খুঁজুন
                               
বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৭ কার্তিক, ১৪৩২

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২৫ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ‘নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আগামী এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এই সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য-বিবৃতি, সীমান্ত হত্যা এবং জেলেদের সাথে দুর্ব্যবহার, আদানি পাওয়ার প্রকল্পের ইস্যুগুলোসহ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উত্তাপ ছড়ানো বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ওমানের রাজধানী মাস্কাটে অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে গত রোববার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ হয়। এর পরদিন দ্য হিন্দুকে এই সাক্ষাৎকার দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো—

দ্য হিন্দু: সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আপনার বৈঠক সম্পর্কে আমাদের বলুন…

তৌহিদ হোসেন: স্পষ্ট করে বলতে গেলে, সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়)। এটি খুব উত্তেজনাপূর্ণ ভাবেই শুরু হয়েছিল, যেমনটি আমি দেখছি, কারণ ভারত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন এক ধরনের সম্পর্কে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই খুব দ্রুত সেটি ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, তার সম্পর্কে বৈরি মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল। কিন্তু আমি মনে করি ছয় মাস পরে, এটি আসলে শেষ হওয়া উচিত এবং আমাদের এমন একটি পরিবেশ দরকার যেখানে আমরা একে অপরের সাথে কাজ করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায়, অবশ্যই আমরা এখন একে অপরের সাথে আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।

দ্য হিন্দু: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিবের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপনি কি জয়শঙ্করকে এই উদ্বেগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আসলেই না। আমি জিজ্ঞাসা করিনি, কারণ এটি ভারতের ব্যাপার (তারা অন্য দেশের সাথে কী আলোচনা করবে)। আমি মনে করি না খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণস্বরূপ, বাণিজ্যে। বাণিজ্যে স্বল্প সময়ের জন্য কিছুটা সমস্যা ছিল, কিন্তু তা আবার বেড়েছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে— দুটি দেশ, অন্তত বেসরকারি খাত, লোকেরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে আমাদের স্বার্থ রয়েছে। উভয় দেশেরই একে অপরের স্বার্থ আছে এবং আমাদের সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

দ্য হিন্দু: ভারত বারবার যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা হলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে। আপনি কি মনে করেন যে— আপনার সরকার এই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে? আর ভারত কি একমত? কারণ এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, আমি খুব স্পষ্ট করে বলি— বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মুসলমান বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সমান অধিকারের সাথে সমান নাগরিক এবং সুরক্ষার সমান অধিকার ভোগ করেন। এবং বাংলাদেশ সরকার তাদের কাজ করছে। সরকার তাদের রক্ষায় কাজ করছে, যেমন দেশের অন্য নাগরিকদের রক্ষা করাও সরকারের কাজ। দুর্ভাগ্যবশত, ৫ আগস্টের ঠিক পরে ভারতীয় মিডিয়ায় এই বিষয়টি নিয়ে সত্যিকার অর্থেই প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, সেটিও আবার বেশিরভাগই মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। আমি আপনাকে জাতিসংঘের রিপোর্ট ও তাদের ফলাফল দেখার জন্য বলব, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে— (অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতার সাথে জড়িত ছিল না)। তারা আমাদের অনুরোধে এসেছিল কারণ আমরা পরিস্থিতির একেবারে নিরপেক্ষ জরিপ চেয়েছিলাম।

দ্য হিন্দু: আমি কমিটির রিপোর্ট পড়েছি, জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের কিছু বাড়াবাড়ির কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তাতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাবের কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আপনার সরকার কি কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: অবশ্যই, এমনকি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার সেই ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কথা বলা ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। এটা একেবারেই অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে— আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত চারজন সদস্য রয়েছেন যারা মানবাধিকার কর্মী এবং তারা বহু, বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন। তারা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

