।

গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো : সালাহউদ্দিন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ
গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো : সালাহউদ্দিন

জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যরা গোপন ব্যালটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন, এই প্রস্তাবে সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের শেষ দিনের আলোচনা শেষে এসব কথা জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘উচ্চকক্ষের গঠন বিএনপির প্রস্তাব, বিভিন্ন সেক্টরের বিশিষ্টজনদের নিয়ে উচ্চকক্ষ নির্মাণ চায় বিএনপি, তাই আসনভিত্তিক উচ্চকক্ষ চায় দলটি। কিন্তু সেখানে সংবিধান সংশোধন হোক তা চাই না। সংসদে বসার জন্য ও সংবিধান সংশোধন কঠিন করার জন্য পিআর পদ্ধতির দাবি অনেকের। তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দিবেন, সেটাতে সবাই একমত হয়েছে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, সাংবিধানিক পদে নিয়োগে নোট অফ ডিসেন্সসহ একমত বিএনপি। বিদ্যমান আইনের প্রেক্ষিতে নিয়োগ চায় বিএনপি। সংসদে আলোচনার মাধ্যমে পিএসসির আইন করার পক্ষে দলটি। ২০০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষা ৫০ এ নামিয়ে আনার জন্য মত দিয়েছে বিএনপি। ন্যায়পাল নিয়োগের অভিজ্ঞতাই দেশে নাই, এটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরোর পদ্ধতি হোক।
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আইনি ভিত্তির প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি, জনগণের প্রয়োজনে যে সনদ তৈরি হচ্ছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে বৈঠকে জানানো হয়, জুলাই সনদের পটভূমি খসড়া দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ওপর দলগুলোর সংশোধন নিয়ে কাজ করছে কমিশন। আলোচনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। সেখানে দলগুলো স্বাক্ষর করবে। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করে দলগুলো।