দ্য হিন্দু: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে, ভারত ঠিক কী করবে বলে আপনি আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: তার (হাসিনা) বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা ভারতকে তাকে পাঠাতে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার এটি না করছে, আমরা আশা করব যে— তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যাতে তিনি উস্কানিমূলক এবং মিথ্যা বিবৃতি না দিতে পারেন যা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে তোলে, কারণ বিষয়গুলো এখনও খুব তরতাজা। ১৫ বছর ধরে তিনি (হাসিনা) ক্ষমতায় ছিলেন এবং লোকেরা তার কর্মকাণ্ডের জন্য খুব, খুব তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। তাই তিনি (হাসিনা) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবেন না, এমনটাই তারা দেখতে চায় মানুষ।

দ্য হিন্দু: তা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করার জন্য জনতাকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তৌহিদ হোসেন: বিক্ষুব্ধ জনতা কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।

দ্য হিন্দু: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত শুধু মৌখিক নোট পাঠিয়েছে, যা হাসিনার প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি কূটনৈতিক নোট। আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে?

তৌহিদ হোসেন: আমাদের (বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে) একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি ভারতও তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে।

দ্য হিন্দু: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য আপনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) এর জন্য আপনার পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন সেই প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আশা করছে?

তৌহিদ হোসেন: ঠিক আছে, সেই প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই চলমান রয়েছে, কারণ মামলাগুলো এখন আদালতে রয়েছে। আমরা তাদের (তাড়াহুড়ো করে) কাজ করতে বাধ্য করতে পারি না। এবং আমরা এই বিষয়েও অবগত যে— তিনি (হাসিনা) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারে। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা যা চাই তা হলো— তিনি (হাসিনা) ভারতে থাকাকালীন কোনও ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না।

দ্য হিন্দু: সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। জেলেদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন— তিনি বাংলাদেশের জেল থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলেছেন, যাদের মারধর করা হয়েছিল। আপনি কি মনে করেন যে— এটি খারাপ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ফলেই হয়েছে?

সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বিজিবির বাধা

তৌহিদ হোসেন: আমি তেমনটি মনে করি না। প্রথম সমস্যা হচ্ছে— সীমান্ত। ২০২৪ সালে — যে বছরের অর্ধেক আগের সরকারের অধীনে ছিল — ২৪ জন সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বিশ্বের কোথাও এটি করা হয় না। আমি মনে করি, আপনি এই বিষয়ে আমার সাথে একমত হবেন কারণ ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়শই বলা হয় যে— যেহেতু অপরাধ কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তাই এটি ঘটছে। পৃথিবীর প্রতিটি সীমান্তে অপরাধ আছে। কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে মারা হয় না। যদি অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে, আপনি তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে, জেলে নিয়ে যান বা আদালতের সিদ্ধান্তে যেকোনও কিছু করেন, কিন্তু আপনি সীমান্তে তাদের কেবল হত্যা করতে পারবেন না। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের অধীনেই সীমান্তে সেটাই হয়ে আসছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। এটি এমন একটি জিনিস যা আমি মনে করি ভারত যদি চায় তবে থামতে পারে এবং এটি বন্ধ হওয়া উচিত। আর অন্য ইস্যুটি হচ্ছে— সামুদ্রিক ইস্যু।

দ্য হিন্দু: কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়েছে। তাহলে এখনও একে অপরের জেলেদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে…

তৌহিদ হোসেন: আমি এই বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না, তবে যতদূর পর্যন্ত বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বলে জেনেছি, আপনি জানেন— জেলেরা মাছকে অনুসরণ করে। এখন, প্রায়শই স্থলভাগে আপনার একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে, আপনি জানেন যে এটাই সীমা। তবে সমুদ্রে, এটি এত সহজ নয়। প্রায়শই, উভয় দিক থেকে তারা প্রায়শই অন্য দেশের সামুদ্রিক অঞ্চলে প্রবেশ করে। আমাদের কিছু জেলে ভারতের হেফাজতে রয়েছে, আবার আমাদের হেফাজতে ভারতের কিছু জেলে আছে এবং আমরা উভয় দেশই পর্যায়ক্রমে তাদেরকে ছেড়ে দিই। দুর্ব্যবহার সম্পর্কে… আমরা ইতোমধ্যেই তদন্তের জন্য বলেছি এবং যদি আমরা দেখতে পাই যে— আসলেই নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও লোক এই ঘটনায় জড়িত ছিল বা তারা যদি আইন ভঙ্গ করে থাকে, অবশ্যই আমরা তা বিবেচনা করব। কিন্তু এটা সাধারণত করা হয় না। আমি কলকাতায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন কূটনীতিক হিসেবে ছিলাম… এবং এই ধরনের বিনিময়গুলো পরিচালনা করেছি এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয় না। যদি কোনও ব্যতিক্রম হয়ে থাকে, আমরা অবশ্যই তা দেখব।

দ্য হিন্দু: আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির বিষয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে— বাংলাদেশ সরকার এই গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে আলোচনা করছে। আপনি কি নিশ্চিত করতে পারেন যে— বাংলাদেশ সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তি অব্যাহত রাখতে চায়?

তৌহিদ হোসেন: আমি মনে করি আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে (এবং দ্বিতীয়টি) আমরা চুক্তি স্বাক্ষরের পর আলোচনা করি। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে, কিন্তু যদি আমরা মনে করি যে চুক্তিটি সঠিকভাবে করা হয়নি, তাহলে আমরা সর্বদা এটি আবার খতিয়ে দেখার জন্য পারস্পরিকভাবে সম্মত হতে পারি। এবং আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সাথে এটি দেখব এবং চুক্তিটিকে আরও যুক্তিযুক্ত করার চেষ্টা করব। আমি কোনও টেকনিশিয়ান বা টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই, তাই আমি সঠিক বিবরণে যেতে পারছি না, কিন্তু তারপরও অন্যান্য চুক্তির সাথে তুলনামূলক যে তুলনা করা হয়েছে এবং তাতে দেখা গেছে— বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি নেওয়া হয়েছে, মূলত চুক্তিতে বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে— আবার আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা কেনার প্রশ্নে। যে কোনও যুক্তিবাদী ব্যক্তিই বলবেন, এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য সর্বোত্তম মূল্যে কয়লা কেনা উচিত। সেটা করা হয়নি। সুতরাং এইগুলো এমন ইস্যু যেখানে আমরা সম্ভবত আদানির সাথে ভালোভাবে আলোচনা করতে পারি এবং আমরা তা করতে চাই। এই মুহূর্তে, আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বলেছি কারণ আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন এবং তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভিত্তিতে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই আমরা চাই তারা এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং তারপরে আমরা এর জন্য অর্থ প্রদান করব।

দ্য হিন্দু: আপনার সঙ্গে দুইবার আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেখা হয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের মধ্যে এখনও দেখা হয়নি। আপনি কি এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাদের মধ্যে বৈঠকের আশা করছেন?

তৌহিদ হোসেন: এখন পর্যন্ত দুই নেতা একই দিনে কোনও ভেন্যুতে না থাকায় তাদের দেখা করার সুযোগ হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষের কাছ থেকেই অবাধে এবং খোলামেলাভাবে দেখা ও আলোচনা করার ইচ্ছা রয়েছে। এটা সহায়ক হয়। আমাদের এই অঞ্চলের সংস্কৃতিতে, যখন ‘শীর্ষ কর্তারা’ একসঙ্গে বসেন, তারা বছরের পর বছর ধরে আলোচনার জন্য আমাদের মতো লোকদের কাছে কোনও ইস্যু ছেড়ে না দিয়ে শুধুমাত্র এক কথায় একটি সমস্যা সমাধান করতে পারেন। আমি মনে করি, দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক সেই অর্থে ঘটতে পারে। তারা এই সরকারের শুরুতে একবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা বিমসটেকের জন্য একই ভেন্যুতে থাকবেন, কারণ সমস্ত সরকার প্রধান সেখানে থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে তারা একে অপরের সাথে কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। কারণ এটি একটি ছোট গ্রুপ। উদাহরণস্বরূপ, সার্ক (সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিটি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান সবসময় অন্য সাত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সাথে কথা বলতেন। তাই আমি মনে করি এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দ্য হিন্দু: আপনি কি জয়শঙ্করের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন?

তৌহিদ হোসেন: আমি এইমাত্র উল্লেখ করেছি। বৈঠকের ব্যাপারে কোনো মতৈক্য হয়নি… এখনও অনেক সময় বাকি। প্রোগ্রামটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আমরা মাত্র কয়েক দিন আগে এই জিনিসগুলো ঠিক করি। দেখা যাক কি হয়।

দ্য হিন্দু: পররাষ্ট্রনীতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে, বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকায়, আপনি কি মনে করেন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আবারও সেই অবস্থায় ফিরে আসতে পারে?

তৌহিদ হোসেন: আচ্ছা, কিন্তু শুধু গত ১৫ বছরের দিকে তাকান কেন? বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) সময়েও (২০০১-২০০৬) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমি মনে করি না— (উভয় দেশের) সম্পর্কটি নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে আমাদের গঙ্গা পানি চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই রাজধানীতে যে সরকার, যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করা উচিত নয়, কারণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর। এবং আমি বিশ্বাস করি, আমাদের উভয় পক্ষই বুঝতে পারে যে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতে পারি।

উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪১ অপরাহ্ণ
উপদেষ্টাদের নিয়ে এত প্রশ্ন কেন?

বাংলাদেশে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত নয়, বলা ভালো, গরম চুল্লির ঢাকনা সবে নড়তে শুরু করেছে। কারণ একটাই, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি এবার শুধু অর্থনীতির সমীকরণ নয়, রাজনীতির সমীকরণও মেলাতে নেমেছেন। কিন্তু তার কাগজের খাতা যেন উলটেপালটে গেছে উপদেষ্টাদের নিয়েই।

গত ক’দিনে পরপর তিনটি দলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা – বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি। প্রতিটি বৈঠকই ছিল রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আর প্রতিটি বৈঠকের পরই তিন দল এক সুরে বলেছে, উপদেষ্টাদের অনেকে নিরপেক্ষ নন, তারা দলীয় ভূমিকা পালন করছে।

একই কথা তিন দলের মুখে শুনে মনে হতে পারে, যেন পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্ট। কিন্তু স্ক্রিপ্ট লিখেছেন কে? তা নিয়ে এখনই জল্পনা তুঙ্গে।

উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় দুই নাম, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। দু’জনই তরুণ, এক সময় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখন সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের বর্তমান নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, তাঁরা অন্তবর্তী নিরপেক্ষ সরকারের থেকে এনসিপির হয়ে কাজ করছেন।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়েই সরকার প্রধানের কার্যালয় থেকে এই দুই উপদেষ্টাকে নাকি পদত্যাগের ‘পরামর্শ’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা তা শোনেননি। এখন শোনা যাচ্ছে, মাহফুজ আলমের পরিবারের একজন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চলেছেন। আর আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর সঙ্গে প্রকাশ্য নির্বাচন পূর্ব দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট ‘নির্বাচনের আগে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের যেতে হবে’। বিএনপির দাবি, যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নেই,অন্তর্বর্তী সরকারকেই সেই ভূমিকা নিতে হবে। তাই অন্তত নিরপেক্ষতার আবরণটুকু বজায় থাকুক।
কিন্তু ‘নিরপেক্ষতা’ কথাটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বিতর্কিত মুদ্রা। যেদিকেই উলটে ধরো, কারও না কারও মুখ সেখানে ফুটে ওঠে।
বিএনপি একা নয়। জামায়াতে ইসলামি ও এনসিপিও অভিযোগ তুলেছে – সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ। কেউ কেউ তো অতীতে নির্বাচনে প্রার্থীও ছিলেন। আবার জাতীয় পার্টির একাংশ ও গণ অধিকার পরিষদও বলেছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে।
এমনটা যদি অবস্থা হয় তাহলে অধ্যাপক ইউনুস কি আসন্ন নির্বাচনে এমন এক উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আছেন, যাঁদের মধ্যে অর্ধেকই রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত?
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। কিন্তু দেশের ভেতরে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, ইউনুস সাহেব হয়তো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সরকার গঠন করতে চেয়েছিলেন,কিন্তু রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেন না উপদেষ্টাই।
অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, এই সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নিজেরাই রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট।
বাংলাদেশে ‘নির্দলীয়’ শব্দটির এক বিশেষ রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের পতনের পর গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা- সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই ছিল নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন। ২০১১ সালে সেই ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার পর থেকেই প্রশ্ন ঘুরেফিরে এক জায়গায় – এখন নির্বাচন দেখবে কে?
অধ্যাপক ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার সেই প্রশ্নের উত্তর হতে পারত। কিন্তু উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার মানদণ্ডই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে সেই সমীকরণ কতটা বিশ্বাসযোগ্য থাকে?
ঢাকার রাজনৈতিক চৌহদ্দি ছাড়িয়ে এখন নাগরিক সমাজও প্রশ্ন তুলছে – ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের উপদেষ্টারা আসলে কতটা নিরপেক্ষ? কেউ ব্যাংকের পরিচালক,কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ট্রাস্টি,কেউ আবার সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে কারও না কারও রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারে বসে সেই যোগাযোগ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা নিয়েই বড় আলোচনা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘বিশ্বাস’ নামের জিনিসটা বহুদিন আগেই অনুপস্থিত। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বিশ্বাস করে না, প্রশাসনকে বিশ্বাস করে না, এমনকি গণমাধ্যমকেও করে না। এখন যদি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাও প্রশ্নের মুখে পড়ে,তাহলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
অধ্যাপক ইউনুস এখন যে পরিস্থিতিতে আছেন, তাতে তাকে একাধারে অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিক ও মনস্তাত্ত্বিক— তিন ভূমিকাতেই অভিনয় করতে হচ্ছে। অর্থনীতি তিনি বোঝেন, রাজনীতি বুঝতে শুরু করেছেন, কিন্তু মনস্তত্ত্ব? সেটাই সবচেয়ে জটিল। কারণ,তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত এখন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কাকে উপদেষ্টা করা হলো, কোন দলের অনুরোধে করা হলো, কে কী ভূমিকা রাখছেন – সব কিছু নিয়েই চলছে ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যা।
তাঁর সামনে এখন দুটি পথ – হয় বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে একদম পরিষ্কার বার্তা দেওয়া, নয়তো রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্যে নাবিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঝড়ের গতি এমন যে,তাতে অভিজ্ঞ নাবিকও দিক হারিয়ে ফেলেন।
এখন নাগরিক সমাজের কৌতূহল একটাই – এই উপদেষ্টাদের নিয়েই কি অধ্যাপক ইউনুস নির্বাচনের পথে হাঁটবেন? যদি তাই হয়, তাহলে সেই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আগেই যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা কি আর মুছবে?
বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক রণক্ষেত্র। সেই মাঠে যদি রেফারির পক্ষপাত নিয়ে আগেই প্রশ্ন ওঠে,তাহলে খেলা শুরু হওয়ার আগেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধান উপদেষ্টার দফতর নিশ্চয়ই তা জানে। এখন দেখা যাক, অধ্যাপক ইউনুস এই ঝড়ের মধ্যে কীভাবে নিজের নৌকো চালান – অর্থনীতির সূত্রে,নাকি রাজনীতির কৌশলে।

নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৩০ অপরাহ্ণ
নির্বাচিত সরকার ছাড়া কিস্তি ছাড় করতে রাজি নয় আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির প্রথমার্ধে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার আসবে, তারা আইএমএফ এর ঋণের শর্ত মানবে কি-না, সেই নিশ্চয়তা না পেয়ে কিস্তির অর্থ ছাড় করতে রাজি নয় সংস্থাটি। ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ডলার সংকটের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফ-এর কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটি থেকে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি সই করে। ফলে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের মধ্যে ৫তম কিস্তি পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কিস্তি ও আগামী জুনে ৭ম কিস্তি পাওয়ার কথা। সাধারণত প্রতি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফ এর দেওয়া শর্তগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে সরকার, তা যাচাই করতে সংস্থাটির একটি মিশন দুই সপ্তাহ করে বাংলাদেশে এসে রিভিউ করে থাকে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড় করার আগে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৯ অক্টোবরে এই মিশন আসছে বাংলাদেশে। ৬ষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের পূর্বশর্ত হিসেবে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে শুধু রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সবগুলো পূরণ করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা সব শর্ত পূরণ করলেও সময়মতো কিস্তির অর্থ নাও পেতে পারি। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার ঋণের শর্তগুলো মানবে কি-না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ৬ষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করবে।’ অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঋণের আগামী কিস্তির অর্থ ডিসেম্বরের বদলে মার্চ-এপ্রিলে ছাড় করবে আইএমএফ।

‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২৪ অপরাহ্ণ
‘আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা’

বলিউড কিংবা হলিউডের অনেক তারকাই প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। মার্কিন পপ তারকা কার্ডি বি থেকে বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি, আনুশকা শর্মা—অনেকেই প্লাস্টিক সার্জারি করার কথা স্বীকারও করেছেন। যদিও ঢাকার তারকাদের মধ্যেও অনেকের প্লাস্টিক সার্জারি করানোর বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তা নিয়ে তাদের খুব একটা কথা বলতে দেখা যায় না। তবে সম্প্রতি এক পডকাস্ট শোতে হাজির হয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সেখানে জয়া আহসান বলেন, ‘মানুষ বলে, আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা। এটা কিন্তু আমি শুনেছি।আমার নাকি হেড টু টো (মাথা থেকে পা পর্যন্ত) প্লাস্টিক সার্জারি করা।’ এরপর তিনি বলেন, ‘বোটক্স, এটা-সেটা (ব্যবহার করি)—এগুলো বলে মানুষ। মানুষ মনে করে, এগুলো (মন্তব্য) আমি দেখি না। আমি দেখি মাঝেমধ্যে। আমাদের কমেন্ট বক্স দেখলে আমাদের দেশের পুরুষদের স্টেট অব মাইন্ডটা (মানসিক অবস্থা) বোঝা যায়।’ তবে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন, নাকি করেননি—তা স্পষ্ট করেননি এই অভিনেত্রী। এ সময় ট্রল প্রসঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’ ছবিতে তাঁর বলা ‘মারোওও’ সংলাপটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রল হয়।
এই প্রসঙ্গে জয়া বলেন, এটা খুব দরকার ছিল, ভালো হয়েছে তো, পচানি খাইছি না। সব সময় সবকিছুতে সফল হব? ভুল করেছি, সেটাই ঠিক আছে। আমার জীবনে কোনো কিছু ভুল না। ওই ভুলগুলো নিয়েই আজকের জয়া আমি। ২০২৫ সাল জয়া আহসানের জন্য বেশ সফল একটি বছর। বাংলাদেশ ও ভারতে তার অভিনীত ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ডিয়ার মা’ ও ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তার নতুন ছবি ‘ফেরেশতে’। পাশাপাশি ওটিটিতে মুক্তি পেয়েছে ‘জয়া আর শারমিন’ ও ‘নকশীকাঁথার জমিন’।